রাজশাহী কলেজে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

- সময় ০৫:২৯:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ ২০২৫
- / 19
রাজশাহী কলেজে অনার্স ৪র্থ বর্ষের ফরম পূরণের জন্য মাত্রাতিরিক্ত ফি ধার্য করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে কলেজের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা। এসময় বিক্ষোভ পালনরত শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়ে অধ্যক্ষ অধ্যাপক মু. যহুর আলী পরে আলোচনায় বসে শিক্ষার্থীদের ফি কমানোর আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (৬মার্চ) বেলা ১১ টার দিকে রাজশাহী কলেজের প্রশাসনিক ভবনের সামনে ফরম পূরণের মাত্রাতিরিক্ত ফি ধার্য করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে তারা।
বিক্ষোভ কর্মসূচিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, অন্যান্য কলেজের চেয়ে রাজশাহী কলেজ অতিরিক্ত ফি আদায় করছে। আমরা বেশকিছু দিন হতে এর প্রতিবাদ করে আসছি। এতেও কোন সূরাহা করছে না কলেজ প্রশাসন । তাই আজকে এই কর্মসূচি দিতে বাধ্য হয়েছি। শিক্ষার্থীরা আরো জানান, অচিরেই কলেজ কর্তৃপক্ষ কোন সিদ্ধান্ত না নিলে কঠোর আন্দোলন করার ঘোষণা দেওয়া হবে।
আন্দোলনচলা অবস্থায় কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মু. যহুর আলী অফিসে প্রবেশ করেন। এই সময় শিক্ষার্থীদের সাথে কোন কথা না বলা এবং কোন আশ্বস্থ না করে চলে যাওয়ায় ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষোভ শেষ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষর কার্যালয়ে ঢুকে বিভিন্ন স্লোগান ও ফি কমানোর প্রতিবাদ জানাতে থাকে। এতে করে হৈচৈ পড়ে যায় প্রশাসনিক ভবনে। ছুটে আসেন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা।
শিক্ষার্থীরা এসময় অধ্যক্ষর কাছে জানতে চাই কেনো এতো ফি নেওয়া হচ্ছে। আর বিভিন্ন খাতে খরচ দেখানো ফি নির্ধারণ করা হয়েছে সেগুলো কিভাবে খরচ হয় তা জানতে চাই। এই সময় অধ্যক্ষ শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়ে ৪ জন ছাত্র প্রতিনিধি নিয়ে আলোচনা বসার কথা জানান। অধ্যক্ষর এমন কথায় শিক্ষার্থীর বলতে থাকেন সবার সাথে বসেই আলোচনা করতে হবে। পরে অধ্যক্ষ ও বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ কলেজ শিক্ষক মিলনায়তনে আলোচনায় বসেন।
আলোচনায় রাজশাহী কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক খালিদ বিন ওয়ালিদ আবির, রাজশাহী কলেজ ছাত্রশিবির সভাপতি মাহমুদুল হাসান মাসুম, সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন সহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
অধ্যক্ষ অধ্যাপক মু. যহুর আলী উপাধ্যক্ষসহ অন্যান্য শিক্ষকদের নিয়ে ফিনির্ধারণের বিষয়ে খুটিনাটি আলোচনা হয়। শিক্ষার্থীরা পরিবনহ ফি, পত্রিকা ফি, উন্নয়নফিসহ বিভিন্ন অসংগতি তুলে ধরেন। এসময় কিছু অসংগতি চিহিৃতও করা হয়।

পরে অধ্যক্ষ মু. যহুর আলী বলেন, ছাত্র-ছাত্রীদের তেমন ভাবে ফি বেশী নেওয়া হচ্ছে না। এই কলেজের অনেক আনুসাঙ্গিক খরচ বেশী হয় এগুলো শিক্ষার্থীদের কাছ হতেই নেওয়া হয়। তবে যেহেতু দাবি উঠেছে তাই আমরা শিক্ষকদের নিয়ে আলোচনা করে যতদুর সম্ভব যৌক্তিক ফি কমানোর সিদ্ধান্ত নিবো এজন্য সময় দিতে হবে।
ছাত্রদের পক্ষহতে জানানো হয়, তাহলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে জানান আর আপাতত ফরম পূরণ বন্ধ রাখার নোটিশ দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হোক। অধ্যক্ষ সময় নিয়ে তাদের জানিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বের হয়ে আসেন।
রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষ কর্তৃক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে গত বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) জানানো হয় ফরম পূরণের কথা। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৩রা মার্চ থেকে ১৩ই মার্চ পর্যন্ত সরকারি ছুটি ব্যতীট ফরম পূরন করা যাবে। পরের দিন বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষ কর্তৃক স্বাক্ষরিত আরেকটি বিজ্ঞপ্তিতে বিষয় ভিত্তিক কত টাকা করে ফরম পূরণের জন্য নেওয়া হবে সেটি জানানো হয়। সেখানেই দেখা যায় অন্যান্য কলেজে তুলনায় রাজশাহী কলেজের ফরমপূরণ তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায় ফরম পূরণের জন্য বাংলা-৭৫৯১/-, ইংরেজী, আরবী ও ইসলামী শিক্ষা-৭৫৯১/-, সংস্কৃত-৭৫৯১/-, ইতিহাস -৭৫৯১/-, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি-৭৫৯১/-, দর্শন- ৭৫৯১/-, রাষ্ট্রবিজ্ঞান-৭৫৯১/-, সমাজবিজ্ঞান-৭৫৯১/-, সমাজকর্ম-৭৬৯১/-, অর্থনীতি-৭৫৯১/-, ব্যবস্থাপনা-৭৫৯১/-, হিসাববিজ্ঞান-৭৫৯১/-, মার্কেটিং-৭৫৯১/-, ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং-৭৫৯১/-, পদার্থবিজ্ঞান-৭৯৯৬/-, রসায়ন-৮২৪৬/-, গণিত -৭৯২১/-, উদ্ভিদবিজ্ঞান-৭৯৯৬/-, প্রাণিবিজ্ঞান ৭৯৯৬/-, মনোবিজ্ঞান-৮৮৭১/-, পরিসংখ্যান -৮৫৯৬/-। এছাড়াও ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে-৯১৭১/- টাকা ধরা হয়েছে।
অপরদিকে, বগুড়া আজিজুল হক কলেজের দিকে তাকালে দেখা যায় তারা বাংলা থেকে ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিষয় পর্যন্ত ফরম পূরণের জন্য মাত্র ৪২৯৫ টাকা গ্রহণ করছে। এছাড়াও গণিত, উদ্ভিদবিদ্যা ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের জন্য ৪৬০০ টাকা এবং পপদার্থবিদ্যা ও রসায়ন বিভাগের জন্য ৪৮৫০টাকা ধার্য করেছে। ফলে শিক্ষার্থীরাও অনায়াসে টাকা দিতে পারছে।
এছাড়াও রাজশাহীতে অবস্থিত নিউ গভ: ডিগ্রী কলেজের দিকে তাকালে দেখা যায় প্রতিটা বিভাগে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা কম নেওয়া হচ্ছে।
রাজশাহী কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী জামান আবির রহমান বলেন, ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে। কলেজ প্রশাসনের কাছে একটাই দাবী, আপনারা কোন খাতে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ৭২৯৫ টাকা নিচ্ছেন তার একটা সুষ্ঠু হিসাব দিন। বগুরা আজিজুল হক কলেজের শিক্ষার্থীদের লাগছে ৪২৭৫ টাকা আর আমাদের ৭২৯৫ টাকা। আমরা তুলনায় না গিয়ে শুধু কলেজ থেকে আমরা কি কি সুবিধা পাচ্ছি সরকারি কলেজ হিসেবে আমরা সেই খাতগুলো দেখতে চাই।