ডেল্টা মেডিকেল কলেজের ভুল চিকিৎসার অভিযোগ | Bangla Affairs
১১:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ২৪ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
পঙ্গুত্বের পথে নবজাতক

ডেল্টা মেডিকেল কলেজের ভুল চিকিৎসার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • সময় ০৪:৫৯:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫
  • / 32

ডেল্টা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত ডেল্টা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল  কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এক নবজাতক শিশুকে ভুল চিকিৎসা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে ৭ দিন বয়সী ওই নবজাতকের পিতা নূরের শাফাহ ফেসবুকে স্ট্যাটাসে তার সন্তানের হাত ভেঙে যাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। ফলে শিশুটি পঙ্গুত্বে পথেই হাঁটছে বলে দাবি করেছেন তার অভিভাবকরা।

ফেসবুক স্ট্যাটাসে নূরের শাফাহ লিখেন, ‘আমার সন্তানের সাথে ঘটে যাওয়া একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা।




গতকাল (৩ এপ্রিল) বিকাল ৪টায় আমার নবজাতক (৭ দিন) সন্তানকে বিলিরুবিনের মাত্রা বেশী থাকায় মিরপুরের Delta Medical College Hospital এ ভর্তি করি ফটোথেরাপী দেয়ার জন্য। ভর্তির পরপরই তারা জানায় যে, দীর্ঘসময় আনইন্টারাপ্টেডলি থেরাপী নেয়ার জন্য তারা দুই থেকে তিনবার ব্রেস্ট ফিডিং করতে দিবে এবং বাকি সময় ব্রেস্ট পাম্প করে তাদের কাছে দিলে তারাই নিজ দায়িত্বে বাচ্চাকে খাইয়ে নিবে। ট্রিটমেন্ট চলাকালীন সময়ে কেউ বাচ্চার কাছে যেতে পারবে না এবং দেখতে পারবে না। রাত ১২টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত মা ও বাচ্চার কাছে যেতে পারবে না।




তাদের নিয়মানুযায়ী আমার স্ত্রী বাচ্চাকে রাত ১২টায় স্বাভাবিকভাবে খাইয়ে দিয়ে আসে। সকাল ৭টায় তারা পুনরায় তাকে খাওয়ানোর জন্য ডেকে নিয়ে গেলে আমার স্ত্রী অনেক চেষ্টা করেও খাওয়াতে পারেনি কারণ বাচ্চা ঘুমাচ্ছিলো এবং কোনোভাবেই ঘুম থেকে উঠছে না। কর্তব্যরত নার্স জানায় যে, ঘুম থেকে উঠলে খাওয়ানোর জন্য ডেকে দিবে। তখন সে আবারও ব্রেস্ট পাম্প করে তাদের নিকট খাওয়ানোর জন্য দিয়ে আসে। সকাল ১০টায় ডিউটি ডক্টর জানায় যে বাচ্চার বিলিরুবিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রনে এসেছে তাকে রিলিজ দিয়ে দিবে আমরা যেনো বিল ক্লিয়ার করে আসি। ১১ টার দিকে তারা বাচ্চাকে তার মায়ের কাছে দিয়ে যায় এবং জানায় যে বাচ্চার ডান হাতে ক্যানোলা পরানোর কারণে ব্যাথা আছে তাই এই হাত যেন কম নাড়ানো হয়। এখানে জানিয়ে রাখা ভালো যে, তখনো বাচ্চা ঘুমাচ্ছিলো এবং ফুল বডি কাঁথা দিয়ে মোড়ানো ছিলো।

ডেল্টা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নবজাতকের ভুল চিকিৎসার অভিযোগ
ডেল্টা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নবজাতকের ভুল চিকিৎসার অভিযোগ




বাসায় নিয়ে আসার পর কাঁথা থেকে বের করে খাওয়ানোর চেষ্টা করার সময় দেখা যায় যে, বাচ্চার ডান হাত কনুই এর উপরে ভাঙ্গা যেটা টাচ করলেই সে মারাত্মকভাবে কান্না করছে। এছাড়া কোনোভাবেই তার ঘুম ভাংগানো যাচ্ছে না। হাত ভাংগা থাকার ব্যাপারটি বুঝার সাথে সাথেই ১২টার সময় আমরা পুনরায় তাকে ডেলটা মেডিকেল কলেজ এর নেওনেটাল ওয়ার্ডে নিয়ে যাই যেখানে সে ভর্তি ছিলো। তাদেরকে দেখানোর পর ডিউটি ডক্টর জানায় যে, সে নিজে চেক করে দিয়েছিলো ডিসচার্জ করার আগে এবং তাদের দাবি আমরা বাসায় নেয়ার পর টানাটানি করে হাত ভেঙে ফেলেছি। (মনে হচ্ছিলো গুলিস্তান থেকে মোবাইল কেনার মত কেনো চেক করে বাচ্চা নেইনি সেটা আমাদের অপরাধ)। এ পর্যায়ে তারা একটি এক্স-রে করার এডভাইস দিয়ে আমাদের শ্যামলীর পংগু হাসপাতালে যেতে বলে কারন তাদের ওখানে এক্স-রে করার উপায় নাকি নেই। এ পর্যায়ে আমরা লিখিত অভিযোগ দিয়ে চলে আসি কারণ বাচ্চার ট্রিটমেন্ট আমাদের কাছে জরুরি ছিলো।




সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত ট্রিটমেন্ট চলাকালীন বাচ্চা ঘুমিয়েই ছিলো এবং কোনোভাবেই তাকে খাওয়ানো যায়নি। সন্ধ্যার পরপরই বাচ্চা স্বাভাবিক হওয়া শুরু করে এবং খাওয়া শুরু করে।

যেহেতু রাত ১২ টায় ও বাচ্চা স্বাভাবিক ছিলো এবং খাওয়াতে পেরেছে কিন্তু সকাল ৭টায় পুনরায় দেখার পর থেকে সে ঘুমিয়েই কাটিয়েছে তাতে আমাদের ধারণা রাতের কোনো এক সময়ে হাত ভেঙেছে এবং সেটা স্বাভাবিক দেখানোর জন্য তাকে কোনো ধরনের সিডেটিভ ব্যবহার করে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছিলো যেনো আমরা না বুঝতে পারি।

বি:দ্র: লিখিত অভিযোগ প্রদানের ১০ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও হাসপাতাল থেকে কেউ আমাদের সাথে যোগাযোগ করেনি এবং এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা গ্রহনের প্রক্রিয়া চলমান আছে।




বিষয়টি সবার সাবধানতার জন্য শেয়ার করা কারণ আপনার সন্তান আপনার কাছে জীবনের চেয়েও মূল্যবান হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে জাস্ট এন অবজেক্ট। তাই বাচ্চাকে একা রাখবেন না নার্স/ডক্টরের কাছে। হসপিটাল থেকে আনার আগে অবশ্যই চেক করে নিবেন কারন এসব ব্যবসায়ীরা গুলিস্তানের মোবাইল বিক্রেতাদের মতই। বাসায় আসার পর আর কোন ক্লেইম তারা মানতে চাইবে না।’

 

এ বিষয়ে নূরের শাফাহ ও আকলিমা দম্পত্তি আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন। কিন্তু ডেল্টা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পক্ষে কেউ এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।



শেয়ার করুন

পঙ্গুত্বের পথে নবজাতক

ডেল্টা মেডিকেল কলেজের ভুল চিকিৎসার অভিযোগ

সময় ০৪:৫৯:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫

রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত ডেল্টা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল  কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এক নবজাতক শিশুকে ভুল চিকিৎসা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে ৭ দিন বয়সী ওই নবজাতকের পিতা নূরের শাফাহ ফেসবুকে স্ট্যাটাসে তার সন্তানের হাত ভেঙে যাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। ফলে শিশুটি পঙ্গুত্বে পথেই হাঁটছে বলে দাবি করেছেন তার অভিভাবকরা।

ফেসবুক স্ট্যাটাসে নূরের শাফাহ লিখেন, ‘আমার সন্তানের সাথে ঘটে যাওয়া একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা।




গতকাল (৩ এপ্রিল) বিকাল ৪টায় আমার নবজাতক (৭ দিন) সন্তানকে বিলিরুবিনের মাত্রা বেশী থাকায় মিরপুরের Delta Medical College Hospital এ ভর্তি করি ফটোথেরাপী দেয়ার জন্য। ভর্তির পরপরই তারা জানায় যে, দীর্ঘসময় আনইন্টারাপ্টেডলি থেরাপী নেয়ার জন্য তারা দুই থেকে তিনবার ব্রেস্ট ফিডিং করতে দিবে এবং বাকি সময় ব্রেস্ট পাম্প করে তাদের কাছে দিলে তারাই নিজ দায়িত্বে বাচ্চাকে খাইয়ে নিবে। ট্রিটমেন্ট চলাকালীন সময়ে কেউ বাচ্চার কাছে যেতে পারবে না এবং দেখতে পারবে না। রাত ১২টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত মা ও বাচ্চার কাছে যেতে পারবে না।




তাদের নিয়মানুযায়ী আমার স্ত্রী বাচ্চাকে রাত ১২টায় স্বাভাবিকভাবে খাইয়ে দিয়ে আসে। সকাল ৭টায় তারা পুনরায় তাকে খাওয়ানোর জন্য ডেকে নিয়ে গেলে আমার স্ত্রী অনেক চেষ্টা করেও খাওয়াতে পারেনি কারণ বাচ্চা ঘুমাচ্ছিলো এবং কোনোভাবেই ঘুম থেকে উঠছে না। কর্তব্যরত নার্স জানায় যে, ঘুম থেকে উঠলে খাওয়ানোর জন্য ডেকে দিবে। তখন সে আবারও ব্রেস্ট পাম্প করে তাদের নিকট খাওয়ানোর জন্য দিয়ে আসে। সকাল ১০টায় ডিউটি ডক্টর জানায় যে বাচ্চার বিলিরুবিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রনে এসেছে তাকে রিলিজ দিয়ে দিবে আমরা যেনো বিল ক্লিয়ার করে আসি। ১১ টার দিকে তারা বাচ্চাকে তার মায়ের কাছে দিয়ে যায় এবং জানায় যে বাচ্চার ডান হাতে ক্যানোলা পরানোর কারণে ব্যাথা আছে তাই এই হাত যেন কম নাড়ানো হয়। এখানে জানিয়ে রাখা ভালো যে, তখনো বাচ্চা ঘুমাচ্ছিলো এবং ফুল বডি কাঁথা দিয়ে মোড়ানো ছিলো।

ডেল্টা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নবজাতকের ভুল চিকিৎসার অভিযোগ
ডেল্টা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নবজাতকের ভুল চিকিৎসার অভিযোগ




বাসায় নিয়ে আসার পর কাঁথা থেকে বের করে খাওয়ানোর চেষ্টা করার সময় দেখা যায় যে, বাচ্চার ডান হাত কনুই এর উপরে ভাঙ্গা যেটা টাচ করলেই সে মারাত্মকভাবে কান্না করছে। এছাড়া কোনোভাবেই তার ঘুম ভাংগানো যাচ্ছে না। হাত ভাংগা থাকার ব্যাপারটি বুঝার সাথে সাথেই ১২টার সময় আমরা পুনরায় তাকে ডেলটা মেডিকেল কলেজ এর নেওনেটাল ওয়ার্ডে নিয়ে যাই যেখানে সে ভর্তি ছিলো। তাদেরকে দেখানোর পর ডিউটি ডক্টর জানায় যে, সে নিজে চেক করে দিয়েছিলো ডিসচার্জ করার আগে এবং তাদের দাবি আমরা বাসায় নেয়ার পর টানাটানি করে হাত ভেঙে ফেলেছি। (মনে হচ্ছিলো গুলিস্তান থেকে মোবাইল কেনার মত কেনো চেক করে বাচ্চা নেইনি সেটা আমাদের অপরাধ)। এ পর্যায়ে তারা একটি এক্স-রে করার এডভাইস দিয়ে আমাদের শ্যামলীর পংগু হাসপাতালে যেতে বলে কারন তাদের ওখানে এক্স-রে করার উপায় নাকি নেই। এ পর্যায়ে আমরা লিখিত অভিযোগ দিয়ে চলে আসি কারণ বাচ্চার ট্রিটমেন্ট আমাদের কাছে জরুরি ছিলো।




সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত ট্রিটমেন্ট চলাকালীন বাচ্চা ঘুমিয়েই ছিলো এবং কোনোভাবেই তাকে খাওয়ানো যায়নি। সন্ধ্যার পরপরই বাচ্চা স্বাভাবিক হওয়া শুরু করে এবং খাওয়া শুরু করে।

যেহেতু রাত ১২ টায় ও বাচ্চা স্বাভাবিক ছিলো এবং খাওয়াতে পেরেছে কিন্তু সকাল ৭টায় পুনরায় দেখার পর থেকে সে ঘুমিয়েই কাটিয়েছে তাতে আমাদের ধারণা রাতের কোনো এক সময়ে হাত ভেঙেছে এবং সেটা স্বাভাবিক দেখানোর জন্য তাকে কোনো ধরনের সিডেটিভ ব্যবহার করে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছিলো যেনো আমরা না বুঝতে পারি।

বি:দ্র: লিখিত অভিযোগ প্রদানের ১০ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও হাসপাতাল থেকে কেউ আমাদের সাথে যোগাযোগ করেনি এবং এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা গ্রহনের প্রক্রিয়া চলমান আছে।




বিষয়টি সবার সাবধানতার জন্য শেয়ার করা কারণ আপনার সন্তান আপনার কাছে জীবনের চেয়েও মূল্যবান হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে জাস্ট এন অবজেক্ট। তাই বাচ্চাকে একা রাখবেন না নার্স/ডক্টরের কাছে। হসপিটাল থেকে আনার আগে অবশ্যই চেক করে নিবেন কারন এসব ব্যবসায়ীরা গুলিস্তানের মোবাইল বিক্রেতাদের মতই। বাসায় আসার পর আর কোন ক্লেইম তারা মানতে চাইবে না।’

 

এ বিষয়ে নূরের শাফাহ ও আকলিমা দম্পত্তি আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন। কিন্তু ডেল্টা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পক্ষে কেউ এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।