আ.লীগের দোসর ডিপিডিসির ইমরোজের সম্পদের পাহাড়

- সময় ০২:২৫:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫
- / 193
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি)’র সহকারী প্রকৌশলী ইমরোজ আলী ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর হিসাবে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়েও তিনি থেমে নেই।
ডিপিডিসি সূত্র জানিয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এপিএস ও সাবেক এমপি সাইফুজ্জামান শেখরের ঘনিষ্ঠ সহচর হওয়ার সুবাদে ইমরোজের হাতে পুরো ডিপিডিসির নিয়ন্ত্রণ চলে যায়। নড়াইলের বাসিন্দা হওয়ায় শেখরের সঙ্গে তার ছিল গভীর সখ্যতা, যা কাজে লাগিয়ে তিনি নির্বাহী প্রকৌশলী ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীদের চাপ প্রয়োগ করতেন। অভিযোগ রয়েছে, গ্রাহকদের ফাইল আটকে রেখে জোরপূর্বক তার কোম্পানি থেকেই মালামাল ক্রয় করতে বাধ্য করা হতো। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, ডিপিডিসিতে ইমরোজ আলীর কোম্পানি ছাড়া অন্য কেউ সাব-স্টেশন ব্যবসার সুযোগ পান না। নিম্নমানের হলেও তার কোম্পানির ট্রান্সফরমার ছাড়া কোনো ফাইল অনুমোদিত হয় না। অনিয়ম, দুর্নীতি ও জালিয়াতিতে দক্ষ এই উপ-সহকারী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই উঠে আসছে।
ডিপিডিসির উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইমরোজ আলী সম্পর্কে ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, তিনি নড়াইলে নিজ গ্রামে অত্যাধুনিক বাড়ি নির্মাণ করেছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এপিএস সাইফুজ্জামান শেখরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে তার ক্যারিয়ারে কোনো বাধা আসেনি। মাগুরা ও নড়াইলে বিপুল পরিমাণ জমিতে মাছের ঘের গড়ে তুলেছেন। ঢাকার মাতুয়াইলে তার চারটি ফ্ল্যাট রয়েছে, যেখানে একটি ফ্ল্যাটে তিনি নিজে বসবাস করেন। এছাড়া মাতুয়াইল কলেজ রোডে একটি ফ্ল্যাটে রয়েছে তার ব্যবসায়িক অফিস, আর সাদ্দাম মার্কেটে বিশাল এক ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়েছেন সিঙ্গার কোম্পানির কাছে। একই ভবনে তার আরও বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাট থাকার কথাও জানা গেছে। পাশাপাশি, তার স্ত্রীর নামে অন্তত ১০টি ফ্ল্যাটের মালিকানা রয়েছে। নামে-বেনামে রয়েছে একাধিক জমি এবং ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা রয়েছে।

ডিপিডিসির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ইমরোজ আলীর কোম্পানি নিম্নমানের মালামাল সরবরাহ করায় অন্যরা কোনো কাজ পাচ্ছেন না। যেমন, ২০০ কেভিএ সাব-স্টেশনের পরিবর্তে ১৫০ কেভিএ সরবরাহ করা হচ্ছে, এবং কপার ক্যাবলের পরিবর্তে অ্যালুমিনিয়াম ক্যাবল দিয়ে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে।
সরকারি ছুটি পেলেই ইমরোজ আলী নড়াইলে ছুটে যান, যেখানে বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের একদল তারকা প্রকৌশলীর সঙ্গে তার সখ্যতা রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, নড়াইলে ১০০ বিঘার বেশি জমিতে তিনি একটি বিলাসবহুল প্রমোদ ভিলা তৈরি করেছেন, যেখানে একটি মিনি মদের বারও রয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এপিএস সাইফুজ্জামান শেখরের জন্যও সেখানে বিলাসবহুল আবাসনের ব্যবস্থা ছিল, যেখানে অসামাজিক কার্যকলাপ চলত বলে জানা গেছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, ২০১৮ সাল থেকে ইমরোজ আলীর দখলে পুরো এলাকা জিম্মি ছিল। কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বললে তাকে নির্যাতনের শিকার হতে হতো। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা হারানোর পর তিনি কিছুটা নীরব থাকলেও তার ব্যবসা চলছে আগের মতোই।
সূত্র জানায়, ইমরোজ আলী একজন শক্তিশালী গডফাদার, যার ব্যবসার বিস্তার সুদূরপ্রসারী। তিনি শুধু আওয়ামী লীগের সঙ্গেই যুক্ত নন, বরং ডিপিডিসির বোর্ড এবং পরিচালক হিসেবে বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সদস্যদেরও অন্তর্ভুক্ত রেখেছেন। ক্ষমতায় যেই আসুক, সেই দলের শীর্ষ নেতাকে পাশে রেখে নিজের স্বার্থসিদ্ধি করার পরিকল্পনা তার দীর্ঘদিনের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিপিডিসির এক নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, ইমরোজ ডিপিডিসির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে তার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ এতে আপত্তি তুললে তাকে হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়, ফলে কেউ সহজে মুখ খুলতে সাহস পায় না।
একাধিক ঠিকাদার অভিযোগ করেছেন যে ইমরোজের প্রভাবের কারণে ডিপিডিসির বিভিন্ন ডিভিশনে তারা কাজ পাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। সব কাজ তার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে ইমরোজ চাকরির আচরণবিধি লঙ্ঘন করে জামিল (ছদ্মনাম) নামের এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে অংশীদারিত্বে ব্যবসা শুরু করেন। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে ব্যবসার পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে জামিলকে মালিকানা থেকে সরিয়ে দেন এবং তার অর্থ আত্মসাৎ করেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী জামিল জানান, “আমাদের বাড়ি একই এলাকায় হওয়ায় একসময় আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব ছিল। এখন আর নেই। সে নিজের মতো ব্যবসা করছে, আমিও আলাদা ব্যবসা করছি। চাকরির পাশাপাশি সে ব্যবসা করছে কি না, তা দেখা ডিপিডিসির দায়িত্ব।”
অভিযোগ রয়েছে, ডিপিডিসির উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইমরোজ আলী চাকরির শুরু থেকেই বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের নেতা হিসেবে প্রভাব বিস্তার করেছেন। তিনি গ্রীড বিভাগে চাকরি করেন, কারণ এখানে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ বেশি। তাই তিনি কোনো ডিভিশনে যেতে আগ্রহী নন। বছরের পর বছর পার হলেও তিনি ডিউটি রোস্টার অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করেন না। বরং, নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল পাওয়ার নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। সরেজমিনে গিয়ে কখনোই তাকে অফিসে পাওয়া যায়নি।