১০:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৩ মার্চ ২০২৫, ১৯ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ইফতারে যেসব কারণে খেজুর খাবেন

খেজুর হলো জাদু ও বিষ প্রতিরোধক

নিউজ ডেস্ক
  • সময় ০১:১৮:০২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ মার্চ ২০২৫
  • / 58

ইফতারে খেজুর

শুরু হলো মাহে রমজান মাস। রমজান মাসে সারাদিন রোজা রাখার পর দিনের শেষে ইফতার করা হয়। ইফতারে প্রধান খাবার হিসেবে থাকে খেজুর। খেজুরকে ইফতারে গুরুত্ব দেওয়ার কারণ হলো, খেজুর দিয়েই মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইফতার করতেন। এ কারণে বিশ্বব্যাপী রোজাদাররা ইফতারে খেজুর খেয়ে থাকেন।

রোজা রেখে খেজুর খেয়ে ইফতার শুরু করা সুন্নত। খেজুর হলো সর্বোত্তম খাদ্য। খেজুরবিহীন বাড়ির পরিবার যেন ক্ষুধার্ত পরিবার। খেজুর হলো জাদু ও বিষ প্রতিরোধক। মদিনার খেজুর হলো, সবচেয়ে উত্তম খেজুর। বিশেষ করে, সর্বোত্তম খেজুর হলো ‘আজওয়া খেজুর’। তা ছাড়া আমাদের প্রতিদিনের নিয়মিত খাবারের সঙ্গে সঙ্গে খেজুর খাওয়া যেমন একদিকে সুন্নত, অপরদিকে দৈনন্দিন জীবনের খাদ্য ঘাটতির চাহিদা পরিপূরক। তাই রমজানে খেজুরের কদর বেড়ে যায়। খেজুর না থাকলে আমাদের ইফতার যেন পরিপূর্ণ হয় না।

আমরা কেন এত গুরুত্বের সঙ্গে খেজুর খাই? আমরা হয়তো অনেকেই জানি, মিষ্টি মধুর ছোট এই ফলটির গুণের কথা। সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে সাতটি আজওয়া খেজুর খাবে, বিষ ও জাদু তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’ (বোখারি ও মুসলিম)। সুতরাং পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং হাদিসের নির্দেশনায় খেজুর মানুষের জন্য অনেক উপকারী।

ইফতারে খেজুর
ইফতারে খেজুর

বলা হয়ে থাকে, বছরে যতগুলো দিন, খেজুরে তার চেয়েও বেশি গুণ। খেজুর যেমনি সুস্বাদু, তেমনি পুষ্টিকর ফল। খেজুর খাওয়ার বৈজ্ঞানিক কারণ অনেক। যেমন—খেজুরের পুষ্টিগুণ প্রচুর। খেজুরে সুগারের পরিমাণ এত বেশি থাকে যে, এক কামড়েই অনেকটা এনার্জি পাওয়া যায়। এর মধ্যে আয়রন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফাইবার, গ্লুকোজ, ম্যাগনেশিয়াম ও সুক্রোজ থাকে। যে কারণে খেজুর খাওয়ার মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে শরীরে এনার্জি বেড়ে যায়। সারাদিন উপোস করে শরীরে ক্লান্তি আসে, তা দূর করে এনার্জি জোগাতে সাহায্য করে খেজুর।

রোজা রাখলে সাধারণত অ্যাসিডিটি হয়। যার থেকে অস্বস্তি হতে থাকে। খেজুর শরীরে অ্যাসিডের মাত্রা বশে রেখে অস্বস্তি কমায়। সারাদিন না খেয়ে থাকলে খাওয়ার সময় বেশি খেয়ে ফেলার প্রবণতা তৈরি হয়। তাই খেজুর খেয়ে রোজা ভাঙলে এর মধ্যে থাকা জটিল কার্বোহাইড্রেট হজম হতে বেশি সময় নেয়। ফাইবার থাকার কারণে পেট ভরা লাগে। তাই বেশি খাওয়ার আগেই পেট ভরে যায়। অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকলে তা পৌষ্টিকতন্ত্রের কার্যকারিতায় ব্যাঘাত ঘটায়। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও হতে পারে। খেজুর শরীরে উৎসেচক ক্ষরণে সাহায্য করে। ফলে হজম ভালো হয়।

খেজুরকে প্রাকৃতিক শক্তির উৎস বলা হয়। খেজুর খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি খুবই পুষ্টিকর। খেজুরের জাত, আকার এবং শুকনো কিংবা ভেজা অবস্থার উপর নির্ভর করে এর পুষ্টি উপাদান ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। তবে দুইটি খেজুরের আনুমানিক ওজন ১৫ গ্রাম, যার ক্যালোরি মোটামুটি ভাবে ৪৬ থাকে। এছাড়া শর্করা ১২ দশমিক ৪ গ্রাম, আমিষ শূন্য দশমিক ৪ গ্রাম, চর্বি শূন্য দশমিক ১ গ্রাম, খাদ্যআঁশ এক দশমিক ৪ গ্রাম থাকে।

খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং মিনারেল। এতে ভিটামিন বি, নিয়াসিন, প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড এবং ফলেটের মতো ভিটামিন রয়েছে। এছাড়া এতে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, কপার, জিংক, ম্যাংগানিজ, আয়রনের মতো গুরুত্বপূর্ণ মিনারেলও রয়েছে, যা ইফতারে পুষ্টিচাহিদা পূরণ করে।

খেজুরে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট বা প্রাকৃতিক শর্করা যেমন গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ এবং সুক্রোজ থাকে। একটি খেজুরে ৪৪ থাকে ৮৮ শতাংশই সহজ শর্করা বা চিনি। যা শরীরে দ্রুত শোষিত হয় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা তাৎক্ষণিকভাবে বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই খেজুর খাওয়ার মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে শরীরে এনার্জি বেড়ে যায় ও শরীরে ক্লান্তি দূর হয়। তাই ইফতারে খেজুর খেলে উপকার পাওয়া যায়।

খেজুরে উচ্চমাত্রার শর্করা থাকা সত্ত্বেও প্রচুর আঁশের কারণে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই) তত বেশি না। খেজুরের ধরণ ভেদে জিআই ৪৬ থেকে ৫৫-এর মধ্যে ওঠানামা করে, যা ডায়াবেটিক রোগীর জন্য নিরাপদ মাত্রা।

মাত্র কয়েকটি খেজুর ক্ষুধার তীব্রতা অনেকাংশে কমিয়ে দেয় এবং পাকস্থলীকে কম খাবার গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে। আবার অল্পতেই শরীরের প্রয়োজনীয় শর্করার ঘাটতি পূরণ করে। সারাদিন না খেয়ে থাকলে খাওয়ার সময় বেশি খেয়ে ফেলার প্রবণতা তৈরি হয় না। তাই খেজুর খেয়ে ইফতার করলে এর মধ্যে থাকা জটিল কার্বোহাইড্রেট হজম হতে বেশি সময় নেয়। ফাইবার থাকার কারণে পেট ভরা লাগে। তাই বেশি খাওয়ার আগেই পেট ভরে যায়।

খেজুরে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা শরীরকে ডিটক্সিফাই করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি শরীরকে বিভিন্ন সংক্রমণ এবং রোগ থেকে রক্ষা করে। সাধারণ ঠান্ডা, কাশি এবং অন্যান্য সংক্রমণ থেকে শুরু করে ক্যানসার, ডায়াবেটিস, আলঝেইমার এবং হৃদরোগের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।

খেজুরে থাকা ফাইবার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে। আবার খেজুরে অনেক বেশি পরিমাণে পটাসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে, যা উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। অর্থাৎ হৃৎপিণ্ডের কার্যকারিতা বাড়িয়ে হৃদপিণ্ডকে ভালো রাখতে খেজুর অনেক উপকারী।

খেজুরে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা লিভারের স্বাস্থ্যরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি লিভারের টক্সিন দূর করে এবং লিভারের কার্যকারিতা বাড়ায়। যারা লিভারের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য খেজুর একটি উপকারী খাদ্য।

খেজুর বদহজম রোধ করে। কোষ্ঠকাঠিন্য ও বুকের জ্বালাপোড়া উপশম করে। খেজুরে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিড ও ফাইবার খাবার হজমে সাহায্য করে। খেজুরে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হয়।

খেজুরে রয়েছে ভিটামিন এ এবং বিটা-ক্যারোটিন, যা চোখের জন্য অত্যন্ত উপকারী। খেজুরের লিউটেন এবং জিক্সাথিন নামক উপাদান চোখের রেটিনা ভালো রাখে।

ইফতারে খেজুর
ইফতারে খেজুর

খেজুরে আয়রন রয়েছে, যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়। যারা অ্যানিমিয়ায় ভুগছেন, তাদের শরীরে রক্তের পরিমাণ বাড়াতে খেজুর অত্যন্ত উপকারী। খেজুরে প্রতিদিন আয়রনের চাহিদার প্রায় ১১ ভাগ পূরণে সক্ষম।

খেজুরে রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম। এই উপাদানগুলো হাড় এবং দাঁতের স্বাস্থ্যরক্ষায়, গঠনে ও ক্ষয়রোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খেজুরে থাকা ম্যাগনেশিয়াম ফোলা ও ব্যথা সারিয়ে আরাম দেয়।

স্নায়ুতন্ত্রের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে প্রয়োজন ভিটামিন বি, যা খেজুরে পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়। ভিটামিন বি৬ মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। এটি স্মৃতিশক্তি বাড়ায় এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। খেজুরের আয়রন এবং ভিটামিন বি চুলের স্বাস্থ্যরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুল পড়া কমায়।

খেজুরে থাকা ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের নানা সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। ত্বকের শুষ্কতা ও বলিরেখা নিয়ন্ত্রণ করতেও খেজুর উপকারী।

খেজুর রুচিবর্ধক খাবার। অনেকেরই খাওয়ার রুচি থাকে না। তাদেরকে নিয়মিত খেজুর খেতে দিলে রুচি ফিরে আসবে।

যারা ওজন বাড়াতে চান তারা দুধের সঙ্গে কয়েকটা খেজুর মিশিয়ে খেলে উপকার পাবেন। এছাড়া খেজুর অনেক মিষ্টি হওয়ায় চিনির পরিবর্তে খাবারের মিষ্টি স্বাদ বাড়াতে খেজুর ব্যবহার করা যেতে পারে।

অত্যন্ত মিষ্টি ও উচ্চ শর্করাযুক্ত ফল হওয়ায় সাধারণত ডায়াবেটিক ও ওজনাধিক্য রোগীদের বেশি খেজুর খেতে নিষেধ করা হয়। খেজুর অনেক উপকারী হলেও খেজুরের গ্লুকোজ রোগীর শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এটি গ্রহণ করা উচিত নয়।

যাদের শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি, বিশেষ করে কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে খেজুর পটাশিয়ামের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। ফলে শরীরে বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।

শেয়ার করুন

ইফতারে যেসব কারণে খেজুর খাবেন

খেজুর হলো জাদু ও বিষ প্রতিরোধক

সময় ০১:১৮:০২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ মার্চ ২০২৫

শুরু হলো মাহে রমজান মাস। রমজান মাসে সারাদিন রোজা রাখার পর দিনের শেষে ইফতার করা হয়। ইফতারে প্রধান খাবার হিসেবে থাকে খেজুর। খেজুরকে ইফতারে গুরুত্ব দেওয়ার কারণ হলো, খেজুর দিয়েই মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইফতার করতেন। এ কারণে বিশ্বব্যাপী রোজাদাররা ইফতারে খেজুর খেয়ে থাকেন।

রোজা রেখে খেজুর খেয়ে ইফতার শুরু করা সুন্নত। খেজুর হলো সর্বোত্তম খাদ্য। খেজুরবিহীন বাড়ির পরিবার যেন ক্ষুধার্ত পরিবার। খেজুর হলো জাদু ও বিষ প্রতিরোধক। মদিনার খেজুর হলো, সবচেয়ে উত্তম খেজুর। বিশেষ করে, সর্বোত্তম খেজুর হলো ‘আজওয়া খেজুর’। তা ছাড়া আমাদের প্রতিদিনের নিয়মিত খাবারের সঙ্গে সঙ্গে খেজুর খাওয়া যেমন একদিকে সুন্নত, অপরদিকে দৈনন্দিন জীবনের খাদ্য ঘাটতির চাহিদা পরিপূরক। তাই রমজানে খেজুরের কদর বেড়ে যায়। খেজুর না থাকলে আমাদের ইফতার যেন পরিপূর্ণ হয় না।

আমরা কেন এত গুরুত্বের সঙ্গে খেজুর খাই? আমরা হয়তো অনেকেই জানি, মিষ্টি মধুর ছোট এই ফলটির গুণের কথা। সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে সাতটি আজওয়া খেজুর খাবে, বিষ ও জাদু তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’ (বোখারি ও মুসলিম)। সুতরাং পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং হাদিসের নির্দেশনায় খেজুর মানুষের জন্য অনেক উপকারী।

ইফতারে খেজুর
ইফতারে খেজুর

বলা হয়ে থাকে, বছরে যতগুলো দিন, খেজুরে তার চেয়েও বেশি গুণ। খেজুর যেমনি সুস্বাদু, তেমনি পুষ্টিকর ফল। খেজুর খাওয়ার বৈজ্ঞানিক কারণ অনেক। যেমন—খেজুরের পুষ্টিগুণ প্রচুর। খেজুরে সুগারের পরিমাণ এত বেশি থাকে যে, এক কামড়েই অনেকটা এনার্জি পাওয়া যায়। এর মধ্যে আয়রন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফাইবার, গ্লুকোজ, ম্যাগনেশিয়াম ও সুক্রোজ থাকে। যে কারণে খেজুর খাওয়ার মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে শরীরে এনার্জি বেড়ে যায়। সারাদিন উপোস করে শরীরে ক্লান্তি আসে, তা দূর করে এনার্জি জোগাতে সাহায্য করে খেজুর।

রোজা রাখলে সাধারণত অ্যাসিডিটি হয়। যার থেকে অস্বস্তি হতে থাকে। খেজুর শরীরে অ্যাসিডের মাত্রা বশে রেখে অস্বস্তি কমায়। সারাদিন না খেয়ে থাকলে খাওয়ার সময় বেশি খেয়ে ফেলার প্রবণতা তৈরি হয়। তাই খেজুর খেয়ে রোজা ভাঙলে এর মধ্যে থাকা জটিল কার্বোহাইড্রেট হজম হতে বেশি সময় নেয়। ফাইবার থাকার কারণে পেট ভরা লাগে। তাই বেশি খাওয়ার আগেই পেট ভরে যায়। অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকলে তা পৌষ্টিকতন্ত্রের কার্যকারিতায় ব্যাঘাত ঘটায়। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও হতে পারে। খেজুর শরীরে উৎসেচক ক্ষরণে সাহায্য করে। ফলে হজম ভালো হয়।

খেজুরকে প্রাকৃতিক শক্তির উৎস বলা হয়। খেজুর খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি খুবই পুষ্টিকর। খেজুরের জাত, আকার এবং শুকনো কিংবা ভেজা অবস্থার উপর নির্ভর করে এর পুষ্টি উপাদান ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। তবে দুইটি খেজুরের আনুমানিক ওজন ১৫ গ্রাম, যার ক্যালোরি মোটামুটি ভাবে ৪৬ থাকে। এছাড়া শর্করা ১২ দশমিক ৪ গ্রাম, আমিষ শূন্য দশমিক ৪ গ্রাম, চর্বি শূন্য দশমিক ১ গ্রাম, খাদ্যআঁশ এক দশমিক ৪ গ্রাম থাকে।

খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং মিনারেল। এতে ভিটামিন বি, নিয়াসিন, প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড এবং ফলেটের মতো ভিটামিন রয়েছে। এছাড়া এতে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, কপার, জিংক, ম্যাংগানিজ, আয়রনের মতো গুরুত্বপূর্ণ মিনারেলও রয়েছে, যা ইফতারে পুষ্টিচাহিদা পূরণ করে।

খেজুরে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট বা প্রাকৃতিক শর্করা যেমন গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ এবং সুক্রোজ থাকে। একটি খেজুরে ৪৪ থাকে ৮৮ শতাংশই সহজ শর্করা বা চিনি। যা শরীরে দ্রুত শোষিত হয় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা তাৎক্ষণিকভাবে বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই খেজুর খাওয়ার মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে শরীরে এনার্জি বেড়ে যায় ও শরীরে ক্লান্তি দূর হয়। তাই ইফতারে খেজুর খেলে উপকার পাওয়া যায়।

খেজুরে উচ্চমাত্রার শর্করা থাকা সত্ত্বেও প্রচুর আঁশের কারণে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই) তত বেশি না। খেজুরের ধরণ ভেদে জিআই ৪৬ থেকে ৫৫-এর মধ্যে ওঠানামা করে, যা ডায়াবেটিক রোগীর জন্য নিরাপদ মাত্রা।

মাত্র কয়েকটি খেজুর ক্ষুধার তীব্রতা অনেকাংশে কমিয়ে দেয় এবং পাকস্থলীকে কম খাবার গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে। আবার অল্পতেই শরীরের প্রয়োজনীয় শর্করার ঘাটতি পূরণ করে। সারাদিন না খেয়ে থাকলে খাওয়ার সময় বেশি খেয়ে ফেলার প্রবণতা তৈরি হয় না। তাই খেজুর খেয়ে ইফতার করলে এর মধ্যে থাকা জটিল কার্বোহাইড্রেট হজম হতে বেশি সময় নেয়। ফাইবার থাকার কারণে পেট ভরা লাগে। তাই বেশি খাওয়ার আগেই পেট ভরে যায়।

খেজুরে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা শরীরকে ডিটক্সিফাই করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি শরীরকে বিভিন্ন সংক্রমণ এবং রোগ থেকে রক্ষা করে। সাধারণ ঠান্ডা, কাশি এবং অন্যান্য সংক্রমণ থেকে শুরু করে ক্যানসার, ডায়াবেটিস, আলঝেইমার এবং হৃদরোগের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।

খেজুরে থাকা ফাইবার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে। আবার খেজুরে অনেক বেশি পরিমাণে পটাসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে, যা উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। অর্থাৎ হৃৎপিণ্ডের কার্যকারিতা বাড়িয়ে হৃদপিণ্ডকে ভালো রাখতে খেজুর অনেক উপকারী।

খেজুরে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা লিভারের স্বাস্থ্যরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি লিভারের টক্সিন দূর করে এবং লিভারের কার্যকারিতা বাড়ায়। যারা লিভারের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য খেজুর একটি উপকারী খাদ্য।

খেজুর বদহজম রোধ করে। কোষ্ঠকাঠিন্য ও বুকের জ্বালাপোড়া উপশম করে। খেজুরে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিড ও ফাইবার খাবার হজমে সাহায্য করে। খেজুরে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হয়।

খেজুরে রয়েছে ভিটামিন এ এবং বিটা-ক্যারোটিন, যা চোখের জন্য অত্যন্ত উপকারী। খেজুরের লিউটেন এবং জিক্সাথিন নামক উপাদান চোখের রেটিনা ভালো রাখে।

ইফতারে খেজুর
ইফতারে খেজুর

খেজুরে আয়রন রয়েছে, যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়। যারা অ্যানিমিয়ায় ভুগছেন, তাদের শরীরে রক্তের পরিমাণ বাড়াতে খেজুর অত্যন্ত উপকারী। খেজুরে প্রতিদিন আয়রনের চাহিদার প্রায় ১১ ভাগ পূরণে সক্ষম।

খেজুরে রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম। এই উপাদানগুলো হাড় এবং দাঁতের স্বাস্থ্যরক্ষায়, গঠনে ও ক্ষয়রোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খেজুরে থাকা ম্যাগনেশিয়াম ফোলা ও ব্যথা সারিয়ে আরাম দেয়।

স্নায়ুতন্ত্রের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে প্রয়োজন ভিটামিন বি, যা খেজুরে পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়। ভিটামিন বি৬ মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। এটি স্মৃতিশক্তি বাড়ায় এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। খেজুরের আয়রন এবং ভিটামিন বি চুলের স্বাস্থ্যরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুল পড়া কমায়।

খেজুরে থাকা ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের নানা সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। ত্বকের শুষ্কতা ও বলিরেখা নিয়ন্ত্রণ করতেও খেজুর উপকারী।

খেজুর রুচিবর্ধক খাবার। অনেকেরই খাওয়ার রুচি থাকে না। তাদেরকে নিয়মিত খেজুর খেতে দিলে রুচি ফিরে আসবে।

যারা ওজন বাড়াতে চান তারা দুধের সঙ্গে কয়েকটা খেজুর মিশিয়ে খেলে উপকার পাবেন। এছাড়া খেজুর অনেক মিষ্টি হওয়ায় চিনির পরিবর্তে খাবারের মিষ্টি স্বাদ বাড়াতে খেজুর ব্যবহার করা যেতে পারে।

অত্যন্ত মিষ্টি ও উচ্চ শর্করাযুক্ত ফল হওয়ায় সাধারণত ডায়াবেটিক ও ওজনাধিক্য রোগীদের বেশি খেজুর খেতে নিষেধ করা হয়। খেজুর অনেক উপকারী হলেও খেজুরের গ্লুকোজ রোগীর শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এটি গ্রহণ করা উচিত নয়।

যাদের শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি, বিশেষ করে কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে খেজুর পটাশিয়ামের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। ফলে শরীরে বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।