নব নিযুক্ত দুদক চেয়ারম্যান
এই সরকারের রাজনৈতিক কোন চাহিদা নেই
- সময় ০৭:৫৪:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 29
দুদকের নতুন কমিশন আগামী সাত দিনের মধ্যে নিজেদের সম্পদ বিবরণী দেবেন বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির নব নিযুক্ত চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন। তিনি বলেন, ‘আগামী সাত দিনের মধ্যে আমরা নিজেদের সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাব দেব। আমরা ৩ জনেই একই মতাদর্শের অনুসারী এবং এই সরকারের রাজনৈতিক কোন চাহিদা নেই।
এ সময় নবনিযুক্ত কমিশনার মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজিও সম্পদের হিসাব দেয়ার বিষয়ে সম্মত হন।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) বিকেল ৫ টার দিকে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
এর আগে একইদিন বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে দুদকে যোগদান করেন নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন ও কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী। নতুন নিয়োগ পাওয়া আরেক কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহ্সান ফরিদ যোগ দেননি।
এসময় দুর্নীতি দমন কমিশনের অন্য কর্মকর্তারা তাদের অভ্যর্থনা জানান। পরে দুদকের এই দুই শীর্ষ কর্মকর্তা নিজ কার্যালয়ে সংস্থাটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কুশোল বিনিময় শেষে বের হয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন।
বিফ্রিংকালে দুদকের নতুন চেয়ারম্যান বলেন, ‘৫ আগস্টের পরে বাংলাদেশের নবজন্ম হয়েছে। ৫ আগস্টের পুর্ববর্তী ও পরবর্তী বাংলাদেশ এক নয়। যে আন্দোলন থেকে এই নব বাংলাদেশের সৃষ্টি সেটি বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন। বৈষম্যমের মূল হলো দুর্নীতি। দুর্নীতি কমলে বৈষম্য কমবে।’
সাংবাদিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, ‘আর সেক্ষেত্রে আমরা আপনাদের সহায়তা চাই। আপনারা সহায়তা করলে আমরা দুর্নীতি কমাতে পারব। দুর্নীতি একেবারে বন্ধ করতে পারব এমন প্রতিশ্রুতি দেওয়া ঠিক হবে না। তবে আমরা সম্মিলিতভাবে সাধ্যমত চেষ্টা করলে কমানো সম্ভব।’
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘এতদিন কমিশন ছিল না। কমিশন না থাকায় যে দুদক একেবারে স্থবির ছিল এমনটা বলা ঠিক হবে না। আমি আমার সহকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে যেটা যেনেছি কমিশন না থাকলেও তারা কাজ করেছেন। তবে হয়ত সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়গুলো বন্ধ ছিল। আমরা আজ দুইজন যোগদান করেছি। আর একজন কমিশনার শিগগিরই যোগদান করবে। উনি যোগদানের আগ পর্যন্ত আমরা কাজ চালিয়ে নেব। কাজে গতি ফেরাতে যা করা দরকার করব।’
কাজের ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলোকে অধিক গুরুত্ব দেবেন এমন প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, জনপ্রত্যাশা পূরণ আমাদের প্রধান গুরুত্ব। দেশে বড় বড় দুর্নীতি হয়েছে, যেসব দুর্নীতিতে রাষ্ট্র বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, যারা এসব দুর্নীতি করেছে তারা যাতে শেষ পর্যন্ত ছাড় না পান সেটি নিশ্চিত করব। আমাদের অনুসন্ধান ও তদন্ত যাতে অসমাপ্ত না থাকে বা বায়াসড না হয় সেদিকে লক্ষ রাখব। আমরা ৩ জনেই একই মতাদর্শের অনুসারী। আমরা রাজনৈতিকভাবে বায়াসড হয়ে কোন কাজ করব না।’
দুদকের দুর্নীতির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘দুদক সমাজের অংশ, সমাজে দুর্নীতি হলে দুদকে হতেও পারে। বেশকিছু অভিযোগ আমার বিরুদ্ধেও আছে। সেটি আপনারা দেখবেন, মিডিয়া ট্রায়াল না করে বিচার বিশ্লেষণ করে তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে সিদ্ধান্তে উপনিত হবেন।
বিমানের এমডি থাকাকালীন আপনার বিরুদ্ধে শত শত কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ ছিল সেক্ষেত্রে আপনি দুদকে এসে দুর্নীতি প্রতিরোধ করবেন কীভাবে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘শত শত নয় আরও বেশি দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। আমি মাত্রই বলেছি, সেটি তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আপনারা বিচার বিশ্লেষণ করেন। আমার বিরুদ্ধে দুদকে ২০০৯ সালে দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে। ২০২২ সাল পর্যন্ত সেই অভিযোগ দুদকে একাধিকবার তদন্ত হয়েছে। তদন্তে দুর্নীতির প্রমাণ না পেয়ে ২০২৩ সালে দুদক আমাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। এটি কিন্তু ৫ আগস্টের অনেক আগে।’
দুদকের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে হয়রানির অভিযোগ রয়েছে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমার ২০০৯ সালের অভিযোগ ২২ সাল পর্যন্ত চলছে। এটাই তো হয়রানি। আমাদেরকে কাজ শুরু করতে দেন। মুখের প্রতিশ্রুতির চেয়ে কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করব। পরবর্তীতে যখন আপনাদের সঙ্গে দেখা হবে তখন আপনারাই বলবেন আমরা কাজে গতি, হয়রানি কমানো, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারছি কি না।
তিনি আরও বলেন, আমি ৩টি রাজনৈতিক দল ও ২ টি তত্ত্বাবধায়ক সরকারে সঙ্গে কাজ করেছি। এটা অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকারের রাজনৈতিক কোন চাহিদা নেই। এই সরকারে চাওয়া জনগণের চাহিদা। জনগণ যাতে সুষ্ঠু ও ন্যায় বিচার পায় সেটি নিশ্চিত করা। সে অনুযায়ী নিষ্ঠার সঙ্গে আমরা কাজ করে যাব।
সাংবাদিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘দুদক বিটে যেসব সাংবাদিকরা কাজ করেন তাদের সঙ্গে অন্যদের পার্থক্য আছে। তারা অনেক বেশি শিক্ষিত এবং স্মার্ট। তারা আইনকানুন সম্পর্কে ভালো জানেন। আমাদের কাজের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের সহায়তা লাগবে। সাংবাদিকরা দুদকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন।
চেয়ারম্যানের পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নব নিযুক্ত কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী। তিনি বলেন, ‘আমার ৩৩ বছর বিচারিক জীবন। সহকারী জজ থেকে জেলা ও দায়রা জজ পর্যন্ত কাজ করেছি। সকালবেলা মেঘে ঢাকা সূর্যকে যদি বলা হয় তুমি দুপরেও এমন থাকবে কি না সেটি ঠিক হবে না। কারণ দুপুরে সূর্যের তাপে মেঘ ভেসে গেলে সূর্য তার স্বহমহিমায় উদ্ভাসিত হবেই।’
দুদকের উপর তাহলে কালো মেঘ ভর করেছে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে বলেন, ‘কালো মেঘ ভর করেছে কি না সেটি নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না। পেছনের কথা আর বলতে চাই না। সেটি আপনারাও ভালো জানেন। আমাদের কাজ দুর্নীতি দমন করা। ছোট থেকে বৃহৎ সবই দুর্নীতি। যা নীতি নয় তাই দুর্নীতি। আর্থিক অসঙ্গতি, নৈতিক স্খলন, ক্ষমতার অপব্যবহার সবই। দুদকের কাজ দুর্নীতি নির্ণয় করা। বিচার করা নয়, বিচার করবে বিচারক। আমি অনেক মামলার রায় দিয়েছি। রায় দেয়ার পরে মনে হয়েছে আমি ইবাদত করেছি। কখনো হাত কাপেনি। অনুসন্ধান ও তদন্ত ঠিকমত করতে পারলে জনগন ন্যায় বিচার পাবেই। ন্যায় বিচারের পেছনে তদন্ত ফাউন্ডেশন। তদন্ত ঠিক হলে ন্যায় বিচার হবে। আমরা জাতির কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সবার মধ্যে থেকে সরকার বাহাদুর আমাদেরকে বাছাই করেছেন। আমরা জনপ্রত্যাশা পূরনে কাজ করব। আমাদের ক্রুটি বিচ্যুতি চোখে পড়লে বলবেন, আমরা শুধরে নেব। অনুসন্ধান ও তদন্ত যত দ্রুত বিচারালয়ে পাঠানো যায় সেই চেষ্টা করব।