লামায় সড়ক নির্মাণে ষোলো-কলা দুর্নীতির অভিযোগ

- সময় ০২:২১:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫
- / 88
বান্দরবানে লামায় ইটসলিং নির্মাণ কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারে অভিযোগ উঠেছে এস এম প্রকৌশলী এন্টারপ্রাইজ স্বত্বাধিকারী ঠিকাদার শামীম বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয় নির্দিষ্টভাবে গ্রাম থেকে শুরু করার কথা থাকলেও সেটি নিয়ম লংঘন করে জেলা পরিষদ সহকারী প্রকৌশলী সাথে আঁতাত করে ঠিকাদার নির্ধারিত জায়গা বাদ দিয়ে অন্য স্থান থেকে কাজ করায় ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসীরা।
অভিযোগ আছে, ছবিচন্দ্র পাড়া থেকে সড়ক নির্মাণ করার কথা থাকলেও সেটি করেননি ঠিকাদার ও জেলা পরিষদ প্রকৌশলী বিভাগ। বরং পাড়াটিকে বাদ দিয়ে প্রাইভেট কোম্পানির বাগানে যাতায়াত সুবিধার্তে সেখানে নির্মাণ করা নির্দেশ দিয়েছে জেলা পরিষদ সহকারী প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম। যার ফলে সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে ওই এলাকার তিনটি গ্রামের মানুষ।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ছবিচন্দ্র গ্রাম থেকে সড়ক নির্মাণ করার কথা বললেও সেখান থেকে না করে অন্যস্থান থেকে সড়ক নির্মাণ করে যাচ্ছে ঠিকাদার ও জেলা পরিষদ সংশ্লিষ্টরা। যার ফলে বঞ্চিত হয়েছে সুবিধাভোগী তিন গ্রামের মানুষজন। তাছাড়া নিম্নমানের ইট ও কাদামিশ্রিত পাহাড়ে বালু দিয়ে গ্রামীণ এ ইটের রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। যে সড়কটি উন্নতমানের সামগ্রী দিয়ে করার কথা থাকলেও তা মানছেন না ঠিকাদার। সড়ক নির্মাণ শেষ হলে বর্ষা আসলেই রাস্তাটি ভেঙ্গে নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসী ।
জানা গেছে, বান্দরবান- লামা সড়কের সরই ইউনিয়নের মুল ফটক সড়ক বেতছড়া থেকে শুরু করেছে ইটসলিংয়ে সড়ক নির্মাণের কাজ। সেখানে ছবিচন্দ্র গ্রাম থেকে সড়ক নির্মাণ দেখানো হলেও সেটি শুরু করেননি ঠিকাদার ও জেলা পরিষদ সহকারী প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম। বরং ছবিচন্দ্র পাড়াকে বাদ দিয়ে এক কিলোমিটার পর মুল ফটক সড়কের বাকিছড়া মুখ এলাকা থেকে এগ্নোলিস এগ্রো লিমিটেড নামে এক কোম্পানির বাগানে যাওয়ার জন্য সড়ক নির্মাণ শুরু করেছে। সেই সড়কের ঝাংকা বালু ধরা থাকলেও বিপরীতে পাহাড়ের মাটি মিশ্রিত বালু ব্যবহারে করা হয়েছে। তাছাড়া নিম্নমানের ইট, ড্রেই নির্মাণের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির ষোলকলা পূর্ণ সড়ক গুলো। তাছাড়া নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় অল্পদিনেই রাস্তাটি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় করছেন এলাকাবাসী।
পার্বত্য জেলা পরিষদ তথ্যমতে, লামা সরই ইউনিয়নের ছবিচন্দ্র পাড়া হতে গাজন পাড়া হয়ে মুসলিম পাড়া পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০ লাখ টাকা। যা ২০২৪- ২৬ অর্থ বছরে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে মেসার্স প্রকৌশলী স্বত্বাধিকারী ঠিকাদার শামীম। কিন্তু সড়ক নির্মাণ কাজে পুরোটাই অনিয়মের ভরপুর।

লামায় সড়ক নির্মাণে ষোলো-কলা দুর্নীতির অভিযোগ
সরেজমিনে দেখা গেছে, এক কিলোমিটার ইটসলিং সড়কের প্রায় ৪০ শতাংশ শেষ। সড়কটি নির্মাণ কাজে ১০জনের শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছে। সেখানে মাঝিসহ অনান্য শ্রমিকরা আবার রোহিঙ্গা শরনার্থী। সড়কটি প্রস্থ ১০ ফুট ধরা থাকলেও কোথাও ৯ ফুট ৩ ইঞ্চি আবার কোথাও কমে সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। সড়কটি নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের ইট, পাহাড়ের মাটি মিশ্রিত বালি,খোয়াসহ অন্যান্য সামগ্রী। রাস্তার এজিংয়ের দু’পাশে সিডিউল অনুযায়ী মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে না। এতে করে অল্প বৃষ্টি হলেই নির্মাণাধীন সড়কটি ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ছবিচন্দ্র পাড়া বাসিন্দা যুগেশ ত্রিপুরা বলেন, আমাদের গ্রাম থেকে রাস্তা হওয়ার কথা কিন্তু ঠিকাদার আর জেলা পরিষদ করেনি। আমাদের গ্রাম থেকে এক কিলোমিটার দূরে কোম্পানী বাগানের জন্য রাস্তা নির্মাণ করেছে। রাস্তাটি আমাদের খুব প্রয়োজন ছিল।
সরই ইউনিয়নের ইউপি সদস্য জামাল বলেন, সড়কটি জন্য গাজন পাড়া কারবারী জেলা পরিষদে দরখাস্ত দিয়েছে আমরা শুধু স্বাক্ষর করেছি। আর জেলা পরিষদ থেকে প্রকৌশলী এসে মাপ নিয়ে গেছে। সড়ক নির্মাণের সময় আমাকে আর ডাকা হয়নি। শুনেছি কাজটি নিম্নমানের করা হয়েছে। এখন আমরা ত রাস্তার কাজ বুঝিনা।
এবিষয়ে এস এম প্রকৌশলী এন্টারপ্রাইজ স্বত্বাধিকারী ঠিকাদার শামীম সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোনটি ধরেননি।
জেলা পরিষদ সহকারী প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম দাবি করে বলেন, সড়কটি নির্মাণ কাজে বালু ফিলিংস পয়েন্ট চার ধরা হয়েছে। সেখানে পাহাড়ে মিশ্রিত বালু দেয়ার কারণে রাস্তাটি টিকবে বলে দাবি করেন তিনি। ছবিচন্দ্র পাড়া থেকে কেন রাস্তা কাজ শুরু করেননি এমন প্রশ্ন করা হলে তাজুল ইসলাম বলেন, সেখানে আমার দোষ নাই’ ওই এলাকার মেম্বার যেভাবে মেজারমেন্ট দিয়েছে সেভাবে করেছি।
এবিষয়ে জেলা পরিষদ ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী লেলিন চাকমা বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বলতে পারব। আপাতত এখন বক্তব্যে দিতে পারব না বলে এড়িয়ে যান তিনি।