ঢাকা ১২:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এস আলম পরিবারের ৮৭ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
  • সময় ০৯:১৩:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫
  • / 28

সাইফুল আলম মাসুদ

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সুবিধা পাওয়া শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম (এস আলম) ও তার পরিবারের ১১ সদস্যের ১৬টি স্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে পরিবারটির সদস্যসহ ৮ জনের ৮৭টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের বা জব্দ আদেশ দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার দুর্নীতি দমন কমিশন, দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।

দুদকের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, সংস্থার উপপরিচালক আবু সাইদ এস আলমের স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক ও অস্থাবর সম্পত্তি অবরুদ্ধ চেয়ে আদালতে পৃথক দুটি আবেদন করেন।

তিনি বলেন, দুদকের পক্ষে আইনজীবী রেজাউল হক রেজা শুনানি করেন। শুনানি শেষে আদালত এ আদেশ দেয়।

দুদকের আদালত পরিদর্শক আমির হোসেন বলেন, এস আলম পরিবারের যাদের সম্পত্তি ক্রোক ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান চলমান রয়েছে।

দুদকের আবেদনে বলা হয়, এস আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুর, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, সাইপ্রাস ও অন্যান্য দেশে ১০০ কোটি ডলার ‘পাচারের’ অভিযোগ অনুসন্ধানকালে তার ও তার পরিবারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট সম্পত্তির তথ্য পাওয়া যায়।

এসব সম্পত্তি যাতে হস্তান্তর ও বেহাত না হয় সে জন্য ক্রোক আদেশ চাওয়া হয় আবেদনে।

পরিবারটির অন্য যাদের সম্পদ ক্রোক করার আদেশ হয়েছে তারা হলেন-এস আলমের স্ত্রী ফারজানা পারভীন, মা চেমন আরা বেগম, ভাই মোহাম্মদ আবদুল্লাহ হাসান, ওসমান গনি, রাশেদুল আলম, শহিদুল আলম, এস আলমের ছেলে আহসানুল আলম, আশরাফুল আলম মাহির ও আসাদুল আলম, ওসমানের স্ত্রী ফারজানা বেগম এবং আরেক ভাই আবদুস সামাদের স্ত্রী শাহ ফেরদানা।

সম্পত্তির মধ্যে আছে—গুলশানে ১০ তলা এস আলম টাওয়ার, ধানমন্ডিতে এক বিঘা জমিসহ ৬ তলা ভবন, ধানমন্ডি লেক সার্কাসে ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ জমিসহ ৪ তলা ভবন, গুলশানে ২ হাজার ৬৫৮ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, গুলশান-২ এ দশমিক ৭৮৮৮ একর জমি, উত্তরা আবাসিক এলাকায় ৭ তলা ভবন, ভাটারায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ১০৩ দশমিক ৩ কাঠা জমির প্লট এবং আলাদা আলাদা ১ দশমিক ৭২০০ একর, ৯৬ কাঠা, ১ দশমিক ৯৫৩৬ একর, ১১ দশমিক ১০৬১ বিঘা ও ১৩১ দশমিক ০৪ কাঠা জমি। এসব সম্পত্তির দলিল মূল্য ২০০ কোটি টাকা।

এস আলম পরিবারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় মোট ৮৭টি হিসাবে জমা রয়েছে মোট ২৫ কোটি ৭৭ লাখ ৮৯ হাজার ৭৬৩ টাকা।

তার মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার ১৯টি হিসাবে ১২ কোটি ২৪ লাখ ৭৬ হাজার ৭৬৩ টাকা ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার ৬৮টি হিসাবে ১৩ কোটি ৫৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা রয়েছে।

এস আলমসহ আরো যাদের ব্যাংক হিসাব ক্রোক করার আদেশ হয়েছে তাদের মধ্যে আছেন- তার ভাই মোহাম্মদ আবদুল্লাহ হাসান, ওসমান গনি, রাশেদুল আলম, এস আলমের ছেলে আহসানুল আলম, ওসমান গনির স্ত্রী ফারজানা বেগম।

২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর এস আলমসহ তার পরিবারের ১৩ সদস্যের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত।

নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া অন্যরা হলেন- সাইফুল আলমের স্ত্রী ফারজানা পারভীন, দুই ছেলে আশরাফুল আলম ও আহসানুল আলম; ছয় ভাই মোরশেদুল আলম, সহিদুল আলম, রাশেদুল আলম, আবদুস সামাদ, ওসমান গণি ও মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ হাসান।

এছাড়া আবদুস সামাদের স্ত্রী শাহানা ফেরদৌস, ওসমান গণির স্ত্রী ফারজানা বেগম ও মিশকাত আহমেদ নামের এক ব্যক্তি দেশত্যাগ করতে পারবেন না।

এস আলম সুগার নিলাম
এস আলম সুগার নিলাম

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নানা ক্ষেত্রে সংস্কারের মধ্যে ব্যাংক খাতে লুটপাটের অভিযোগে তদন্তের মুখে পড়ে চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপ।

শেখ হাসিনা সরকারের প্রভাবশালী মহলের সহযোগিতায় এস আলমের বিরুদ্ধে জোরজবরদস্তি করে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার অভিযোগ বহু পুরনো। পরে তিনি ও তার ব্যবসায়ী গোষ্ঠী শরীয়াহভিত্তিক আরও কয়েকটি ব্যাংকেরও নিয়ন্ত্রণ নেন।

এসব ব্যাংক থেকে বিপুল অর্থ নামে ও নাম সর্বস্ব কোম্পানি খুলে অনিয়ম ও জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করার অভিযোগ উঠেছে।

ইতোমধ্যে এস আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে। তাদের বিও অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ করে শেয়ার লেনদেনও স্থগিত করা হয়েছে। নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা বিভিন্ন ব্যাংকের শেয়ার সরকারের মালিকানায় নেওয়ার কথা বলেছেন।

এর মধ্যে ২৯ অগাস্ট এস আলমসহ ৭ আলোচিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর মালিকানা হস্তান্তর স্থগিত করার অনুরোধ জানিয়ে যৌথমূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরকে চিঠি দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

একদিন বাদে ৩১ অগাস্ট সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট জানায়, এস আলম, তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন এবং তাদের ছেলে আহসানুল আলম ও আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের তথ্য মিলছে।

শেয়ার করুন

এস আলম পরিবারের ৮৭ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ

সময় ০৯:১৩:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সুবিধা পাওয়া শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম (এস আলম) ও তার পরিবারের ১১ সদস্যের ১৬টি স্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে পরিবারটির সদস্যসহ ৮ জনের ৮৭টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের বা জব্দ আদেশ দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার দুর্নীতি দমন কমিশন, দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।

দুদকের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, সংস্থার উপপরিচালক আবু সাইদ এস আলমের স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক ও অস্থাবর সম্পত্তি অবরুদ্ধ চেয়ে আদালতে পৃথক দুটি আবেদন করেন।

তিনি বলেন, দুদকের পক্ষে আইনজীবী রেজাউল হক রেজা শুনানি করেন। শুনানি শেষে আদালত এ আদেশ দেয়।

দুদকের আদালত পরিদর্শক আমির হোসেন বলেন, এস আলম পরিবারের যাদের সম্পত্তি ক্রোক ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান চলমান রয়েছে।

দুদকের আবেদনে বলা হয়, এস আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুর, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, সাইপ্রাস ও অন্যান্য দেশে ১০০ কোটি ডলার ‘পাচারের’ অভিযোগ অনুসন্ধানকালে তার ও তার পরিবারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট সম্পত্তির তথ্য পাওয়া যায়।

এসব সম্পত্তি যাতে হস্তান্তর ও বেহাত না হয় সে জন্য ক্রোক আদেশ চাওয়া হয় আবেদনে।

পরিবারটির অন্য যাদের সম্পদ ক্রোক করার আদেশ হয়েছে তারা হলেন-এস আলমের স্ত্রী ফারজানা পারভীন, মা চেমন আরা বেগম, ভাই মোহাম্মদ আবদুল্লাহ হাসান, ওসমান গনি, রাশেদুল আলম, শহিদুল আলম, এস আলমের ছেলে আহসানুল আলম, আশরাফুল আলম মাহির ও আসাদুল আলম, ওসমানের স্ত্রী ফারজানা বেগম এবং আরেক ভাই আবদুস সামাদের স্ত্রী শাহ ফেরদানা।

সম্পত্তির মধ্যে আছে—গুলশানে ১০ তলা এস আলম টাওয়ার, ধানমন্ডিতে এক বিঘা জমিসহ ৬ তলা ভবন, ধানমন্ডি লেক সার্কাসে ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ জমিসহ ৪ তলা ভবন, গুলশানে ২ হাজার ৬৫৮ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, গুলশান-২ এ দশমিক ৭৮৮৮ একর জমি, উত্তরা আবাসিক এলাকায় ৭ তলা ভবন, ভাটারায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ১০৩ দশমিক ৩ কাঠা জমির প্লট এবং আলাদা আলাদা ১ দশমিক ৭২০০ একর, ৯৬ কাঠা, ১ দশমিক ৯৫৩৬ একর, ১১ দশমিক ১০৬১ বিঘা ও ১৩১ দশমিক ০৪ কাঠা জমি। এসব সম্পত্তির দলিল মূল্য ২০০ কোটি টাকা।

এস আলম পরিবারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় মোট ৮৭টি হিসাবে জমা রয়েছে মোট ২৫ কোটি ৭৭ লাখ ৮৯ হাজার ৭৬৩ টাকা।

তার মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার ১৯টি হিসাবে ১২ কোটি ২৪ লাখ ৭৬ হাজার ৭৬৩ টাকা ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার ৬৮টি হিসাবে ১৩ কোটি ৫৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা রয়েছে।

এস আলমসহ আরো যাদের ব্যাংক হিসাব ক্রোক করার আদেশ হয়েছে তাদের মধ্যে আছেন- তার ভাই মোহাম্মদ আবদুল্লাহ হাসান, ওসমান গনি, রাশেদুল আলম, এস আলমের ছেলে আহসানুল আলম, ওসমান গনির স্ত্রী ফারজানা বেগম।

২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর এস আলমসহ তার পরিবারের ১৩ সদস্যের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত।

নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া অন্যরা হলেন- সাইফুল আলমের স্ত্রী ফারজানা পারভীন, দুই ছেলে আশরাফুল আলম ও আহসানুল আলম; ছয় ভাই মোরশেদুল আলম, সহিদুল আলম, রাশেদুল আলম, আবদুস সামাদ, ওসমান গণি ও মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ হাসান।

এছাড়া আবদুস সামাদের স্ত্রী শাহানা ফেরদৌস, ওসমান গণির স্ত্রী ফারজানা বেগম ও মিশকাত আহমেদ নামের এক ব্যক্তি দেশত্যাগ করতে পারবেন না।

এস আলম সুগার নিলাম
এস আলম সুগার নিলাম

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নানা ক্ষেত্রে সংস্কারের মধ্যে ব্যাংক খাতে লুটপাটের অভিযোগে তদন্তের মুখে পড়ে চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপ।

শেখ হাসিনা সরকারের প্রভাবশালী মহলের সহযোগিতায় এস আলমের বিরুদ্ধে জোরজবরদস্তি করে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার অভিযোগ বহু পুরনো। পরে তিনি ও তার ব্যবসায়ী গোষ্ঠী শরীয়াহভিত্তিক আরও কয়েকটি ব্যাংকেরও নিয়ন্ত্রণ নেন।

এসব ব্যাংক থেকে বিপুল অর্থ নামে ও নাম সর্বস্ব কোম্পানি খুলে অনিয়ম ও জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করার অভিযোগ উঠেছে।

ইতোমধ্যে এস আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে। তাদের বিও অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ করে শেয়ার লেনদেনও স্থগিত করা হয়েছে। নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা বিভিন্ন ব্যাংকের শেয়ার সরকারের মালিকানায় নেওয়ার কথা বলেছেন।

এর মধ্যে ২৯ অগাস্ট এস আলমসহ ৭ আলোচিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর মালিকানা হস্তান্তর স্থগিত করার অনুরোধ জানিয়ে যৌথমূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরকে চিঠি দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

একদিন বাদে ৩১ অগাস্ট সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট জানায়, এস আলম, তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন এবং তাদের ছেলে আহসানুল আলম ও আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের তথ্য মিলছে।