‘ইউনূসের সরকার নির্বাচিত সরকার’

- সময় ১১:১৪:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫
- / 202
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের নেতৃত্বে বর্তমানে যে সরকার দেশ পরিচালনা করছে, সে সরকারকে নির্বাচিত সরকার হিসাবে দাবি করেছেন বিশিষ্ট দার্শনিক ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার। ড. ইউনুসকে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বসানো হয়েছে। রক্ত দিয়ে তাকে নির্বাচিত করা হয়েছে। তাহলে ভোট গুরুত্বপূর্ণ নাকি রক্ত গুরুত্বপূর্ণ?
শনিবার ১৫ মার্চ যশোর শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের আয়োজনে ‘জুলাই বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশে তরুণদের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির ‘দ্রুত নির্বাচন’ দাবির সমালোচনা করে বিশিষ্ট দার্শনিক ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার আরো বলেছেন, দলটির অনেক নেতা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়নি। তারা নিশ্চিতভাবে বঙ্গোপসাগরে ডুববে। তবে খালেদা জিয়ার আপসহীন মনোভাবের প্রশংসা করে বলেন, তার অবস্থান অভ্যুত্থানকারীদের শক্তি জুগিয়েছে, তাই বিজয়ের পরপরই তাকে মুক্ত করা হয়েছে।
ফরহাদ মজহার বলেন, বাহাত্তরের সংবিধান বাংলাদেশের জনগণের সংবিধান ছিলো না। এটা ছিলো পাকিস্তানের সংবিধান। এটা করা হয়েছিলো দিল্লির হাতে বাংলাদেশকে তুলে দেওয়ার জন্য।
তিনি বলেন, চব্বিশ সালে ছাত্র-জনতা-সৈনিকদের গণঅভ্যুত্থান ঘটেছিল। কিন্তু ‘ফ্যাসিবাদী সংবিধান’ বহাল থাকায় প্রতিবিপ্লবও সংঘটিত হয়েছে। সংবিধান না থাকলেও ফরমান দিয়ে দেশ চালানো সম্ভব। তবে অভ্যুত্থানকারীরা একের পর এক ভুল করে চলেছে, যার মধ্যে অন্যতম ছিল চুপ্পুর কাছে শপথ নেওয়া। এখন তারা মধ্যপন্থি রাজনৈতিক দল গঠনের চেষ্টা করছে, যা আরও একটি ভুল।

মধ্যপন্থাকে ‘সুবিধাবাদ’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, তরুণদের দল হতে হবে সব ধরনের ফ্যাসিবাদবিরোধী। কেবল বাঙালি জাতিবাদের বিরোধিতা করলেই চলবে না, ধর্মীয় ফ্যাসিবাদসহ সব রূপের ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে।
ভারত ক্রমাগত উসকানি দিচ্ছে বলে সতর্ক করে ফরহাদ মজহার বলেন, ভবিষ্যতে আরও কঠিন পরিস্থিতি আসছে। নিজেদের মধ্যে সংঘাত ও ক্ষমতার লড়াই বন্ধ না করলে পরাজিত ফ্যাসিবাদীরা দিল্লির সহায়তায় ফিরে আসতে পারে। ইতোমধ্যে আছিয়া ধর্ষণ ও মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তারা ইউনূস সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।
তিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নারীদের বিশাল অংশগ্রহণের প্রশংসা করে বলেন, তারা আজ কোথায়? কেন আমরা তাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছি? কেন তারা রাজনীতির সামনের কাতারে আসতে পারছে না? মুহাম্মদ (স.) -এর সময় নারীরা মসজিদে যেত, যুদ্ধ করত। তাহলে আজ কেন তাদের ঘরে বন্দি রাখতে চাই?
সভায় আরও বক্তব্য দেন লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট বেনজীন খান, এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতা খালেদ সাইফুল্লাহ, মোহাম্মদ রোমেল প্রমুখ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের আহ্বায়ক রাশেদ খান সভাটি পরিচালনা করেন।
এর আগে, শুক্রবার বিকেলে ফরহাদ মজহার ‘প্রাচ্যসংঘ’ -এর সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং ফকিরদের আস্তানায় হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ভারত এ সুযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে প্রচার করবে যে বাংলাদেশে ধর্মীয় ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই, যা দেশকে নতুন সংকটের দিকে ঠেলে দিতে পারে।