কক্সবাজারে আ.লীগের মধুখোর শফিক-নাছির জামায়াতের ছায়াতলে!
- সময় ০৯:০৩:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪
- / 114
পর্যটন নগরী কক্সবাজার সারা বছরই আলোচনায় থাকে। কখনো পর্যটক হয়রানি, আবার কখনো রোহিঙ্গা ইস্যু থেকে সেন্টমার্টিন। তবে এবার আলোচানায় কক্সবাজার সদরের আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী মধুখোর সাবেক হুইপ এবং সাইমুম সারোয়ার কমল (এমপি)’র ক্যাশিয়ার খ্যাত শফিকুল ইসলাম শফিক। এবং ৫ নং ইউনিয়ন পরিষদ (ঝিলংজা)’র ৬ নাম্বার ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নাছির উদ্দিন ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেই পুরো জেলাতেই অস্থিরতা সৃষ্টির পায়তারা করছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
এমনকি ৫ নং ইউনিয়ন পরিষদ (ঝিলংজা)’র নির্বাচিত চেয়ারম্যান টিপু সুলতান সরকারি আদেশে পদ থেকে অপসারিত হওয়ার পর প্যানেল চেয়ারম্যান হওয়ার খায়েস নিয়েই মাঠে নেমেছেন নাছির উদ্দিন। এ প্রতিবেদকের সাথে কথা বলার সময় তিনি তা স্বীকারও করেছেন অকপটে। কিন্তু স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বভার গ্রহণ করা উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জানিয়েছেন, সারাদেশের স্থানীয় সরকারকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য প্রশাসক নিয়োগ করা হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নির্বাচিত কোনো ইউপি সদস্যকেও বিশ্বাস করে না এই অন্তবর্তীকালীন সরকার। আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর হিসাবেই তাদের বিবেচনা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে উপজেলা প্রশাসন থেকেই চেয়ারম্যান পদগুলোতে কাদের প্রশাসক বসানো হবে, যারা জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে ধারণ করেন, তারাই সুযোগ পাবেন। এক্ষেত্রে অনির্বাচিত সুশীল সমাজের কাউকে বেছে নেয়ার সুযোগ রয়েছে। যতই মানববন্ধন-আন্দোলন করুক না কেন, এ সবে কোনো কাজ হবে না বলে এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের একজন উপ সচিব বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
উল্লেখ্য, সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়ী হয়েছিলেন ৫ নং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান টিপু সুলতান। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী জামায়াতের প্রার্থী ছিলেন মাওলানা আবুল কাসেম। নির্বাচন শেষে পরাজয় মেনে নিয়েই রাজনৈতিক শিষ্টাচারের অংশ হিসাবে আবুল কাসেম ভিডিও বার্তা দিয়েছিলেন। সেখানে পরাজিত প্রার্থী নিবার্চন কমিশনসহ প্রশাসনকে ধন্যবাদ দেয়ার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে জয়ী টিপু চেয়ারম্যানকে অভিনন্দন জানান। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও বাংলা অ্যাফেয়ার্সের হাতে সংরক্ষিত রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, ২০২২ সালে শফিকুল ইসলাম শফিক সাবেক এমপি কমলের ক্ষমতার অপব্যহার করে খরুলিয়া বাজারে প্রায় দুই কোটি টাকার সম্পদ দখল করে। দখলের সময় ওই স্থানে বাধাদানকারী নারীদের ওপর হামলার একটি ভিডিও পাওয়া গেছে।
২০১৯ সালে কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা ইউনিয়নের খরুলিয়া ঘাটপাড়ায় শফিক আরো একজন মাওলানার প্রায় অর্ধকোটি টাকার বসতভিটা দখল করে।
নাছির উদ্দিন মেম্বারের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি সদরের লিংকরোড ও উপজেলা বাজারে সরকারি রাজস্ব প্রায় ৩ কোটি ফাঁকি দিয়েছেন। হাটের ইজারার জন্য নিলাম ডাকের নিয়ম থাকলেও সেখানে প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ পন্থায় হাতিয়ে নেয়া হয়। যে বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন অবগত ছিল। এখনো সেই বাজারের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে নাছির উদ্দিনের হাতে। সেখান থেকে প্রতি মাসে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকায় এখনো আয় করছেন বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগী দোকানীরা।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পট পরিবর্তনের পরপরই নিজেদের মুখোশ পাল্টে ফেলে এই নাছির মেম্বার এবং শফিক গং। তারা এখন কক্সবাজার জেলা জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মদদে ইউনিয়ন জামায়াতের নেতা আবুল কাসেমের সহয়তায় স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে নানা জায়গায় নিজের প্রভাব আগের মতোই বজায় রেখেছে। ফলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে বিএনপির নেতাকর্মীরাও এমন হাইব্রিড এবং সুবিধাভোগী মেম্বার ও ক্যাশিয়ারের অবস্থান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে নাছির মেম্বার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিল। তবে রহস্যজনকভাবে ৫৪ ধারায় চালান দেয়া হলে আদালত থেকেই মুক্ত হন বলে নিজেই স্বীকার করেছেন নাছির। মামলা থেকে জামিন পাওয়ার পর জামায়াত নেতাদের শেন্টারে পুরোনো সেই অপকর্মে লিপ্ত হন-এমন অভিযোগও করেছেন স্থানীয়রা।
গত শনিবার কক্সবাজারে একটি ইউনি রিসোর্ট থেকে কয়েকজন ১৮ জন মেম্বারকে আটক করে ১৫ জনকে চালান দেয়া পুলিশ প্রশাসন। কিন্তু ঘটনার মূল হোতা জেলা মেম্বার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও ঝিলংজা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, ইউপি সদস্য নাছির প্রশাসনের সঙ্গে আঁতাত করে পুলিশ হানা দেয়ার ৫ মিনিট আগেই গোপন বৈঠক থেকে পালিয়ে যান। এ ব্যাপারে তিনি বাংলা অ্যাফেয়ার্সকে বলেন, আমি পালিয়ে যাইনি। আমাদের মধ্যেই একটি গ্রুপ ইচ্ছে করে আমাকে আবারও ফাঁসানো চেষ্টা করেছিল। আমি গ্রেপ্তার এড়াতে সরে গিয়েছিলাম। এরপর থেকেই তার ব্যবহৃত (রবি) নাম্বারটি বন্ধ রয়েছে। ফলে তাকে ফোন করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু তিনি হোয়াটসআপে একটিভ থাকায় এ প্রতিবেদকের সাথে কথা হয়েছে।
বাংলা অ্যাফেয়ার্সের পক্ষ থেকে নাছির উদ্দিনকে ইংরেজিতে মেসেজ পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গেই কল ব্যাক করেন। দুই ধাপে প্রায় ১৮ মিনিট কথা হয় তার সঙ্গে।
বাংলা অ্যাফেয়ার্সের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এক পর্যায়ে স্বীকার করে নেন, প্যানেল চেয়ারম্যান হওয়ার জন্যই তিনি এসব করছেন। কিন্তু স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা তিনি কখনোই ছিলেন না বলে দাবি করেন নাছির। এক পর্যায়ে তিনি দায়িত্ব নিয়ে বলেন, আমার বিরোধী পক্ষের ইউপি সদস্যরাই আমাকে ফাঁসাতে চেয়েছিল। সব অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমি কোনো অপকর্মের সাথে জড়িত নই। একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেইক আইডি খুলে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, আমি প্রশাসনের সবাইকে এসব বিষয়ে জানিয়েছি। নাম উল্লেখ করেই সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের অফিসেও সব জানিয়েছেন বলে হুংকার দেন। উল্লেখ্য, তার পাশে বসে থাকা কোনো এক ছোট ভাইয়ের পরামর্শ নিয়েই তিনি কথা বলছিলেন এ প্রতিবেদকের সাথে।
সরকার বিরোধী নাশকতা করার জন্য মানুষ জড়ো করার কাজ চালাচ্ছে এমপি কমলের ক্যাশিয়ার শফিক ও মেম্বার নাছির উদ্দিন। যদিও ক্যাশিয়ার শফিককে ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করা ইউপি সদস্যদের গোপন বৈঠক থেকে ১৫ সদস্য গ্রেপ্তার নিয়ে যখন আলোচনা চলছে, তখন সেটিকে পূর্ব নির্ধারিত অনুষ্ঠান বলেই দাবি করেছেন নাছির মেম্বার। এ সংক্রান্ত সকল প্রমাণাদিও তিনি বাংলা অ্যাফেয়ার্সকে দিয়েছেন। কিন্তু সেখানে কেন পুলিশ হানা দিয়েছিল, সেটির কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি নাসির চেয়ারম্যান। তবে বাংলা অ্যাফেয়ার্সকে দায়িত্বশীল একাধিক সংস্থার সূত্র জানিয়েছে, ইউনি রিসোর্টে পূর্ব নির্ধারিত অনুষ্ঠানের কথা প্রশাসন জানতো। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে তারা মিটিং করেছিল, সারাদেশে যেন আন্দোলন চাঙা করা যায়, সে পরিকল্পনা নিয়ে। পুলিশের হানায় সেটি ভেস্তে য়ায়। তবে এখনো কক্সবাজারে থামছে না নাছির- শফিকদের দাপট। নাছির নিজেকে নির্দোষ এবং পরিস্থিতির শিকার বলেই এমপি-মন্ত্রীদের সাথে যেতেন, শুধু প্রকল্পের ভাগ নিতে। এটাও নিজের মুখেই স্বীকার করেছেন নাছির উদ্দিন। তবে তিনি এটাও বলেন, অনেকেই এখন তিলকে তাল বানিয়ে প্রচার করছে। তিনি এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন বলেও দাবি করেন। একপর্যায়ে বাংলা অ্যাফেয়ার্সের এ প্রতিবেদককে কক্সবাজার ভ্রমনের জন্য আমন্ত্রণ জানান। বিনয়ের সঙ্গেই সেটি পত্যাখান করা হয়েছে।