‘বিএনপি হাসিনার ফাঁদে পা দিতে চায় না’

- সময় ০৭:২১:৩২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
- / 40
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু অভিযোগ করেছেন যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন উসকানি দিয়ে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করছেন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে প্রমাণ করেছেন যে তিনি বাংলাদেশের জনগণের নেতা নন। ভারতে আশ্রয় নিয়ে তিনি এখনো ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন। বিএনপি তার ফাঁদে পা না দিয়েই দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে। যদি সরকারের উদ্দেশ্য সৎ হতো, তবে তারা বিএনপির ৩১ দফা পড়ে দেখত।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, যদি সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসে, তাহলে সমাধান বের করতে এক মাসের বেশি সময় লাগবে না। নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র সম্পর্কে তিনি বলেন, যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, তাদের নির্বাচন দিতে কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়। বিএনপি বিশ্বাস করে যে আগামী নির্বাচনে তারা জিতবেই এবং তার পরবর্তী নির্বাচনেও তারা বিজয়ী হবে, কারণ বিএনপি জনগণের মধ্যে থাকতে চায়।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি যে ৩১ দফা দিয়েছে, তা গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মিলিত প্রস্তাবনা। সরকারের উপদেষ্টাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যদি উদ্দেশ্য সৎ হতো, তাহলে তারা ৩১ দফা পড়ে দেখতেন। কিন্তু তারা শুধু সংস্কারের কথা বলছেন, অথচ জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না। তিনি আরও বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের পর শেখ মুজিবুর রহমান সঠিকভাবে নির্বাচন দিতে ব্যর্থ হন, যার ফলে ১৯৭৩ সাল থেকে সংকট শুরু হয়। সেই সংকট কাটিয়েছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং পরবর্তীতে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এবার এই সংকটের সমাধান আনবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বর্তমান সরকারের শাসনামলে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির সমালোচনা করে বলেন, গাজীপুরে বিএনপির সমন্বয়কদের ওপর হামলা হয়েছে, যা লজ্জাজনক। বিএনপি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করছে এবং প্রয়োজনে রাজপথে নেমে আসবে।
তিনি বলেন, ১৯৯১ সালে একজন প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিয়ে তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে পুনরায় বিচারপতির পদে ফিরে যান। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসেন এবং স্বৈরাচার এরশাদের সকল অপকর্ম দূর করেন। শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা চালু করেছিলেন, কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া তা সংসদীয় ব্যবস্থায় রূপান্তর করেন।
দুদু আরও বলেন, বাংলাদেশে যত অপকর্ম হয়েছে, তা শেখ মুজিবুর রহমান এবং শেখ হাসিনার শাসনামলেই ঘটেছে। শেখ মুজিব রক্ষীবাহিনী গঠন করে বিরোধীদলের হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছিলেন এবং দেশে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করে লাখ লাখ মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন। সেই একদলীয় ব্যবস্থা থেকে বাংলাদেশকে পুনরায় মুক্ত করেছিলেন স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। তিনি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন, সব রাজনৈতিক দলের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করেন এবং কৃষি খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনেন।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ১৯৯১ সালে বেগম খালেদা জিয়ার কাছে পরাজিত হয়েছিলেন, এবারও তিনি পরাজিত হয়েছেন। শেখ হাসিনা দেশের মানুষের নেত্রী নন, বরং তিনি একজন লুটেরা ও ষড়যন্ত্রকারী, যিনি এখনো ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশবিরোধী ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন। বিএনপি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি পছন্দ করে না, তবে আওয়ামী লীগ যদি উসকানি দেয়, তাহলে তার পরিণতি তাদেরই ভোগ করতে হবে।
এই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান নাহিদুল খান সাহেল। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম। আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রেজাবুদৌলা চৌধুরী, সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম কাগজী, মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের সভাপতি সৈয়দ মোজাম্মেল হোসেন শাহীন, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক ফাউন্ডেশনের সহসভাপতি মতিউর রহমান ডিজেল, প্রজন্ম একাডেমির সভাপতি কালাম ফয়েজী, গণতান্ত্রিক জাগ্রত বাংলাদেশের সভাপতি মো. জহিরুল ইসলাম কলিম, বাংলাদেশ উন্মুক্ত গণতান্ত্রিক পরিষদের সভাপতি রমিজ উদ্দিন রুমী, সাংস্কৃতিক দলের সভাপতি এম. আহমেদ খান মন্টু এবং যুবদল নেতা শরীফ বেপারসহ অনেকে।