১১:৫৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আত্মসমর্পণের পর কারাগারে কক্সবাজারের সাবেক জেলা প্রশাসক

সিনিয়র প্রতিবেদক, কক্সবাজার
  • সময় ০৬:৫৩:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • / 56

কারাগারে কক্সবাজারের সাবেক জেলা প্রশাসক

কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত দুর্নীতির মামলায় সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) রুহুল আমিনকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করলে বিচারক মুন্সী আব্দুল মজিদ তাঁর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন এবং তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

কক্সবাজার আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) সিরাজ উল্লাহ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে, গত ২৩ জানুয়ারি আদালত রুহুল আমিন, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ সাদিকুল ইসলাম তালুকদারসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

মাতারবাড়ী তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য অধিগ্রহণ করা জমির ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় বাদীর স্বাক্ষর ও নথি জাল করে নিজেদের নাম কেটে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে আসামিদের বিরুদ্ধে।

অন্য আসামিরা হলেন—কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নাজির স্বপন কান্তি পাল এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালতের স্টেনোগ্রাফার জাফর আহমদ।

দুদকের কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে গত ১ জুলাই আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন এবং আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানান।

২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা জমির ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে তৎকালীন জেলা প্রশাসক রুহুল আমিনকে প্রধান আসামি করে ২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন স্থানীয় বাসিন্দা কায়সারুল ইসলাম চৌধুরী। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে দুদককে তদন্তের নির্দেশ দেয়। তবে, পরবর্তী সময়ে তৎকালীন জেলা ও দায়রা জজ সাদিকুল ইসলাম তালুকদার ওই মামলার প্রধান আসামি রুহুল আমিনের নাম বাদ দিয়ে নথিপত্র দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠান।

এ ঘটনা জানাজানি হলে কায়সারুল ইসলাম পুনরায় একই আদালতে মামলা করেন। সেই মামলার তদন্ত শেষে গত ১ জুলাই দুদক আদালতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।

দুদক ও আদালত সূত্র জানায়, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ১,৪১৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। চিংড়ি ঘের, বসতবাড়িসহ অবকাঠামোর জন্য ক্ষতিপূরণ বাবদ বরাদ্দ ছিল ২৩৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে চিংড়ি ঘেরের ক্ষতিপূরণের জন্য ৪৬ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। কিন্তু মনগড়া ২৫টি চিংড়ি ঘের দেখিয়ে এই বরাদ্দ থেকে ১৯ কোটি ৮২ লাখ ৮ হাজার ৩১৫ টাকা আত্মসাৎ করা হয়।

জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, শুরুতে চিংড়ি ঘের অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রায় ২৩ কোটি টাকার চেক বিতরণ করা হয়েছিল, তবে পরবর্তী সময়ে তিনটি চেক বাতিল করা হয়। এরপর যারা এই ১৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা নিয়েছেন এবং দিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে।

২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজার সদর মডেল থানায় রুহুল আমিনসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে দুদক ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পায়। ২০১৭ সালের ২২ মে আদালত রুহুল আমিনের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠান। তার আগে তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।

শেয়ার করুন

আত্মসমর্পণের পর কারাগারে কক্সবাজারের সাবেক জেলা প্রশাসক

সময় ০৬:৫৩:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত দুর্নীতির মামলায় সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) রুহুল আমিনকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করলে বিচারক মুন্সী আব্দুল মজিদ তাঁর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন এবং তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

কক্সবাজার আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) সিরাজ উল্লাহ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে, গত ২৩ জানুয়ারি আদালত রুহুল আমিন, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ সাদিকুল ইসলাম তালুকদারসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

মাতারবাড়ী তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য অধিগ্রহণ করা জমির ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় বাদীর স্বাক্ষর ও নথি জাল করে নিজেদের নাম কেটে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে আসামিদের বিরুদ্ধে।

অন্য আসামিরা হলেন—কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নাজির স্বপন কান্তি পাল এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালতের স্টেনোগ্রাফার জাফর আহমদ।

দুদকের কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে গত ১ জুলাই আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন এবং আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানান।

২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা জমির ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে তৎকালীন জেলা প্রশাসক রুহুল আমিনকে প্রধান আসামি করে ২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন স্থানীয় বাসিন্দা কায়সারুল ইসলাম চৌধুরী। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে দুদককে তদন্তের নির্দেশ দেয়। তবে, পরবর্তী সময়ে তৎকালীন জেলা ও দায়রা জজ সাদিকুল ইসলাম তালুকদার ওই মামলার প্রধান আসামি রুহুল আমিনের নাম বাদ দিয়ে নথিপত্র দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠান।

এ ঘটনা জানাজানি হলে কায়সারুল ইসলাম পুনরায় একই আদালতে মামলা করেন। সেই মামলার তদন্ত শেষে গত ১ জুলাই দুদক আদালতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।

দুদক ও আদালত সূত্র জানায়, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ১,৪১৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। চিংড়ি ঘের, বসতবাড়িসহ অবকাঠামোর জন্য ক্ষতিপূরণ বাবদ বরাদ্দ ছিল ২৩৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে চিংড়ি ঘেরের ক্ষতিপূরণের জন্য ৪৬ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। কিন্তু মনগড়া ২৫টি চিংড়ি ঘের দেখিয়ে এই বরাদ্দ থেকে ১৯ কোটি ৮২ লাখ ৮ হাজার ৩১৫ টাকা আত্মসাৎ করা হয়।

জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, শুরুতে চিংড়ি ঘের অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রায় ২৩ কোটি টাকার চেক বিতরণ করা হয়েছিল, তবে পরবর্তী সময়ে তিনটি চেক বাতিল করা হয়। এরপর যারা এই ১৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা নিয়েছেন এবং দিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে।

২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজার সদর মডেল থানায় রুহুল আমিনসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে দুদক ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পায়। ২০১৭ সালের ২২ মে আদালত রুহুল আমিনের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠান। তার আগে তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।