৩০০ শতক জমি দখল
জমি খেকো ভাকুর্তা যুবলীগ নেতাকে গ্রেপ্তারের দাবি
- সময় ০১:২১:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫
- / 83
ঢাকার গা ঘেঁষে মোহাম্মদপুর, আদাবর বেড়িবাঁধের ওপারে তুরাগ নদী পেরিয়ে যে জনপদ; তার নাম ভাকুর্তা। এটি সাভার উপজেলার একটি ইউনিয়ন। গ্রামীন আবহ বিস্তীর্ণ ফসলি জমি দেখে বিনিয়োগের চিন্তা করে কল কারখান, শিল্প প্রতিষ্ঠান ও আবাসন কোম্পানি জমির প্রতি আগ্রহ দেখালে স্থানীয় কৃষক-শ্রমিককে প্রলোভনে ফেলার কাজটি করতেন সাভার থানার ভাকুর্তা ইউনিয়ন যুবলীগের সহ সভাপতি সাদেক হোসেন।
কেউ জমি বিক্রিতে অসম্মতি জানালে নিজেদের মধ্যে বিরোধ বাঁধিয়ে দিয়ে সাদেক নিজে সেই বিরোধ সালিশি এবং নিস্পত্তি করতেন। এভাবেই নানা অপকৌশলে ভাকুর্তায় নানা মানুষের প্রায় ৩০০ শতক জমি দখল করার অভিযোগ উঠেছে সাদেক হোসেনের বিরুদ্ধে।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দুই মামলার আসামী হয়েও আছেন বহাল তাবিয়তে। পুলিশ দেখেও না দেখার ভান করছে বলে অভিযোগ করেছেন সাদেকের অপকর্মে ক্ষতিগ্রস্থরা।
তারা জানান, ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে সাদেক ছাত্রলীগ ও যুবলীগকে যেমন টাকা দিয়েছে তেমন নিজেও দুই পয়েন্টে নিজে সরাসরি মারামারি করেছেন। এখনও সাদেককে প্রায়ই এলাকায় দেখা যায় কিন্তু প্রশাসন কেন তার বিষয়ে চুপ তার কারণ সবার কাছে অজানা।
সাদেক হোসেনের বিরুদ্ধে জাল দলিল করে প্রতারণা ও ভয়ভীতি দেখিয়ে স্থানীয়দের ৩০০ শতক জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে।
কৃষক, ব্যবসায়ী, ক্ষমতাসীন দলের কর্মী – কেউই বাদ যায়নি তার প্রতারণার খপ্পর থেকে। আছে মসজিদের জমি দখলেরও অভিযোগ। এ ব্যাপারে প্রতিকার চেয়ে কোন সুরাহা পায়নি ভুক্তভোগী পরিবার। বাংলা এ্যাফেয়ার্সের কাছে এই অভিযোগের কিছু দলিল-কাগজ ও থানায় অভিযোগের কপি হাতে এসেছে।
সেই সূত্র ধরে ভুক্তভোগী কয়েকজনের সাথে যোগাযোগ করেন এ প্রতিবেদক। তাদের একজন মিন্টু মিজি।
তিনি জানান,দশ বছর আগে সাভারের ভাকুর্তা ইউনিয়নের শ্যামপুর মৌজায় একখন্ড জমি কেনেন। হঠাৎ গত বছর, ৩০ ধারা অনুযায়ী রেকর্ড সংশোধনের নামে সেই জমি নিজের বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগ নেতা সাদেক হোসেন।
তিনি জাল দলিল দেখিয়ে, জমিতে সাইনবোর্ডও বসান বলে অভিযোগ করেন মিন্টু মিজি। স্থানীয় ভূমি অফিসে অভিযোগ করেন তিনি। কিন্তু সেখানেও ভূমি কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগ নেতা সাদেক হোসেন যোগসাজশ। জমির বৈধ মালিক হিসেবে মিন্টু মিজিকে না দেখিয়ে সাদেক হোসেনের নামে জাল দলিল হাতিয়ে নিয়েছেন সাদেক হোসেন।
সাভারের আলমনগর ভূমি অফিসে খোঁজ নিতে গেলে ভূমি কর্মকর্তা (এএসও) আঞ্জুমান আরার সংশ্লিষ্টতা পায়। সাদেক হোসেনের প্রতারণার শিকার ব্যক্তিদের অভিযোগ এই আঞ্জুমান আরাকে কোটি টাকার ওপরে ঘুষ দিয়েছেন সাদেক হোসেন।
আরেকজন অভিযোগকারী নেত্রকোণার কেন্দুয়া থানার মো. সজল। তিনি বলেন, থানার রামপুর ও সিংহেরগাঁও এলাকায় জমি ভাড়া নিয়ে ৩-৪ বছর ধরে এপেক্স এবং সনি নামে দুটি ইটখোলার ব্যবসা করে আসছিলেন সাদেক হোসেন ও তার সহযোগী শাকিল।
সজল জানান, তার মতো আরও অনেকের কাছে ইট দেয়ার নামে অগ্রীম ৪-৫ কোটি টাকা নেন অভিযুক্ত সাদেক ও শাকিল। কিন্তু ইট, কিংবা টাকা কোনটাই আর দেয়নি সাদেক ও তার সহযোগী। কাঁচা ইট ভাটাতেই ফেলে রেখে চলে আসে ঢাকায়। এ ব্যাপারে অভিযোগ জানিয়েও কোন প্রতিকার হয়নি। এ ব্যাপারে একাধিক গণমাধ্যমে খবরও হয়। তবে দলীয় ও স্থানীয় প্রভাবের জোরে দিব্যি প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছেন সাদেক।
প্রতারণার শিকার তুরাগ ব্রিকসের মালিক বাহারও। তিনি বলেন, জাল দলিল, জাল জাতীয় পরিচয় পত্র- ভুয়া ওয়ারিশ বানিয়ে তার জমি দখল করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা সাদেক। জানান বৈধ কাগজপত্র সব আছে তার কাছে। মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন সাদেকের বিরুদ্ধে।
আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ সাদেক; বাদ পড়েনি মসজিদের জমিও
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, বর্তমান ভাকুর্তা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি পদে থাকা সাদেক হোসেন একসময় ইট ভাটা শ্রমিক ছিলেন। পরে জড়ান ইট ভাটা ব্যবসার সাথেও। সময়ের ব্যবধানে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে টাকা কামিয়ে বাড়ি, গাড়িসহ বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন এই সাদেক।
ভাকুর্তা দুদু মার্কেটের কাছে তালতলা মসজিদের কিছু জমি ভুয়া ওয়ারিশ ও ভুয়া পরিচয় পত্র বানিয়ে অন্য ব্যক্তির কাছে বিক্রির অভিযোগ আছে প্রতারক সাদেকের বিরুদ্ধে। করেন। মসজিদ কমিটির একজন নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন,মসজিদ কমিটির মো. নাসির ( ঢাকা ২ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের ভাই) সহ উপজেলা চেয়ারম্যান জনাব রাজীবকে ভূয়া দলিলের বিষয়টি জানায় মসজিদ কমিটি। কিন্তু উল্টো মো. নাসিরকেই ভাইকে দেখে নেবেন বলে হুমকি দিয়েছেন সাদেক হোসেন ও তার সঙ্গীরা। নিজের জীবনের নিরাপত্তায় শঙ্কিত হয়ে স্থানীয় থানায় একটি জিডি করেছেন।
আওয়ামী লীগ নেতা সাদেক প্রতারণা করেছেন কৃষদের সাথেও। ভাকুর্তার কৃষক জনাব আলাউদ্দিন। সাধারণ এই কৃষককে ভুলিয়ে ভালিয়ে জমি নিজের করে নেন সাদেক। এখন সহায় সম্বল হারিয়ে আলাউদ্দিন পাগল প্রায়। ছেড়ে দিয়েছেন জমির পাবার আশা। তবে বিচার চান তিনিও।
অভিযোগের বিষয়ে সাদেক হোসেন জানান, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। নিজেদের মধ্যে কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। এখন ঠিক হয়ে গেছে।