০৪:২৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ওয়াজ মাহফিলে আয়নাঘর: মাইক বন্ধকারী শ্রমিক নেতা বহিষ্কার

নিজস্ব প্রতিবেদক, মোংলা
  • সময় ০৯:৩২:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • / 56

মাইক বন্ধকারী শ্রমিক নেতা

বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার ঝনঝনিয়া গ্রামে এক ওয়াজ মাহফিলে ‘আয়নাঘর ও ফ্যাসিবাদবিরোধী’ বক্তব্য দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে মোংলা বন্দরের ট্রাফিক বিভাগের পরিদর্শক শেখ শাহিনুর রহমান বক্তার মাইক বন্ধ করে দেন এবং তাকে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

শাহিনুর রহমান মোংলা বন্দরের শ্রমিক লীগ নেতা হিসেবে পরিচিত এবং মোংলা বন্দর শ্রমিক-কর্মচারী সংঘের এডহক কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। তবে ঘটনাটির পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে ২২ ফেব্রুয়ারি রাতে সংগঠনের জরুরি সভায় তাকে আহ্বায়ক পদ থেকে প্রত্যাহার করা হয়।

২১ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) রাত সাড়ে ৮টায় ঝনঝনিয়া গ্রামে আলহাজ লায়লা বেগম জামে মসজিদের বার্ষিক ওয়াজ মাহফিলে ফকিরহাট উপজেলার একটি মাদ্রাসার প্রধান বক্তা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন, ফ্যাসিবাদ ও ‘আয়নাঘর‘ প্রসঙ্গে আলোচনা করছিলেন। এ সময় শাহিনুর রহমান মঞ্চে উঠে বক্তার হাত থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নেন এবং তার বক্তব্য বন্ধ করে দেন। তিনি বলেন, “আমি এখানে উপস্থিত আছি, তাই কোনো রাজনৈতিক বা সাবেক সরকারের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়া যাবে না। দেশে কোনো ‘আয়নাঘর’ বা ‘ফ্যাসিবাদ’ নেই।”

শাহিনুর রহমানের এমন আচরণে মাহফিলে উপস্থিত মুসল্লিরা ক্ষুব্ধ হন এবং তার বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। একপর্যায়ে উত্তেজিত জনতা তাকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেন।

ওয়াজ মাহফিলে বাঁধা দেওয়ার ভিডিও মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে সাধারণ মানুষ ও ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ২২ ফেব্রুয়ারি রাতে মোংলা বন্দর শ্রমিক-কর্মচারী সংঘের জরুরি সভায় শাহিনুর রহমানকে আহ্বায়কের পদ থেকে প্রত্যাহার করা হয়।

ওয়াজ মাহফিলে আয়নাঘর: মাইক বন্ধকারী শ্রমিক নেতা বহিষ্কার
ওয়াজ মাহফিলে আয়নাঘর: মাইক বন্ধকারী শ্রমিক নেতা বহিষ্কার

এ বিষয়ে সংগঠনের অন্যতম সদস্য মতিয়ার রহমান শাকিব বলেন, “শাহিনুর রহমান মাহফিলে প্রধান বক্তার বক্তব্য বাধাগ্রস্ত করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছেন। ভিডিওটি ভাইরাল হলে আমরা বিষয়টি আমলে নিই এবং তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেই। এখন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেবে।”

শাহিনুর রহমানের বিরুদ্ধে এর আগেও তার স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, দুই বছর আগে কোরবানির ঈদের সময় মাংস নিয়ে বিরোধের জেরে তিনি তার স্ত্রী মীরা বেগমকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেন।

সেসময় তিনি দাবি করেন, তার স্ত্রী স্ট্রোক করে মারা গেছেন। তবে চিকিৎসকরা জানান, মৃতদেহে আঘাতের চিহ্ন ছিল। দ্রুত দাফন সম্পন্ন করায় বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়।

এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং শাহিনুর রহমানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন মোংলা ও রামপালের সচেতন মহল।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শেখ শাহিনুর রহমানের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে এ ঘটনার পর থেকে মোংলা বন্দর ও আশপাশের এলাকায় বন্দর শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।

স্থানীয়রা এখন তার কর্মকাণ্ডের বিচার এবং স্ত্রীর হত্যার রহস্য উদঘাটনের দাবি জানাচ্ছেন

শেয়ার করুন

ওয়াজ মাহফিলে আয়নাঘর: মাইক বন্ধকারী শ্রমিক নেতা বহিষ্কার

সময় ০৯:৩২:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার ঝনঝনিয়া গ্রামে এক ওয়াজ মাহফিলে ‘আয়নাঘর ও ফ্যাসিবাদবিরোধী’ বক্তব্য দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে মোংলা বন্দরের ট্রাফিক বিভাগের পরিদর্শক শেখ শাহিনুর রহমান বক্তার মাইক বন্ধ করে দেন এবং তাকে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

শাহিনুর রহমান মোংলা বন্দরের শ্রমিক লীগ নেতা হিসেবে পরিচিত এবং মোংলা বন্দর শ্রমিক-কর্মচারী সংঘের এডহক কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। তবে ঘটনাটির পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে ২২ ফেব্রুয়ারি রাতে সংগঠনের জরুরি সভায় তাকে আহ্বায়ক পদ থেকে প্রত্যাহার করা হয়।

২১ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) রাত সাড়ে ৮টায় ঝনঝনিয়া গ্রামে আলহাজ লায়লা বেগম জামে মসজিদের বার্ষিক ওয়াজ মাহফিলে ফকিরহাট উপজেলার একটি মাদ্রাসার প্রধান বক্তা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন, ফ্যাসিবাদ ও ‘আয়নাঘর‘ প্রসঙ্গে আলোচনা করছিলেন। এ সময় শাহিনুর রহমান মঞ্চে উঠে বক্তার হাত থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নেন এবং তার বক্তব্য বন্ধ করে দেন। তিনি বলেন, “আমি এখানে উপস্থিত আছি, তাই কোনো রাজনৈতিক বা সাবেক সরকারের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়া যাবে না। দেশে কোনো ‘আয়নাঘর’ বা ‘ফ্যাসিবাদ’ নেই।”

শাহিনুর রহমানের এমন আচরণে মাহফিলে উপস্থিত মুসল্লিরা ক্ষুব্ধ হন এবং তার বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। একপর্যায়ে উত্তেজিত জনতা তাকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেন।

ওয়াজ মাহফিলে বাঁধা দেওয়ার ভিডিও মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে সাধারণ মানুষ ও ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ২২ ফেব্রুয়ারি রাতে মোংলা বন্দর শ্রমিক-কর্মচারী সংঘের জরুরি সভায় শাহিনুর রহমানকে আহ্বায়কের পদ থেকে প্রত্যাহার করা হয়।

ওয়াজ মাহফিলে আয়নাঘর: মাইক বন্ধকারী শ্রমিক নেতা বহিষ্কার
ওয়াজ মাহফিলে আয়নাঘর: মাইক বন্ধকারী শ্রমিক নেতা বহিষ্কার

এ বিষয়ে সংগঠনের অন্যতম সদস্য মতিয়ার রহমান শাকিব বলেন, “শাহিনুর রহমান মাহফিলে প্রধান বক্তার বক্তব্য বাধাগ্রস্ত করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছেন। ভিডিওটি ভাইরাল হলে আমরা বিষয়টি আমলে নিই এবং তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেই। এখন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেবে।”

শাহিনুর রহমানের বিরুদ্ধে এর আগেও তার স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, দুই বছর আগে কোরবানির ঈদের সময় মাংস নিয়ে বিরোধের জেরে তিনি তার স্ত্রী মীরা বেগমকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেন।

সেসময় তিনি দাবি করেন, তার স্ত্রী স্ট্রোক করে মারা গেছেন। তবে চিকিৎসকরা জানান, মৃতদেহে আঘাতের চিহ্ন ছিল। দ্রুত দাফন সম্পন্ন করায় বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়।

এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং শাহিনুর রহমানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন মোংলা ও রামপালের সচেতন মহল।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শেখ শাহিনুর রহমানের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে এ ঘটনার পর থেকে মোংলা বন্দর ও আশপাশের এলাকায় বন্দর শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।

স্থানীয়রা এখন তার কর্মকাণ্ডের বিচার এবং স্ত্রীর হত্যার রহস্য উদঘাটনের দাবি জানাচ্ছেন