বন্দরে পড়ে আছে আরও ২৩০টি
মোংলা বন্দরে নিলামে উঠেছে ৭০টি দামি গাড়ি
- সময় ১০:০০:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি ২০২৫
- / 47
আমদানিকারকরা ছাড় না করায় শেষ পর্যন্ত নিলামে উঠেছে মোংলা বন্দরে আটকে থাকা ৭০টি নামি দামি গাড়ি। মোংলা কাস্টমস হাউস এই গাড়ি নিলামে উঠায়। এর আগে গত মাসে এগুলো বিক্রির জন্য মোংলা কাস্টম হাউসে হস্তান্তর করেছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। গাড়িগুলো নিলামে ক্রয় করতে চট্রগ্রাম, ঢাকা, খুলনা ও মোংলা কাস্টমস হাউসে দরপত্র জমা দেয়া ছাড়াও অনলাইনে বিট করেছেন ব্যবসায়ীরা। আগামী ২৯ জানুয়ারি দরপত্র খোলা হবে এবং যাচাই বাছাই শেষে সর্বোচ্চ দরদাতাকে প্রাপ্ত গাড়ির বিক্রয় আদেশ জারি করা হবে। মোংলা কাস্টমস হাউসের সহকারী কমিশনার মোঃ রুবেল হাসান সোমবার রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এদিকে শুল্কমুক্ত সুবিধায় বন্দরে আনা সাবেক সংসদ সদস্যের তিনটি ল্যান্ড ক্রুজার গাড়িও নিলামে তোলা হয় গত ২০ নভেম্বর। তবে সেগুলোর এখনও বিক্রয় আদেশ হয়নি। এসব গাড়ি গত বছরের ১৭ জুলাই টাঙ্গাইল-৮ আসনের অনুপম শাহজাহান জয়, দিনাজপুর-১ আসনের মুহাম্মদ জাকারিয়া ও সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নাসিমা জামান ববি মোংলা বন্দরে আমদানি করেন। তারা এখন পলাতক রয়েছেন।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ট্রাফিক সুত্র জানায়, মোংলা বন্দরে আমদানির পর ইয়ার্ড এবং বিভিন্ন শেডে রাখা নির্ধারিত সময়সীমা ৩০ দিনের বেশি অতিবাহিত হওয়ায় নিলামে বিক্রির জন্য মোংলা বন্দর থেকে ৩০০টি গাড়ি কাস্টমসের কাছে গত মাসে হস্তান্তর করা হয়েছে। এর মধ্যে এলিয়ন, ফিল্ডার, হাইব্রিড, প্রাডো ল্যান্ড ক্রজার, ভেসেল, হারিয়ারসহ ৭০টি নামি দামি গাড়ি সোমবার (২০ জানুয়ারি) নিলামে উঠিয়েছে মোংলা কাস্টম।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের উপ পরিচালক মোঃ মাকরুজ্জামান জানায়, পদ্মা সেতুর কল্যানে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়া এই বন্দরে গাড়ি আমদানি বেড়েছে। তবে বানিজ্যিক জাহাজ থেকে খালাসের পর দীর্ঘদিন ছাড় না করায় দ্রুত এসব গাড়ি কাস্টমকে নিলামের মাধ্যমে বিক্রির তাগিদ দেন তারা। একই সাথে দীর্ঘদিন গাড়ি পড়ে থাকায় বন্দরের শেডে জায়গার অপচয় শুধু নয়, পাশাপশি এসব গাড়ি অকেজো বা বিকল হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
মোংলা কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার মোঃ রুবেল হাসান জানান, ২০০৯ সালের ৩ জুন জাপান থেকে মোংলা বন্দরে গাড়ি আমদানি শুরু হয়। মোংলা কাস্টমের রাজস্ব আয়ের শতকরা ৫২ শতাংশ আসে আমদানি করা গাড়ির শুল্ক থেকে। তবে আমদানি করা গাড়ি দীর্ঘদিন বন্দরে পড়ে থাকলে অন্যান্য পণ্য রাখায় সমস্যা তৈরি হয়। নিলাম প্রক্রিয়া চালু রাখলে গাড়ি বা অন্যান্য পণ্য রাখতে ব্যবসায়ীদের সুবিধার পাশাপাশি সঠিক সময়ে সরকারের রাজস্ব আদায় সম্ভব হয়।
মোংলা কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার মোঃ রুবেল হাসান আরও বলেন, আমদানিকারকরা সময়মতো গাড়িসহ অন্যান্য পণ্য ছাড় না করার কারণে তা নিলামযোগ্য হয়। পরে তা নিলামের মাধ্য বিক্রি করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় সোমবার (২০ জানুয়ারি) মোংলা বন্দরে দীর্ঘদিন পড়ে থাকা ৩০০টি গাড়ির মধ্যে ৭০টি বিলাসবহুল গাড়িসহ অন্যান্য পণ্য নিলামে তোলা হয়েছে। এসব গাড়ি নিলামে ক্রয় করতে চট্রগ্রাম, ঢাকা, খুলনা ও মোংলা কাস্টমস হাউসে দরপত্র জমা দেয়া ছাড়াও অনলাইনে বিট করেছেন ব্যবসায়ীরা।
আগামী ২৯ জানুয়ারি দরপত্র খোলা হবে এবং যাচাই বাছাই শেষে সর্বোচ্চ দরদাতাকে প্রাপ্ত গাড়ির বিক্রয় আদেশ জারি করা হবে। বাকি ২৩০টি গাড়িও পর্যায়ক্রমে নিলামে উঠানো হবে।
এছাড়া গত বছরের ২০ নভেম্বর নিলামে তোলা হয় শুল্কমুক্ত সুবিধায় মোংলা বন্দরে আনা সাবেক সংসদ সদস্যের তিনটি ল্যান্ড ক্রুজার গাড়িও। তবে সেগুলোর এখনও বিক্রয় আদেশ জারি হয়নি বলেও জানান তিনি।
মোংলা কাস্টম হাউসের নিলাম শাখা জানায়, গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ১৪টি নিলামের মাধ্যমে দুই হাজার ২০০ গাড়ি নিলামে তোলা হয়। এর মধ্যে তারা মাত্র ২০০টি গাড়ি বিক্রি করতে পেরেছেন তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গাড়ি নিলামে অংশ নেওয়া এক ব্যবসায়ী জানায়, নিয়মানুযায়ী প্রথম দরপত্রের যদি কোনো পণ্যের দাম ৬০ শতাংশ না ওঠে তবে তা অনুমোদন হবে না। দ্বিতীয় নিলামে যদি প্রথম দরপত্রের চেয়ে বেশি দাম পাওয়া যায় তবে বিক্রির সুযোগ রয়েছে। এরপর তৃতীয়, চতুর্থ বা পর্যায়ক্রমে পরের দরপত্রে দাম কমানোর সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এসব নিয়ম মানা হয় না। কারণ বিধান অনুযায়ী, এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা মূল্য নির্ধারণ করার এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে নিলাম কমিটিকে। এই বিধানকে ব্যবহার করে তারা পণ্যের দাম কমায় না। তাই পণ্যগুলো বারবার নিলামে তুলেও ক্রেতা পাওয়া যায় না।