ডিপিডিসি কর্মকর্তার সাব স্টেশন বাণিজ্য!

- সময় ১১:৫০:৩৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫
- / 282
সরকারি চাকরিবিধিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কোম্পানি খুলে দেদার ব্যবসা করছেন ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি- ডিপিডিসি’র এক উপ-সহকারী প্রকৌশলী। কেবল ব্যবসা বললে ভুল হবে; ওই কর্মকর্তা ডিপিডিসি’র গ্রাহকদের রীতিমত জিম্মি করে তার প্রতিষ্ঠান থেকে মালামাল কিনতে বাধ্য করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
বহুরূপী, বহুনামের অধিকারী এই প্রকৌশলীর কেতাবি নাম ইমরোজ আলী। এছাড়াও তিনি প্রকৌশলী এস এম সাগর মাহমুদ নামেও নিজেকে পরিচয় দেন। এই কর্মকর্তা ডিপিডিসির গ্রীডে (সাউথ-১) কর্মরত আছেন।
চাকরি আচরণবিধি ভঙ্গ করে ২০১৬ সাল থেকে তিনি এই ব্যবসায়ের সাথে জড়িত। এভাবে ‘বিপুল’ সম্পদের মালিক হয়েছেন এই প্রকৌশলী।
ডিপিডিসির কর্তাব্যক্তিরা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে নীরব আছেন। অভিযোগ আছে, শীর্ষ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই নিয়মবিহর্ভূতভাবে ব্যবসা করে যাচ্ছেন ওই কর্মকর্তা। এ রকম ব্যবসা করা সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা ও ডিপিডিসি’র নিজস্ব চাকরি প্রবিধানমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
জানা যায়, এই কর্মকর্তা সংস্থাটির ডিপ্লোমা প্রকৌশল পরিষদের কোষাধ্যক্ষ এবং বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা প্রকৌশল পরিষদেরও কার্যনির্বাহী সদস্য। যে কারণে তার বিষয়ে সবাই সবকিছু জানার পরেও রয়েছেন চুপচাপ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ডিজিটাল পাওয়ার এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস নামে ইমরোজ আলীর ওই প্রতিষ্ঠান মূলত সাব স্টেশনের বিভিন্ন মালামাল সরবরাহ করে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ি এলাকার মাতুয়াইল দক্ষিণ পাড়া কলেজ রোডের হাজী টাওয়ারে এই প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় হিসেবে দেখানো হয়েছে। যেখানে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে রয়েছেন প্রকৌশলী এস এম সাগর মাহমুদ ওরফে ইমরোজ আলী। আর এই প্রতিষ্ঠানের কারখানা রাজধানীর ডেমরা বাজারের পাশে ঐতিহ্যবাহী আহমেদ বাওয়ানি টেক্সটাইলস মিলসের একটি কক্ষের মধ্যে। প্রতিষ্ঠানটিতে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এছাড়া রাজধানীর ১৫৪ মতিঝিলে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়।
রাজধানীর বড় একাংশে বিদ্যুত সংযোগ সরবরাহ করে ডিপিডিসি। যে সমস্ত গ্রাহকরা বিদ্যুতের উচ্চচাপ সংযোগ নিতে এই দপ্তরে আসেন; তাদের টার্গেট করেন ইমরোজ আলীর প্রতিষ্ঠান।

সংস্থাটির বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, ইমরোজ আলী বিভিন্ন শাখার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীদের চাপ প্রয়োগ করে গ্রাহকদের ফাইল আটকে রাখতেন। তার কোম্পানি থেকে মালামাল সরবরাহ করবে; এমন চুক্তির পরেই মিলে উচ্চচাপের সংযোগ। তিনি যেহেতু ডিপ্লোমা প্রকৌশল পরিষদের নেতা; তাই ভয়ে কেউ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান না। তবে বিষয়টি গোটা দপ্তরের সবাই জানেন।
অভিযোগ রয়েছে, তার প্রতিষ্ঠানের মালামালের দাম বাজারের অনান্য কোম্পানির চেয়ে তুলনামূলক বেশি। আবার মানেও ভালো না। এসব বিষয় নিয়ে পরবর্তীতে গ্রাহকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ জানাতে গেলে উল্টো তার হয়রানির মুখোমুখি হয়েছেন অনেকেই।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচিতিতে বলা হয়েছে, তারা বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মার, কমপ্লিট সাব-স্টেশন, হাই সুইচগিয়ার, এলটি সুইজার, এমডিবি বক্স, ডিবি বক্স, এসডিবি বক্স, জেনারেটর সাপ্লাই, সাব-স্টেশন মেইটেন্যান্স, ট্রান্সফরমার ওয়েল সেন্ট্রিফিউজিং, কমপ্লিট সোলার সিস্টেম সরবরাহ করে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে প্রকৌশলী ইমরোজ আলীর সাথে বারবার যোগাযোগ করেও তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আবদুল্লাহ নোমান বাংলা অ্যাফেয়ার্সকে জানান, চাকরি অবস্থায় তার এই ধরনের ব্যবসা করার সুযোগ নেই। বিষয়টি তিনি তদন্ত করে দেখবেন বলেও জানান।