ঢাকা ০৫:১০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কেন সুইস ব্যাংক থেকে অর্থ সরাচ্ছেন বাংলাদেশীরা

নিউজ ডেস্ক
  • সময় ১০:৩৩:৫৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ জুন ২০২৪
  • / 259

এক বছরের ব্যবধানে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ তুলে নিয়েছেন বাংলাদেশিরা। ২০২৩ সালে বাংলাদেশিদের আমানত সাড়ে পাঁচ কোটি সুইস ফ্রাঁ থেকে কমে এখন দাঁড়িয়েছে এক কোটি ৮০ লাখ ফ্রাঁ।

সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনে দেশটির ব্যাংকগুলো থেকে বাংলাদেশিদের অর্থ তুলে নেওয়ার এই গতিকে তীব্র বলা হয়েছে।

গ্রাহকের গোপনীয়তা রক্ষার ক্ষেত্রে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোর সুনাম রয়েছে। কর ফাঁকি দেয়া কিংবা দুর্নীতি বা অপরাধের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ রাখার জন্য ‘ট্যাক্স হ্যাভেন’ হিসেবে সুইস ব্যাংকগুলোর দুর্নামও রয়েছে। বিশ্বের অনেক দুর্নীতিবাজ রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মচারি বা নামকরা তারকারা সুইস ব্যাংকগুলোতে তাদের বৈধ-অবৈধ পথে উপার্জিত অর্থ গচ্ছিত রাখার ক্ষেত্রে নিরাপদ মনে করেন।

তবে স¤প্রতিক বছরগুলোতে গোপনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় ও সমালোচনা দেখা দেওয়ায় অনেকে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলো থেকে বিশ্বের অন্যান্য দেশে তাদের অর্থ সরিয়ে নিচ্ছে।

এসএনবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলো থেকে বাংলাদেশিদের অর্থ তুলে নেওয়ার হার কয়েক বছর ধরে বাড়ছে। এর আগে ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২১ সালেও সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের আমানতের পরিমাণ ছিল ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁ। কিন্তু ২০২২ সালে তা কমে পাঁচ কোটি ৫০ লাখ ফ্রাঁতে দাঁড়ায়।

২০২৩ সালের প্রতিবেদন বলছে, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানত পাঁচ কোটি ৫০ লাখ ফ্রাঁ থেকে কমে এক কোটি ৮০ লাখ ফ্রাঁ হয়েছে। প্রতি ফ্রাঁ ১৩১ টাকা ধরলে এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২৩৮ কোটি টাকা।

প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২১ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা রাখা অর্থের পরিমাণ ৮৭২ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁতে পৌঁছায়, যা দেশটির ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ পরিমাণ অর্থ জমা।

তবে ২০২০ সালে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ তার আগের বছরের তুলনায় কম ছিল। ওই বছর সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ ছিল ৫৬ কোটি ৩০ লাখ সুইস ফ্রাঁ, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় পাঁচ হাজার ২০৩ কোটি টাকার বেশি।

এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে দেশটির বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা করা অর্থের পরিমাণ ছিল ৬০ কোটি ৩০ লাখ ফ্রাঁ। ২০১৮ সালে এ অর্থের পরিমাণ ছিল ৬২ কোটি সুইস ফ্রাঁ। আর ২০১৭ সালে এর পরিমাণ ছিল ৬৬ কোটি ১৯ লাখ সুইস ফ্রাঁ।

এদিকে বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও নাগরিকেরও সুইস ব্যাংকে অর্থ আমানতের হার ২০২৩ সালে প্রায় ৭০ শতাংশ কমেছে। গত চার বছরের মধ্যে ভারতীয়দের আমানতের পরিমাণ সর্বনি¤েœ পৌঁছেছে ২০২৩ সালে।

আমানত হ্রাস পাওয়ার পরও সুইস ব্যাংকে ভারতীয়দের অর্থের পরিমাণ এক দশমিক শূণ্য চার বিলিয়ন সুইস ফ্রাঁতে দাঁড়িয়েছে, যা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৯ হাজার ৭৭১ কোটি রুপি। এ নিয়ে সুইস ব্যাংকে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ও নাগরিকদের আমানত টানা দ্বিতীয়বারের মতো কমেছে।

সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের ‘মোট দায়ের’ মধ্যে ব্যক্তিগত, ব্যাংক এবং অন্যান্য উদ্যোগের আমানতসহ সব ধরনের তহবিল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

শেয়ার করুন

কেন সুইস ব্যাংক থেকে অর্থ সরাচ্ছেন বাংলাদেশীরা

সময় ১০:৩৩:৫৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ জুন ২০২৪

এক বছরের ব্যবধানে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ তুলে নিয়েছেন বাংলাদেশিরা। ২০২৩ সালে বাংলাদেশিদের আমানত সাড়ে পাঁচ কোটি সুইস ফ্রাঁ থেকে কমে এখন দাঁড়িয়েছে এক কোটি ৮০ লাখ ফ্রাঁ।

সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনে দেশটির ব্যাংকগুলো থেকে বাংলাদেশিদের অর্থ তুলে নেওয়ার এই গতিকে তীব্র বলা হয়েছে।

গ্রাহকের গোপনীয়তা রক্ষার ক্ষেত্রে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোর সুনাম রয়েছে। কর ফাঁকি দেয়া কিংবা দুর্নীতি বা অপরাধের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ রাখার জন্য ‘ট্যাক্স হ্যাভেন’ হিসেবে সুইস ব্যাংকগুলোর দুর্নামও রয়েছে। বিশ্বের অনেক দুর্নীতিবাজ রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মচারি বা নামকরা তারকারা সুইস ব্যাংকগুলোতে তাদের বৈধ-অবৈধ পথে উপার্জিত অর্থ গচ্ছিত রাখার ক্ষেত্রে নিরাপদ মনে করেন।

তবে স¤প্রতিক বছরগুলোতে গোপনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় ও সমালোচনা দেখা দেওয়ায় অনেকে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলো থেকে বিশ্বের অন্যান্য দেশে তাদের অর্থ সরিয়ে নিচ্ছে।

এসএনবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলো থেকে বাংলাদেশিদের অর্থ তুলে নেওয়ার হার কয়েক বছর ধরে বাড়ছে। এর আগে ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২১ সালেও সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের আমানতের পরিমাণ ছিল ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁ। কিন্তু ২০২২ সালে তা কমে পাঁচ কোটি ৫০ লাখ ফ্রাঁতে দাঁড়ায়।

২০২৩ সালের প্রতিবেদন বলছে, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানত পাঁচ কোটি ৫০ লাখ ফ্রাঁ থেকে কমে এক কোটি ৮০ লাখ ফ্রাঁ হয়েছে। প্রতি ফ্রাঁ ১৩১ টাকা ধরলে এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২৩৮ কোটি টাকা।

প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২১ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা রাখা অর্থের পরিমাণ ৮৭২ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁতে পৌঁছায়, যা দেশটির ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ পরিমাণ অর্থ জমা।

তবে ২০২০ সালে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ তার আগের বছরের তুলনায় কম ছিল। ওই বছর সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ ছিল ৫৬ কোটি ৩০ লাখ সুইস ফ্রাঁ, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় পাঁচ হাজার ২০৩ কোটি টাকার বেশি।

এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে দেশটির বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা করা অর্থের পরিমাণ ছিল ৬০ কোটি ৩০ লাখ ফ্রাঁ। ২০১৮ সালে এ অর্থের পরিমাণ ছিল ৬২ কোটি সুইস ফ্রাঁ। আর ২০১৭ সালে এর পরিমাণ ছিল ৬৬ কোটি ১৯ লাখ সুইস ফ্রাঁ।

এদিকে বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও নাগরিকেরও সুইস ব্যাংকে অর্থ আমানতের হার ২০২৩ সালে প্রায় ৭০ শতাংশ কমেছে। গত চার বছরের মধ্যে ভারতীয়দের আমানতের পরিমাণ সর্বনি¤েœ পৌঁছেছে ২০২৩ সালে।

আমানত হ্রাস পাওয়ার পরও সুইস ব্যাংকে ভারতীয়দের অর্থের পরিমাণ এক দশমিক শূণ্য চার বিলিয়ন সুইস ফ্রাঁতে দাঁড়িয়েছে, যা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৯ হাজার ৭৭১ কোটি রুপি। এ নিয়ে সুইস ব্যাংকে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ও নাগরিকদের আমানত টানা দ্বিতীয়বারের মতো কমেছে।

সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের ‘মোট দায়ের’ মধ্যে ব্যক্তিগত, ব্যাংক এবং অন্যান্য উদ্যোগের আমানতসহ সব ধরনের তহবিল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।