ঢাকা ০২:৪০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কেন কক্সবাজার থেকে বিদায় নিচ্ছে ‘লাল কাঁকড়া’?

নিউজ ডেস্ক
  • সময় ০৪:৫১:১৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ জুলাই ২০২৪
  • / 255

পৃথিবীর অখণ্ডিত দীর্ঘতম সৈকত কক্সবাজার। সমুদ্রের নীল জলরাশির পাশাপাশি লাল কাঁকড়ার দুরন্ত ছোটাছুটি। এসবই বিমোহিত করে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের।

কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশে উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের বাইল্যাখালী এলাকা। কক্সবাজার শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে দৃষ্টিনন্দন এই সৈকত। সৈকতটির বিশেষত্ব হলো, লাল কাঁকড়ার ছোটাছুটি।

কেবল এই সৈকত নয়; কক্সবাজারের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টেও গত কয়েক বছর আগে দেখা মিলতো লাল কাঁকড়ার। যা বিমোহিত করতো দেশি-বিদেশি পর্যটকদের। মনে হতো কক্সবাজারে বেড়াতে আসা অতিথিদের লাল গালিচা সংবর্ধনা দিচ্ছে কাঁকড়ার দল।

লাল কাঁকড়াকে বলা হয় প্রকৃতির নীরব প্রহরী। প্রাণীটি মৃত উদ্ভিদ এবং প্রাণীর অংশ খেয়ে ফেলে, যা মাটিতে পুষ্টি জোগায় এবং পুষ্টি চক্র বজায় রাখে। এছাড়া মাটিতে গর্ত তৈরি করে, মাটির বায়ুচলাচল বৃদ্ধি করে। উপকূলীয় বাঁধ ও বনভূমি রক্ষা করতেও সাহায্য করে এই প্রাণীটি।

গবেষণার তথ্য বলছে, কক্সবাজারে পর্যটনের চাপ, সৈকতে যত্রতত্র বিচ বাইক ও ঘোড়ার চলাচল এবং পর্যটকদের অব্যবস্থাপনার কারণে লাল কাঁকড়ার বাসা ধ্বংস হচ্ছে। তাদের বংশবৃদ্ধির প্রক্রিয়ায় বিরূপ প্রভাব ফেলছে।

সমুদ্রের পানি দূষণ কক্সবাজারের লাল কাঁকড়ার অন্যতম প্রধান শত্রু। সাগরের পানি বিষাক্ত গড়ে উঠছে, যার ফলে সাগরের প্রাণীজগৎ এবং বিশেষত লাল কাঁকড়ার ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে।

জলবায়ু পরিবর্তনও লাল কাঁকড়ার অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে কক্সবাজারে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে গেছে, যা তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ হয়েছে। এই উচ্চ তাপমাত্রা এবং কম বৃষ্টিপাতের ফলে সাগরের পরিবেশ পরিবর্তিত হচ্ছে এবং এটি লাল কাঁকড়ার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

এছাড়া কক্সবাজারের উপক‚লে অবৈধ মৎস্য শিকারও লাল কাঁকড়ার জন্য একটি বড় হুমকি। নিষিদ্ধ জালের ব্যবহার এবং অবৈধ মৎস্য শিকারের ফলে সাগরের জীববৈচিত্র্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত প্রায় ১২০ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকতের দরিয়ানগর, বাহারছড়া, জাহাজপুরা, শামলাপুর, ইনানী, হিমছড়ি, সেনা ক্যাম্প, মাদারবনিয়া, মনখালী, ডায়াবেটিক পয়েন্ট, টেকনাফ উপক‚ল বিশেষ করে সাবরাং এবং শাহপরীর দ্বীপ এলাকায় লাল কাঁকড়ার উপস্থিতি দেখা যায়। এই এলাকাগুলোতে জনবসতি কম এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ লাল কাঁকড়ার জন্য আদর্শ।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কক্সবাজারের লাল কাঁকড়া রক্ষায় সুনির্দিষ্টভাবে কোন পদক্ষেপ না থাকলেও সামগ্রিকভাবে পরিবেশ সংরক্ষণ ও জীববৈচিত্র রক্ষায় বেশ কিছু কর্মসূচি রয়েছে।

শেয়ার করুন

কেন কক্সবাজার থেকে বিদায় নিচ্ছে ‘লাল কাঁকড়া’?

সময় ০৪:৫১:১৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ জুলাই ২০২৪

পৃথিবীর অখণ্ডিত দীর্ঘতম সৈকত কক্সবাজার। সমুদ্রের নীল জলরাশির পাশাপাশি লাল কাঁকড়ার দুরন্ত ছোটাছুটি। এসবই বিমোহিত করে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের।

কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশে উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের বাইল্যাখালী এলাকা। কক্সবাজার শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে দৃষ্টিনন্দন এই সৈকত। সৈকতটির বিশেষত্ব হলো, লাল কাঁকড়ার ছোটাছুটি।

কেবল এই সৈকত নয়; কক্সবাজারের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টেও গত কয়েক বছর আগে দেখা মিলতো লাল কাঁকড়ার। যা বিমোহিত করতো দেশি-বিদেশি পর্যটকদের। মনে হতো কক্সবাজারে বেড়াতে আসা অতিথিদের লাল গালিচা সংবর্ধনা দিচ্ছে কাঁকড়ার দল।

লাল কাঁকড়াকে বলা হয় প্রকৃতির নীরব প্রহরী। প্রাণীটি মৃত উদ্ভিদ এবং প্রাণীর অংশ খেয়ে ফেলে, যা মাটিতে পুষ্টি জোগায় এবং পুষ্টি চক্র বজায় রাখে। এছাড়া মাটিতে গর্ত তৈরি করে, মাটির বায়ুচলাচল বৃদ্ধি করে। উপকূলীয় বাঁধ ও বনভূমি রক্ষা করতেও সাহায্য করে এই প্রাণীটি।

গবেষণার তথ্য বলছে, কক্সবাজারে পর্যটনের চাপ, সৈকতে যত্রতত্র বিচ বাইক ও ঘোড়ার চলাচল এবং পর্যটকদের অব্যবস্থাপনার কারণে লাল কাঁকড়ার বাসা ধ্বংস হচ্ছে। তাদের বংশবৃদ্ধির প্রক্রিয়ায় বিরূপ প্রভাব ফেলছে।

সমুদ্রের পানি দূষণ কক্সবাজারের লাল কাঁকড়ার অন্যতম প্রধান শত্রু। সাগরের পানি বিষাক্ত গড়ে উঠছে, যার ফলে সাগরের প্রাণীজগৎ এবং বিশেষত লাল কাঁকড়ার ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে।

জলবায়ু পরিবর্তনও লাল কাঁকড়ার অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে কক্সবাজারে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে গেছে, যা তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ হয়েছে। এই উচ্চ তাপমাত্রা এবং কম বৃষ্টিপাতের ফলে সাগরের পরিবেশ পরিবর্তিত হচ্ছে এবং এটি লাল কাঁকড়ার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

এছাড়া কক্সবাজারের উপক‚লে অবৈধ মৎস্য শিকারও লাল কাঁকড়ার জন্য একটি বড় হুমকি। নিষিদ্ধ জালের ব্যবহার এবং অবৈধ মৎস্য শিকারের ফলে সাগরের জীববৈচিত্র্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত প্রায় ১২০ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকতের দরিয়ানগর, বাহারছড়া, জাহাজপুরা, শামলাপুর, ইনানী, হিমছড়ি, সেনা ক্যাম্প, মাদারবনিয়া, মনখালী, ডায়াবেটিক পয়েন্ট, টেকনাফ উপক‚ল বিশেষ করে সাবরাং এবং শাহপরীর দ্বীপ এলাকায় লাল কাঁকড়ার উপস্থিতি দেখা যায়। এই এলাকাগুলোতে জনবসতি কম এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ লাল কাঁকড়ার জন্য আদর্শ।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কক্সবাজারের লাল কাঁকড়া রক্ষায় সুনির্দিষ্টভাবে কোন পদক্ষেপ না থাকলেও সামগ্রিকভাবে পরিবেশ সংরক্ষণ ও জীববৈচিত্র রক্ষায় বেশ কিছু কর্মসূচি রয়েছে।