০৪:১৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিরিয়া-লেবানন সীমান্তে সংঘর্ষ, হিজবুল্লাহর দিকে সন্দেহ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • সময় ০৮:৪৫:০৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫
  • / 26

সিরিয়া-লেবানন সীমান্তে সংঘর্ষ

লেবানন ও সিরিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। সোমবার (১৭ মার্চ) পর্যন্ত চলা এই সহিংসতা শুরু হয় সপ্তাহান্তের কয়েকটি সংঘর্ষের পর, যেখানে তিনজন সিরীয় সেনা নিহত হন। দামেস্ক এই সংঘর্ষের জন্য লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে দায়ী করেছে। পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় দুই দেশের সামরিক কর্মকর্তারা যোগাযোগ করছেন বলে জানা গেছে।

সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, সিরীয় সেনাবাহিনী সীমান্তবর্তী এলাকায় জড়ো হওয়া হিজবুল্লাহ সদস্যদের অবস্থান লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ করেছে, যাদের গুলিতেই সিরীয় সেনারা নিহত হয়েছিলেন। অন্যদিকে লেবাননের ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সির (এনএনএ) মাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে দেশটির সেনাবাহিনী সোমবারের সংঘর্ষের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে এবং ‘নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে’ অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে বলে জানিয়েছে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক যুদ্ধ পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, সংঘর্ষে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সংশ্লিষ্টতার খবর পাওয়া গেছে, যদিও এটি স্বাধীনভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

লেবাননের সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা ওই এলাকায় বিপুলসংখ্যক সেনা মোতায়েন করেছে।

পাশাপাশি দেশটির গণমাধ্যম জানিয়েছে, স্থানীয় সময় সোমবার ভোরে এক সিরীয় সামরিক গাড়ির ওপর হামলার পর সেখানে স্বল্পমাত্রার লড়াই হয়। এ ছাড়া লেবাননের দিক থেকে ছোড়া এক কামানের গোলার আঘাতে সিরীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে থাকা চার সাংবাদিক সামান্য আহত হন। তারা হিজবুল্লাহকে এই হামলার জন্য দায়ী করেছেন। সংঘর্ষে ঠিক কোন লেবানিজ গোষ্ঠী জড়িত, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

তবে সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে শনিবার সিরিয়ায় প্রবেশ করে তিনজন সেনাকে অপহরণ ও পরে লেবাননের মাটিতে তাদের হত্যা করার অভিযোগ এনেছে।

সিরিয়া-লেবানন সীমান্তে সংঘর্ষ
সিরিয়া-লেবানন সীমান্তে সংঘর্ষ

সম্প্রতি সিরীয় সেনাবাহিনী ও দেশটির ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের মিত্র লেবানিজ সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ বেড়ে গেছে। গত সপ্তাহে সিরিয়ার ভেতরে আসাদপন্থী সেনা ও আলাউইত সম্প্রদায়ের বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে ব্যাপক সহিংসতায় বহু প্রাণহানি ঘটে। ওই সংঘর্ষের সঙ্গেও লেবাননের কিছু গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা ছিল বলে লেবাননের গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

এদিকে লেবানন ও সিরিয়ার সেনাবাহিনী জানিয়েছে, সীমান্তের উত্তেজনা কমাতে তারা পারস্পরিক যোগাযোগ বজায় রেখেছে।

লেবাননের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা নিহত তিন সিরীয় সেনার মরদেহ সিরিয়ার কাছে হস্তান্তর করেছে।
সোমবার পর্যন্ত নতুন কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাতভর সংঘর্ষ ও গোলাবর্ষণের কারণে সীমান্ত এলাকার বেসামরিক লোকজন পালিয়ে সিরিয়ার হেরমেল অঞ্চলের দিকে আশ্রয় নিচ্ছে। লেবানন-সিরিয়া সীমান্ত ৩৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ, যেখানে অনেক জায়গায় কোনো সুস্পষ্ট সীমারেখা নেই এবং ভূ-প্রকৃতি বেশ দুর্গম।

হিজবুল্লাহ সিরীয় সেনাদের অপহরণ ও হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। লেবাননের জ্যেষ্ঠ হিজবুল্লাহ আইন প্রণেতা হুসেইন হাজ হাসান দেশটির আল-জাদিদ টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন, সিরীয় দিক থেকে আসা যোদ্ধারা লেবাননের ভেতরে প্রবেশ করে সীমান্ত এলাকার গ্রামগুলোতে হামলা চালিয়েছে।

এদিকে লেবানন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা চেয়ে আসছে, যাতে তার সামরিক বাহিনীকে আরো শক্তিশালী করে সিরিয়ার সঙ্গে উত্তরের ও পূর্বের সীমান্ত এবং দক্ষিণে ইসরায়েলের সঙ্গে সীমান্তে কার্যকরভাবে মোতায়েন করা যায়। অন্যদিকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী সোমবার জানিয়েছে, তারা দক্ষিণ লেবাননে বিমান হামলা চালিয়ে হিজবুল্লাহর দুই যোদ্ধাকে টার্গেট করেছে।
সূত্র: আলজাজিরা

শেয়ার করুন

সিরিয়া-লেবানন সীমান্তে সংঘর্ষ, হিজবুল্লাহর দিকে সন্দেহ

সময় ০৮:৪৫:০৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫

লেবানন ও সিরিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। সোমবার (১৭ মার্চ) পর্যন্ত চলা এই সহিংসতা শুরু হয় সপ্তাহান্তের কয়েকটি সংঘর্ষের পর, যেখানে তিনজন সিরীয় সেনা নিহত হন। দামেস্ক এই সংঘর্ষের জন্য লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে দায়ী করেছে। পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় দুই দেশের সামরিক কর্মকর্তারা যোগাযোগ করছেন বলে জানা গেছে।

সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, সিরীয় সেনাবাহিনী সীমান্তবর্তী এলাকায় জড়ো হওয়া হিজবুল্লাহ সদস্যদের অবস্থান লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ করেছে, যাদের গুলিতেই সিরীয় সেনারা নিহত হয়েছিলেন। অন্যদিকে লেবাননের ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সির (এনএনএ) মাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে দেশটির সেনাবাহিনী সোমবারের সংঘর্ষের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে এবং ‘নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে’ অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে বলে জানিয়েছে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক যুদ্ধ পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, সংঘর্ষে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সংশ্লিষ্টতার খবর পাওয়া গেছে, যদিও এটি স্বাধীনভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

লেবাননের সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা ওই এলাকায় বিপুলসংখ্যক সেনা মোতায়েন করেছে।

পাশাপাশি দেশটির গণমাধ্যম জানিয়েছে, স্থানীয় সময় সোমবার ভোরে এক সিরীয় সামরিক গাড়ির ওপর হামলার পর সেখানে স্বল্পমাত্রার লড়াই হয়। এ ছাড়া লেবাননের দিক থেকে ছোড়া এক কামানের গোলার আঘাতে সিরীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে থাকা চার সাংবাদিক সামান্য আহত হন। তারা হিজবুল্লাহকে এই হামলার জন্য দায়ী করেছেন। সংঘর্ষে ঠিক কোন লেবানিজ গোষ্ঠী জড়িত, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

তবে সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে শনিবার সিরিয়ায় প্রবেশ করে তিনজন সেনাকে অপহরণ ও পরে লেবাননের মাটিতে তাদের হত্যা করার অভিযোগ এনেছে।

সিরিয়া-লেবানন সীমান্তে সংঘর্ষ
সিরিয়া-লেবানন সীমান্তে সংঘর্ষ

সম্প্রতি সিরীয় সেনাবাহিনী ও দেশটির ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের মিত্র লেবানিজ সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ বেড়ে গেছে। গত সপ্তাহে সিরিয়ার ভেতরে আসাদপন্থী সেনা ও আলাউইত সম্প্রদায়ের বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে ব্যাপক সহিংসতায় বহু প্রাণহানি ঘটে। ওই সংঘর্ষের সঙ্গেও লেবাননের কিছু গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা ছিল বলে লেবাননের গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

এদিকে লেবানন ও সিরিয়ার সেনাবাহিনী জানিয়েছে, সীমান্তের উত্তেজনা কমাতে তারা পারস্পরিক যোগাযোগ বজায় রেখেছে।

লেবাননের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা নিহত তিন সিরীয় সেনার মরদেহ সিরিয়ার কাছে হস্তান্তর করেছে।
সোমবার পর্যন্ত নতুন কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাতভর সংঘর্ষ ও গোলাবর্ষণের কারণে সীমান্ত এলাকার বেসামরিক লোকজন পালিয়ে সিরিয়ার হেরমেল অঞ্চলের দিকে আশ্রয় নিচ্ছে। লেবানন-সিরিয়া সীমান্ত ৩৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ, যেখানে অনেক জায়গায় কোনো সুস্পষ্ট সীমারেখা নেই এবং ভূ-প্রকৃতি বেশ দুর্গম।

হিজবুল্লাহ সিরীয় সেনাদের অপহরণ ও হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। লেবাননের জ্যেষ্ঠ হিজবুল্লাহ আইন প্রণেতা হুসেইন হাজ হাসান দেশটির আল-জাদিদ টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন, সিরীয় দিক থেকে আসা যোদ্ধারা লেবাননের ভেতরে প্রবেশ করে সীমান্ত এলাকার গ্রামগুলোতে হামলা চালিয়েছে।

এদিকে লেবানন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা চেয়ে আসছে, যাতে তার সামরিক বাহিনীকে আরো শক্তিশালী করে সিরিয়ার সঙ্গে উত্তরের ও পূর্বের সীমান্ত এবং দক্ষিণে ইসরায়েলের সঙ্গে সীমান্তে কার্যকরভাবে মোতায়েন করা যায়। অন্যদিকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী সোমবার জানিয়েছে, তারা দক্ষিণ লেবাননে বিমান হামলা চালিয়ে হিজবুল্লাহর দুই যোদ্ধাকে টার্গেট করেছে।
সূত্র: আলজাজিরা