মুখে ভারত বিরোধিতা; আমদানি বেড়েছে কয়েক গুণ

- সময় ১২:৫৫:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ মার্চ ২০২৫
- / 157
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরপরই দেশে ‘ভারত বিরোধিতা’ বেশ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। সাধারণ নাগরিক তো বটেই; ইউনূস প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরাও ভারতবিরোধী বক্তব্য দিতে শুরু করেন। ভারতীয় পণ্য বর্জনেরও ডাক দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবতা কি সত্যিই তা-ই ? বাণিজ্য পরিসংখ্যান বলছে ভিন্ন কথা।
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশে ভারত থেকে পণ্য আমদানি বেড়েছে ১৭ দশমিক ২৭ শতাংশ। এপ্রিল-জানুয়ারি; ভারতীয় অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে বাংলাদেশে ভারতের পণ্য রফতানি বেড়েছে ৬.৬ শতাংশ। অথচ একই সময়ে বিশ্বব্যাপী ভারতের পণ্য রফতানি প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ১.৩৯ শতাংশ।
এমনকি জানুয়ারিতে বিশ্বব্যাপী ভারতের রফতানি সংকুচিত হয়েছে ২.৪১ শতাংশ, কিন্তু বাংলাদেশে রফতানি বেড়েছে ১৭.২৭ শতাংশ। এই পরিসংখ্যানই বলে দেয়, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ভারতের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
২০২৪ সালের আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে ভারত থেকে পণ্য আমদানি কিছুটা কমেছিল। জুলাই-আগস্টে অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার কারণে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য তিন দিন বন্ধ ছিল। আগস্টে ভারত থেকে আমদানি কমেছিল ১৯.৪৩ শতাংশ।
কিন্তু এই অবস্থা বেশি দিন ধরে রাখা সম্ভব হযনি। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে পেঁয়াজ, ডিম ও কাঁচামরিচের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি রোধ করতে বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণে পণ্য আমদানি করে। এরপর থেকেই ভারতের ওপর বাংলাদেশের নির্ভরতা আরও বেড়েছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে বাংলাদেশ ভারত থেকে ৯৩৯ কোটি ৯ লাখ ৮০ হাজার ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এপ্রিল থেকে জানুয়ারি সময়ে আমদানি হয়েছে ৮৮০ কোটি ৯৯ লাখ ডলারের পণ্য।
আমদানির তালিকায় রয়েছে- তুলা, খাদ্যশস্য, খনিজ ও জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎসহ নানা পণ্য। বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে ভারতে রফতানি হয় প্রধানত তৈরি পোশাক।
শুধু গত জানুয়ারিতেই ভারত থেকে বাংলাদেশ পণ্য আমদানি করেছে ১০৭ কোটি ৫৬ লাখ ৭০ হাজার ডলারের। আর ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে আমদানি হয়েছিল ৯১ কোটি ৭৩ লাখ ডলারের।
ভারতের বাণিজ্য বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশটি থেকে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় তুলা। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে খাদ্যশস্য। এছাড়া আমদানি হয় খনিজ ও জ্বালানি পণ্য, বিদ্যুৎ এবং অন্যান্য পণ্য ও সেবা। আর বাংলাদেশ থেকে ভারতে রফতানি হওয়া প্রধান পণ্য হলো তৈরি পোশাক।
২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে বাংলাদেশ ভারত থেকে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলারের জ্বালানি তেল আমদানি করেছে। জানুয়ারিতে ভারতের নুমালিগড় রিফাইনারি থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টন ডিজেল আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এছাড়া, জাতীয় গ্রিডে ভারত থেকে আমদানিকৃত বিদ্যুতের অবদান ১৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশ ৭৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাচ্ছে। তবে ভিসা জটিলতা ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যে কিছুটা বাধা সৃষ্টি করছে।
দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্কের পরিসংখ্যানগত চিত্র মূল্যায়নে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিশ্লেষকরা বলছেন, জনসাধারণের দৃষ্টিভঙ্গি ও অধিকারকে উপেক্ষা করে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের নতজানু মানসিকতার কারণেই দুই দেশের সম্পর্কে এখন এ ধরনের বৈরিতা দেখা দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, “জনগণের মধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাব থাকবেই। কারণ গত ১৭ বছর তারা নিপীড়নের মধ্যে ছিল। কিন্তু আনুষ্ঠানিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক রাতারাতি বদলানো যায় না।
বিশ্বায়নের এই যুগে অর্থনৈতিক বাস্তবতাকে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ভারতের সঙ্গে আমাদের পানিসহ নানা ইস্যু আছে, কিন্তু বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আলাদা। তাছাড়া ভারত থেকে চাল আমদানির বিকল্প উৎস খুঁজে পাওয়া সহজ নয়।