ঢাকা ০৩:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আশাবাদী

আরকান আর্মির বন্দিশালায় বাংলাদেশি চার যুবক!

বিশেষ প্রতিনিধি
  • সময় ০৩:২৫:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪
  • / 75

বাংলাদেশি

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় মিয়ানমারের স্বাধীনতাকামী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির ভয়াল থাবা থামছেই না। প্রায় প্রতিদিনই রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে চলচে তাদের নানা অপতৎপরতা। এর মধ্যে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় থেকে শুরু করে হত্যার মতো ঘটনা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। রোহিঙ্গাদের মধ্যে নিজেদের বিবাদ থাকলেও এবার আরাকান আর্মির রোষানলে পড়তে হয়েছে বাংলাদেশিদের। ১১ দিন ধরে আরাকান আর্মির বন্দিশালয় ৪ বাংলাদেশি যুবক থাকলেও তাদের কপালে কি ঘটেছে সেটা এখনো অজানা। বাংলা অ্যাফেয়ার্সের এ প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন উখিয়ার নিজস্ব প্রতিবেদক।

সূত্র জানিয়েছে, দেখতে দেখতে পার হয়েছে ১১ দিন। এর মধ্যে কক্সবাজারের উখিয়া পালংখালী আঞ্জুমান পাড়া সীমান্তের নাফনদী থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া পাঁচ জেলের মধ্যে একজনের মরদেহ উদ্ধার করা গেলেও বাকি চারজনের খোঁজ মেলেনি। এ নিয়ে তাদের পরিবারের সদস্যরা চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। শেষ হচ্ছে না তাদের দুশ্চিন্তার।

গত ১৪ নভেম্বর উখিয়া উপজেলার পালংখালী আঞ্জুমান পাড়া সংলগ্ন নাফ নদীতে পাঁচ জেলে মাছ ধরতে গেলে সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠন মিয়ানমারের আরাকান আর্মি তাদের আটক করে নিয়ে যায়। এর দুদিন পর আটক জেলে সৈয়দুল বশরের গুলিবিদ্ধ মরদেহ ভাসমান অবস্থায় নাফনদ থেকে উদ্ধার করে তার পরিবারের সদস্য ও উখিয়া থানা পুলিশ।

অস্ত্রধারী রোহিঙ্গা
অস্ত্রধারী রোহিঙ্গা

নিখোঁজ বাকি জেলেরা হলেন, উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের মিয়ানমার সীমান্ত ঘেঁষা আঞ্জুমান পাড়া এলাকার মো. সাইফুল ইসলাম, মো. লুৎফর রহমান, মো. ইউসুফ ও মো. ইউসুফ জালাল।

সীমান্তের নাফ নদী থেকে আরাকান আর্মি ধরে নিয়ে যাওয়া পাঁচ যুবকের বিষয়ে প্রতিবেদককের কথা হয় জেলে মো. ইউসুফের মা রাশেদা বেগমের সঙ্গে। তিনি প্রতিবেদককে বলেন, আমরা খুব অসহায় ও হতদরিদ্র পরিবার। একদিন মাছ ধরতে না পারলে আমাদের সংসার চলে না। আমি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। আমার চিকিৎসা ও সংসারের সব খরচ যোগাতে ছেলে ইউসুফ মাছ ধরতে যায়। কিন্তু সেখান থেকে তাকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি। আজ ১১ দিন হয়ে গেল। আমার ছেলের কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছে না। শুনেছি সীমান্তের নাফনদী থেকে তারা পাঁচ জনকে আরাকান আর্মি ধরে নিয়ে গেছে।

রাশেদা বেগম আরও বলেন, আমাদের সন্তান এখন জীবিত নাকি মৃত সেটার হদিস পাচ্ছি না। এখনও তাদেরকে ছাড়েনি। এখন আমি কি করব জানি না। আমাদের সন্তানদেরকে ফিরে ফেতে চাই। সরকার আন্তরিক দিয়ে চেষ্টা করলে আমাদের সন্তানদের ফিরে আনতে পারবে। এ ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করছি।

পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, জেলে পরিবারগুলোতে চলছে আহাজারি। তারা খুবই হতদরিদ্র পরিবার। ছৈয়দুল বশরের মরদেহ পাওয়া গেলেও দীর্ঘ ১১ দিন পার হলেও এখনও বাকি চারজনে হদিস মিলছে না। এটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। জেলেদের ফিরে আনার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতি অনুরোধ করে সীমান্তের এ জনপ্রতিনিধি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত)

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) যারীন তাসমিন তাসিন বলেন, আটক জেলেদের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কতৃর্পক্ষকে জানানো হয়েছে। জেলেদের বিষয়ে আমরা কাজ করছি।

এদিকে, ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বাংলা অ্যাফেয়ার্সকে বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তরিক বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকার। ইতিমধ্যেই মিয়ানমারের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে শুরু করে বিভন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাই কমিশনারদের বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্সন করতে চায়। কৌশল ঠিক করা হয়েছে, আশা করা যাচ্ছে; নতুন বছরে বিষয়টি আশার আলো দেখতে পারবে।

শেয়ার করুন

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আশাবাদী

আরকান আর্মির বন্দিশালায় বাংলাদেশি চার যুবক!

সময় ০৩:২৫:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় মিয়ানমারের স্বাধীনতাকামী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির ভয়াল থাবা থামছেই না। প্রায় প্রতিদিনই রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে চলচে তাদের নানা অপতৎপরতা। এর মধ্যে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় থেকে শুরু করে হত্যার মতো ঘটনা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। রোহিঙ্গাদের মধ্যে নিজেদের বিবাদ থাকলেও এবার আরাকান আর্মির রোষানলে পড়তে হয়েছে বাংলাদেশিদের। ১১ দিন ধরে আরাকান আর্মির বন্দিশালয় ৪ বাংলাদেশি যুবক থাকলেও তাদের কপালে কি ঘটেছে সেটা এখনো অজানা। বাংলা অ্যাফেয়ার্সের এ প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন উখিয়ার নিজস্ব প্রতিবেদক।

সূত্র জানিয়েছে, দেখতে দেখতে পার হয়েছে ১১ দিন। এর মধ্যে কক্সবাজারের উখিয়া পালংখালী আঞ্জুমান পাড়া সীমান্তের নাফনদী থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া পাঁচ জেলের মধ্যে একজনের মরদেহ উদ্ধার করা গেলেও বাকি চারজনের খোঁজ মেলেনি। এ নিয়ে তাদের পরিবারের সদস্যরা চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। শেষ হচ্ছে না তাদের দুশ্চিন্তার।

গত ১৪ নভেম্বর উখিয়া উপজেলার পালংখালী আঞ্জুমান পাড়া সংলগ্ন নাফ নদীতে পাঁচ জেলে মাছ ধরতে গেলে সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠন মিয়ানমারের আরাকান আর্মি তাদের আটক করে নিয়ে যায়। এর দুদিন পর আটক জেলে সৈয়দুল বশরের গুলিবিদ্ধ মরদেহ ভাসমান অবস্থায় নাফনদ থেকে উদ্ধার করে তার পরিবারের সদস্য ও উখিয়া থানা পুলিশ।

অস্ত্রধারী রোহিঙ্গা
অস্ত্রধারী রোহিঙ্গা

নিখোঁজ বাকি জেলেরা হলেন, উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের মিয়ানমার সীমান্ত ঘেঁষা আঞ্জুমান পাড়া এলাকার মো. সাইফুল ইসলাম, মো. লুৎফর রহমান, মো. ইউসুফ ও মো. ইউসুফ জালাল।

সীমান্তের নাফ নদী থেকে আরাকান আর্মি ধরে নিয়ে যাওয়া পাঁচ যুবকের বিষয়ে প্রতিবেদককের কথা হয় জেলে মো. ইউসুফের মা রাশেদা বেগমের সঙ্গে। তিনি প্রতিবেদককে বলেন, আমরা খুব অসহায় ও হতদরিদ্র পরিবার। একদিন মাছ ধরতে না পারলে আমাদের সংসার চলে না। আমি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। আমার চিকিৎসা ও সংসারের সব খরচ যোগাতে ছেলে ইউসুফ মাছ ধরতে যায়। কিন্তু সেখান থেকে তাকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি। আজ ১১ দিন হয়ে গেল। আমার ছেলের কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছে না। শুনেছি সীমান্তের নাফনদী থেকে তারা পাঁচ জনকে আরাকান আর্মি ধরে নিয়ে গেছে।

রাশেদা বেগম আরও বলেন, আমাদের সন্তান এখন জীবিত নাকি মৃত সেটার হদিস পাচ্ছি না। এখনও তাদেরকে ছাড়েনি। এখন আমি কি করব জানি না। আমাদের সন্তানদেরকে ফিরে ফেতে চাই। সরকার আন্তরিক দিয়ে চেষ্টা করলে আমাদের সন্তানদের ফিরে আনতে পারবে। এ ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করছি।

পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, জেলে পরিবারগুলোতে চলছে আহাজারি। তারা খুবই হতদরিদ্র পরিবার। ছৈয়দুল বশরের মরদেহ পাওয়া গেলেও দীর্ঘ ১১ দিন পার হলেও এখনও বাকি চারজনে হদিস মিলছে না। এটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। জেলেদের ফিরে আনার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতি অনুরোধ করে সীমান্তের এ জনপ্রতিনিধি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত)

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) যারীন তাসমিন তাসিন বলেন, আটক জেলেদের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কতৃর্পক্ষকে জানানো হয়েছে। জেলেদের বিষয়ে আমরা কাজ করছি।

এদিকে, ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বাংলা অ্যাফেয়ার্সকে বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তরিক বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকার। ইতিমধ্যেই মিয়ানমারের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে শুরু করে বিভন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাই কমিশনারদের বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্সন করতে চায়। কৌশল ঠিক করা হয়েছে, আশা করা যাচ্ছে; নতুন বছরে বিষয়টি আশার আলো দেখতে পারবে।