০২:২১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫, ২৫ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মাদারীপুরে তিন ভাইকে কুপিয়ে হত্যা

‘আল্লাহর ঘরে লুকিয়েও ভাইরা রক্ষা পেল না ’

নিজস্ব প্রতিবেদক, মাদারীপুর
  • সময় ০৮:০৫:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ মার্চ ২০২৫
  • / 138

স্বজনদের আহাজারি

মাদারীপুর সদর উপজেলায় প্রতিপক্ষের হামলায় আপন দুই ভাইসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। প্রাণভয়ে মসজিদে লুকালেও শেষ রক্ষা হয়নি। সেখান থেকে টেনে বের করে আনা হয় এবং এলোপাতাড়ি কোপানো হয়। ঘটনাস্থলেই দুইজন নিহত হন।

নিহতদের বোন হাফিজা বেগম জানান, “আমাদের সব শেষ করে দিল। আল্লাহর ঘরে লুকিয়েও ভাইরা রক্ষা পেল না। তাদের মসজিদ থেকে বের করে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকারীদের বিচার আল্লাহই করবেন।”

এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ১০ জন। শনিবার (৮ মার্চ) সকাল ১১টার দিকে মাদারীপুরের খোয়াজপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের খোয়াজপুর এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং তিনজনকে আটক করে। নিহতরা হলেন, খোয়াজপুর এলাকার আজিবর সরদারের ছেলে সাইফুল সরদার (৪০), আতাউর সরদার (৩৫) এবং তাদের চাচাতো ভাই মুজাম সরদারের ছেলে পলাশ সরদার (১৭)।

পুলিশ, স্থানীয় সূত্র এবং নিহতের পরিবার থেকে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে খোয়াজপুর ইউনিয়নের কীর্তিনাশা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছিলেন সাইফুল সরদার, যিনি খোয়াজপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। অপরপক্ষে একই এলাকার হোসেন সরদারও বালু উত্তোলন করছিলেন, যার ফলে উভয় পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছিল। একে অপরকে বালু উত্তোলনে বাধা দেওয়া হচ্ছিল, যা পরবর্তীতে সংঘর্ষে রূপ নেয়।

শনিবার সকালে খোয়াজপুর সরদারবাড়ি জামে মসজিদের সামনে একা পেয়ে সাইফুল সরদারের ওপর হামলা চালায় হোসেন সরদারের লোকজন। খবরটি ছড়িয়ে পড়লে সাইফুলের বড় ভাই আতাউর সরদার, তার অন্য ভাই অলিল সরদার, পরিবার ও প্রতিবেশীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়।

তাদের প্রাণ বাঁচাতে তিন ভাই মসজিদের ভিতরে লুকিয়ে পড়েন, কিন্তু পরে তারা সেখান থেকে টেনে বের করে আনা হয় এবং এলোপাতাড়ি কোপানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই সাইফুল ও আতাউর সরদার নিহত হন। পলাশ সরদারকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে তিনি মারা যান।

এ ছাড়া, অলিল সরদার ও তাজেল সরদার গুরুতর আহত হন এবং তাদের চিকিৎসার জন্য ঢামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। নিহত সাইফুল সরদারের স্ত্রী সতি বেগম (২৫), আতাউর সরদারের স্ত্রী মাহমুদা বেগম (৩০), রোজিনা বেগম (৩৫)সহ আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

মাদারীপুর জেলা পুলিশ এবং সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করে। এলাকায় উত্তেজনা থাকার কারণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

নিহত সাইফুল সরদারের মা সুফিয়া বেগম অভিযোগ করে বলেন, “হোসেন সরদার ও শাজাহান খাঁনের লোকজন আমার দুই ছেলেকে হত্যা করেছে। আরেক ছেলের অবস্থাও গুরুতর। এই হত্যার বিচার চাই।”

নিহত পলাশ সরদারের চাচাতো ভাই মো. জাফর সরদার বলেন, “পলাশ মারামারির ঘটনা দেখতে গিয়ে পরিস্থিতির শিকার হন। তিনি কোন পক্ষের ছিলেন না।”

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহা জানান, “এই ঘটনায় তিনজন মারা গেছেন, পলাশ সরদার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এ পর্যন্ত তিনজনকে আটক করা হয়েছে এবং অভিযান চলমান রয়েছে।”

শেয়ার করুন

মাদারীপুরে তিন ভাইকে কুপিয়ে হত্যা

‘আল্লাহর ঘরে লুকিয়েও ভাইরা রক্ষা পেল না ’

সময় ০৮:০৫:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ মার্চ ২০২৫

মাদারীপুর সদর উপজেলায় প্রতিপক্ষের হামলায় আপন দুই ভাইসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। প্রাণভয়ে মসজিদে লুকালেও শেষ রক্ষা হয়নি। সেখান থেকে টেনে বের করে আনা হয় এবং এলোপাতাড়ি কোপানো হয়। ঘটনাস্থলেই দুইজন নিহত হন।

নিহতদের বোন হাফিজা বেগম জানান, “আমাদের সব শেষ করে দিল। আল্লাহর ঘরে লুকিয়েও ভাইরা রক্ষা পেল না। তাদের মসজিদ থেকে বের করে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকারীদের বিচার আল্লাহই করবেন।”

এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ১০ জন। শনিবার (৮ মার্চ) সকাল ১১টার দিকে মাদারীপুরের খোয়াজপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের খোয়াজপুর এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং তিনজনকে আটক করে। নিহতরা হলেন, খোয়াজপুর এলাকার আজিবর সরদারের ছেলে সাইফুল সরদার (৪০), আতাউর সরদার (৩৫) এবং তাদের চাচাতো ভাই মুজাম সরদারের ছেলে পলাশ সরদার (১৭)।

পুলিশ, স্থানীয় সূত্র এবং নিহতের পরিবার থেকে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে খোয়াজপুর ইউনিয়নের কীর্তিনাশা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছিলেন সাইফুল সরদার, যিনি খোয়াজপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। অপরপক্ষে একই এলাকার হোসেন সরদারও বালু উত্তোলন করছিলেন, যার ফলে উভয় পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছিল। একে অপরকে বালু উত্তোলনে বাধা দেওয়া হচ্ছিল, যা পরবর্তীতে সংঘর্ষে রূপ নেয়।

শনিবার সকালে খোয়াজপুর সরদারবাড়ি জামে মসজিদের সামনে একা পেয়ে সাইফুল সরদারের ওপর হামলা চালায় হোসেন সরদারের লোকজন। খবরটি ছড়িয়ে পড়লে সাইফুলের বড় ভাই আতাউর সরদার, তার অন্য ভাই অলিল সরদার, পরিবার ও প্রতিবেশীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়।

তাদের প্রাণ বাঁচাতে তিন ভাই মসজিদের ভিতরে লুকিয়ে পড়েন, কিন্তু পরে তারা সেখান থেকে টেনে বের করে আনা হয় এবং এলোপাতাড়ি কোপানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই সাইফুল ও আতাউর সরদার নিহত হন। পলাশ সরদারকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে তিনি মারা যান।

এ ছাড়া, অলিল সরদার ও তাজেল সরদার গুরুতর আহত হন এবং তাদের চিকিৎসার জন্য ঢামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। নিহত সাইফুল সরদারের স্ত্রী সতি বেগম (২৫), আতাউর সরদারের স্ত্রী মাহমুদা বেগম (৩০), রোজিনা বেগম (৩৫)সহ আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

মাদারীপুর জেলা পুলিশ এবং সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করে। এলাকায় উত্তেজনা থাকার কারণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

নিহত সাইফুল সরদারের মা সুফিয়া বেগম অভিযোগ করে বলেন, “হোসেন সরদার ও শাজাহান খাঁনের লোকজন আমার দুই ছেলেকে হত্যা করেছে। আরেক ছেলের অবস্থাও গুরুতর। এই হত্যার বিচার চাই।”

নিহত পলাশ সরদারের চাচাতো ভাই মো. জাফর সরদার বলেন, “পলাশ মারামারির ঘটনা দেখতে গিয়ে পরিস্থিতির শিকার হন। তিনি কোন পক্ষের ছিলেন না।”

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহা জানান, “এই ঘটনায় তিনজন মারা গেছেন, পলাশ সরদার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এ পর্যন্ত তিনজনকে আটক করা হয়েছে এবং অভিযান চলমান রয়েছে।”