ঢাকা ০৮:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ত্রিপুরা পাড়ায় আগুন, সন্দেহের তীর বেনজীরের দিকে!

নিজস্ব প্রতিবেদক, বান্দরবান
  • সময় ০৯:১৭:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / 70

ত্রিপুরা পাড়ায় আগুন

বান্দরবানের লামা উপজেলায় খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বড় দিনের আন্দদ কেড়ে নিল দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুন। তবে সাবেক পুলিশের প্রধান বেনজীর আহমেদের দিকেই সন্দেহের তীর তুলছেন স্থানীয়রা। কারণ হিসাবে জায়গাটি বেনজীর আহমেদের স্ত্রীর নামে ইজারা দেয়া হয়েছিল বলে দাবি করেছেন পাহাড়বাসীরা।

দুর্বৃত্তের দেয়া আগুনে একটি পাড়ায় আগুনে ১৭টি বসতঘর ভস্মীভূত হয়েছে। মঙ্গলবার (২৪ ডি‌সেম্বর) গভীর রাতে উপজেলার সরই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের নতুন বেতছড়া ত্রিপুরা পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন লামা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনামূল হক ভূঞা।

পাড়ার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টার দিকে বেতছড়া ত্রিপুরা পাড়ার বাসিন্দারা বড়দিনের উৎসব পালন করতে পাশের এলাকায় অবস্থান কর‌ছিলেন। মধ্যরাতে হঠাৎ পাড়ার বাড়িঘরে আগুন দেখতে পান। সেখানে গি‌য়ে দেখেন পুরো পাড়া পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে তাদের ঘরের আসবাবপত্র, সোলার, হাঁড়ি-পাতিল, পোশাক ও কাগজপত্রসহ সব‌কিছু পুড়ে যায়। বর্তমানে তারা ভস্মীভূত হয়ে যাওয়া পাড়ায় খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন।

পাড়ার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিন-চার বছর আগে একদল লোক এসে দাবি করে পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের স্ত্রীর নামে ওই পাড়ার জমি ইজারা দেওয়া হয়েছে। তারা পাড়ার বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করে সেখানে একটি বাগান করেন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ওই পাড়ার বাসিন্দারা আবার সেখানে এসে ঘর তৈরি করে বসবাস শুরু করেন। এরপর থেকে দখলদাররা আবারও উৎপাত শুরু করে। দেওয়া হয় পাড়ার বাসিন্দাদের হুমকি-ধমকি।

পাড়াবাসাীর অ‌ভিযোগ, দীর্ঘদিন ধ‌রে পাড়া‌র জায়গা‌ দখলের জন্য এলাকার ভূ‌মিদস্যু ‌স্টিফেন ত্রিপুরা, মসৈনিয়া, যোয়া‌কিমসহ বেশ কয়েকজনের ইন্ধনে শুক্কুর ও র‌ফি‌ক পাড়াবাসীকে উচ্ছেদের চেষ্টা করছেন। মঙ্গলবার রাতে পাড়ায় আগুন লাগার পর শুক্কুর ও র‌ফিককে সেখানে দেখেছেন তারা। সেখানে বসবাসকারীদের বিতা‌ড়িত ক‌রে জ‌মি দখ‌লের জন্য তারাই আগুন দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন পাড়ার কয়েকজন বাসিন্দা।

ত্রিপুরা পাড়ায় আগুন
ত্রিপুরা পাড়ায় আগুন

৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জামাল উদ্দিন বলেন, ‘বড়দিন উপলক্ষে মঙ্গলবার রাতে পাশের টংগ্যাঝিরি পাড়ায় অনুষ্ঠান চলছিল। বেতছড়া পাড়ার বাসিন্দারা সে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। তখন আগুনে বেতছড়া পাড়ার ১৯টি ঘরের মধ্যে ১৭টিই পুড়ে যায়। পাড়ার সব ঘরবাড়ি বাঁশ ও শনের তৈরি। টংগ্যাঝিরি থেকে বেতছড়া পাড়ায় আসতে আধাঘণ্টার মতো লাগে। আগুন লাগার বিষয়টি জেনে সবাই এসে দেখে, ১৭টি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সেইসঙ্গে সবার ঘরের জিনিসপত্র পুড়ে গেছে। একটি পক্ষ এই আগুন দিয়েছে।’

বেতছড়া পাড়ার বাসিন্দা এসকেন্দার ত্রিপুরা বলেন, ‘পাড়ার জায়গা‌টিতে আমরা দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছি। কিন্তু সম্প্রতি কয়েকজন ভূ‌মিদস্যু আমাদের পাড়া থেকে উচ্ছেদ করে জায়গা দখ‌লের পাঁয়তারা করছে। বড়দিনের উৎসবে যাওয়ার সুযোগে এসব ভূ‌মিদস্যু পাড়ায় আগুন দিয়েছে।’

পাড়ার কারবারি চন্দ্রম‌ণি ত্রিপুরা বলেন, ‘মঙ্গলবার রাত থেকে বড়দিনের উৎসব শুরু হয়েছে। এটি আমাদের বড় অনুষ্ঠান। আমাদের পাড়ায় গির্জা, পা‌নি ও বিদ্যুৎ না থাকায় সবাই পাশের টংগ্যাঝিরি পাড়ায় উৎসবে যাই। রাত ১টার দিকে শুনতে পাই পাড়ায় আগুন লেগেছে। এসে দেখি, পাড়ার ১৯টি ঘরের মধ্যে ১৭টিই পুড়ে গেছে। আমরা এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার চাই।’

এ বিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রূপায়ন দেব বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ক্ষতিগ্রস্ত ১৭টি পরিবারকে ৩৪টি কম্বল এবং শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকেও তাদের সহায়তা দেওয়া হয়েছে। জায়গা নিয়ে কারও কোনও অভিযোগ থাকলে লিখিত আকারে অভিযোগ দিতে বলেছি পাড়াবাসীকে।

লামা থানার ওসি এনামূল হক ভূঞা বলেন, ‘ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ক্ষতিগ্রস্তরা কিছু অভিযোগ দিয়েছেন, সেগুলো নিয়ে তদন্ত চলছে।’

এ ব্যাপারে বান্দরবানের পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ কাওছার বলেন, ‘ক্ষয়ক্ষ‌তির প‌রিমাণ এখনও জানা যায়‌নি। আগুনের বিষ‌য়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে লামা থানার ওসিকে বলা হয়েছে।’

শেয়ার করুন

ত্রিপুরা পাড়ায় আগুন, সন্দেহের তীর বেনজীরের দিকে!

সময় ০৯:১৭:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

বান্দরবানের লামা উপজেলায় খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বড় দিনের আন্দদ কেড়ে নিল দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুন। তবে সাবেক পুলিশের প্রধান বেনজীর আহমেদের দিকেই সন্দেহের তীর তুলছেন স্থানীয়রা। কারণ হিসাবে জায়গাটি বেনজীর আহমেদের স্ত্রীর নামে ইজারা দেয়া হয়েছিল বলে দাবি করেছেন পাহাড়বাসীরা।

দুর্বৃত্তের দেয়া আগুনে একটি পাড়ায় আগুনে ১৭টি বসতঘর ভস্মীভূত হয়েছে। মঙ্গলবার (২৪ ডি‌সেম্বর) গভীর রাতে উপজেলার সরই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের নতুন বেতছড়া ত্রিপুরা পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন লামা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনামূল হক ভূঞা।

পাড়ার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টার দিকে বেতছড়া ত্রিপুরা পাড়ার বাসিন্দারা বড়দিনের উৎসব পালন করতে পাশের এলাকায় অবস্থান কর‌ছিলেন। মধ্যরাতে হঠাৎ পাড়ার বাড়িঘরে আগুন দেখতে পান। সেখানে গি‌য়ে দেখেন পুরো পাড়া পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে তাদের ঘরের আসবাবপত্র, সোলার, হাঁড়ি-পাতিল, পোশাক ও কাগজপত্রসহ সব‌কিছু পুড়ে যায়। বর্তমানে তারা ভস্মীভূত হয়ে যাওয়া পাড়ায় খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন।

পাড়ার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিন-চার বছর আগে একদল লোক এসে দাবি করে পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের স্ত্রীর নামে ওই পাড়ার জমি ইজারা দেওয়া হয়েছে। তারা পাড়ার বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করে সেখানে একটি বাগান করেন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ওই পাড়ার বাসিন্দারা আবার সেখানে এসে ঘর তৈরি করে বসবাস শুরু করেন। এরপর থেকে দখলদাররা আবারও উৎপাত শুরু করে। দেওয়া হয় পাড়ার বাসিন্দাদের হুমকি-ধমকি।

পাড়াবাসাীর অ‌ভিযোগ, দীর্ঘদিন ধ‌রে পাড়া‌র জায়গা‌ দখলের জন্য এলাকার ভূ‌মিদস্যু ‌স্টিফেন ত্রিপুরা, মসৈনিয়া, যোয়া‌কিমসহ বেশ কয়েকজনের ইন্ধনে শুক্কুর ও র‌ফি‌ক পাড়াবাসীকে উচ্ছেদের চেষ্টা করছেন। মঙ্গলবার রাতে পাড়ায় আগুন লাগার পর শুক্কুর ও র‌ফিককে সেখানে দেখেছেন তারা। সেখানে বসবাসকারীদের বিতা‌ড়িত ক‌রে জ‌মি দখ‌লের জন্য তারাই আগুন দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন পাড়ার কয়েকজন বাসিন্দা।

ত্রিপুরা পাড়ায় আগুন
ত্রিপুরা পাড়ায় আগুন

৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জামাল উদ্দিন বলেন, ‘বড়দিন উপলক্ষে মঙ্গলবার রাতে পাশের টংগ্যাঝিরি পাড়ায় অনুষ্ঠান চলছিল। বেতছড়া পাড়ার বাসিন্দারা সে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। তখন আগুনে বেতছড়া পাড়ার ১৯টি ঘরের মধ্যে ১৭টিই পুড়ে যায়। পাড়ার সব ঘরবাড়ি বাঁশ ও শনের তৈরি। টংগ্যাঝিরি থেকে বেতছড়া পাড়ায় আসতে আধাঘণ্টার মতো লাগে। আগুন লাগার বিষয়টি জেনে সবাই এসে দেখে, ১৭টি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সেইসঙ্গে সবার ঘরের জিনিসপত্র পুড়ে গেছে। একটি পক্ষ এই আগুন দিয়েছে।’

বেতছড়া পাড়ার বাসিন্দা এসকেন্দার ত্রিপুরা বলেন, ‘পাড়ার জায়গা‌টিতে আমরা দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছি। কিন্তু সম্প্রতি কয়েকজন ভূ‌মিদস্যু আমাদের পাড়া থেকে উচ্ছেদ করে জায়গা দখ‌লের পাঁয়তারা করছে। বড়দিনের উৎসবে যাওয়ার সুযোগে এসব ভূ‌মিদস্যু পাড়ায় আগুন দিয়েছে।’

পাড়ার কারবারি চন্দ্রম‌ণি ত্রিপুরা বলেন, ‘মঙ্গলবার রাত থেকে বড়দিনের উৎসব শুরু হয়েছে। এটি আমাদের বড় অনুষ্ঠান। আমাদের পাড়ায় গির্জা, পা‌নি ও বিদ্যুৎ না থাকায় সবাই পাশের টংগ্যাঝিরি পাড়ায় উৎসবে যাই। রাত ১টার দিকে শুনতে পাই পাড়ায় আগুন লেগেছে। এসে দেখি, পাড়ার ১৯টি ঘরের মধ্যে ১৭টিই পুড়ে গেছে। আমরা এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার চাই।’

এ বিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রূপায়ন দেব বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ক্ষতিগ্রস্ত ১৭টি পরিবারকে ৩৪টি কম্বল এবং শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকেও তাদের সহায়তা দেওয়া হয়েছে। জায়গা নিয়ে কারও কোনও অভিযোগ থাকলে লিখিত আকারে অভিযোগ দিতে বলেছি পাড়াবাসীকে।

লামা থানার ওসি এনামূল হক ভূঞা বলেন, ‘ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ক্ষতিগ্রস্তরা কিছু অভিযোগ দিয়েছেন, সেগুলো নিয়ে তদন্ত চলছে।’

এ ব্যাপারে বান্দরবানের পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ কাওছার বলেন, ‘ক্ষয়ক্ষ‌তির প‌রিমাণ এখনও জানা যায়‌নি। আগুনের বিষ‌য়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে লামা থানার ওসিকে বলা হয়েছে।’