ভূমিকম্প থেকে রক্ষা করবে যে বাড়ি !

- সময় ০১:০২:০৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫
- / 36
জাপান বিশ্বের অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ। এটি প্রশান্ত মহাসাগরের ‘রিং অব ফায়ার’ অঞ্চলে অবস্থিত, যেখানে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ভূমিকম্প ঘটে।
প্রতি বছর জাপানে প্রায় ১৫০০ ছোট-বড় ভূমিকম্প অনুভূত হয়। তবে, বেশিরভাগ ভূমিকম্পই খুব হালকা হয় এবং বড় ক্ষতি করে না। দেশটিতে প্রতি মাসে গড়ে ১০০ থেকে ১৫০টি ভূমিকম্প হয়, যদিও অধিকাংশই কম্পনমাত্রায় খুবই নিম্ন।
দেশটির সরকার ভূমিকম্পের সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবেলায় যুগান্তকারী এক প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। জাপানী প্রতিষ্ঠান- এয়ার দানশিন। প্রতিষ্ঠানটি আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ভূমিকম্পের জন্য বিশেষভাবে নকশা করে একটি বাড়ি তৈরি করছে। যা দেশটিতে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে কমিয়ে এনেছে বলে দাবি করা হচ্ছে।
এয়ার দানশিন’র তৈরি বিশেষ ওই বাড়ি; ভূমিকম্পের সময় মাটি থেকে উপরে উঠে যায়! এই বাড়িগুলি একটি বিশেষ এয়ারব্যাগের ওপর বসানো থাকে। যখন ভূমিকম্পের কম্পন শনাক্ত করা হয়, তখন বাড়ির নিচে থাকা কমপ্রেসড এয়ার ব্যবস্থা দ্রুত সক্রিয় হয়।
এয়ারব্যাগ ফুলে বাড়িটিকে কয়েক সেন্টিমিটার উপরে তুলে ফেলে, ফলে ভূমিকম্পের কাঁপুনি সরাসরি বাড়ির গঠনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে না। ভূমিকম্প থেমে গেলে, বাতাস বেরিয়ে যায় এবং বাড়িটি ধীরে ধীরে আবার মাটিতে নেমে আসে।

এই প্রযুক্তি শুধু ধারণায় সীমাবদ্ধ নয়, বাস্তবেও কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। ২০২১ সালে জাপানে সংঘটিত ৭.৩ মাত্রার ভূমিকম্পে এই প্রযুক্তির সাহায্যে নির্মিত বাড়িগুলি সম্পূর্ণ অক্ষত ছিল। যেখানে অন্যান্য বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেখানে এয়ার দানশিন প্রযুক্তি ভূমিকম্পের শক্তিকে পরাজিত করেছে।
জাপান শুধু এই ভাসমান বাড়ির প্রযুক্তিই নয়, ভূমিকম্প মোকাবিলায় আরও বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা হয়েছে উন্নত সিসমোমিটার, যা ভূমিকম্প শনাক্ত করে সতর্ক সংকেত পাঠিয়ে দেয়, যাতে মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে।
এই প্রযুক্তি শুধু জাপানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। ভবিষ্যতে ভূমিকম্পপ্রবণ দেশগুলো- নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, চিলি ও আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার মতো অঞ্চলে এয়ার দানশিন প্রযুক্তি জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে। কারণ এটি সহজেই ইনস্টল করা যায় এবং প্রচলিত ভূমিকম্প-প্রতিরোধী নির্মাণের তুলনায় অনেক কার্যকর।
উন্নত এসব প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে সাধারণ ভূমিকম্পে জাপানে মৃত্যুর হার প্রায় শূণ্য। এছাড়াও দেশটিতে নিয়মিতভাবে ভূমিকম্পের সময় করনীয় নিয়ে নাগরিকদের নানাভাবে প্রশিক্ষণও প্রদান করা হয়।