০৯:৪৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এই মসজিদে তিন বছর ধরে আজান হয় না, নেপথ্যে কি?

নুরুল বশর, উখিয়া (কক্সবাজার)
  • সময় ১১:১৬:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • / 99

এই মসজিদে তিন বছর ধরে আজান হয় না

চরম অবহেলা, আন্তরিকতার অভাব আর অর্থনৈতিক সংকটের কারণে একই সময় ধরে বন্ধ হয়ে আছে শত শত হাফেজ গড়ার কেন্দ্র ও কোরআন শেখার তীর্থস্থান ঐতিহ্যবাহী এক হেফজখানা। প্রায় তিন বছর ধরে আজানও হয়না। প্রতিষ্ঠাতা অর্থনৈতিক সংকটের কথা উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন অন্য কথা। নেপথ্যে রয়েছে শিক্ষক নিয়োগের ঝামেলার বিষয়টি।

অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে নিথর মসজিদ। বাংলাদেশের সমুদ্রনগরী কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলাতেই রয়েছে এমন একটি মসজিদ
প্রকৃতির সৌন্দর্যে ঘেরা মনোরম পরিবেশে অবস্থিত বায়তুশ শেফা জামে মসজিদের অবস্থান উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের অন্তর্গত থাইংখালী স্টেশনের পূর্ব পাশে। এর সঙ্গেই লাগোয়া হেফজখানা। ২০০৬ সালে মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন হাফেজ মাওলানা শাহ আলম নামের এক ব্যক্তি। ওই সময়েই প্রতিষ্ঠা পায় হেফজখানাটি। কিন্তু বর্তমানে এর অবস্থা সংকটাপন্ন।

এলাকাবাসীর দাবি, একটি মসজিদে আজান না হওয়া, দিনের পর দিন নামাজ না পড়ানোর ঘটনা যেমন নজিরবিহীন, তেমনই ন্যক্কারজনক। একটা সময় এখানে কোরআনের হাফেজদের আনাগোনা ছিল। রহমতপূর্ণ ছিল এই স্থান। শিক্ষানবিশ হাফেজদের কলকলানিতে মুখরিত ছিল আশপাশ। বছর কয়েক আগেও শিক্ষানবিশ হাফেজদের পেছনে রমজান মাসে তারাবির নামাজ আদায় করেছেন এলাকার মুসল্লিরা।

নাসির উদ্দিন বলেন, এই হেফজখানা থেকে হাফেজ হয়ে বের হয়ে বড় বড় মাওলানা-মুফতি হয়েছেন অনেকে। মূলত সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতার অভাবে এখানকার সবচেয়ে পুরোনো হেফজখানাটি বন্ধ হয়ে আছে এখন। ফলে সন্তানদের কোরআন শিক্ষা দিতে অন্যত্র পড়াতে বাধ্য হচ্ছেন অভিভাবকেরা। এলাকাবাসীর দাবি, হেফজখানাটি পুনরায় চালু করা।

হেফজখানার সাবেক শিক্ষার্থী হাফেজ কামরুল ইসলাম বলেন, আমরা যখন পড়তাম তখন একটা শেখার পরিবেশ ছিল। আমাদের ওস্তাদ হাফেজ জহিরের মৃত্যুর পর থেকে হেফজখানাটি আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। দীর্ঘ সময় দীক্ষা দিয়ে বছর দশেক আগে পরলোকগমন করেন হাফেজ জহির।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, তিন দিক থেকে তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্বারা বেষ্টিত একটি মসজিদ। এক পাশে সারিতে হেফজখানা ও নুরানি মাদ্রাসা, অপর পাশটায় দাখিল মাদ্রাসা। এ সবকিছুর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আছেন হাফেজ শাহ আলম নামের ওই ব্যক্তি।

বর্তমানে দাখিল মাদ্রাসা ও নুরানি মাদ্রাসা চালু থাকলেও বন্ধ আছে হেফজখানা ও মসজিদ। সবশেষ ২০২২ সাল নাগাদ হেফজখানার কার্যক্রম দেখা গিয়েছিল।

প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকরা জানিয়েছেন, কোনো অতিথি এলে মসজিদে নামাজ পড়তে চান। কিন্তু তালাবদ্ধ মসজিদের বারান্দায় ধুলোবালি জমা আর ঝরাপাতা ছড়ানো থাকায় নামাজ আদায়ে অসুবিধা হয়। বাইরের লোকজন এসে দেখলে অনেকেই অনেক কিছু মনে করেন। হেফজখানা চালু হলে মসজিদও চালু হবে বলে তারা জানান।

বন্ধ হয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী এক হেফজখানা
বন্ধ হয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী এক হেফজখানা

খবর নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে হেফজখানাটি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হলেও সফলতার মুখ দেখেনি। ভিন্ন ভিন্ন সময়ে দাখিল মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও নুরানি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ হেফজখানাটি চালু করার পৃথক উদ্যোগ হাতে নেয়। পরে নানা কারণে সেই উদ্যোগও ভেস্তে যায়।

একটা সময় নুরানি মাদ্রাসা ও হেফজখানা একসঙ্গে পরিচালিত হতো। নুরানি মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. রফিক বলেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারণে হেফজখানার চাল নষ্ট হয়ে গেছে, দরজা-জানালায় ঘুণে ধরেছে। এ ছাড়া সেখানে আরও সংযোজনের প্রয়োজন আছে। নিয়োগেরও কিছু বিষয় আছে। এত সব খরচের জন্য অর্থের দরকার। তবে আগামী তিন-চার মাসের মধ্যে হেফজখানা ও মসজিদ চালুর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।

এ প্রসঙ্গে জানতে যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠাতা হাফেজ মাওলানা শাহ আলম বলেন কিছুটা ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক কোনো সমস্যা নেই। শুরু থেকেই অবস্থা ভালো ছিল। শেষ কয়েক বছরে হাফেজ (শিক্ষক) নিয়ে ঝামেলা হয়। কোনো হাফেজ থাকলে সপ্তাহে একদিন-দুদিন নানান অজুহাতে বাড়ি চলে যেত। এ কারণে ছাত্রদের শিক্ষায় ব্যাঘাত ঘটত। তিনি বলেন, এখন নতুন করে হাফেজ নিয়োগ দিলে তাকে ফ্যামিলিসহ থাকতে হবে, এ জন্য হেফজখানার সঙ্গে আলাদা কক্ষ তৈরি করতে হবে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারণে হেফজখানার টিন-কাঠ নষ্ট হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে নতুন করে একটি আধুনিক হেফজখানা তৈরি করতে হবে, যাতে এখানে ইচ্ছুকরা ভর্তি হতে আগ্রহী হয়। দেরিতে হলেও আধুনিক মানের কোরআন শিক্ষার ব্যবস্থা করতে চান তিনি।

থাইংখালী দাখিল মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে শিগগিরই একটি সিদ্ধান্ত হবে। হেফজখানার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে প্রতিষ্ঠাতা, সহযোগী, পরিচালনা কমিটিসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বসে উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে

শেয়ার করুন

এই মসজিদে তিন বছর ধরে আজান হয় না, নেপথ্যে কি?

সময় ১১:১৬:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

চরম অবহেলা, আন্তরিকতার অভাব আর অর্থনৈতিক সংকটের কারণে একই সময় ধরে বন্ধ হয়ে আছে শত শত হাফেজ গড়ার কেন্দ্র ও কোরআন শেখার তীর্থস্থান ঐতিহ্যবাহী এক হেফজখানা। প্রায় তিন বছর ধরে আজানও হয়না। প্রতিষ্ঠাতা অর্থনৈতিক সংকটের কথা উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন অন্য কথা। নেপথ্যে রয়েছে শিক্ষক নিয়োগের ঝামেলার বিষয়টি।

অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে নিথর মসজিদ। বাংলাদেশের সমুদ্রনগরী কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলাতেই রয়েছে এমন একটি মসজিদ
প্রকৃতির সৌন্দর্যে ঘেরা মনোরম পরিবেশে অবস্থিত বায়তুশ শেফা জামে মসজিদের অবস্থান উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের অন্তর্গত থাইংখালী স্টেশনের পূর্ব পাশে। এর সঙ্গেই লাগোয়া হেফজখানা। ২০০৬ সালে মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন হাফেজ মাওলানা শাহ আলম নামের এক ব্যক্তি। ওই সময়েই প্রতিষ্ঠা পায় হেফজখানাটি। কিন্তু বর্তমানে এর অবস্থা সংকটাপন্ন।

এলাকাবাসীর দাবি, একটি মসজিদে আজান না হওয়া, দিনের পর দিন নামাজ না পড়ানোর ঘটনা যেমন নজিরবিহীন, তেমনই ন্যক্কারজনক। একটা সময় এখানে কোরআনের হাফেজদের আনাগোনা ছিল। রহমতপূর্ণ ছিল এই স্থান। শিক্ষানবিশ হাফেজদের কলকলানিতে মুখরিত ছিল আশপাশ। বছর কয়েক আগেও শিক্ষানবিশ হাফেজদের পেছনে রমজান মাসে তারাবির নামাজ আদায় করেছেন এলাকার মুসল্লিরা।

নাসির উদ্দিন বলেন, এই হেফজখানা থেকে হাফেজ হয়ে বের হয়ে বড় বড় মাওলানা-মুফতি হয়েছেন অনেকে। মূলত সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতার অভাবে এখানকার সবচেয়ে পুরোনো হেফজখানাটি বন্ধ হয়ে আছে এখন। ফলে সন্তানদের কোরআন শিক্ষা দিতে অন্যত্র পড়াতে বাধ্য হচ্ছেন অভিভাবকেরা। এলাকাবাসীর দাবি, হেফজখানাটি পুনরায় চালু করা।

হেফজখানার সাবেক শিক্ষার্থী হাফেজ কামরুল ইসলাম বলেন, আমরা যখন পড়তাম তখন একটা শেখার পরিবেশ ছিল। আমাদের ওস্তাদ হাফেজ জহিরের মৃত্যুর পর থেকে হেফজখানাটি আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। দীর্ঘ সময় দীক্ষা দিয়ে বছর দশেক আগে পরলোকগমন করেন হাফেজ জহির।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, তিন দিক থেকে তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্বারা বেষ্টিত একটি মসজিদ। এক পাশে সারিতে হেফজখানা ও নুরানি মাদ্রাসা, অপর পাশটায় দাখিল মাদ্রাসা। এ সবকিছুর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আছেন হাফেজ শাহ আলম নামের ওই ব্যক্তি।

বর্তমানে দাখিল মাদ্রাসা ও নুরানি মাদ্রাসা চালু থাকলেও বন্ধ আছে হেফজখানা ও মসজিদ। সবশেষ ২০২২ সাল নাগাদ হেফজখানার কার্যক্রম দেখা গিয়েছিল।

প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকরা জানিয়েছেন, কোনো অতিথি এলে মসজিদে নামাজ পড়তে চান। কিন্তু তালাবদ্ধ মসজিদের বারান্দায় ধুলোবালি জমা আর ঝরাপাতা ছড়ানো থাকায় নামাজ আদায়ে অসুবিধা হয়। বাইরের লোকজন এসে দেখলে অনেকেই অনেক কিছু মনে করেন। হেফজখানা চালু হলে মসজিদও চালু হবে বলে তারা জানান।

বন্ধ হয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী এক হেফজখানা
বন্ধ হয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী এক হেফজখানা

খবর নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে হেফজখানাটি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হলেও সফলতার মুখ দেখেনি। ভিন্ন ভিন্ন সময়ে দাখিল মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও নুরানি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ হেফজখানাটি চালু করার পৃথক উদ্যোগ হাতে নেয়। পরে নানা কারণে সেই উদ্যোগও ভেস্তে যায়।

একটা সময় নুরানি মাদ্রাসা ও হেফজখানা একসঙ্গে পরিচালিত হতো। নুরানি মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. রফিক বলেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারণে হেফজখানার চাল নষ্ট হয়ে গেছে, দরজা-জানালায় ঘুণে ধরেছে। এ ছাড়া সেখানে আরও সংযোজনের প্রয়োজন আছে। নিয়োগেরও কিছু বিষয় আছে। এত সব খরচের জন্য অর্থের দরকার। তবে আগামী তিন-চার মাসের মধ্যে হেফজখানা ও মসজিদ চালুর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।

এ প্রসঙ্গে জানতে যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠাতা হাফেজ মাওলানা শাহ আলম বলেন কিছুটা ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক কোনো সমস্যা নেই। শুরু থেকেই অবস্থা ভালো ছিল। শেষ কয়েক বছরে হাফেজ (শিক্ষক) নিয়ে ঝামেলা হয়। কোনো হাফেজ থাকলে সপ্তাহে একদিন-দুদিন নানান অজুহাতে বাড়ি চলে যেত। এ কারণে ছাত্রদের শিক্ষায় ব্যাঘাত ঘটত। তিনি বলেন, এখন নতুন করে হাফেজ নিয়োগ দিলে তাকে ফ্যামিলিসহ থাকতে হবে, এ জন্য হেফজখানার সঙ্গে আলাদা কক্ষ তৈরি করতে হবে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারণে হেফজখানার টিন-কাঠ নষ্ট হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে নতুন করে একটি আধুনিক হেফজখানা তৈরি করতে হবে, যাতে এখানে ইচ্ছুকরা ভর্তি হতে আগ্রহী হয়। দেরিতে হলেও আধুনিক মানের কোরআন শিক্ষার ব্যবস্থা করতে চান তিনি।

থাইংখালী দাখিল মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে শিগগিরই একটি সিদ্ধান্ত হবে। হেফজখানার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে প্রতিষ্ঠাতা, সহযোগী, পরিচালনা কমিটিসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বসে উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে