ঢাকা ০৭:৪৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারতে এক দশকে লক্ষাধিক কৃষকের আত্মহত্যা

আন্তজার্তিক ডেস্ক
  • সময় ০২:৩৭:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / 32

Indian Farmer

ভারত, যা কৃষিনির্ভর দেশ হিসেবে পরিচিত, তার প্রায় ৭০% মানুষ কৃষির সাথে যুক্ত। তবে, দেশের কৃষকরা বর্তমানে এক অন্ধকার সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। প্রতি বছর হাজার হাজার কৃষক আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন, যা কৃষি ব্যবস্থার জন্য এক মারাত্মক সংকট সৃষ্টি করেছে।

কৃষকদের আত্মহত্যার কারণ

ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি)-র তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে প্রায় ১০,৩৮৯ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। গত এক দশকে এই সংখ্যা লক্ষ লক্ষ ছাড়িয়েছে। ২০০৪ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে ১০,০০০ থেকে ১২,০০০ কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। ভারতের মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, পাঞ্জাব এবং হরিয়ানা রাজ্যগুলোতে এই পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।

ঋণের বোঝা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ

কৃষকদের আত্মহত্যার পেছনে প্রধান কারণ হলো ঋণের বোঝা। অনেক কৃষক ঋণ নেওয়ার জন্য বেসরকারি মহাজন বা ঋণ প্রতিষ্ঠানের সাহায্য নেন, যা অত্যন্ত উচ্চ সুদে দেওয়া হয়। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যেমন খরা বা বন্যা, ফসলের ক্ষতি করে, যার ফলে কৃষকরা ঋণ পরিশোধ করতে পারেন না। এর ফলে তাদের জীবনে গভীর হতাশা নেমে আসে।

অন্যদিকে, কৃষকরা বাজারে তাদের ফসলের ন্যায্য দাম পান না। মধ্যস্বত্বভোগী এবং অব্যবস্থাপনার কারণে উৎপাদিত ফসলের সঠিক মূল্য পাওয়া সম্ভব হয় না।

ভারতে কৃষকদের আন্দোলন

কৃষি ব্যবস্থায় আইনি পরিবর্তন ও আন্দোলন

২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর কৃষি ব্যবস্থার উন্নতির জন্য নতুন আইন প্রণয়ন করেছিল। কিন্তু ২০২০ সালে পাস হওয়া তিনটি কৃষি আইন কৃষকদের মধ্যে ভয় এবং ক্ষোভ সৃষ্টি করে। এই আইনের বিরুদ্ধে কৃষকরা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলন করেন। কৃষকদের দাবি ছিল যে, এই আইনগুলো বেসরকারি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বার্থ রক্ষা করে, কৃষকদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে।

সরকারের উদ্যোগ ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা

কৃষকদের সমস্যার সমাধানে সরকার কিছু উদ্যোগ নিয়েছে, যেমন প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সন্মান নিধি প্রকল্প, যেখানে ছোট এবং প্রান্তিক কৃষকদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। এছাড়াও ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (MSP) বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। তবে, এসব উদ্যোগ বাস্তবে কতটা কার্যকর তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

সমস্যার সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ

কৃষকদের আত্মহত্যা রোধ করতে হলে, ঋণ পুনঃতফসিলীকরণ, সেচ ব্যবস্থা উন্নয়ন, এবং ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি, কৃষি বিপণন ব্যবস্থায় সংস্কার করা প্রয়োজন, যাতে কৃষকরা সরাসরি তাদের পণ্য বিক্রি করতে পারেন এবং তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

ভারতের কৃষির এই সংকট সমাধানে একযোগী প্রচেষ্টা এবং কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন।

শেয়ার করুন

ভারতে এক দশকে লক্ষাধিক কৃষকের আত্মহত্যা

সময় ০২:৩৭:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

ভারত, যা কৃষিনির্ভর দেশ হিসেবে পরিচিত, তার প্রায় ৭০% মানুষ কৃষির সাথে যুক্ত। তবে, দেশের কৃষকরা বর্তমানে এক অন্ধকার সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। প্রতি বছর হাজার হাজার কৃষক আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন, যা কৃষি ব্যবস্থার জন্য এক মারাত্মক সংকট সৃষ্টি করেছে।

কৃষকদের আত্মহত্যার কারণ

ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি)-র তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে প্রায় ১০,৩৮৯ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। গত এক দশকে এই সংখ্যা লক্ষ লক্ষ ছাড়িয়েছে। ২০০৪ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে ১০,০০০ থেকে ১২,০০০ কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। ভারতের মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, পাঞ্জাব এবং হরিয়ানা রাজ্যগুলোতে এই পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।

ঋণের বোঝা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ

কৃষকদের আত্মহত্যার পেছনে প্রধান কারণ হলো ঋণের বোঝা। অনেক কৃষক ঋণ নেওয়ার জন্য বেসরকারি মহাজন বা ঋণ প্রতিষ্ঠানের সাহায্য নেন, যা অত্যন্ত উচ্চ সুদে দেওয়া হয়। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যেমন খরা বা বন্যা, ফসলের ক্ষতি করে, যার ফলে কৃষকরা ঋণ পরিশোধ করতে পারেন না। এর ফলে তাদের জীবনে গভীর হতাশা নেমে আসে।

অন্যদিকে, কৃষকরা বাজারে তাদের ফসলের ন্যায্য দাম পান না। মধ্যস্বত্বভোগী এবং অব্যবস্থাপনার কারণে উৎপাদিত ফসলের সঠিক মূল্য পাওয়া সম্ভব হয় না।

ভারতে কৃষকদের আন্দোলন

কৃষি ব্যবস্থায় আইনি পরিবর্তন ও আন্দোলন

২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর কৃষি ব্যবস্থার উন্নতির জন্য নতুন আইন প্রণয়ন করেছিল। কিন্তু ২০২০ সালে পাস হওয়া তিনটি কৃষি আইন কৃষকদের মধ্যে ভয় এবং ক্ষোভ সৃষ্টি করে। এই আইনের বিরুদ্ধে কৃষকরা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলন করেন। কৃষকদের দাবি ছিল যে, এই আইনগুলো বেসরকারি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বার্থ রক্ষা করে, কৃষকদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে।

সরকারের উদ্যোগ ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা

কৃষকদের সমস্যার সমাধানে সরকার কিছু উদ্যোগ নিয়েছে, যেমন প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সন্মান নিধি প্রকল্প, যেখানে ছোট এবং প্রান্তিক কৃষকদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। এছাড়াও ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (MSP) বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। তবে, এসব উদ্যোগ বাস্তবে কতটা কার্যকর তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

সমস্যার সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ

কৃষকদের আত্মহত্যা রোধ করতে হলে, ঋণ পুনঃতফসিলীকরণ, সেচ ব্যবস্থা উন্নয়ন, এবং ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি, কৃষি বিপণন ব্যবস্থায় সংস্কার করা প্রয়োজন, যাতে কৃষকরা সরাসরি তাদের পণ্য বিক্রি করতে পারেন এবং তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

ভারতের কৃষির এই সংকট সমাধানে একযোগী প্রচেষ্টা এবং কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন।