১১:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৬ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজশাহীতে কনস্টেবলের স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া এসআই’র

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
  • সময় ০২:০৮:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • / 101

পরকীয়া (প্রতীকি ছবি)

পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবদুর রউফের বিরুদ্ধে এক কনস্টেবলের স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া প্রেমের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে মামলা হওয়ার পর থেকেই এসআই রউফ ওই কনস্টেবলকে নানাভাবে হয়রানি করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযুক্ত এসআই আবদুর রউফ আগে রাজশাহীর বোয়ালিয়া ও মতিহার থানায় কর্মরত ছিলেন, বর্তমানে তিনি সাতক্ষীরার কলারোয়া থানায় কর্মরত। অন্যদিকে, ভুক্তভোগী কনস্টেবল রয়েছেন পাবনার ঈশ্বরদীর একটি পুলিশ ফাঁড়িতে।

গত বছর রাজশাহীতে থাকা অবস্থায় ওই কনস্টেবল আরএমপি কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগের তদন্ত করে আরএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিট। তদন্তে ১২৭ পাতার প্রতিবেদনে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়। এর ভিত্তিতে বিভাগীয় মামলা (নম্বর: ২৮/২০২৪) দায়ের করা হয় এবং মামলার তদন্ত করে সম্প্রতি প্রতিবেদন দেন আরএমপির ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম।

ওই কনস্টেবলের স্ত্রী রাজশাহীর সাধুরমোড় এলাকায় বাবার বাড়িতে থাকতেন। বাড়ির সম্পত্তি নিয়ে তার শ্যালিকাদের মধ্যে বিরোধ হলে বোয়ালিয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়, যার তদন্তের দায়িত্ব পান তৎকালীন এসআই আবদুর রউফ।

তদন্তের সূত্র ধরে ওই কনস্টেবলের স্ত্রীর সঙ্গে পরিচয় হয় এসআই রউফের। পরে তিনি বাড়ির নিচতলার একটি ঘর দখল করে ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকতে শুরু করেন। কনস্টেবল ছুটিতে আসলে এসআই রউফ আসতেন না, তবে কনস্টেবল না থাকলে প্রায়ই সেখানে অবস্থান করতেন।

একদিন গভীর রাতে কনস্টেবল তার স্ত্রীর মেসেঞ্জার চ্যাটে এসআই রউফের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ আলাপচারিতা ও ছবি দেখতে পান। তার স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে তিনি রউফের সঙ্গে তর্ক করলে তার স্ত্রী ভুল স্বীকার করেন। কিন্তু সম্পর্ক তখনও চলতে থাকে।

পরবর্তীতে একদিন তার স্ত্রী জানান, এসআই রউফের কাছে তাদের ব্যক্তিগত মুহূর্তের ভিডিও আছে, যা দিয়ে তিনি ব্ল্যাকমেইল করছেন। এ কথা শুনে হতাশ কনস্টেবল থানার ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন, তবে তার সহকর্মীরা তাকে বাঁচিয়ে থানার ওসির কাছে নিয়ে যান। পরে সংশ্লিষ্ট এএসপি তাকে আরএমপির পুলিশ কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ করার পরামর্শ দেন।

বিভাগীয় মামলা দায়েরের পর এসআই রউফ কনস্টেবলের স্ত্রীকে দিয়ে উল্টো তার বিরুদ্ধেই রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি বরাবর অভিযোগ করান। এছাড়া, তার বিরুদ্ধে যৌতুকের মিথ্যা মামলা করানো হয়েছে বলে দাবি করেন কনস্টেবল।

তিনি বলেন, “এসআই রউফ আমার সংসার ধ্বংস করেছে। এখন আমার স্ত্রীকেই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেয় না। তার বিরুদ্ধে প্রমাণিত অভিযোগ থাকার পরও সে আমার বিরুদ্ধে মামলা করিয়েছে, যাতে আমার চাকরিও না থাকে। মানসিক চাপে আমি দুইবার স্ট্রোক করেছি।”

যোগাযোগ করা হলে এসআই আবদুর রউফ প্রথমে দাবি করেন, তিনি কনস্টেবল বা তার স্ত্রীকে চেনেন না। তবে তার শ্বশুরবাড়িতে ভাড়া থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন।

কিন্তু যখন তাকে পরকীয়ার প্রমাণ, অভিযোগপত্র, বিভাগীয় মামলার কপি ও মেসেঞ্জার চ্যাটের স্ক্রিনশট পাঠানো হয়, তখন তিনি আর ফোন ধরেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আরএমপির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, “বিভাগীয় মামলা পুলিশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ নিয়ে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার নিয়ম নেই।”

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পুলিশ সদস্যদের ঢালাও বদলির সময় এসআই আবদুর রউফকে রাজশাহী থেকে সাতক্ষীরার কলারোয়া থানায় বদলি করা হয়। তবে বিভাগীয় মামলার পর তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

শেয়ার করুন

রাজশাহীতে কনস্টেবলের স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া এসআই’র

সময় ০২:০৮:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবদুর রউফের বিরুদ্ধে এক কনস্টেবলের স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া প্রেমের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে মামলা হওয়ার পর থেকেই এসআই রউফ ওই কনস্টেবলকে নানাভাবে হয়রানি করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযুক্ত এসআই আবদুর রউফ আগে রাজশাহীর বোয়ালিয়া ও মতিহার থানায় কর্মরত ছিলেন, বর্তমানে তিনি সাতক্ষীরার কলারোয়া থানায় কর্মরত। অন্যদিকে, ভুক্তভোগী কনস্টেবল রয়েছেন পাবনার ঈশ্বরদীর একটি পুলিশ ফাঁড়িতে।

গত বছর রাজশাহীতে থাকা অবস্থায় ওই কনস্টেবল আরএমপি কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগের তদন্ত করে আরএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিট। তদন্তে ১২৭ পাতার প্রতিবেদনে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়। এর ভিত্তিতে বিভাগীয় মামলা (নম্বর: ২৮/২০২৪) দায়ের করা হয় এবং মামলার তদন্ত করে সম্প্রতি প্রতিবেদন দেন আরএমপির ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম।

ওই কনস্টেবলের স্ত্রী রাজশাহীর সাধুরমোড় এলাকায় বাবার বাড়িতে থাকতেন। বাড়ির সম্পত্তি নিয়ে তার শ্যালিকাদের মধ্যে বিরোধ হলে বোয়ালিয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়, যার তদন্তের দায়িত্ব পান তৎকালীন এসআই আবদুর রউফ।

তদন্তের সূত্র ধরে ওই কনস্টেবলের স্ত্রীর সঙ্গে পরিচয় হয় এসআই রউফের। পরে তিনি বাড়ির নিচতলার একটি ঘর দখল করে ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকতে শুরু করেন। কনস্টেবল ছুটিতে আসলে এসআই রউফ আসতেন না, তবে কনস্টেবল না থাকলে প্রায়ই সেখানে অবস্থান করতেন।

একদিন গভীর রাতে কনস্টেবল তার স্ত্রীর মেসেঞ্জার চ্যাটে এসআই রউফের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ আলাপচারিতা ও ছবি দেখতে পান। তার স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে তিনি রউফের সঙ্গে তর্ক করলে তার স্ত্রী ভুল স্বীকার করেন। কিন্তু সম্পর্ক তখনও চলতে থাকে।

পরবর্তীতে একদিন তার স্ত্রী জানান, এসআই রউফের কাছে তাদের ব্যক্তিগত মুহূর্তের ভিডিও আছে, যা দিয়ে তিনি ব্ল্যাকমেইল করছেন। এ কথা শুনে হতাশ কনস্টেবল থানার ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন, তবে তার সহকর্মীরা তাকে বাঁচিয়ে থানার ওসির কাছে নিয়ে যান। পরে সংশ্লিষ্ট এএসপি তাকে আরএমপির পুলিশ কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ করার পরামর্শ দেন।

বিভাগীয় মামলা দায়েরের পর এসআই রউফ কনস্টেবলের স্ত্রীকে দিয়ে উল্টো তার বিরুদ্ধেই রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি বরাবর অভিযোগ করান। এছাড়া, তার বিরুদ্ধে যৌতুকের মিথ্যা মামলা করানো হয়েছে বলে দাবি করেন কনস্টেবল।

তিনি বলেন, “এসআই রউফ আমার সংসার ধ্বংস করেছে। এখন আমার স্ত্রীকেই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেয় না। তার বিরুদ্ধে প্রমাণিত অভিযোগ থাকার পরও সে আমার বিরুদ্ধে মামলা করিয়েছে, যাতে আমার চাকরিও না থাকে। মানসিক চাপে আমি দুইবার স্ট্রোক করেছি।”

যোগাযোগ করা হলে এসআই আবদুর রউফ প্রথমে দাবি করেন, তিনি কনস্টেবল বা তার স্ত্রীকে চেনেন না। তবে তার শ্বশুরবাড়িতে ভাড়া থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন।

কিন্তু যখন তাকে পরকীয়ার প্রমাণ, অভিযোগপত্র, বিভাগীয় মামলার কপি ও মেসেঞ্জার চ্যাটের স্ক্রিনশট পাঠানো হয়, তখন তিনি আর ফোন ধরেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আরএমপির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, “বিভাগীয় মামলা পুলিশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ নিয়ে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার নিয়ম নেই।”

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পুলিশ সদস্যদের ঢালাও বদলির সময় এসআই আবদুর রউফকে রাজশাহী থেকে সাতক্ষীরার কলারোয়া থানায় বদলি করা হয়। তবে বিভাগীয় মামলার পর তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।