ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবিতে অনড় বিএনপি

- সময় ১১:০৫:৫৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল ২০২৫
- / 32
ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন চেয়ে অনড় অবস্থানে রয়েছে বিএনপি। এ দাবিকে ঘিরে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে দলটি। একই সঙ্গে ডান ও বাম ঘরানার আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলকে পাশে এনে বড় রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গঠনের চেষ্টা করছে বিএনপি।
দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে ঐক্যমতে পৌঁছালে সরকারের ওপর চাপ বাড়বে এবং দাবি আদায়ের পথ সহজ হবে।
৬ এপ্রিল বিএনপির সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের নেতাদের এক বৈঠকে এই দাবির প্রতি হেফাজতের সমর্থনের কথা জানানো হয়। এ ছাড়া বিএনপির বাইরে থাকা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, ঈদের আগে এককভাবে কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। চলতি এপ্রিলেই দ্বিতীয় ধাপের কর্মসূচি শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে। এসব কর্মসূচিকে যুগপৎ আন্দোলনে রূপ দেওয়ার প্রস্তুতিও চলছে।
বিএনপির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা জানান, নির্বাচনের রোডম্যাপ বিষয়ে চূড়ান্ত অবস্থান জানতে তাঁরা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আগ্রহী। সরকার এ বিষয়ে অনীহা দেখালে দ্রুত নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ও স্পষ্ট রোডম্যাপ চাই আমরা। সরকার এ বিষয়ে কী ভাবছে তা জানতে চেয়ে শিগগিরই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বসব।”
এদিকে জামায়াতের সঙ্গে দ্বন্দ্ব ও মতপার্থক্যের কারণে বিএনপি ডান ও বামঘরানার কিছু ইসলামপন্থী ও বামপন্থী দলের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছে। এর মাধ্যমে একটি বিকল্প রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গঠনের চেষ্টা চলছে। এই প্ল্যাটফর্মের লক্ষ্য হলো যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তোলা ও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বিষয়ে একক বার্তা দেওয়া।
বিএনপির মতে, সারাদেশে দলটির বিরুদ্ধে চলা প্রচারণার জবাবে এই প্ল্যাটফর্ম থেকে বক্তব্য দিলে তা হবে আরও বিশ্বাসযোগ্য। আন্দোলন গড়ে তোলার পাশাপাশি ভবিষ্যতে নির্বাচনকেন্দ্রিক জোট বা আসন সমঝোতার সম্ভাবনাও রয়েছে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “জামায়াতের সঙ্গে আপাতত জোটের কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে অন্যান্য সমমনা দলগুলোর সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন এবং প্রয়োজন হলে নির্বাচনী জোট হতে পারে।”
এদিকে স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার ইঙ্গিত দেন। এর প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি নেতারা তাঁর বক্তব্যকে অস্পষ্ট বলে প্রত্যাখ্যান করেন এবং দ্রুত ও নির্ধারিত সময়ে নির্বাচনের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন।
এনসিপি ও অন্যান্য শরিক দলগুলোও একই দাবি জানিয়ে বলেছে, সংস্কার ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত না করে নির্বাচন হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। এনসিপির এক নেতার পাঁচ বছরের জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে ক্ষমতায় রাখার প্রস্তাব নিয়ে বিএনপি নেতাদের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “সরকার দুর্বল হয়ে পড়েছে বলে জনমনে অস্থিরতা বাড়ছে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”
বিএনপি জানিয়েছে, সরকারের সময় বাড়ানোর চেষ্টা, কিংবা স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাবকে তারা গুরুত্ব দেবে না। বরং ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের দাবি সামনে রেখেই বিভাগীয় পর্যায়ে বড় কর্মসূচি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “১৭ বছর ধরে আমরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লড়ছি। তাই এখন যদি আবারও গড়িমসি করা হয়, তাহলে আমাদের আন্দোলন আরও শক্তিশালী হবে।”
এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, “সরকার দ্রুত রোডম্যাপ না দিলে, অতীতের মতো সমমনা দলগুলোকে নিয়ে আবার যুগপৎ আন্দোলনের পথে হাঁটবে বিএনপি।”