১০:৫৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৩ মার্চ ২০২৫, ১৯ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রোজা নিয়ে মুসলিমদের ছয়টি মতভেদ

নিউজ ডেস্ক
  • সময় ০৩:২৩:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ মার্চ ২০২৫
  • / 35

রোজা

পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়েছে। যখন মুসলমানরা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা রাখেন, অর্থাৎ কিছুই খাওয়া বা পান করা থেকে বিরত থাকেন। মুসলমানরা বিশ্বাস করেন, এই মাসে আত্মশুদ্ধি অর্জন এবং স্বেচ্ছা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তারা ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা পালন করেন। যদিও রোজা একটি সহজ ধর্মীয় আচরণ মনে হলেও, এর সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে, যা মুসলমানদের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি করে। এখানে রোজা নিয়ে ছয়টি সাধারণ ভুল ধারণা তুলে ধরা হলো, যা ইসলামি বিজ্ঞানী এবং শারিয়া আইন বিশেষজ্ঞ শাব্বির হাসান বিশ্লেষণ করেছেন।

১. ‘দাঁত ব্রাশ করলে রোজা ভেঙে যায়’
অনেকেই মনে করেন দাঁত ব্রাশ করলে রোজা ভেঙে যায়, তবে ইসলামি চিন্তাবিদরা বলেন, দাঁত ব্রাশ করলে রোজা ভাঙ্গে না। শাব্বির হাসান পরামর্শ দেন, “অল্প পরিমাণ পেস্ট ব্যবহার করুন এবং মিন্টের গন্ধ কম এমন পেস্ট ব্যবহার করুন। যদি আপনি আরও সাবধান হতে চান, তাহলে গাছের সরু ডাল দিয়ে তৈরি মিসওয়াক বা দাঁতন ব্যবহার করতে পারেন।”

রোজা
রোজা

২. ‘ চুমুতে মুখের লালা পেটে ঢুকলে রোজা ভেঙে যায়’
শাব্বির হাসান বলেন, “মুখের লালা পেটে ঢুকলে রোজা ভাঙে না, এটি একটি স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়া। তবে অন্যের মুখের লালা আপনার মুখে ঢুকলে রোজা ভেঙে যাবে, এবং রোজার সময় অন্তরঙ্গ সম্পর্ক, যেমন চুমু বা শারীরিক মিলন নিষিদ্ধ।”

৩. ‘শুধু খাবার বা পানি না খেলেই রোজা কবুল হয়ে যাবে’
শুধু খাবার বা পানি না খেলেই রোজা ভেঙে যাবে এমন নয়। শাব্বির হাসান বলেন, “রোজা ভঙ্গ হতে পারে যদি আপনি গুজব রটান, কাউকে গালি দেন, বা অপমানকর কথা বলেন। জিহ্বার মাধ্যমে অপরাধ রোজাকে নষ্ট করতে পারে।”

৪. ‘অসাবধানতাবশত কিছু খেয়ে ফেললে রোজা ভেঙে যায়’
যদি আপনি ভুলে কিছু খেয়ে ফেলেন, তবুও রোজা বৈধ থাকবে যদি আপনি খাওয়া বন্ধ করে দেন। তবে, যদি নামাজের আগে ওজু করার সময় পানি খেয়ে ফেলেন, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। শাব্বির হাসান বলেন, “রোজা রেখে অজু করার সময় গারগল না করার পরামর্শ দেওয়া হয়, শুধু কুলি করে পানি ফেলে দিন।”

৫. ‘ওষুধ খাওয়া যাবে না’
মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেন (এমসিবি) জানিয়েছে, রোজা রাখার সময় চোখের ড্রপ, কানের ড্রপ বা ইনজেকশনের মতো কিছু ওষুধ গ্রহণ করা যাবে, কিন্তু মুখ দিয়ে যেসব ওষুধ খেতে হয় তা রোজার সময় নিষিদ্ধ। তবে ইফতারের পর এবং সেহেরির আগে নেয়া যাবে ওষুধ। শাব্বির হাসান বলেন, “অসুস্থ হলে, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোজা রাখা উচিত বা না রাখার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”

৬. ‘যে কোনো পরিস্থিতিতেই রোজা রাখতে হবে’
ইসলামে শুধু প্রাপ্তবয়স্ক (সাধারণত ১৫ বছর) এবং সুস্থ ব্যক্তিদের জন্য রোজা ফরজ। এমসিবি জানিয়েছে, শিশু, অসুস্থ, দুর্বল, ভ্রমণকারী, অন্তঃসত্ত্বা বা স্তন্যদানকারী নারীদের জন্য রোজা আবশ্যিক নয়। শাব্বির হাসান বলেন, “অসুস্থ হলে, রোজা না রাখতে পারলে পরবর্তীতে রোজার দিনগুলো পূর্ণ করা যেতে পারে, অথবা যদি দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা থাকে, তাহলে ফিদা (গরীবকে দান) করা যেতে পারে।”

এই মতভেদ এবং ভুল ধারণাগুলোর সঠিক ব্যাখ্যা ও ইসলামি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, মুসলিমরা রোজার গুরুত্ব এবং তা পালন করার সঠিক উপায় সম্পর্কে আরও সচেতন হতে পারেন।

শেয়ার করুন

রোজা নিয়ে মুসলিমদের ছয়টি মতভেদ

সময় ০৩:২৩:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ মার্চ ২০২৫

পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়েছে। যখন মুসলমানরা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা রাখেন, অর্থাৎ কিছুই খাওয়া বা পান করা থেকে বিরত থাকেন। মুসলমানরা বিশ্বাস করেন, এই মাসে আত্মশুদ্ধি অর্জন এবং স্বেচ্ছা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তারা ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা পালন করেন। যদিও রোজা একটি সহজ ধর্মীয় আচরণ মনে হলেও, এর সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে, যা মুসলমানদের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি করে। এখানে রোজা নিয়ে ছয়টি সাধারণ ভুল ধারণা তুলে ধরা হলো, যা ইসলামি বিজ্ঞানী এবং শারিয়া আইন বিশেষজ্ঞ শাব্বির হাসান বিশ্লেষণ করেছেন।

১. ‘দাঁত ব্রাশ করলে রোজা ভেঙে যায়’
অনেকেই মনে করেন দাঁত ব্রাশ করলে রোজা ভেঙে যায়, তবে ইসলামি চিন্তাবিদরা বলেন, দাঁত ব্রাশ করলে রোজা ভাঙ্গে না। শাব্বির হাসান পরামর্শ দেন, “অল্প পরিমাণ পেস্ট ব্যবহার করুন এবং মিন্টের গন্ধ কম এমন পেস্ট ব্যবহার করুন। যদি আপনি আরও সাবধান হতে চান, তাহলে গাছের সরু ডাল দিয়ে তৈরি মিসওয়াক বা দাঁতন ব্যবহার করতে পারেন।”

রোজা
রোজা

২. ‘ চুমুতে মুখের লালা পেটে ঢুকলে রোজা ভেঙে যায়’
শাব্বির হাসান বলেন, “মুখের লালা পেটে ঢুকলে রোজা ভাঙে না, এটি একটি স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়া। তবে অন্যের মুখের লালা আপনার মুখে ঢুকলে রোজা ভেঙে যাবে, এবং রোজার সময় অন্তরঙ্গ সম্পর্ক, যেমন চুমু বা শারীরিক মিলন নিষিদ্ধ।”

৩. ‘শুধু খাবার বা পানি না খেলেই রোজা কবুল হয়ে যাবে’
শুধু খাবার বা পানি না খেলেই রোজা ভেঙে যাবে এমন নয়। শাব্বির হাসান বলেন, “রোজা ভঙ্গ হতে পারে যদি আপনি গুজব রটান, কাউকে গালি দেন, বা অপমানকর কথা বলেন। জিহ্বার মাধ্যমে অপরাধ রোজাকে নষ্ট করতে পারে।”

৪. ‘অসাবধানতাবশত কিছু খেয়ে ফেললে রোজা ভেঙে যায়’
যদি আপনি ভুলে কিছু খেয়ে ফেলেন, তবুও রোজা বৈধ থাকবে যদি আপনি খাওয়া বন্ধ করে দেন। তবে, যদি নামাজের আগে ওজু করার সময় পানি খেয়ে ফেলেন, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। শাব্বির হাসান বলেন, “রোজা রেখে অজু করার সময় গারগল না করার পরামর্শ দেওয়া হয়, শুধু কুলি করে পানি ফেলে দিন।”

৫. ‘ওষুধ খাওয়া যাবে না’
মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেন (এমসিবি) জানিয়েছে, রোজা রাখার সময় চোখের ড্রপ, কানের ড্রপ বা ইনজেকশনের মতো কিছু ওষুধ গ্রহণ করা যাবে, কিন্তু মুখ দিয়ে যেসব ওষুধ খেতে হয় তা রোজার সময় নিষিদ্ধ। তবে ইফতারের পর এবং সেহেরির আগে নেয়া যাবে ওষুধ। শাব্বির হাসান বলেন, “অসুস্থ হলে, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোজা রাখা উচিত বা না রাখার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”

৬. ‘যে কোনো পরিস্থিতিতেই রোজা রাখতে হবে’
ইসলামে শুধু প্রাপ্তবয়স্ক (সাধারণত ১৫ বছর) এবং সুস্থ ব্যক্তিদের জন্য রোজা ফরজ। এমসিবি জানিয়েছে, শিশু, অসুস্থ, দুর্বল, ভ্রমণকারী, অন্তঃসত্ত্বা বা স্তন্যদানকারী নারীদের জন্য রোজা আবশ্যিক নয়। শাব্বির হাসান বলেন, “অসুস্থ হলে, রোজা না রাখতে পারলে পরবর্তীতে রোজার দিনগুলো পূর্ণ করা যেতে পারে, অথবা যদি দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা থাকে, তাহলে ফিদা (গরীবকে দান) করা যেতে পারে।”

এই মতভেদ এবং ভুল ধারণাগুলোর সঠিক ব্যাখ্যা ও ইসলামি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, মুসলিমরা রোজার গুরুত্ব এবং তা পালন করার সঠিক উপায় সম্পর্কে আরও সচেতন হতে পারেন।