ইসরাইলের তিনজনের বিনিময়ে ৩৬৯ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি

- সময় ০৯:৪৫:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
- / 43
যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী আজ শনিবার আরও তিনজন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার কথা জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। বিনিময়ে ৩৬৯ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে ছেড়ে দেবে ইসরায়েল। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাঁরা তিনজন জিম্মির নাম পেয়েছে, যাদেরকে মুক্তি আজ মুক্তি দেবে হামাস। মুক্তি পেতে যাওয়া তিন জিম্মি হলেন—সাশা ত্রুফানভ, সাগুই দেকেল-চেন এবং ইয়াইর হর্ন। এরা তিনজনই পুরুষ। এই দফায় কোনো নারী জিম্মিকে মুক্তি দিচ্ছে না হামাস।
ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে হামাসও। সংগঠনটির আল-কাসসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু উবাইদা এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমরা তিনজন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
গত সপ্তাহে হঠাৎ করে জিম্মি মুক্তি স্থগিত ঘোষণা করেছিল হামাস। তাদের অভিযোগ, ইসরায়েল জিম্মি চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেছে। তাই তারা ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তি অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করছে।
হামাসের অভিযোগ, গাজায় ত্রাণ ঢুকতে দিচ্ছে না ইসরায়েল। এমনকি ভারী সরঞ্জামও প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। এ কারণে ধ্বংসস্তুপ সরানোর কাজ ব্যহত হচ্ছে। এ ছাড়া অস্থায়ী বাড়ি ও তাঁবুতে ফিলিস্তিনিদের প্রবেশ করতেও বাধা দিচ্ছে ইসরায়েলি সেনারা।
এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জিম্মি মুক্তি স্থগিত করে হামাস। অন্যদিকে হামাসের হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডেনালান্ড ট্রাম্প ও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, শনিবারের মধ্যে জিম্মি মুক্তি না দিলে আবার গাজায় হামলা শুরু করা হবে। এমন পরিস্থিতিতে যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল।
পরে মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর প্রচেষ্টায় হামাস আবারও জিম্মিদের মুক্তি দিতে সম্মত হয়। তবে হামাসের মুখপাত্র আব্দুল লতিফ আল-কানৌ বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী গাজা নিয়ে যে হুমকিমূলক ভাষা ব্যবহার করেছেন তা যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে সহায়ক নয়।
ফিলিস্তিনের গাজায় ১৫ মাসের ইসরায়েলি আগ্রাসনের পর গত ১৯ জানুয়ারি থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। তিন ধাপের এই যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যে বন্দী বিনিময়, শান্তি স্থাপন, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহারের শর্ত রয়েছে। যুদ্ধবিরতির পরও ভূখণ্ডটিতে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে শতাধিক ফিলিস্তিনি।
তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি জানিয়েছে, গত ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকরের পর থেকে গাজায় অন্তত ১১৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ইসরায়েলি বাহিনীর সরাসরি হামলায় প্রাণ গেছে অন্তত ৯২ জনের। আহত হয়েছে অন্তত ৮২২ জন।
এ ছাড়া যুদ্ধবিরতির চুক্তি অনুযায়ী গাজায় প্রতিদিন অন্তত ৬০০ ট্রাক ত্রাণ, ভারী সরঞ্জাম ও অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে প্রবেশ করার কথা থাকলেও ইসরায়েল তা মানছে না। দিনে মাত্র ১০০টির মতো ট্রাক প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল।
দীর্ঘ ১৫ মাসের ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ৪৮ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এখনো নিখোঁজ কয়েক হাজার মানুষ। নিহতের তালিকায় নিখোঁজদের অন্তর্ভুক্ত করলে প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়ায় ৬১ হাজারের বেশি। আর আহতের সংখ্যা এক লাখের বেশি। এ ছাড়া ২০ লাখের বেশি মানুষকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে।