নাগরিকত্ব বিক্রি করবেন ট্রাম্প!

- সময় ০২:০৯:৪৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
- / 70
ক্ষমতায় আসার আগ থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতি নিয়ে নানা ধরনের আলোচনায় ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চেয়ারে বসার পর রীতিমত লন্ডভন্ড করে তুলেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইতোমধ্যে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে বড় অংশের অভিবাসিদের। এবার আবারো সেই নীতিতে পরিবর্তন আনলেন।
ব্যক্তিটি যেহেতু ট্রাম্প; তাই অভিবাসন নিয়ে নতুন বাণিজ্য শুরু করে দিয়েছেন এই ব্যবসায়ী। নতুন নিয়মে ডলারের বিনিময়ে বিক্রি হবে মার্কিন নাগরিকত্ব। এজন্য পঞ্চাশ লাখ মার্কিন ডলার বা ৬০ কোটি টাকার বেশি গুনতে হবে অভিবাসীদের। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস ও কাজ করার অনুমোদন পবেন বিদেশিরা।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ট্রাম্প এই নতুন নীতির কথা ঘোষণা করেন। তার কথায়, ৫ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে অভিবাসীদের ‘গোল্ডেন কার্ড’ প্রদান করা হবে। এটি হবে মার্কিন নাগরিকত্বের অনুমোদন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অভিবাসন নীতি সবসময়ই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। ১৯৯২ সালে চালু হওয়া ইবি-৫ ভিসা প্রোগ্রামও এর ব্যতিক্রম নয়। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ বিনিয়োগ করে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পেতে পারেন। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের গত মেয়াদে এই প্রোগ্রামে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়, যা নিয়ে বিতর্ক ও আইনি লড়াইয়ের সূত্রপাত ঘটে।
ইবি-৫ ভিসা প্রোগ্রামের মূল উদ্দেশ্য ছিল মার্কিন অর্থনীতিতে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করা। এই প্রোগ্রামের অধীনে একজন বিদেশি বিনিয়োগকারীকে যুক্তরাষ্ট্রে কমপক্ষে ১.৫ মিলিয়ন ডলার; গ্রামীণ বা উচ্চ বেকারত্বের এলাকায় ৮ লাখ ডলার বিনিয়োগ করতে হয় এবং কমপক্ষে ১০ জন আমেরিকান নাগরিকের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হয়।

এই শর্ত পূরণ করলে বিনিয়োগকারী এবং তার পরিবার গ্রিন কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারেন। তবে এই প্রক্রিয়াটি সহজ নয়। বিনিয়োগকারীকে কমপক্ষে ৫ বছর ব্যবসা পরিচালনা করতে হয় এবং নিয়মিতভাবে সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট জমা দিতে হয়।
২০১৯ সালে ট্রাম্প প্রশাসন ইবি-৫ প্রোগ্রামে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনে। বিনিয়োগের নূন্যতম পরিমাণ বাড়িয়ে ১.৮ মিলিয়ন ডলার; গ্রামীণ এলাকায় ৯ লাখ ডলার নির্ধারণ করা হয়।
এই সিদ্ধান্তের পেছনে যুক্তি ছিল, মার্কিন অর্থনীতির চাহিদা অনুযায়ী বিনিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। তবে এই পরিবর্তন অনেক বিনিয়োগকারী এবং ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। তারা মনে করেন যে, এই সিদ্ধান্ত বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রোগ্রামটিকে কম আকর্ষণীয় করে তুলবে।
২০২১ সালে এই বিতর্ক আরও তীব্র হয় যখন একজন ফেডারেল বিচারক ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত বাতিল করেন। বিচারকের রায়ে উল্লেখ করা হয় যে, প্রশাসন এই পরিবর্তন আনতে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেনি।
আদালতের রায়ের পর ইবি-৫ প্রোগ্রামে বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বড় রিলিফ হিসেবে দেখা হয়। তবে এই রায়ের পরও প্রোগ্রামটির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকে যায়।
ট্রাম্প প্রশাসনের সময় ইবি-৫ প্রোগ্রাম নিয়ে আরও একটি বড় আলোচনা হয়। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প ঘোষণা করেন যে, মার্কিন নাগরিকত্ব বিক্রির জন্য একটি নতুন প্রস্তাব নিয়ে আসছেন।
এই প্রস্তাব অনুযায়ী, ধনী বিদেশিরা ৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে ‘গোল্ডেন কার্ড’ কিনতে পারবেন, যা তাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস ও কাজ করার অনুমতি দেবে।
ট্রাম্পের মতে, এই পদক্ষেপ মার্কিন অর্থনীতিতে বড় ধরনের বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। তবে এই প্রস্তাব নিয়ে সমালোচনাও কম হয়নি। অনেকেই মনে করেন যে, এই প্রক্রিয়া শুধুমাত্র ধনী ব্যক্তিদের জন্য মার্কিন নাগরিকত্বের দরজা খুলে দেবে, যা সাধারণ অভিবাসন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে।
ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন এই প্রোগ্রাম চালু হলে ইবি-৫ বাতিল করা হবে। গোল্ড কার্ডে গ্রিন কার্ডের সুবিধাও মিলবে। যা মার্কিন নাগরিকত্ব অর্জনের ‘পথ খুলে দেবে’। মূলত ধনী ব্যক্তিদের টার্গেট করেই এই প্রোগ্রাম সাজানো হয়েছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই নতুন প্রক্রিয়া চালু হবে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প নিজেই।