মাদক-নারীতে বুদ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা

- সময় ০৮:০৯:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫
- / 6490
পিরোজপুর জেলা মাদকদব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক বাবুল সরকার নিজেই বুদ হয়ে রয়েছেন মাদক এবং নারীতে। ঘুষ গ্রহণ থেকে শুরু করে চাকরি জীবনে নানা অপকর্মে জড়িত এই বাবুল সরকার অর্ধনগ্ন এক নারীর সঙ্গে মাদকগ্রহণ করছেন, এমন ছবিও এসেছে বাংলা অ্যাফেয়ার্সের হাতে।
অভিযোগ রয়েছে, রাজধানীর মগবাজারে এই কর্মকর্তা নিজের বাসায় বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ওই নারীর সাথে অনৈতিক সম্পর্কেও জড়ান।
এর আগে বাবুল সরকারের সাবেক কর্মস্থল গাজীপুরে ঘুষগ্রহনের সিসিটিভি ফুটেজও প্রকাশ হয়েছিল। পরবর্তীতে তাকে শাস্তিমূলক বদলী করা হয় পিরোজপুরে। নতুন কর্মস্থলেও থেমে নেই তার অপকর্ম।
পিরোজপুর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কার্যালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বাবুল সরকার টাকা ছাড়া কিছুই বুঝেন না। মাদক নিয়ন্ত্রণে যার কাজ করার কথা তিনি নিজেই মাদকে বুদ হয়ে থাকেন। তিনি নিয়মিত ইয়াবা সেবন এবং মদ পান করেন। এমনকি সর্বশেষ জেলা যুব উন্নয়নের সহযোগিতায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মাদকবিরোধী সেমিনার হয়েছে, সেখানে সভাপতিও ছিলেন মাদকাসক্ত বাবুল সরকার।
বাবুল সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। ২০১৭ সালে সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগ দেওয়ার পর থেকে একাধিকবার শাস্তির মুখোমুখিও হয়েছেন এই কর্মকর্তা।
বান্দরবান কার্যালয়ে দায়িত্ব পালনকালে দুর্নীতির অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয় এবং তদন্ত শেষে দোষী সাব্যস্ত করে তাঁর বেতন গ্রেড নিম্নতর ধাপে নামিয়ে আনা হয়। এছাড়া, ২০২১ সালে আরও একটি দুর্নীতির ঘটনায় তাঁর বেতন বৃদ্ধি তিন বছরের জন্য স্থগিত করা হয়।
বাবুল সরকারের ঘুষ গ্রহণের কৌশল একটু ব্যতিক্রম। তিনি আগের প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে নেওয়া ঘুষের হার অনুযায়ী পরবর্তী প্রতিষ্ঠান থেকে ঘুষ আদায় করতেন। গাজীপুরের শফিপুরের করোনি গার্মেন্টের কাছ থেকে ১৬ লাখ টাকা দাবি করেন, যার মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ৭ লাখ টাকা নেন।

এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত পরিচালক (গোয়েন্দা) কাজী আল আমিনসহ কয়েকজনকে ম্যানেজ করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে বাবুল সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
ঘুষ নেয়ার ক্ষেত্রে অবিনব কৌশল অবলম্বন করেন বাবুল সরকার। গাজীপুরে চাকরি করা অবস্থায় রাসায়নিক ব্যবহারের জন্য দুইটি কারখানার অনুমোদনের জন্য তিনি ঘুষ নিয়ে আলোচিত হন। আদতে ওই নিবন্ধনের জন্য সরকারি মাশুল ২ হাজার টাকা। এর সঙ্গে রয়েছে ভ্যাট-ট্যাক্স। প্রিকারসর কেমিক্যাল ব্যবহারের নিবন্ধন নিতে প্রতিষ্ঠান আবেদন করার পর সংশ্লিষ্ট জেলা কার্যালয় তদন্ত করে বিভাগীয় কার্যালয়ে পাঠায়। পরে প্রধান কার্যালয় অনুমোদন দিয়ে সংশ্লিষ্ট জেলা কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেয়। এর পর জেলা কার্যালয় নিবন্ধন ইস্যু করে।
গাজীপুরে থাকা অবস্থায় বাবুলের কাছ থেকে নিবন্ধন নিতে ১৬ লাখ টাকা লাগবে – এ কথা শুনে ঘুরে দাঁড়ায় মাল্টিফ্যাবস নামের একটি কোম্পানি। এরপর নিবন্ধনের টাকা কমানোর জন্য প্রতিষ্ঠানটির সহকারী মহাব্যবস্থাপক আবু সেহাব মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে লিখিত আবেদন করেন। তাতে বাবুল সরকারের ঘুষ নেওয়ার তথ্যও তুলে ধরা হয়।
গাজীপুরে থাকতে অফিস শেষ করে ঘুষ গ্রহণের জন্য সন্ধ্যায় বাবুল সরকার ও তাঁর চালক আইয়ুব আলী মাল্টিফ্যাবসে গিয়েছিলেন। এ সময় বাবুল সরকার ইউনিফর্ম পরা ছিলেন। প্রতিষ্ঠানটির ৯ তলার ছাদবাগানে এ ঘুষের টাকা নেন তিনি।
জানা যায়, গাজীপুরের শফিপুরের করোনি গার্মেন্ট থেকে প্রিকারসর কেমিক্যাল ব্যবহারের নিবন্ধনের জন্য ১৬ লাখ টাকা দাবি করেছিলেন বাবুল সরকার। তবে প্রথম পর্যায় প্রতিষ্ঠানটি ৭ লাখ টাকা দেয় বাবুলকে। ওই প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গেই ঘুষের টাকার পরিমাণ জানতেই ফোনে কথা বলেছিলেন আহমাদুল।
করোনি গার্মেন্টের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, নিবন্ধন নিতে সরকারি ফি কত জানতে চেয়েছিলাম এডি বাবুলের কাছে। তিনি বলেছিলেন, ১৬ লাখ টাকা দিলে সব কাগজপত্র তিনি নিজেই করে দেবেন। দাবি করা টাকা না দিলে নিবন্ধন দেবেন না বলেও হুমকি দিয়েছিলেন বাবুল।
উল্লেখ্য, বাবুল সরকার ২০১৭ সালের ৩১ অক্টোবর ডিএনসিতে সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। চাকরির বছর দেড়েকের মাথায় দুর্নীতির অভিযোগে প্রথম বিভাগীয় মামলা হয় তাঁর বিরুদ্ধে। তখন তিনি ডিএনসির বান্দরবান কার্যালয়ের এডি ছিলেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০২১ সালে দোষী সাব্যস্ত করে তাঁর বেতন গ্রেড নিম্নতর ধাপে অবনমন করা হয়।
এ ছাড়া একই বছর আরেক দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে শাস্তি হিসেবে তিন বছরের জন্য বেতন বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) স্থগিত করা হয়। ২০২১ সালে ২৫ এপ্রিল ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে গাজীপুরে কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে মাদকদ্রব্য জাতীয় ওষুধের বিষয়ে নজরদারি বাড়ানোর চিঠি ইস্যু করেন বাবুল।
এ ধরনের দাপ্তরিক কাজের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে চিঠি ইস্যু করা নিয়মে নেই। এ ব্যাপারে তখন তাঁকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া