০১:৪৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নতুন পদ্ধতিতে কিভাবে হবেন মেয়র-চেয়ারম্যান?

আকাশ ইসলাম
  • সময় ০৭:৩৪:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • / 38

নতুন পদ্ধতিতে কিভাবে হবেন মেয়র-চেয়ারম্যান?

বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার পাঁচটি স্তরে বিভক্ত। এগুলো হলো- ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশন। বর্তমানে এসব প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে হয়ে থাকে।

সম্প্রতি স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন কিছু সুপারিশ করেছে, যেখানে নতুন পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নয়, বরং অন্যভাবে স্থানীয় সরকার প্রধানদের নির্বাচন করা যেতে পারে। তাহলে প্রশ্ন উঠেছে ভোট ছাড়া কিভাবে নির্বাচিত হবেন মেয়র ও চেয়ারম্যান?

সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, মেয়র ও চেয়ারম্যান পদের জন্য জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের বদলে নির্বাচিত কাউন্সিলর বা সদস্যদের মধ্য থেকে একজনকে ভোট দিয়ে নির্বাচন করা হবে।

প্রতিটি স্থানীয় সরকার সংস্থায় শুধু সদস্য বা কাউন্সিলররা জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন। এরপর তাঁরা নিজেরা নিজেদের মধ্য থেকে একজনকে ভোট দিয়ে মেয়র বা চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবেন।

এছাড়া স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে আরও নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করার সুপারিশ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সুপারিশ অনুযায়ী, সরাসরি ভোটের পরিবর্তে অন্য পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে অর্থ ও সময়ের সাশ্রয় হবে; কমবে নির্বাচনী সহিংসতা। এছাড়া দক্ষ ও অভিজ্ঞ নেতৃত্ব নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।

তবে এই পদ্ধতিতে নির্বাচনের ক্ষেত্রে কিছু জটিলতাও রয়েছে; যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জনগণের ক্ষমতা সীমিত হয়ে যেতে পাওে, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির সুযোগ তৈরি; সর্বোপরি গণতন্ত্রের মূল চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক হতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। তবে এটি কতটা কার্যকর হবে, তা নির্ভর করবে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য পদ্ধতির ওপর।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভোটের মাধ্যমে সরাসরি নির্বাচিত না হলে জনগণের মতামতের প্রতিফলন কমে যেতে পারে, যা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হতে পারে।

সুপারিশে আরও বলা হয়েছে, জেলা পরিষদের সদস্যদের জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত করা হবে। এরপর এই সদস্যরা তাঁদের মধ্য থেকে একজনকে ভোট দিয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবেন। জেলা পরিষদ হবে ‘পরিকল্পনা ইউনিট’, আর উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ হবে ‘বাস্তবায়ন ইউনিট’।

স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক কাঠামো দুটি প্রধান অংশে ভাগ করা হবে। একটি বিধানিক অংশ; যেখানে একজন সভাধ্যক্ষ থাকবেন, যিনি জাতীয় সংসদের স্পিকারেরমতো দায়িত্ব পালন করবেন। অন্য অংশ নির্বাহী অংশ; মেয়র বা চেয়ারম্যান, যিনি নির্বাহী ক্ষমতা বহন করবেন।

এছাড়া সুপারিশে গ্রাম আদালত বিলুপ্তির প্রস্তাব করা হয়েছে এবং উপজেলা পর্যায়ে পূর্ণাঙ্গ দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত স্থাপনের পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে।

সুপারিশ অনুযায়ী, এপ্রিলের মধ্যে একটি অধ্যাদেশ জারি করে দুটি একীভূত স্থানীয় সরকার আইন প্রণয়ন করতে হবে এবং জুনের মধ্যে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পরিষদ এবং পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচন সম্পন্ন করা যাবে। পাশাপাশি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও আঞ্চলিক পরিষদের নির্বাচনের জন্য আইন সংশোধনের প্রস্তাব রয়েছে।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এসবই প্রস্তাব আকারে রয়েছে। এগুলো যাচাই-বাছাই করে সবার মতামতের ভিত্তিতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

শেয়ার করুন

নতুন পদ্ধতিতে কিভাবে হবেন মেয়র-চেয়ারম্যান?

সময় ০৭:৩৪:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার পাঁচটি স্তরে বিভক্ত। এগুলো হলো- ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশন। বর্তমানে এসব প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে হয়ে থাকে।

সম্প্রতি স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন কিছু সুপারিশ করেছে, যেখানে নতুন পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নয়, বরং অন্যভাবে স্থানীয় সরকার প্রধানদের নির্বাচন করা যেতে পারে। তাহলে প্রশ্ন উঠেছে ভোট ছাড়া কিভাবে নির্বাচিত হবেন মেয়র ও চেয়ারম্যান?

সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, মেয়র ও চেয়ারম্যান পদের জন্য জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের বদলে নির্বাচিত কাউন্সিলর বা সদস্যদের মধ্য থেকে একজনকে ভোট দিয়ে নির্বাচন করা হবে।

প্রতিটি স্থানীয় সরকার সংস্থায় শুধু সদস্য বা কাউন্সিলররা জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন। এরপর তাঁরা নিজেরা নিজেদের মধ্য থেকে একজনকে ভোট দিয়ে মেয়র বা চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবেন।

এছাড়া স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে আরও নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করার সুপারিশ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সুপারিশ অনুযায়ী, সরাসরি ভোটের পরিবর্তে অন্য পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে অর্থ ও সময়ের সাশ্রয় হবে; কমবে নির্বাচনী সহিংসতা। এছাড়া দক্ষ ও অভিজ্ঞ নেতৃত্ব নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।

তবে এই পদ্ধতিতে নির্বাচনের ক্ষেত্রে কিছু জটিলতাও রয়েছে; যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জনগণের ক্ষমতা সীমিত হয়ে যেতে পাওে, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির সুযোগ তৈরি; সর্বোপরি গণতন্ত্রের মূল চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক হতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। তবে এটি কতটা কার্যকর হবে, তা নির্ভর করবে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য পদ্ধতির ওপর।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভোটের মাধ্যমে সরাসরি নির্বাচিত না হলে জনগণের মতামতের প্রতিফলন কমে যেতে পারে, যা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হতে পারে।

সুপারিশে আরও বলা হয়েছে, জেলা পরিষদের সদস্যদের জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত করা হবে। এরপর এই সদস্যরা তাঁদের মধ্য থেকে একজনকে ভোট দিয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবেন। জেলা পরিষদ হবে ‘পরিকল্পনা ইউনিট’, আর উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ হবে ‘বাস্তবায়ন ইউনিট’।

স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক কাঠামো দুটি প্রধান অংশে ভাগ করা হবে। একটি বিধানিক অংশ; যেখানে একজন সভাধ্যক্ষ থাকবেন, যিনি জাতীয় সংসদের স্পিকারেরমতো দায়িত্ব পালন করবেন। অন্য অংশ নির্বাহী অংশ; মেয়র বা চেয়ারম্যান, যিনি নির্বাহী ক্ষমতা বহন করবেন।

এছাড়া সুপারিশে গ্রাম আদালত বিলুপ্তির প্রস্তাব করা হয়েছে এবং উপজেলা পর্যায়ে পূর্ণাঙ্গ দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত স্থাপনের পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে।

সুপারিশ অনুযায়ী, এপ্রিলের মধ্যে একটি অধ্যাদেশ জারি করে দুটি একীভূত স্থানীয় সরকার আইন প্রণয়ন করতে হবে এবং জুনের মধ্যে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পরিষদ এবং পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচন সম্পন্ন করা যাবে। পাশাপাশি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও আঞ্চলিক পরিষদের নির্বাচনের জন্য আইন সংশোধনের প্রস্তাব রয়েছে।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এসবই প্রস্তাব আকারে রয়েছে। এগুলো যাচাই-বাছাই করে সবার মতামতের ভিত্তিতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।