সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী প্রভুকে বিমানবন্দর থেকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি তার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক আল মামুন স্বাক্ষরিত এক লিখিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আজ (২৫ নভেম্বর, সোমবার) এই দাবি জানানো হয়েছে।

লিখিত প্রতিবাদ লিপিতে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী প্রভুকে এয়ারপোর্ট থেকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি অবিলম্বে তার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।

গত ৫ আগস্টের পর সারাদেশে হাজার হাজার হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্মম হামলা, নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ ও মন্দির-বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে যা এখনো চলমান রয়েছে। এসব হামলা ও হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা কোন মানুষের অপরাধ হতে পারে না। যেকোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। এদেশে মানুষের বাকস্বাধীনতা ও মানবাধিকার বলতে এখন আর কিছু নেই। সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী প্রভুকে বিমানবন্দর থেকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনার মাধ্যমে বর্তমান অবৈধ ও অসাংবিধানিক অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রকৃত ফ্যাসিস্ট চেহারা জাতির সামনে আবার উন্মোচিত হয়েছে। এই অবৈধ ও অসাংবিধানিক সরকার পরিকল্পিত ভাবে মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সভা সমাবেশের স্বাধীনতার মতো সাংবিধানিক অধিকারগুলো কেড়ে নিয়ে বারবার সংবিধান লঙ্ঘন করে যাচ্ছে যা এদেশের জনগণ কখনোই মেনে নিবে না।

মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদদের রক্ত ও ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত সংবিধানকে একাত্তরের পরাজিত অপশক্তির দোসররা আবার ক্ষতবিক্ষত করে বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর জন্য গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। সকল ধর্মের মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্ব। ধর্মের দোহাই দিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন ও বৈষম্য কখনোই মেনে নিবে না মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। সারাদেশে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর মৌলবাদী অপশক্তির দোসররা রাষ্ট্রীয় মদদে প্রতিনিয়ত নির্যাতন ও নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্র তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে উল্টো তাদেরকে গ্রেফতার ও হয়রানি করছে। রাষ্ট্র দেখেও যেন না দেখার ভান করছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ কোন শ্রেণী পেশার মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নেই।

দেশে এখন আইনশৃঙ্খলা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার মুখ থুবড়ে পড়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির কারণে প্রতিদিন সারাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, লুটপাট, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, চুরি ও ছিনতাই সংঘটিত হচ্ছে। প্রতিদিন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে মানুষের জীবিকা নির্বাহ অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সাংবাদিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সুশীল সমাজ, ভিন্ন মত ও সম্প্রদায়ের মানুষদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হচ্ছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষরা বাধ্য হয়ে নিজেদের জীবনের নিরাপত্তার দাবিতে সারাদেশে শান্তিপূর্ণ ভাবে প্রতিবাদ জানিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি রংপুরে সনাতনীদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে রাষ্ট্রীয় মদদে মৌলবাদী অপশক্তিরা হামলা চালিয়ে কয়েকজন সনাতনীকে হত্যা ও নির্মমভাবে আহত করেছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এই হত্যা ও হামলার ঘটনায় কোন মামলা ও গ্রেফতার হয়নি যা আইনের শাসন পরিপন্থী। সনাতনীদের অধিকার আদায়ের যৌক্তিক আন্দোলনকে দমিয়ে রাখার জন্য নানাবিধ ষড়যন্ত্র চলছে। সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আজ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী প্রভুকে বিমানবন্দর থেকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে যা দেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইন পরিপন্থী।

মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের দাবি, সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী প্রভুকে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে এবং সনাতনীদের যৌক্তিক দাবিসমূহ মেনে নিতে হবে। অন্যথায় দেশব্যাপী কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করবে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।