তুলসি গ্যাবার্ডের মন্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিক্রিয়া

- সময় ১১:৫০:০৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫
- / 46
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্স তুলসি গ্যাবার্ডের মন্তব্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ সংক্রান্ত একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়।
এতে উল্লেখ করা হয়, তুলসি গ্যাবার্ড অভিযোগ তুলেছেন যে, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ‘নিপীড়ন ও হত্যা’ এবং দেশে ‘ইসলামি সন্ত্রাসীদের হুমকির’ মধ্যে ‘ইসলামি খিলাফত অনুযায়ী শাসন করার’ ‘আদর্শ ও উদ্দেশ্য নিহিত’ আছে। তার এমন মন্তব্যে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ও মর্মাহত।
তার এই বিবৃতি বিভ্রান্তিকর এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর। এই জাতি ইসলামের অন্তর্ভুক্তিমূলক ও শান্তিপূর্ণ চর্চা করে এবং চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে, উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।
এতে আরও বলা হয়, গ্যাবার্ডের মন্তব্য কোনো প্রমাণ বা সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে নয়, বরং পুরো জাতিকে মোটা দাগে এবং অযৌক্তিকভাবে চিত্রিত করেছে।
বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশও চরমপন্থার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে, তবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, সামাজিক সংস্কার এবং অন্যান্য সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই সমস্যাগুলো মোকাবিলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে অব্যাহতভাবে কাজ করছে।
ভিত্তিহীনভাবে বাংলাদেশকে ‘ইসলামি খিলাফত’ ধারণার সঙ্গে যুক্ত করায় শান্তি, স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ অসংখ্য বাংলাদেশি এবং বিশ্বজুড়ে তাদের বন্ধু ও অংশীদারদের কঠোর পরিশ্রমকে অবমূল্যায়ন করেছে। ‘ইসলামি খিলাফত’ এর সঙ্গে যুক্ত করার যেকোনো প্রচেষ্টার বাংলাদেশ তীব্র নিন্দা জানায়।
রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের উচিত সংবেদনশীল বিষয়গুলো মাথায় রেখে, প্রকৃত জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে এবং ক্ষতিকারক বাঁধাধরা ধারণাগুলো (স্টেরিওটাইপ) থেকে বেরিয়ে এসে, ভয় না দেখিয়ে এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা যেন উসকে না দেয় সে ব্যাপারে যত্নশীল হয়ে মন্তব্য করা।
চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অভিন্ন বৈশ্বিক প্রচেষ্টা এবং জাতির সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার প্রতি শ্রদ্ধার ভিত্তিতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তথ্যভিত্তিক গঠনমূলক সংলাপে অংশ নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এদিকে, সোমবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে বিশেষ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা (ডিএনআই) বিভাগের প্রধান তুলসি গ্যাবার্ড। সাক্ষাৎকারে সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় উঠে এসেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ প্রসঙ্গও রয়েছে। এনডিটিভির পক্ষে ভারতীয় সংবাদ উপস্থাপক এবং সাংবাদিক বিষ্ণু সোম তাঁর সাক্ষাৎকার নেন।

আলাপের এক পর্যায়ে বিষ্ণু সোম তুলসি গ্যাবার্ডকে প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়েছে। সেখানে সহিংসতা দেখা গেছে। সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের তথ্যও আসছে। আমেরিকা কি এ ব্যাপারে উদ্বিগ্ন? সেখানে শুধু রাজনৈতিক নয় সব ধরনের পরিস্থিতি নিয়ে আমেরিকা কি উদ্বিগ্ন?
তুলসি গ্যাবার্ড বলেন, ‘হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে খুব বাজেভাবে নিপীড়ন, হত্যা ও নির্যাতন হচ্ছে। মার্কিন সরকার, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের জন্য এটি একটি প্রধান উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন মন্ত্রিসভা ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে আলোচনা সবে শুরু হয়েছে, তবে এটি এখনও উদ্বেগের কেন্দ্রবিন্দু।’
এনটিভির প্রতিবেদনে অবশ্য বলা হয়, বাংলাদেশে উদ্বেগের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ‘সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদ’ ইস্যুর কথা বলেন তুলসি গ্যাবার্ড। এ সময় তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাপী ‘ইসলামবাদী সন্ত্রাসবাদ’ রুখতে ট্রাম্প প্রশাসন বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে এবং এ ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ভারত ও আমেরিকার মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে তুলসি গ্যাবার্ড বলেন, দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজ করছে। ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতায় এসেছে। এদিকে নরেন্দ্র মোদি ভারতে দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষমতায়। এই সম্পর্ক এখন আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় আমেরিকা। এ ছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে ট্রাম্প প্রশাসন চেষ্টা শুরু করেছে বলে জানান তুলসি। তিনি বলেন, এরই মধ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অনেকদূর এগিয়ে গেছেন।
তুলসি গ্যাবার্ড মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অত্যন্ত আস্থাভাজন। গত মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের দিন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রধান হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। মোদিই ছিলেন তাঁর প্রথম বিদেশি অতিথি।