গতিহীন উচ্ছেদ অভিযান
কুষ্টিয়ায় লাইসেন্সবিহীন অবৈধ ইটভাটার ছড়াছড়ি
- সময় ১০:৩৭:২১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 48
কুষ্টিয়ায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রসহ লাইসেন্সবিহীন ইটভাটার ছড়াছড়ি। জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জেলা জুড়ে বছরের পর বছর চলছে অবৈধ ইটভাটা। সরকারী নীতিমালা ও উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে কৃষিজমিতে গড়ে ওঠা ঐ ইটভাটাগুলোতে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ।
এতে বনজ সম্পদ উজাড়ের পাশাপাশি কৃষিজমি নষ্ট, ফসলহানি ও পরিবেশগত বিপর্যয় ঘটছে মারাত্মক। জেলায় ২১৮টি ইটভাটার মধ্যে অনুমোদিত মাত্র ১৫টি। অন্য ২০৩টি চলছে পরিবেশের ছাড়পত্র ও লাইসেন্সবিহীন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুষ্টিয়া জেলার ছয়টি উপজেলায় কৃষিজমিতে গড়ে উঠেছে ২১৮টি ইটভাটা। এর মধ্যে ১২০ উচ্চতার পাকা ফিক্সড্ চিমনির ৯৬টি, জিগ-জ্যাগ ৬৫টি ও মাত্র ৩০/৪০ উচ্চতাসম্পন্ন ড্রাম চিমনির ইটভাটা ৪১টিসহ মোট ২০৩টি লাইসেন্সবিহীন ইটভাটা। সরকারি আইনে কৃষি নষ্ট করে ইটভাটা স্থাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু তা সত্ত্বেও কমপক্ষে প্রতিটি ইটভাটার জন্য তিন-চার একর কৃষিজমি নষ্ট করে ইটভাটা স্থাপন করেছে প্রভাবশালীরা। আইনের ফাঁক-ফোকর ডিঙিয়ে জেলায় গড়ে উঠেছে এসব অবৈধ ইটভাটা।
প্রতি বছরের মতো এবারও চলতি মৌসুমের শুরুতেই কৃষিজমি ও নদীর পলি মাটি কেটে ইটভাটাগুলোতে প্রস্তুত করা হচ্ছে নতুন ইট। এতে জেলায় কৃষিজমি হ্রাস ও উদ্বেগজনকভাবে কমছে খাদ্যশস্য উৎপাদন। ভাটার লাইসেন্স পেতে প্রস্তাবিত আবেদন পত্রের সঙ্গে ইট তৈরিতে মাটির উৎস উল্লেখ করে জেলা প্রশাসকের কাছে হফলনামা দাখিলের বাধ্যতামূলক শর্ত থাকলেও ভাটা মালিকদের অধিকাংশই তা মানছে না। ফলে বেআইনিভাবে কৃষিজমি ও নদী তীরের পলি মাটি কেটে প্রস্তুত করা হচ্ছে ইট।
অন্যদিকে ভাটাগুলোতে কয়লার পাশাপাশি দেদার কাঠ পুড়িয়ে উজাড় করা হচ্ছে ফলদ-বনজ সম্পদ। ইটভাটার নির্গত ধোঁয়া-ছাই ফসলের ক্ষতিসহ পরিবেশ দূষণসহ জনজীবন ক্ষতিগ্রস্ত করছে চরমভাবে। তবে প্রতি বছর কিছু সংখ্যক ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হলেও পরবর্তী সময়ে তা আর এগোয়নি বেশি দূর। ইটভাটা মালিক সমিতির শক্তিশালী সিন্ডিকেটের প্রভাব, অর্থবিত্ত ও তদবিরে পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা অবৈধ ভাটা সম্পূর্ণরূপে উচ্ছেদে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না বলে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ।
এছাড়া কতিপয় ভাটা মালিক উচ্চ আদালতের দারস্থ হয়ে সৃষ্টি করেছে আইনি প্রতিবন্ধকতা। ফলে আইনি জটিলতার পাশাপাশি প্রশাসনিক নির্লিপ্ততায় অবৈধ ইটভাটা বন্ধসহ থামছে না গাছপালা নিধন তৎপরতা। পরিবেশ-প্রতিবেশের ক্ষতি ও কৃষিজমি বিনষ্ট করে ইটভাটা স্থাপনের পরিবর্তে কংক্রিট ঢালাইয়ের আদর্শ মানসম্পন্ন ব্লক ইট ব্যাপকভিত্তিক উৎপাদন ও সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ইমারত নির্মাণে তা ব্যবহারে জোর তাগিদ দেন স্থানীয় সচেতন মহল।
এদিকে গত ৪ ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কুমারখালী উপজেলার চরসাদিপুর এলাকায় স্থাপিত ড্রাম চিমনির ভাটা উচ্ছেদ অভিযানের চেষ্টাকালে জনতার তোপের মুখে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে ফিরে আসেন।
কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা (সিনিয়র কেমিস্ট) হাবিবুল বাসার বাংলা অ্যাফেয়ার্সকে বলেন, গত ২ ডিসেম্বর অবৈধ চারটি ইটভাটায় অভিযান চালানো হয়েছে। এর মধ্যে একটি ভাটা সম্পূর্ণরূপে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি পরিবেশ অধিদপ্তরের ম্যাজিস্ট্রেট পরিচালিত অভিযানে প্রতিটি ইটভাটা মালিকের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা হিসাবে সর্বমোট ৬ লাখ জরিমানা আদায় করা হয়েছে। অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে চলমান অভিযান শিগগিরই আরো জোরদার করা হবে বলে তিনি জানান।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমান জানান, পরিবেশের ছাড়পত্র ও লাইসেন্সবিহীন কোনো ইটভাটা চলতে দেওয়া হবে না। বেআইনি ইটভাটার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে অভিযান শুরু করা হয়েছে। এছাড়া ভাটায় কাঠ পোড়ানো বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।