ঢাকা ০৫:৫৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ৮ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

একাধিক বিয়ে নিয়ে ইসলামের বিধান

আশানুর রহমান মিঠু
  • সময় ১১:২০:৩৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি ২০২৫
  • / 32

একাধিক বিয়ে নিয়ে ইসলামের বিধান

ইসলাম নারী পুরুষের মধ্যে সুন্দর ও পবিত্র জীবন-যাপনের জন্য বিবাহের ব্যবস্থা আছে। এর মাধ্যমে নারী পুরুষের ভবিষ্যত জীবনের সূচনা হয়। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও বিয়ে না করা ইসলাম নিষিদ্ধ একটি ভর্ৎসনামূলক অপরাধ। ইসলামী শরিয়তে কিছু শর্তসাপেক্ষে পুরুষের জন্য একসঙ্গে একাধিক স্ত্রী গ্রহণের সুযোগও রাখা হয়েছে।

পুরুষের একসঙ্গে একাধিক স্ত্রী গ্রহণের বৈধতার বিষয়ে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা বিবাহ করবে নারীদের মধ্যে যাকে তোমার ভালো লাগে—দুই, তিন অথবা চার। আর যদি আশঙ্কা করো যে সুবিচার করতে পারবে না, তাহলে একজনকে (বিয়ে করো)…।’ (সুরা : নিসা, ৩)

কোনো পুরুষের সক্ষমতা থাকার পর তিনি যদি একাধিক বিয়ে করেন এবং সবাইকে নিয়ে একরুমে ঘুমাতে চান তবে এটা শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ হবে কিনা?

ইসলাম মানুষকে নৈতিকতা ও লজ্জার মতো মূল্যবান সম্পদ দিয়ে সম্মানিত করেছে এবং জীবন-যাপনের উন্নত নীতি ও আচার শিক্ষা ‍দিয়েছে। সভ্য সমাজ গঠনের জন্য কোন বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে এবং কোন বিষয়গুলো পরিহার করতে হবে ইসলাম তাও স্পষ্ট করেছে। ইসলাম লজ্জা ও শালীনতাকে একজন মুসলমানের জীবনের মৌলিক বৈশিষ্ট্য বলে মনে করে। এজন্য শালীনতা একজন ভালো ও সৎ মানুষের পরিচয় বহন করে।

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক ধর্মের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য থাকে। ইসলামের বৈশিষ্ট্য হলো লজ্জাশীলতা। – ইবনে মাজা, বাবুল হায়া, ২/ ১৩৯৯

হজরত ইবনে ওমর রা. বলেছেন, লজ্জা এবং ঈমান একটি আরেকটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যখন এর একটি ছেড়ে দেওয়া হয়, তখন অন্যটি এমনিতেই চলে যায়। – ইবনে আবি শায়বা, ৫/২১৩

একাধিক বিয়ে নিয়ে ইসলামের বিধান
একাধিক বিয়ে নিয়ে ইসলামের বিধান

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ঈমানের ৭০টিরও বেশি শাখা রয়েছে এর মধ্য থেকে লজ্জাও ঈমানের একটি (গুরুত্বপূর্ণ) শাখা।- বুখারী, সহীহাইন, কিতাবুল ঈমান, ১/১২

অতএব, লজ্জা ও ভদ্রতার দাবি হলো, দুই স্ত্রীকে নিয়ে একরুমে না ঘুমানো। তবে কেউ একসঙ্গে একাধিক স্ত্রীকে নিয়ে ঘুমাতে চাইলে তাকে তিনটি শর্ত মানতে হবে। এই শর্ত মানতে পারলে একজন পুরুষের জন্য একাধিক স্ত্রীকে একসাথে নিয়ে ঘুমানো জায়েজ।

একাধিক বিয়ে নিয়ে ইসলামের বিধান
একাধিক বিয়ে নিয়ে ইসলামের বিধান

১. এতে সব স্ত্রীর সম্মতি থাকতে হবে। ইবনু কুদামা রহ. বলেন, ‘পুরুষের জন্য দুই স্ত্রীকে নিয়ে একসঙ্গে থাকা তাদের সম্মতি ব্যতীত জায়েয নেই। কেননা, উভয়ের মাঝে বৈরিতা ও ঈর্ষা থাকে বিধায় উভয়ের ক্ষতি হতে পারে।’ (আলমুগনী ৭/৩০০)

২. এক স্ত্রীর সামনে অন্য স্ত্রীর সতর খোলা থাকতে পারবে না। কেননা, একজন নারী অপর নারীর সতর দেখা হারাম। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘পুরুষ পুরুষের এবং নারী নারীর সতর দেখবে না। (মুসলিম ৩৩৮) আর নারীর সামনে নারীর সতর হচ্ছে, নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত।’ (হেদায়া ২/৪৪৫,হিন্দিয়া ৫/৩২৭, বাহারুর রায়েক ৯/৩৫৪)

৩. এক স্ত্রীর সামনে আরেক স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করতে পারবে না। হাসান বসরী রহ. বলেন. ‘সাহাবায়ে কেরাম ও শীর্ষ তাবিঈগণ ‘ওয়াজাস’-কে ঘৃণা করতেন। আর ওয়াজাস মানে এক স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করার সময় অপর স্ত্রী আওয়াজ শুনতে পাওয়া। আর ঘৃণা করা দ্বারা পূর্ববর্তীগণ উদ্দেশ নিতেন, হারাম মনে করা।’ (মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবাহ ৪/৩৮৮)

শেয়ার করুন

একাধিক বিয়ে নিয়ে ইসলামের বিধান

সময় ১১:২০:৩৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি ২০২৫

ইসলাম নারী পুরুষের মধ্যে সুন্দর ও পবিত্র জীবন-যাপনের জন্য বিবাহের ব্যবস্থা আছে। এর মাধ্যমে নারী পুরুষের ভবিষ্যত জীবনের সূচনা হয়। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও বিয়ে না করা ইসলাম নিষিদ্ধ একটি ভর্ৎসনামূলক অপরাধ। ইসলামী শরিয়তে কিছু শর্তসাপেক্ষে পুরুষের জন্য একসঙ্গে একাধিক স্ত্রী গ্রহণের সুযোগও রাখা হয়েছে।

পুরুষের একসঙ্গে একাধিক স্ত্রী গ্রহণের বৈধতার বিষয়ে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা বিবাহ করবে নারীদের মধ্যে যাকে তোমার ভালো লাগে—দুই, তিন অথবা চার। আর যদি আশঙ্কা করো যে সুবিচার করতে পারবে না, তাহলে একজনকে (বিয়ে করো)…।’ (সুরা : নিসা, ৩)

কোনো পুরুষের সক্ষমতা থাকার পর তিনি যদি একাধিক বিয়ে করেন এবং সবাইকে নিয়ে একরুমে ঘুমাতে চান তবে এটা শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ হবে কিনা?

ইসলাম মানুষকে নৈতিকতা ও লজ্জার মতো মূল্যবান সম্পদ দিয়ে সম্মানিত করেছে এবং জীবন-যাপনের উন্নত নীতি ও আচার শিক্ষা ‍দিয়েছে। সভ্য সমাজ গঠনের জন্য কোন বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে এবং কোন বিষয়গুলো পরিহার করতে হবে ইসলাম তাও স্পষ্ট করেছে। ইসলাম লজ্জা ও শালীনতাকে একজন মুসলমানের জীবনের মৌলিক বৈশিষ্ট্য বলে মনে করে। এজন্য শালীনতা একজন ভালো ও সৎ মানুষের পরিচয় বহন করে।

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক ধর্মের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য থাকে। ইসলামের বৈশিষ্ট্য হলো লজ্জাশীলতা। – ইবনে মাজা, বাবুল হায়া, ২/ ১৩৯৯

হজরত ইবনে ওমর রা. বলেছেন, লজ্জা এবং ঈমান একটি আরেকটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যখন এর একটি ছেড়ে দেওয়া হয়, তখন অন্যটি এমনিতেই চলে যায়। – ইবনে আবি শায়বা, ৫/২১৩

একাধিক বিয়ে নিয়ে ইসলামের বিধান
একাধিক বিয়ে নিয়ে ইসলামের বিধান

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ঈমানের ৭০টিরও বেশি শাখা রয়েছে এর মধ্য থেকে লজ্জাও ঈমানের একটি (গুরুত্বপূর্ণ) শাখা।- বুখারী, সহীহাইন, কিতাবুল ঈমান, ১/১২

অতএব, লজ্জা ও ভদ্রতার দাবি হলো, দুই স্ত্রীকে নিয়ে একরুমে না ঘুমানো। তবে কেউ একসঙ্গে একাধিক স্ত্রীকে নিয়ে ঘুমাতে চাইলে তাকে তিনটি শর্ত মানতে হবে। এই শর্ত মানতে পারলে একজন পুরুষের জন্য একাধিক স্ত্রীকে একসাথে নিয়ে ঘুমানো জায়েজ।

একাধিক বিয়ে নিয়ে ইসলামের বিধান
একাধিক বিয়ে নিয়ে ইসলামের বিধান

১. এতে সব স্ত্রীর সম্মতি থাকতে হবে। ইবনু কুদামা রহ. বলেন, ‘পুরুষের জন্য দুই স্ত্রীকে নিয়ে একসঙ্গে থাকা তাদের সম্মতি ব্যতীত জায়েয নেই। কেননা, উভয়ের মাঝে বৈরিতা ও ঈর্ষা থাকে বিধায় উভয়ের ক্ষতি হতে পারে।’ (আলমুগনী ৭/৩০০)

২. এক স্ত্রীর সামনে অন্য স্ত্রীর সতর খোলা থাকতে পারবে না। কেননা, একজন নারী অপর নারীর সতর দেখা হারাম। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘পুরুষ পুরুষের এবং নারী নারীর সতর দেখবে না। (মুসলিম ৩৩৮) আর নারীর সামনে নারীর সতর হচ্ছে, নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত।’ (হেদায়া ২/৪৪৫,হিন্দিয়া ৫/৩২৭, বাহারুর রায়েক ৯/৩৫৪)

৩. এক স্ত্রীর সামনে আরেক স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করতে পারবে না। হাসান বসরী রহ. বলেন. ‘সাহাবায়ে কেরাম ও শীর্ষ তাবিঈগণ ‘ওয়াজাস’-কে ঘৃণা করতেন। আর ওয়াজাস মানে এক স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করার সময় অপর স্ত্রী আওয়াজ শুনতে পাওয়া। আর ঘৃণা করা দ্বারা পূর্ববর্তীগণ উদ্দেশ নিতেন, হারাম মনে করা।’ (মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবাহ ৪/৩৮৮)