পিলখানা হত্যা ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে মুখ খুললেন জেনারেল মঈন
- সময় ০৫:০৭:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫
- / 15
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি, পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরের দরবার হলে যে বিদ্রোহ হয়েছিল, তা বাংলাদেশের ইতিহাসের এক নৃশংসতম অধ্যায়। মাত্র ৩৩ ঘণ্টার এই ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা, মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ৭৪ জন। সেই ভয়াবহ ঘটনার ১৫ বছর পর মুখ খুললেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) মঈন ইউ আহমেদ।
একটি ইউটিউব ভিডিওতে তিনি পিলখানা ট্র্যাজেডির নেপথ্য কাহিনী, বিদ্রোহের ঘটনা, এবং তৎকালীন সরকারের ভূমিকা নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
দরবার হলে বিদ্রোহের সূচনা
সেদিন সকাল ৯ টায় দরবার হলে বিডিআরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ বক্তব্য দিচ্ছিলেন। হঠাৎ করেই কিছু বিদ্রোহী দরবার হলে অতর্কিত হামলা চালায়। মুহূর্তেই শান্ত পরিবেশ রূপ নেয় রক্তাক্ত হত্যাযজ্ঞে। সেনা কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। বিদ্রোহীরা হত্যার পর মরদেহগুলো পিলখানার চার দেয়ালের ভেতর গণকবরে লুকিয়ে ফেলে।
এই বর্বরতার ভয়াবহতা বাইরে বুঝতে সময় লেগেছিল দুই দিন। পরদিন রাতে বিদ্রোহীরা আত্মসমর্পণ করলে পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আসে পিলখানা। ২৭ ফেব্রুয়ারি গণকবর থেকে মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ ও তার স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
সাবেক সেনাপ্রধানের ভাষ্য
জেনারেল মইন ইউ আহমেদ দাবি করেন, বিদ্রোহের ঘটনায় তিনি তদন্ত করতে চেয়েছিলেন। তবে তৎকালীন সরকার থেকে তিনি যথেষ্ট সহযোগিতা পাননি। তিনি জানান, “যেহেতু আমার ৫৭ জন অফিসারকে হত্যা করা হয়েছিল, আমি এর কারণ উদঘাটন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তদন্তে বাধা দেওয়া হয়।”
তিনি আরও বলেন, বিদ্রোহের সময় র্যাবকে দিয়ে অপারেশন চালানোর অনুমতি দেওয়া হলে প্রাণহানি কমানো সম্ভব হতো। র্যাব সদস্যরা প্রস্তুত থাকলেও পিলখানায় প্রবেশের অনুমতি পাননি।
দুই সশস্ত্র সৈনিকের রহস্য
জেনারেল মইন উল্লেখ করেন, দরবার হলে দুই সশস্ত্র সৈনিক প্রবেশ করেছিলেন। একজন তার পেছনে এসে দাঁড়ায়, অপরজন হলের বাইরে চলে যায়। এর পরপরই বাইরে থেকে গুলির শব্দ পাওয়া যায়। তিনি এই ঘটনাকে একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র হিসেবে বর্ণনা করেন।
ঘটনার নেপথ্যে রাজনীতি?
বিদ্রোহের ঘটনা নিয়ে সাবেক সেনাপ্রধানের বক্তব্যে উঠে এসেছে রাজনীতির সম্ভাব্য প্রভাব। তিনি অভিযোগ করেন, তৎকালীন সরকার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেয়নি। “আমাদের তদন্তে বারবার বাধা দেওয়া হয়েছিল। বিচার প্রক্রিয়ায়ও আমরা সহযোগিতা পাইনি,” বলেন তিনি।
আজও অমীমাংসিত
পিলখানা ট্র্যাজেডির প্রকৃত কারণ আজও অনেকের কাছে অস্পষ্ট। সাবেক সেনাপ্রধানের নতুন বক্তব্য বিষয়টি নিয়ে আবারও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তবে এ ঘটনার বিচার ও এর পেছনের ষড়যন্ত্রের সুষ্ঠু তদন্ত আজও জাতির কাছে এক প্রশ্ন হয়ে রয়ে গেছে।