সৈয়দ জামিলের পদত্যাগ: প্রশ্নবিদ্ধ সংস্কৃতি উপদেষ্টা
‘আপনাকে শ্রদ্ধা করেছি অনেক! আর করব না’

- সময় ১২:৫১:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ মার্চ ২০২৫
- / 53
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন সৈয়দ জামিল আহমেদ। গতকাল (শুক্রবার) বিকালে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন। এছাড়াও মুনীর চৌধুরী ১ম জাতীয় নাট্যোৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামিল আহমেদ। বক্তৃতাতেও তাঁর ইস্তফার বিষয়টি উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানের মঞ্চে থাকা শিল্পকলা একাডেমির সচিব মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেনের হাতে পদত্যাগপত্র তুলে দেন এই নাট্যব্যক্তিত্ব। পরে মঞ্চের সামনে এলে অনেকেই তাঁর এই পদত্যাগপত্রের বিরোধিতা করেন। সেসময়ের ধারণকৃত এক ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি তাঁর অবস্থানে অনড়। নিজের আত্মপক্ষ ব্যাখ্যা করতে থাকেন। একপর্যায়ে প্রশ্নবিদ্ধ করেন সংস্কৃতি উপদেষ্টাকে।
জামিল আহমেদের হুবহু বক্তব্যটা এমন, ‘‘কোনোরকম চিঠি ছাড়া শিল্পকলা একাডেমি থেকে তাকে টাকা দিতে হবে! কারণ তাঁর খুব দরকার। তিনি একটা প্রজেক্ট করছেন। সেই প্রজেক্টে আমি বলছি ‘না’। তিনি এখানে টাকা পয়সা কোনো উল্টাপাল্টা হোক, কিন্তু আমাকে কোনো চিঠি ছাড়া, কোনো চিঠি ছাড়া কেমন করে তিনি চান টাকা; যখন উপদেষ্টা! এবং আমি যখন বলেছি ‘না, আমাকে চিঠি দেন।’ চিঠি ছাড়া অবশ্যই আমি টাকা দেব না তাকে। আমি কোনো টাকা এখানে ছাড় করব না। তিনি তখন আমাকে বলেন, ‘আপনাকে শ্রদ্ধা করেছি অনেক! আর করব না!’’
গত ১৬ আগস্ট উপদেষ্টাদের দায়িত্ব পুনঃবণ্টন করে ড. আসিফ নজরুলকে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এরপর ১০ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
সৈয়দ জামিল আহমেদ গণমাধ্যমে একটি লিখিত বক্তব্য পাঠিয়েছেন। সেখানেও তিনি মন্ত্রণালয় ও উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ বিষয়ে সরাসরি কথা বলেছেন। তাঁর ভাষ্য, ‘বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে মহাপরিচালক পদে আমাকে দায়িত্ব নেওয়ার জন্য তৎকালীন সংস্কৃতি উপদেষ্টার (আসিফ নজরুল) পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হলে আমি বলেছিলাম, শিল্পকলা একাডেমি আইন অনুযায়ী একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাতে কাজ করতে পারে, সেই লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ের অযাচিত হস্তক্ষেপ রোধ করতে হবে এবং আমি একাডেমির ভিশন ও মিশন–সংবলিত স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি একটি পরিকল্পনা উপস্থাপন করি। তৎকালীন উপদেষ্টা ও সচিবালয়ের সকল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আমার সকল প্রস্তাব ও কর্মপরিকল্পনায় তখন সম্মত হয়েছিলেন। তাদের সম্মতি ও প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতেই আমি দায়িত্বভার গ্রহণ করতে সম্মত হই। কিন্তু উপদেষ্টা পরিবর্তনের পর থেকে আমার সকল বিধিসম্মত কাজে নীতিবহির্ভূত পদ্ধতিতে বারংবার হস্তক্ষেপ শুরু হয়। একাডেমির সকল কর্মকাণ্ডকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে শ্লথ করে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালানো হয়।’

উদহারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, ‘বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আইন অনুযায়ী প্রতি তিন মাস অন্তর একাডেমির সভা করার বিধান থাকা সত্বেও পরিষদ সভার কার্যবিবরণী অনুমোদন করতে উপদেষ্টা ৫ সপ্তাহ অহেতুক সময় নেন। অথচ একাডেমির আইন অনুযায়ী প্রতি তিন মাস অন্তর সভা করার বিধান রয়েছে।’
সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, ‘‘উপদেষ্টা ও মন্ত্রণালয়ের অযাচিত হস্তক্ষেপ, আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতার জটিলতা, একাডেমির সচিবকে ‘ফোকাল পারসন’ হিসেবে মনোনীত করে মহাপরিচালকের বিধিসম্মত দায়িত্ব পালনে বাধা প্রদান, বাজেট কর্তন, শিল্পকলার ভেতর থেকে ফাইল গায়েব করে দেওয়া, একাডেমির অভ্যন্তরে বিভিন্ন কর্মকর্তাকে প্ররোচিত করে কাজের পরিবেশ ব্যাহত করা এবং দুর্নীতিবাজ চক্রের নানা অপতৎপরতার কারণে আমি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি।’’
সৈয়দ জামিল আহমেদে লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ প্রসঙ্গে শনিবার সকালে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে ফোন করা হয়, তবে সাড়া পাওয়া যায়নি।