আত্মঘাতী ড্রোন
- সময় ০১:০৭:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪
- / 229
যুদ্ধের ধরন বদলে গেছে। আজকের যুদ্ধে শুধুমাত্র সৈনিক আর ট্যাংক-বিমান দিয়েই লড়া হয় না। প্রযুক্তি এখন আধুনিক যুদ্ধের মূল অস্ত্র। ড্রোনের ব্যবহার বিশেষভাবে সামরিক বাহিনীতে বিপ্লব এনেছে।
এই ড্রোনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর এক নতুন প্রযুক্তি হলো “সুইসাইড ড্রোন” বা আত্মঘাতী ড্রোন। সম্প্রতি, উত্তর কোরিয়া দাবি করেছে যে, তারা এমনই এক নতুন ধরনের সুইসাইড ড্রোন তৈরি করেছে।
উত্তর কোরিয়া, যার নাম শুনলেই মনে পড়ে পারমাণবিক অস্ত্র এবং সামরিক শক্তির কথা, সেই দেশ এখন এই সুইসাইড ড্রোন তৈরি করে বিশ্বকে নতুনভাবে আতঙ্কিত করেছে।
সুইসাইড ড্রোন বা আত্মঘাতী ড্রোন হলো এমন এক ধরনের মারণাস্ত্র, যা একটি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার পর নিজেই ধ্বংস হয়ে যায়। এটি সরাসরি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করে বিস্ফোরিত হয়, ফলে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়।
উত্তর কোরিয়া এই ড্রোনগুলো তৈরি করেছে প্রতিরক্ষা এবং আক্রমণের জন্য এক বিশেষ অস্ত্র হিসেবে। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম জানায় যে, এই ড্রোনগুলো অনেকটাই ক্ষুদ্রাকৃতির, যা দূরবর্তী লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। এগুলোতে আছে অত্যাধুনিক জিপিএস সিস্টেম, যা তাদের নির্ভুলভাবে লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ড্রোনগুলোর মূল উদ্দেশ্য হলো, শত্রুর বিশাল সামরিক স্থাপনা বা যেকোনো গোপন ঘাঁটি ধ্বংস করা। এগুলো অনেকটা চালকবিহীন ক্ষেপণাস্ত্রের মতো, যা নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার পর বিস্ফোরিত হয়।
তবে প্রশ্ন উঠছে, কেন উত্তর কোরিয়া এই ধরনের ড্রোন তৈরি করছে? উত্তর অনেকটাই সহজ, বিশ্ব রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করার জন্য। উত্তর কোরিয়া বরাবরই বিশ্বে নিজেদের সামরিক শক্তি প্রদর্শন করে এসেছে।
পারমাণবিক অস্ত্রের পাশাপাশি এখন তারা সুইসাইড ড্রোনের মতো নতুন প্রযুক্তির অস্ত্র তৈরি করছে, যা তাদের শত্রুদের কাছে একটি নতুন হুমকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে।
উত্তর কোরিয়ার এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে। বিশেষ করে, তাদের প্রতিবেশী দেশ দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপান এই ড্রোন প্রযুক্তির কারণে শঙ্কিত। যুক্তরাষ্ট্রও এ নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। কেননা, এই সুইসাইড ড্রোনগুলো শুধুমাত্র সামরিক ঘাঁটিতে আঘাত হানার জন্য নয়, বরং সাইবার আক্রমণসহ বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক কাজেও ব্যবহৃত হতে পারে।
অবশ্য, উত্তর কোরিয়া শুধু ড্রোনের উপর নির্ভর করছে না। তারা অন্যান্য সামরিক শক্তিকেও সমানভাবে উন্নত করছে। এই সুইসাইড ড্রোন তৈরির মধ্য দিয়ে তারা তাদের সামরিক দক্ষতাকে আরও উচ্চমাত্রায় নিয়ে গেছে। তবে এর সঙ্গে বেড়েছে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকিও।
বিশেষজ্ঞদের মতে, উত্তর কোরিয়া এই সুইসাইড ড্রোনগুলোকে শুধুমাত্র প্রতিরক্ষা নয়, বরং আক্রমণের জন্যও ব্যবহার করতে পারে। বিশেষ করে, যদি তারা মনে করে যে, তাদের শত্রুদের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধ করা সম্ভব নয়, তখন এই ড্রোনগুলোই হতে পারে তাদের প্রধান আক্রমণাত্মক অস্ত্র।
এই সুইসাইড ড্রোন প্রযুক্তি শুধু উত্তর কোরিয়ার সামরিক শক্তিকেই বাড়ায়নি বরং এশিয়া এবং বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের সামরিক ভারসাম্যকেও বিপজ্জনক করে তুলেছে। এই ড্রোনগুলো সামরিক পরিকল্পনায় কৌশলগত পরিবর্তন আনতে পারে এবং এর প্রভাব বিশ্বের শান্তি ও স্থিতিশীলতার উপর গভীরভাবে পড়তে পারে।
যদিও সুইসাইড ড্রোন প্রযুক্তি আধুনিক যুদ্ধের একটি নতুন অধ্যায়, কিন্তু এর পরিণতি ভয়ঙ্কর হতে পারে। বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলো এখন এই ড্রোনের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়, তা-ই ভবিষ্যৎ যুদ্ধের ধারা নির্ধারণ করবে।
উত্তর কোরিয়ার সুইসাইড ড্রোন প্রযুক্তি আজকের দিনে আধুনিক যুদ্ধের নতুন মারণাস্ত্র। যুদ্ধক্ষেত্রে প্রযুক্তির এমন ব্যবহার কি বিশ্বকে শান্তির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে, নাকি আরও বেশি সংঘাতের দিকে ঠেলে দেবে- প্রশ্নের উত্তর সময়ই দেবে।
শেয়ার করুন
-
সর্বশেষ
-
সর্বাধিক
Devoloped By: InnoSoln Limited