দুর্ধর্ষ সেই প্রতারক আশরাফুজ্জামান মিনহাজ গ্রেপ্তার | Bangla Affairs
০৫:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০১ এপ্রিল ২০২৫, ১৮ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দুর্ধর্ষ সেই প্রতারক আশরাফুজ্জামান মিনহাজ গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক, শরীয়তপুর
  • সময় ১১:৫২:৪৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫
  • / 43

আশরাফুজ্জামান মিনহাজ

রাষ্ট্রদ্রোহী ও সন্ত্রাসী মামলায় সেই প্রতারক আশরাফুজ্জামান মিনহাজ ওরফে মিনহাজ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বুধবার (২৬ মার্চ) শরীয়তপুরের নড়িয়া থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনীর একটি টিম।

উল্লেখ্য, নতুন নতুন কায়দায় প্রতারণা করে অর্থ কামান এই মিনহাজ। সুবিধা অনুযায়ী কখনো নিজেকে পরিচয় দেন কানাডার ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক। আবার কোথাও বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির প্রফেসর। বর্তমানে নিজেকে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রফেসর দাবি করছেন। নিজেকে বিত্তবান পরিচয় দিয়ে সুইস ব্যাংকে ৫৫ মিলিয়ন ডলার গচ্ছিত আছে বলেও দাবি তার। এমন বহুরূপী প্রতারকের নাম আশরাফুজ্জামান মিনহাজ। বাড়ি নোয়াখালীর মিরওয়ারিশপুর। বিসিএস ক্যাডার ‘কথিত’ স্ত্রীর প্রভাব দেখিয়ে ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নাম ভাঙিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে মিথ্যা মামলার আসামি করে আবার ভুক্তভোগীদের সহযোগিতার কথা বলে অর্থ হাতিয়ে নেওয়াই তার মূল পেশা। প্রতারক মিনহাজ ও তার স্ত্রীর এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ দিয়েছেন একজন ভুক্তভোগী।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস.এন. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, পুলিশসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এমনকি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে তার সখ্য আছে—এমনটি দাবি করে বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়াচ্ছেন মিনহাজ। এই প্রতারকের বিষয়ে একাধিক অভিযোগ পেয়েছি।

জানা গেছে, আশরাফুজ্জামান নামের এই প্রতারকের উত্থান ২০০৮ সালে। ২০০৯ সালে সাহারা খাতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার আগেই তার পরিবারের এক সদস্যকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেন মিনহাজ। এরপর ২০০৯ সালে সাহারা খাতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পর তার পরিবারের জামাই পরিচয় দিয়ে সচিব, পুলিশ, বিচার বিভাগসহ বিভিন্ন বাহিনীর প্রভাবশালীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিতে শুরু করেন তিনি। নিজে পুলিশ, আমলা ও বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে মামলায় ফেলে আবার মামলা থেকে বাঁচানোর নামে ভুক্তভোগীর পরিবার থেকে টাকা আদায় তার প্রধান পেশা হয়ে ওঠে। এ ছাড়া কর্মকর্তাদের বিপদে ফেলেও টাকা নেন তিনি। অপরাধ করতে যখন যাকে প্রয়োজন তাকে ব্যবহার করেন। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের পরিবারের জামাই পরিচয় ব্যবহার করার ঘটনা জানতে পেরে তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠান সাহারা খাতুন।

বর্তমানে একজন সিনিয়র সহকারী সচিব, একজন জজ, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের পরিবারের এক সদস্য ও বিদেশে থাকা এক নারীকে স্ত্রী পরিচয় দেন মিনহাজ। তবে এসব নারীর মধ্যে একটি মন্ত্রণালয়ে কর্মরত সিনিয়র সহকারী সচিবই মিনহাজকে স্বামী হিসেবে স্বীকার করেন। সূত্র জানায়, সরকারি ও বেসরকারি উচ্চ মহলের কর্তাব্যক্তিদের কাছে এ প্রতারক কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর পলিসি উপদেষ্টা হিসেবে পরিচিত। এর পাশাপাশি দেশীয় পরিচয় পলিসি মেকার ও অ্যাডভাইজার টু সজীব ওয়াজেদ জয় (সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র জয়) ও আওয়ামী শাসনের সুফল ভোগকারী হিসেবে। কোথাও আবার নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প টিমের (যারা ট্রাম্পের ইলেকশন নিয়ে কাজ করেন) একজন অন্যতম সদস্য হিসেবে দাবি করেন। ট্রাম্পের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের ইনভাইটেশন পেয়ে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানেও অংশগ্রহণ করার কথা জানান তিনি। তার এত এত পদ-পদবিতে বিশ্বাস করেন দেশের প্রশাসন ক্যাডার, জুডিশিয়ারি ও পুলিশ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্তাব্যক্তিরা।

ভুক্তভোগীরা জানান, সরকারি কর্তাব্যক্তিদের কাছে এই ভয়ংকর প্রতারক অত্যন্ত মেধাবী বলে পরিচিত। কারও পক্ষেই তার ছদ্মবেশী ডাবল স্ট্যান্ডার্ড চরিত্র বোঝা একবারেই সম্ভব নয়; বরং মিষ্টভাষী ও সুন্দর ব্যবহারের একজন ব্যক্তিত্ব। যেসব কর্তাব্যক্তি তার সঙ্গে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জারে চ্যাটের সঙ্গে সংযুক্ত থাকেন তিনি তাদের পদ-পদবি ও অবস্থান বুঝে তাদের সঙ্গে আলাপচারিতা করেন। এসব উচ্চপদস্থ কর্তাব্যক্তির সঙ্গে অধিকাংশ সময় বিদেশি সিম দ্বারা চালিত ফেসটাইম ও হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করেন। যাতে তিনি অকপটেই বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করেও সেসব কর্তাব্যক্তিকে বলে বেড়ান আমি এখন কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র অথবা ইংল্যান্ডে অবস্থান করছি। এ ছাড়াও বিভিন্ন জনকে ফোন করে বিএনপির স্ট্যান্ডিং কমিটির ‘সমন্বয়কারী’ হিসেবে পরিচয় দেন।

সূত্র জানায়, গত ১০-১২ বছর ফ্যাসিস্ট সরকারের উচ্চপদস্থ কর্তাব্যক্তিদের সান্নিধ্যে থেকে অনেক অপকর্মে জড়ান আশরাফুজ্জামান মিনহাজ। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও গোপনীয় শাখার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হ্যাকের সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন। এই অপকর্মের সঙ্গে তিনি ব্যবহার করেন তার নিজের স্ত্রীকে। তার স্ত্রী বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা। প্রতারক মিনহাজ নিজেকে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে অপকর্ম করতে গিয়ে একবার আটক হয়েছিলেন। পরে দীর্ঘদিন তিনি কারাগারে ছিলেন। সাহারা খাতুনের একজন স্বজন এমন তথ্য নিশ্চিত করেন। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর গা-ঢাকা দেন এ প্রতারক।

সম্প্রতি নতুন পন্থা অবলম্বন করে অর্থ কামানোর ধান্দায় নেমেছেন তিনি। পতিত সরকারের ১৬ বছরে বিএনপি-জামায়াতপন্থি কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ও ভালো পদায়ন দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তবে ক্ষতির সম্মুখীন হবেন—এমন আশঙ্কায় ওই কর্মকর্তারা তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার অনুরোধ করেছেন।

ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম, দুর্নীতি, মামলা বাণিজ্য, হয়রানি, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনে প্রতারক আশরাফুজ্জামান মিনহাজ ও তার কথিত স্ত্রী সিনিয়র সহকারী সচিবের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ দিয়েছেন একজন ভুক্তভোগী। অভিযোগে বলা হয়েছে, প্রতারক মিনহাজ ম্যাজিস্ট্রেট সেজে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গাড়ি জব্দ, জরিমানা ও চাঁদাবাজি করেন। তার কথিত স্ত্রী তাকে এসব অপরাধে সহযোগিতা করেন। নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বহু মানুষকে হয়রানি করছেন আশরাফুজ্জামান মিনহাজ। নোয়াখালীতে নিজ এলাকায় অন্তত ১০ জনকে মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে সচিবালয়ে সিনিয়র সহকারী সচিবের কক্ষে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এ প্রসঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি কোনো কথা বলবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। এরপর নিজের গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে জানিয়ে কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান প্রতারক মিনহাজের কথিত স্ত্রী ওই সিনিয়র সহকারী সচিব।

শেয়ার করুন

দুর্ধর্ষ সেই প্রতারক আশরাফুজ্জামান মিনহাজ গ্রেপ্তার

সময় ১১:৫২:৪৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫

রাষ্ট্রদ্রোহী ও সন্ত্রাসী মামলায় সেই প্রতারক আশরাফুজ্জামান মিনহাজ ওরফে মিনহাজ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বুধবার (২৬ মার্চ) শরীয়তপুরের নড়িয়া থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনীর একটি টিম।

উল্লেখ্য, নতুন নতুন কায়দায় প্রতারণা করে অর্থ কামান এই মিনহাজ। সুবিধা অনুযায়ী কখনো নিজেকে পরিচয় দেন কানাডার ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক। আবার কোথাও বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির প্রফেসর। বর্তমানে নিজেকে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রফেসর দাবি করছেন। নিজেকে বিত্তবান পরিচয় দিয়ে সুইস ব্যাংকে ৫৫ মিলিয়ন ডলার গচ্ছিত আছে বলেও দাবি তার। এমন বহুরূপী প্রতারকের নাম আশরাফুজ্জামান মিনহাজ। বাড়ি নোয়াখালীর মিরওয়ারিশপুর। বিসিএস ক্যাডার ‘কথিত’ স্ত্রীর প্রভাব দেখিয়ে ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নাম ভাঙিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে মিথ্যা মামলার আসামি করে আবার ভুক্তভোগীদের সহযোগিতার কথা বলে অর্থ হাতিয়ে নেওয়াই তার মূল পেশা। প্রতারক মিনহাজ ও তার স্ত্রীর এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ দিয়েছেন একজন ভুক্তভোগী।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস.এন. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, পুলিশসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এমনকি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে তার সখ্য আছে—এমনটি দাবি করে বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়াচ্ছেন মিনহাজ। এই প্রতারকের বিষয়ে একাধিক অভিযোগ পেয়েছি।

জানা গেছে, আশরাফুজ্জামান নামের এই প্রতারকের উত্থান ২০০৮ সালে। ২০০৯ সালে সাহারা খাতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার আগেই তার পরিবারের এক সদস্যকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেন মিনহাজ। এরপর ২০০৯ সালে সাহারা খাতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পর তার পরিবারের জামাই পরিচয় দিয়ে সচিব, পুলিশ, বিচার বিভাগসহ বিভিন্ন বাহিনীর প্রভাবশালীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিতে শুরু করেন তিনি। নিজে পুলিশ, আমলা ও বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে মামলায় ফেলে আবার মামলা থেকে বাঁচানোর নামে ভুক্তভোগীর পরিবার থেকে টাকা আদায় তার প্রধান পেশা হয়ে ওঠে। এ ছাড়া কর্মকর্তাদের বিপদে ফেলেও টাকা নেন তিনি। অপরাধ করতে যখন যাকে প্রয়োজন তাকে ব্যবহার করেন। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের পরিবারের জামাই পরিচয় ব্যবহার করার ঘটনা জানতে পেরে তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠান সাহারা খাতুন।

বর্তমানে একজন সিনিয়র সহকারী সচিব, একজন জজ, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের পরিবারের এক সদস্য ও বিদেশে থাকা এক নারীকে স্ত্রী পরিচয় দেন মিনহাজ। তবে এসব নারীর মধ্যে একটি মন্ত্রণালয়ে কর্মরত সিনিয়র সহকারী সচিবই মিনহাজকে স্বামী হিসেবে স্বীকার করেন। সূত্র জানায়, সরকারি ও বেসরকারি উচ্চ মহলের কর্তাব্যক্তিদের কাছে এ প্রতারক কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর পলিসি উপদেষ্টা হিসেবে পরিচিত। এর পাশাপাশি দেশীয় পরিচয় পলিসি মেকার ও অ্যাডভাইজার টু সজীব ওয়াজেদ জয় (সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র জয়) ও আওয়ামী শাসনের সুফল ভোগকারী হিসেবে। কোথাও আবার নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প টিমের (যারা ট্রাম্পের ইলেকশন নিয়ে কাজ করেন) একজন অন্যতম সদস্য হিসেবে দাবি করেন। ট্রাম্পের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের ইনভাইটেশন পেয়ে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানেও অংশগ্রহণ করার কথা জানান তিনি। তার এত এত পদ-পদবিতে বিশ্বাস করেন দেশের প্রশাসন ক্যাডার, জুডিশিয়ারি ও পুলিশ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্তাব্যক্তিরা।

ভুক্তভোগীরা জানান, সরকারি কর্তাব্যক্তিদের কাছে এই ভয়ংকর প্রতারক অত্যন্ত মেধাবী বলে পরিচিত। কারও পক্ষেই তার ছদ্মবেশী ডাবল স্ট্যান্ডার্ড চরিত্র বোঝা একবারেই সম্ভব নয়; বরং মিষ্টভাষী ও সুন্দর ব্যবহারের একজন ব্যক্তিত্ব। যেসব কর্তাব্যক্তি তার সঙ্গে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জারে চ্যাটের সঙ্গে সংযুক্ত থাকেন তিনি তাদের পদ-পদবি ও অবস্থান বুঝে তাদের সঙ্গে আলাপচারিতা করেন। এসব উচ্চপদস্থ কর্তাব্যক্তির সঙ্গে অধিকাংশ সময় বিদেশি সিম দ্বারা চালিত ফেসটাইম ও হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করেন। যাতে তিনি অকপটেই বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করেও সেসব কর্তাব্যক্তিকে বলে বেড়ান আমি এখন কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র অথবা ইংল্যান্ডে অবস্থান করছি। এ ছাড়াও বিভিন্ন জনকে ফোন করে বিএনপির স্ট্যান্ডিং কমিটির ‘সমন্বয়কারী’ হিসেবে পরিচয় দেন।

সূত্র জানায়, গত ১০-১২ বছর ফ্যাসিস্ট সরকারের উচ্চপদস্থ কর্তাব্যক্তিদের সান্নিধ্যে থেকে অনেক অপকর্মে জড়ান আশরাফুজ্জামান মিনহাজ। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও গোপনীয় শাখার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হ্যাকের সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন। এই অপকর্মের সঙ্গে তিনি ব্যবহার করেন তার নিজের স্ত্রীকে। তার স্ত্রী বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা। প্রতারক মিনহাজ নিজেকে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে অপকর্ম করতে গিয়ে একবার আটক হয়েছিলেন। পরে দীর্ঘদিন তিনি কারাগারে ছিলেন। সাহারা খাতুনের একজন স্বজন এমন তথ্য নিশ্চিত করেন। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর গা-ঢাকা দেন এ প্রতারক।

সম্প্রতি নতুন পন্থা অবলম্বন করে অর্থ কামানোর ধান্দায় নেমেছেন তিনি। পতিত সরকারের ১৬ বছরে বিএনপি-জামায়াতপন্থি কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ও ভালো পদায়ন দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তবে ক্ষতির সম্মুখীন হবেন—এমন আশঙ্কায় ওই কর্মকর্তারা তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার অনুরোধ করেছেন।

ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম, দুর্নীতি, মামলা বাণিজ্য, হয়রানি, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনে প্রতারক আশরাফুজ্জামান মিনহাজ ও তার কথিত স্ত্রী সিনিয়র সহকারী সচিবের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ দিয়েছেন একজন ভুক্তভোগী। অভিযোগে বলা হয়েছে, প্রতারক মিনহাজ ম্যাজিস্ট্রেট সেজে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গাড়ি জব্দ, জরিমানা ও চাঁদাবাজি করেন। তার কথিত স্ত্রী তাকে এসব অপরাধে সহযোগিতা করেন। নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বহু মানুষকে হয়রানি করছেন আশরাফুজ্জামান মিনহাজ। নোয়াখালীতে নিজ এলাকায় অন্তত ১০ জনকে মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে সচিবালয়ে সিনিয়র সহকারী সচিবের কক্ষে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এ প্রসঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি কোনো কথা বলবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। এরপর নিজের গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে জানিয়ে কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান প্রতারক মিনহাজের কথিত স্ত্রী ওই সিনিয়র সহকারী সচিব।