আশার আলো থেকে অন্ধকারে?
জেনারেশন জেড নিয়ে বেকায়দায় নিয়োগকর্তারা !
- সময় ১২:৩৯:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ নভেম্বর ২০২৪
- / 132
জেনারেশন জেড। যাকে সংক্ষেপে জেন জি ও বলা হয়। যাদের আরেকটি নাম জুমারস। এটি মিলেনিয়ালদের পরবর্তী এবং জেনারেশন আলফার পূর্ববর্তী একটি ডেমোগ্রাফিক শ্রেণি।
গবেষক এবং জনপ্রিয় মিডিয়া সাধারণত ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে শেষ পর্যন্ত জন্মের বছরগুলোকে শুরু হিসেবে এবং ২০১০-এর দশকের শুরুর বছরগুলোকে শেষ হিসেবে নির্ধারণ করে। যার ফলে জেনারেশন জেড সাধারণত ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণকারী মানুষদের বোঝায়।
তারা বড় হয়েছে একটি বিশ্বে, যেখানে ইন্টারনেট শুধু একটি টুল নয় বরং জীবনযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ। জেনারেশন জেড, যারা প্রযুক্তির ছায়ায় বড় হয়েছে, তারা এক নতুন যুগের প্রতীক।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক আন্দোলনগুলো জেনারেশন জেড-এর উপস্থিতি ছিলো স্পষ্ট। ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ের বিভিন্ন পরিবেশবাদী ও সামাজিক ন্যায়বিচারমূলক আন্দোলনে, এই প্রজন্মের সদস্যরা অন্যতম চালিকা শক্তি।
তারা কেবলই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেনি বরং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে নিজেদের দাবিগুলোকে আরও বিস্তৃত করে তুলেছে। তাদের দক্ষতা এবং সৃজনশীলতা আন্দোলনের কৌশলগুলোকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। এই প্রজন্ম বিশ্বাস করে, পরিবর্তন শুধু রাস্তায় নয়, বরং অনলাইনেও ঘটানো সম্ভব।
পৃথিবীর অন্যত্রও জেনারেশন জেড সেই একই চেতনা নিয়ে আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে। সুইডেনের গ্রেটা থুনবার্গের নাম উল্লেখযোগ্য, যিনি জলবায়ুপরিবর্তনের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী একটি আন্দোলনের সূচনা করেছেন।
জেনারেশন জেড-এর এই আন্দোলন শুধু পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকার তরুণরাও বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক ইস্যুতে রাস্তায় নেমেছে। তাদের দাবি শুধু নিজেদের অধিকারের জন্য নয় বরং বৈশ্বিক সমতার জন্য।
প্রযুক্তি এবং সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে, জেনারেশন জেড-এর আন্দোলন দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ে। তারা সোশ্যাল মিডিয়াকে একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে, যেখানে তারা নিজেদের কথা তুলে ধরে এবং অন্যদের সাথে যুক্ত হয়। তাদের মেমস, ভাইরাল পোস্ট এবং অনলাইন প্রচারণা একটি বৈশ্বিক আলোচনা শুরু করেছে।
যাদের নিয়ে এতো এতো আশা, স্বপ্ন- কর্মক্ষেত্রে আসলে তারা কেমন ? ইন্টেলিজেন্ট ডট কমের জরিপ অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের ৬০ শতাংশ নিয়োগকর্তা চলতি বছরে জেন-জিদের চাকরিচ্যুত করেছে।
প্রায় ৯৬৬টি প্রতিষ্ঠানে চালানো জরিপে দেখা যায়, অধিকাংশ নিয়োগকর্তাই জেন-জির কর্মীদের কাজের প্রতি আগ্রহের অভাব এবং অদক্ষতা নিয়ে হতাশ। বিশেষ করে, পেশাদারিত্বের ঘাটতি, যোগাযোগ দক্ষতার অভাব এবং সমস্যা সমাধানের অক্ষমতা।
জেন-জিরা তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যস্ত, নিজেদের মধ্যে বিবাদে জড়িয়ে থাকে, কিন্তু অফিসের নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলতে ব্যর্থ। অফিসে দেরীতে আসা, নিয়ম না মানা এবং অনুপযুক্ত ভাষার ব্যবহার – এসব অভিযোগ ক্রমেই বাড়ছে।
যুক্তরাষ্ট্রে নিয়োগকর্তারা এখন এতটাই হতাশ যে তারা গণহারে এই প্রজন্মকে চাকরিচ্যুত করছে। ২০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান মনে করছে, এই প্রজন্ম এখনও কাজের জন্য প্রস্তুত নয়। এমনকি সাতজন নিয়োগকর্তার মধ্যে একজন বলছেন, ২০২৫ সালে তারা আর জেন-জিদের নিয়োগ দেবেন না।
তাহলে কি জেনারেশন জেড একেবারেই আশাহীন? নাকি তাদের সমস্যার মূলে রয়েছে অন্য কিছু ? অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, এই প্রজন্মের সদস্যরা হয়তো প্রকৃতপক্ষে এখনও প্রস্তুত নয় কাজের বাজারের জন্য। তাদের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং পেশাদারিত্বের ঘাটতি হয়তো এই বিপর্যয়ের মূল কারণ। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ নিয়ে কিছু উদ্যোগ নিচ্ছে, কিন্তু তার কার্যকারিতা এখনও অনিশ্চিত।
তবে কি জেনারেশন জেড শুধুই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের জনপ্রিয় করে তুলতে ব্যস্ত থাকবে? নাকি তারা একসময় এই কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নিজেদের দক্ষ করে তুলতে পারবে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে হবে আমাদেরই।
যদিও এখনো অনেকে মনে করেন, জেনারেশন জেড একদিন নতুন চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে পারবে, কিন্তু তার জন্য দরকার যথাযথ প্রশিক্ষণ, কাজের প্রতি আগ্রহ, এবং পেশাদারিত্বের প্রতি দায়বদ্ধতা।
জেন-জি প্রজন্মের জন্য সময় এখন কঠিন, কিন্তু আশা শেষ হয়ে যায়নি। তারা যদি নিজেদের দক্ষতা বাড়াতে পারে এবং কাজে দায়বদ্ধ থাকে, তবে হয়তো একদিন তারা আবার আশার আলো হয়ে উঠবে।