‘আওয়ামী লীগ চাচ্ছে যে, তারা নিষিদ্ধ হয়ে যাক’

- সময় ০৬:৪৭:৩৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ মার্চ ২০২৫
- / 34
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গত বছরের ৫ আগস্ট পতন ঘটে স্বাধীনতাপরবর্তী বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশিদিন ক্ষমতায় থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। এরপর থেকে এক রকম রাজনীতির মাঠ থেকে নির্বাসনে চলে যায় আওয়ামী লীগ। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা দেশে-বিদেশে পালিয়ে বা আত্নগোপনে রয়েছে। অন্যদিকে গণহত্যার দায়ে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছে বড় একটি সংখ্যার কেন্দ্রীয় নেতাসহ কর্মীরাও।
এমনই এক প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বিপর্যস্ত ৭৫ বছর বয়সী দলটি। যার ফলে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যত নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে যেমন নানা আলোচনা রয়েছে, তেমনি আওয়ামী লীগের ভেতরেও আছে অনিশ্চয়তা।
তবে পতনের ছয় মাস পার হলেও পরিস্থিতির জন্য আওয়ামী লীগের কোনো অনুশোচনা বা ক্ষমা চাওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং অনলাইন বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দলটি বিক্ষোভ, অবরোধ এবং এমনকি হরতালের মতো কর্মসূচি দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। তবে তাদের এই প্রচেষ্টা কতটা সফল হবে তা নিয়ে রয়েছে নানা আলোচনা।
সম্প্রতি বেসরকারি একটি টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলেছেন রাজনীতিবিদ ও জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ। যথারীতি খোঁচা দিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও।
ওই অনুষ্ঠানে প্রবীণ এই দলটির ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালে আওয়ামী লীগের একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড হয়েছে। যে কারণে এক অর্থে তখন দলটির পতন হয়েছে। কিন্তু এই আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে। এই পতনটা বাংলাদেশে কখনো হয়নি। যার কারণে আমি বারবার বলি যে, জেনারেল এরশাদের পতন হওয়ার তিনদিনের মাথায় মিজান চৌধুরী তার বাড়িতে দল বানিয়েছিল বা দলের অফিস বানিয়েছিল। আজকে ৭ মাস হয়ে গেল আওয়ামী লীগ কিন্তু একটা কুড়ে ঘরও পায়নি। এখন কুঁড়েঘর পায়নি নাকি কুঁড়েঘর খোঁজে নি সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
পার্থ বলেন, আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ কী হবে সেটা নির্ভর করে দলটির নেতৃত্বে কে আসবে। এক সময় বলা হতো, এই দলে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু এখন আওয়ামী লীগের একটা গ্রুপ ‘আপাকে’ বাদ দেওয়ারও একটা চিন্তা করতে পারে। আবার এই দলটির যত বক্তৃতা তার সবগুলোই সভানেত্রীর কাছ থেকে শুনেছে। যার ফলে নেতৃত্ব পরিবর্তনের কোনো সুযোগ বা কোনো মানসিকতা দেখি না।
আওয়ামী নিষিদ্ধ নিয়ে আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, আমার যেটা ধারণা, আওয়ামী লীগ চাচ্ছে যে, তারা নিষিদ্ধ হয়ে যাক। তাহলে আওয়ামী লীগের আর নির্বাচনে আসতে হবে না, তারা সারা পৃথিবীতে কাঁদতে পারবে। এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব পরিবর্তনের কোনো সুযোগ থাকবে না। আর যদি নিষিদ্ধ না হয়, নিষিদ্ধ তো হচ্ছে না আমার যতটুকু পলিটিক্যাল ধারণা। আওয়ামী লীগ যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে আসে সেই ক্ষেত্রে কিন্তু এই দলটির দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন আসবে। আমার মনে হয় না, সভানেত্রী ওই নৈতিক জায়গায় আছেন যে, উনি জেল খেটে, জেলে বসে কাজ করবে।
তিনি বলেন, এসব করার জন্য একটা নৈতিক সাপোর্ট লাগে। যেটা ওয়ান-ইলেভেনের সময় ছিল। সে সময় তিনি দেশে ফিরে এসে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কেননা, সে সময় বিপুল জনসমর্থন ছিল। এখন আর ওই জিনিস টা নাই। এখন আওয়ামী সমর্থন আছে কিন্তু জনসমর্থন নাই।
হাসিনার ঘুরে দাঁড়ানোর রাজনীতি কতটা সফল হবে—এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ঘুরে দাঁড়ানোর যে রাজনীতি সেখানে একটা নৈতিক জায়গা থাকে। আওয়ামী লীগ কিন্তু ৭৫-এর পরও ঘুরে দাঁড়িয়েছে, এই দলটি কিন্তু ওয়ান-ইলেভেনের পরও ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এখন আওয়ামী লীগ চোর, দুর্নীতিবাজ, হত্যাকারী। এখনকার আওয়ামী লীগ এস আলমের পকেটে, দরবেশের পকেটে আরও অনেকেরই পকেট। এক একটা এমপি, মন্ত্রীর ২৫০-৩০০ বাড়ি। শুধু তাই নয়, একজন পিওনের কাছে ৪শ কোটি টাকা। এই দায়গুলো আপনার নিতে হবে’।
তরুণ এই রাজনীতিবিদ বলেন, আওয়ামী লীগের এখন দেশে-বিদেশে বদনাম হয়ে গেছে। এই দলটির হাতে এখন রক্ত, তিনবার তারা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। তো এতগুলো অপকর্মের দায় নিয়ে এমন কোনো নেতা আছে যে এসে বলবে আমি ঘুরে দাড়াঁব। আর যে আসবে সে তো এখন এবিএন পানি খায়। তার তো মানসিকতা পরিবর্তন হয়ে গেছে’।
‘এক সময় যারা এই রাজনীতি করতে আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খানকে ভয় পাননি। কারণ, তাদের মধ্যে সততা ছিল। এখন তারা হাজার কোটি টাকার মালিক। কেন আসবো আমি কষ্ট করে। আমার তো হয়ে গেছে। তাদের বাচ্চারা এখন বিদেশে স্যাটেল’।
ব্যারিস্টার পার্থ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ১৭ বছর ধরে ক্ষমতায়। এই দলটির এখন যারা ছাত্রলীগ-যুবলীগ করে ওরা কিন্তু প্রশিক্ষিত না। ওরা এতদিন মারামারি করেছে ডানদিকে পুলিশ, বাঁ দিকে হেলমেট বাহিনী নিয়ে। সুতরাং রাজপথে আন্দোলন করে আওয়ামী লীগকে আনার জন্য ওরা প্রশিক্ষিত না। এদের অনেকেই দল করার পর থেকেই দেখে আসছে আমরা তো ক্ষমতায়’।
‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর শেখ হাসিনা যখন দেশে ফেরত আসলেন তখন তার আশেপাশে লোকগুলো কারা ছিলেন? রাজ্জাক, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, আবদুস সামাদ আজাদ, মতিয়া চৌধুরীসহ আরও অনেকে। তাদের প্রত্যেকেরই কিন্তু সূর্যের মত আলো না থাকলেও তারার মত আলো ছিল। আজকে কিন্তু কেউ নাই’।
পার্থ বলেন, আমি মনে করি আওয়ামী লীগের জন্য সামনে খুব কঠিন অবস্থা হয়ে দাঁড়াবে। যদি সভানেত্রী আবার কনফিডেন্স নিয়ে ফেরতও আসে তাহলেও কিন্তু ভিন্ন জিনিস দেখা যাবে। কারণ, আওয়ামী লীগের প্রতি আগের সেই ইমোশন নেই। তবে যদি আওয়ামী লীগের মধ্যে ষড়যন্ত্র বা চক্রান্ত হয় যে আমরা দলটিকে ভাঙব তাহলে আবার ভিন্ন পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে।
আওয়ামী লীগের ভুল রাজনীতি তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ড. ইউনূস ও ছাত্রদেরকে জঙ্গি ডাকা এবং গণঅভ্যুত্থানকে ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত, জঙ্গি আক্রমণ বলে। এসব বলে আপনি আবার কীভাবে রাজনীতি করবেন? আওয়ামী লীগ যদি মনে করে প্রধানমন্ত্রীত্ব একটা গলার মালা এটা ড. ইউনূসের গলা থেকে খুলে বিদেশি কোনো দেশ অন্য কারো গলায় পড়িয়ে দিলে তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়ে যাবেন; তাহলে বলব তারা আসলে বোকার স্বর্গে বাস করে। ওই পরিস্থিতি এখন আর নেই। আওয়ামী লীগকে একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে আসতে হবে। কিন্তু ওই প্রক্রিয়া এখনও শুরু হয়নি’।