ঢাকা ০৪:৪১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অন্য ধর্মে বিয়ে করে যে সমস্যায় পড়েছিলেন ওস্তাদ জাকির হুসেন

বিনোদন ডেস্ক
  • সময় ০১:১১:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / 42

ওস্তাদ জাকির হুসেন

সত্তর দশকের শেষের দিকের কথা। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বে এলাকা। ইতালিয়ান-আমেরিকান নারী কত্থক নাচে! শুনে আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলেন ভারতের বিখ্যাত তবলা বাদক জাকির হুসেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন নবীন বাদক হিসেবে আন্তর্জাতিক আত্মপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। সেখানেই পরিচয় হল কত্থক শিল্পী অ্যান্তোনিয়া মিনেকোলার সঙ্গে। এই প্রথম যেন স্বপ্নের নারীর দেখা পেলেন আঙুলের জাদুকর। সেই প্রেমের দিনগুলি যেকোনো সিনেমার গল্পের থেকে কম নয়।

দুজনেই তখন ছাত্র। একজন তবলা বিভাগের, অন্যজন কত্থক বিভাগের। প্রথম দর্শন-পরিচয়ে প্রেমে পড়লেও তাদের মেলামেশা শুরু হয় তারও বেশ কিছুদিন পর থেকে। ভবিষ্যতের স্ত্রীকে সেই আমলের পুরনো খেয়ালে চলা পরিবারকে মানাতেও কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি জাকিরকে। অ্যান্তোনিয়া মিনেকোলা প্রথমে দ্বিধায় ছিলেন। একে অন্য জাত, অন্য ধর্ম, তার ওপর শ্বশুরবাড়ি সুদূর বিদেশ। নয়া খেয়াল, নয়া সংস্কৃতি, নতুন ঘরানা, পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে উঠতে পারবেন কিনা! কিন্তু, জাকির ছিলেন নাছোড়বান্দা।

রোজ অ্যান্তোনিয়ার নাচের ক্লাসের বাইরে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতেন। শুধু একবার যদি তার তাকিয়ে দেখেন অ্যান্তোনিয়া। একবার যদি তার দিকে তাকিয়ে হাসেন। একবার যদি তার প্রেমের প্রস্তাব দেওয়ার অবকাশ হয়! সিমি গারেওয়ালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জাকির অনেকদিন আগে বলেছিলেন, আমাদের প্রথম দেখার বেশ কিছুদিন পর থেকে আমরা একসঙ্গে একটা বাড়িতে থাকতে শুরু করি। দেখা হওয়ার পরই তা প্রেমে পৌঁছতে খুব বেশি সময় লাগেনি। যে কারণেই হোক টনি (অ্যান্তোনিয়া মিনেকোলার ডাকনাম) আমার জীবনের লক্ষ্য হয়ে গিয়েছিল তখন।

ওস্তাদ জাকির হোসেন
ওস্তাদ জাকির হোসেন

প্রেম করার আট বছর পর তারা মুসলিম বিবাহবিধি মেনে বিয়ে করেন। কিন্তু, বিদেশিনী, ভিন ধর্মের বউ ঘরে তুলতে রাজি ছিলেন না জাকিরের মা। এ বিয়েতে প্রবল আপত্তি তোলেন তিনি। একইভাবে টনির বাবারও তাদের সম্পর্কে আপত্তি ছিল। কারণ জাকিরের সেই আমলে তেমন কোনো রোজগারই ছিল না। কিন্তু, প্রায় আট বছর একসঙ্গে থাকার পর তারা ১৯৭৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করেন।

জাকির সাক্ষাৎকারে এও বলেছিলেন, আমার মা নতুন বউকে মেনে নিতে না পেরে আলাদা হয়ে যান। তখন আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন আমার গুরু তথা আমার বাবা। মা কোনোদিনই বিদেশি বউকে মানেননি। ওর বাবাও আমাকে মেনে নেননি। জাকিরে কথায়, আমাদের পরিবারে এটাই ছিল প্রথম দুই ধর্মের বিয়ে। তাই বিয়ের আগে পর্যন্ত মায়ের কাছে গোটা ব্যাপারটাই গোপন ছিল। বিয়ের পর তাকে জানানো হয়েছিল।

সাক্ষাৎকারে অ্যান্তোনিয়া মিনেকোলা বলেন, আলি আকবর খানের সৌজন্যে তাদের প্রথম দেখা হয়েছিল। আমি জানতাম ভারতীয় নৃত্য সম্পর্কে আমি কিছুই জানতাম না। তাই আমি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত নিয়ে জানতে আলি আকবর খান সাহেবের কাছে গিয়েছিলাম। তাক বলতে গিয়েছিলাম, আমি ভারতীয় নৃত্য শিখতে চাই। সেখানেই আমি প্রথম জাকিরকে দেখি। ওই রাতে কোনো কারণে আলিসাহেবের বাড়িতেও ছিল। ওকে দেখেই মনে হয়েছিল ও খুব মিষ্টি। ওকে যেন অনেক দিন ধরেই চিনি, সিমিকে বলেন অ্যান্তোনিয়া মিনেকোলা। গত সেপ্টেম্বরেই তাদের বিবাহ বার্ষিকী গিয়েছে। দম্পতির দুই কন্যা বর্তমান। একজনের নাম আনিসা কুরেশি এবং অন্যজন ইসাবেলা কুরেসি।

শেয়ার করুন

অন্য ধর্মে বিয়ে করে যে সমস্যায় পড়েছিলেন ওস্তাদ জাকির হুসেন

সময় ০১:১১:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪

সত্তর দশকের শেষের দিকের কথা। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বে এলাকা। ইতালিয়ান-আমেরিকান নারী কত্থক নাচে! শুনে আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলেন ভারতের বিখ্যাত তবলা বাদক জাকির হুসেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন নবীন বাদক হিসেবে আন্তর্জাতিক আত্মপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। সেখানেই পরিচয় হল কত্থক শিল্পী অ্যান্তোনিয়া মিনেকোলার সঙ্গে। এই প্রথম যেন স্বপ্নের নারীর দেখা পেলেন আঙুলের জাদুকর। সেই প্রেমের দিনগুলি যেকোনো সিনেমার গল্পের থেকে কম নয়।

দুজনেই তখন ছাত্র। একজন তবলা বিভাগের, অন্যজন কত্থক বিভাগের। প্রথম দর্শন-পরিচয়ে প্রেমে পড়লেও তাদের মেলামেশা শুরু হয় তারও বেশ কিছুদিন পর থেকে। ভবিষ্যতের স্ত্রীকে সেই আমলের পুরনো খেয়ালে চলা পরিবারকে মানাতেও কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি জাকিরকে। অ্যান্তোনিয়া মিনেকোলা প্রথমে দ্বিধায় ছিলেন। একে অন্য জাত, অন্য ধর্ম, তার ওপর শ্বশুরবাড়ি সুদূর বিদেশ। নয়া খেয়াল, নয়া সংস্কৃতি, নতুন ঘরানা, পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে উঠতে পারবেন কিনা! কিন্তু, জাকির ছিলেন নাছোড়বান্দা।

রোজ অ্যান্তোনিয়ার নাচের ক্লাসের বাইরে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতেন। শুধু একবার যদি তার তাকিয়ে দেখেন অ্যান্তোনিয়া। একবার যদি তার দিকে তাকিয়ে হাসেন। একবার যদি তার প্রেমের প্রস্তাব দেওয়ার অবকাশ হয়! সিমি গারেওয়ালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জাকির অনেকদিন আগে বলেছিলেন, আমাদের প্রথম দেখার বেশ কিছুদিন পর থেকে আমরা একসঙ্গে একটা বাড়িতে থাকতে শুরু করি। দেখা হওয়ার পরই তা প্রেমে পৌঁছতে খুব বেশি সময় লাগেনি। যে কারণেই হোক টনি (অ্যান্তোনিয়া মিনেকোলার ডাকনাম) আমার জীবনের লক্ষ্য হয়ে গিয়েছিল তখন।

ওস্তাদ জাকির হোসেন
ওস্তাদ জাকির হোসেন

প্রেম করার আট বছর পর তারা মুসলিম বিবাহবিধি মেনে বিয়ে করেন। কিন্তু, বিদেশিনী, ভিন ধর্মের বউ ঘরে তুলতে রাজি ছিলেন না জাকিরের মা। এ বিয়েতে প্রবল আপত্তি তোলেন তিনি। একইভাবে টনির বাবারও তাদের সম্পর্কে আপত্তি ছিল। কারণ জাকিরের সেই আমলে তেমন কোনো রোজগারই ছিল না। কিন্তু, প্রায় আট বছর একসঙ্গে থাকার পর তারা ১৯৭৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করেন।

জাকির সাক্ষাৎকারে এও বলেছিলেন, আমার মা নতুন বউকে মেনে নিতে না পেরে আলাদা হয়ে যান। তখন আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন আমার গুরু তথা আমার বাবা। মা কোনোদিনই বিদেশি বউকে মানেননি। ওর বাবাও আমাকে মেনে নেননি। জাকিরে কথায়, আমাদের পরিবারে এটাই ছিল প্রথম দুই ধর্মের বিয়ে। তাই বিয়ের আগে পর্যন্ত মায়ের কাছে গোটা ব্যাপারটাই গোপন ছিল। বিয়ের পর তাকে জানানো হয়েছিল।

সাক্ষাৎকারে অ্যান্তোনিয়া মিনেকোলা বলেন, আলি আকবর খানের সৌজন্যে তাদের প্রথম দেখা হয়েছিল। আমি জানতাম ভারতীয় নৃত্য সম্পর্কে আমি কিছুই জানতাম না। তাই আমি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত নিয়ে জানতে আলি আকবর খান সাহেবের কাছে গিয়েছিলাম। তাক বলতে গিয়েছিলাম, আমি ভারতীয় নৃত্য শিখতে চাই। সেখানেই আমি প্রথম জাকিরকে দেখি। ওই রাতে কোনো কারণে আলিসাহেবের বাড়িতেও ছিল। ওকে দেখেই মনে হয়েছিল ও খুব মিষ্টি। ওকে যেন অনেক দিন ধরেই চিনি, সিমিকে বলেন অ্যান্তোনিয়া মিনেকোলা। গত সেপ্টেম্বরেই তাদের বিবাহ বার্ষিকী গিয়েছে। দম্পতির দুই কন্যা বর্তমান। একজনের নাম আনিসা কুরেশি এবং অন্যজন ইসাবেলা কুরেসি।