তিনপক্ষের দুর্নীতির যোগসাজশে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত
- সময় ১১:৪৯:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 13
দুই ধরনের বিনিময় ছাড়া আওয়ামী লীগের শাসনামনে কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ম. তামিম। একই সঙ্গে যেগুলো স্থাপন করা হয়েছে সেখানে দুর্নীতির ক্ষেত্রে তিনপক্ষের যোগসাজশও ছিল।
রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিনিময় ছাড়া কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হয়নি। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও পিএম অফিসের একক ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে ব্যাপকতা বেড়েছে দুর্নীতির।
তিনি বলেন, রাজনীতিবিদ, আমলা ও ব্যবসায়ী এই তিন পক্ষের যোগসাজশেই জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে চরম দুর্নীতি হয়েছে। বাংলাদেশে এখন ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করা হলে দুর্নীতি কমানো সম্ভব হবে।
শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) এফডিসিতে ‘ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে বিগত সরকারের আমলে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতি নিয়ে আয়োজিত এক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরশেন (বিপিসি) জ্বালানি খাতের সবচেয়ে অস্বচ্ছ একটি প্রতিষ্ঠান উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিপিসির এই অস্বচ্ছতার পেছনে সরকারেরও সংশ্লিষ্টতা ছিল। কারণ তেল বিক্রির মুনাফা প্রকাশ হোক তা সরকার চাইত না। ফলে লোকসান দেখিয়ে দেখিয়ে দফার দফায় তেলের দাম বৃদ্ধি করত। বর্তমান সরকারও বিপিসির অস্বচ্ছতা কাটাতে তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি, যা দ্রুতই গ্রহণ করা উচিত।
ড. তামিম বলেন, জবাবদিহিতা এড়াতে আওয়ামী সরকার বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে গণশুনানির প্রক্রিয়া বন্ধ করেছিল। বিইআরসিকে পাস কাটিয়ে ইচ্ছেমতো দাম নির্ধারণ করতো। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন-২০০৩ এর অধীনে জ্বালানি পণ্যের মূল্য নির্ধারণের গণশুনানি প্রক্রিয়া চালু করা।
বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে আমদানি নির্ভরতা সহসাই কমবে না জানিয়ে এই জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বলেন, ইতোমধ্যে ভারত-নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। কিন্তু চাইলে আমাদের দেশ থেকেও বিদ্যুৎ সেসব দেশে রপ্তানি করা সম্ভব।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ডাকাতরা বাংলাদেশে আর্থিক খাতের মত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতেও অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছিল। লুটেরাদের সুযোগ করে দিতে ২০১০ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিতর্কিত ইনডেমনিটি আইন পাস করেছিল, যার মেয়াদ দফায় দফায় বাড়িয়ে দুর্নীতির ক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছিল। বিদ্যুৎ উৎপাদন ছাড়াও বিতরণ, সঞ্চালন ও মিটার কেনাকাটার নামে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হয়েছিল। যাতে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের তথ্য মিলেছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা ও চাহিদা কতটুকু তার কোনো সঠিক হিসাব নেই। গত সাড়ে ১৫ বছরে কোনো ছাড়পত্র ছাড়াই বেসরকারি খাতে শতাধিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। যার বেশিরভাগই কোনো কাজে আসেনি। বিগত সরকার সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন না করেই বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করেছে। ফলে যতটুকু বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো তা সঞ্চালন লাইনের অভাবে বিতরণ সম্ভব হতো না। ফলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে কোটি কোটি টাকা লুটপাট হওয়া স্বত্বেও লোডশেডিং থেকে আমাদের মুক্তি মিলেনি। শতভাগ জনগোষ্ঠীকে বিদ্যুতের আওতায় আনা হয়েছে বলে বিগত সরকার মানুষকে মিথ্যা গল্প গুনিয়েছে। ফেরি করে বিদ্যুৎ দেওয়ার কথা বলা হলেও বিদ্যুতের ফেরিওয়ালারা এখন জেলে অথবা পলাতক। বিদ্যুতের এমন মিটার বসিয়েছে বাতি না জ্বললেও মিটার ঘোরে। প্রিপেইড মিটারে রিচার্জ করার সঙ্গে সঙ্গে এক চতুর্থাংশ টাকা মিটার খেয়ে ফেলে। শিল্প কারখানাগুলোতে গ্যাসের পাইপে গ্যাসের পরিবর্তে বাতাস দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তিটি সম্পূর্ণ একপাক্ষিক ও দেশবিরোধী। এতে বাংলাদেশের স্বার্থ সুরক্ষিত হয়নি। জনগণকে পাশকাটিয়ে গোপনীয় ভাবে আদানি গ্রুপের সঙ্গে এই চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। চুক্তি স্বাক্ষরকারী তৎকালীন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান চুক্তির কপি না দেখেই স্বাক্ষর করেছেন বলে জানা গেছে। অন্তর্বর্তী সরকার আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তিটি প্রকাশ করলে মানুষের মধ্যে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। তবে যেহেতু ভারত থেকে এই বিদ্যুৎ কেনায় বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষিত, তাই সরকার এই চুক্তি বাতিলের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে।
প্রতিযোগিতায় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি- বাংলাদেশকে হারিয়ে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকরা বিজয়ী হন।