ইসকনের উগ্রতা নাকি রহস্য, নেপথ্যে কি?
- সময় ১১:২৫:০০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২ নভেম্বর ২০২৪
- / 531
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে বেশ সোচ্চার হয়ে উঠেছে ইসকন নামে একটি ধর্মীয় সংগঠন।
মূলত গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন ও পরবর্তী কয়েকদিন বাংলাদেশের
বিভিন্নস্থানে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন শুরু হলে রুখে দাড়ানোর ঘোষণা দেয় সংগঠনটি।
এর মধ্যে চট্টগ্রাম ও ঢাকায় তাদের সমাবেশে লোকসংখ্যার উপস্থিতি ছিলো; বাংলাদেশের অনেক রাজনৈতিক
দলের সমাবেশের তুলনায় বেশি। যা চিন্তায় ফেলে দিয়েছে ক্ষমতাসীনদের। স্বল্প সময়ের নোটিশে কিভাবে
এই সংগঠনটি এতো লোকের জমায়েত ঘঠিয়েছে; কোথা থেকেই বা অর্থের জোগান ঘটেছে- তা নিয়েও চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী।
অনেকেই আবার এই আন্দোলনে আওয়ামী লীগের যোগসূত্রতা রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন।
তারা সরকারের কাছে আট দফা জানিয়েছেন। এবং সেই দাবি বাস্তবায়নে এখনো নানা কার্যক্রম চালাচ্ছে। কিন্তু কারা এই ‘ইসকন’। কোথা থেকে, কাদের অর্থায়নে এই সংগঠন পরিচালিত হয়- এমন নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এই সংগঠনটি ঘিরে।
ইসকন বা ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস। যা সংক্ষেপে ইসকন নামে পরিচিত।
এটি একটি বিশ্বব্যাপী সংগঠন যা হিন্দু ধর্মের ভক্তিমূলক ধারার প্রচার করে। সংগঠনটি মূলত কৃষ্ণ ভক্তিতে নিবেদিত এবং ভগবান কৃষ্ণকে সঠিকভাবে চর্চা করার প্রেরণা দেয়।
১৯৬৬ সালে শ্রীল অভয় চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরে এটির যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে সারা বিশ্বে ইসকনের সেবাকেন্দ্র এবং মন্দির ছড়িয়ে আছে।
বাংলাদেশে ৮টি বিভাগে ইসকনের বর্তমানে ৭৭টি মন্দির রয়েছে। একটি শক্তিশালী দেশীয় নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সমর্থ হয়েছে ধর্মভিত্তিক এই সংগঠন।
ইসকনের মূল আকর্ষণ হলো এর বিশ্বব্যাপী হরিনাম সংকীর্তন, যা তারা কৃষ্ণের নাম জপ ও কীর্তনের মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেয়।
ভক্তরা রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় এবং জনসমাগমে কীর্তন করে কৃষ্ণ নাম প্রচার করেন।
তাঁদের বিশ্বাস, এই কীর্তনের মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে কৃষ্ণ প্রেমের বাণী ছড়িয়ে পড়বে এবং মানুষের হৃদয়ে দায়িত্ব, সেবা ও মানবিকতার অনুভূতি জাগ্রত হবে।
তাদের উদ্যোগে সারা বিশ্বে অনেক শিক্ষাকেন্দ্র, স্কুল ও কলেজ স্থাপন করা হয়েছে। ইসকনের “মিড ডে মিল” কর্মসূচি ভারতে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে, যার মাধ্যমে ইসকনের মন্দিরগুলো প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ দরিদ্র শিশুদের জন্য খাবার বিতরণ করে।
তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসকনের কার্যক্রম কঠোর গোয়েন্দা নজরদারীর মধ্যে রয়েছে। অনেকগুলো দেশে; বিশেষত রাশিয়া, সিঙ্গাপুরে এই সংগঠনের কার্যক্রম কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত।
এই সংগঠনের কর্মকাণ্ড নিয়ে ভারতের হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যেও রয়েছে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া। হিন্দুরা মনে করছে যে, ইসকন বিকৃত ধর্মমত প্রচার করে হিন্দুইজমের সর্বনাশ করছে।
ইসকন প্রচার করছে, তাদের ধর্মে বর্ণিত ৩৩ কোটি দেবতার মধ্যে প্রধান দেবতা হলো কৃষ্ণ। কৃষ্ণ হলো আদি ও একক দেবতা। কৃষ্ণ থেকেই বাকি দেবতাদের সৃষ্টি হয়েছে। পৃথিবীতে মানবরূপে যত দেবতা এসেছেন, তারা সবাই কৃষ্ণের অবতার বা কৃষ্ণজাত সৃষ্টি।
ইসকনের এই মতবাদ মেনে নিতে রাজি না প্রচলিত সনাতনিরা। কেননা সেই অনাদিকাল থেকে হিন্দুরা শিবকেই প্রধান দেবতা মেনে আসছে। সুতরাং হরে কৃষ্ণ মতবাদ পুরো হিন্দুইজমের ওপরই আঘাত হেনেছে বলে হিন্দুরা অভিযোগ করছে।
এছাড়াও এই সংগঠন ও সংগঠনটির নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজনৈতিক গোপন মিশন পরিচালনা, ধর্মান্তরিত করা এবং অর্থের উৎস নিয়ে নানা ধরনের বিতর্ক রয়েছে।
১৯৭৬ সালে নিউ ইয়র্ক সুপ্রিম কোর্টে দু’জন মার্কিন নাগরিক অভিযোগ করেন, ইসকনের ধর্মগুরুরা তাদের শিশুদের ধর্মান্তরিত করেছে। ১৯৮৭ সালে আরেকটি মামলায় ইসকন নেতা কির্তানন্দের বিরুদ্ধে মার্কিন আদালতে হত্যা মামলার চার্জ গঠন হয় এবং তাকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। তার বিরুদ্ধে গ্যাং পরিচালনা এবং বিভিন্ন ব্যক্তিকে ভয়-ভীতি দেখানোর অভিযোগ ওঠে।
এর বাইরে এই সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে শিশু নির্যাতন এবং শিশু বলাৎকারের একাধিক মামলা দায়ের করা হয়।
ইসকন গোঁড়া হিন্দুত্ববাদ পরিহার করে তাদের হরে কৃষ্ণ আন্দোলনকে এতটাই উদারনৈতিক করেছে যে,
পৃথিবীর যেকোনো মতবাদের যেকোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ইসকনের সদস্য হিসেবে যোগদান করতে পারে।
আর সেখানেই রয়েছে ইসকনের চলমান আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার রহস্যময় এক ভূমিকার প্রশ্ন, যা ভাবিয়ে তুলেছে পুরো বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক প্রভাবশালী দেশকেও।