ঢাকা ০১:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নেত্রকোনায় খরস্রোতা মগড়া নদী এখন ময়লার ভাগাড়

বিজয় চন্দ্র দাস, নেত্রকোনা
  • সময় ০২:০৯:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / 25

নেত্রকোনায় মগড়া নদী

নেত্রকোনা পৌরশহরের চারদিক দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে মগড়া নদী। এক সময়ের খরস্রোতা মগড়া নদীর সাথে পৌরবাসীর নিত্যদিনের প্রাণের সম্পর্ক। কিন্তু শহরের অগণিত স্থানে নদীর পাড়ে প্রচুর ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে দিনেরাতে। ফলে ময়লার ভাগাড়ে  পরিণত হচ্ছে শহর সংলগ্ন মগড়া নদী। দূষিত হচ্ছে নদীর পানি, দূষিত হচ্ছে নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকা। দূষিত হচ্ছে শহরের পরিবেশ।তাই মগড়া দুষণমুক্তকরণ দীর্ঘদিনের দাবি পৌরবাসীর।

সরেজমিনে দেখা গেছে, জয়নগর কালীবাড়ি এলাকা, থানার মোড় ও মালনী এলাকায় মগড়া নদীর পাড়ে ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। এতে দুর্গন্ধে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে নদীর পানি। গোসলসহ গৃহস্থালি আসবাবপত্র ধোঁয়া মোছার কাজে দূষিত পানি ব্যবহারের ফলে অনেকেই আক্রান্ত হয় ডায়রিয়া, আমাশয় ও বিভিন্ন চর্মরোগে।

নেত্রকোনা জেলা শহর মগড়া নদী দ্বারা পরিবেষ্টিত। এক সময় এ নদী খুবই খড়স্রোতা ছিল। নদী দিয়ে চলত লঞ্চ, পালতোলা নৌকা। কিন্তু কালের আবর্তে ওই নদীর পুরোনো ঐতিহ্য এখন আর নেই। নদীর পাড় দখল হয়ে গেছে। গড়ে উঠেছে অট্টালিকা। নেই আর আগের সেই স্বচ্ছ জল। পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় বসবাসরত মানুষ নদীর তীরে ময়লা-আবর্জনা ফেলছে। মগড়া যেন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।

শহরের জয়নগর কালীবাড়ির পাশে মগড়া নদীর দক্ষিণ পাড়ে একাধিক স্থানে রয়েছে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। ওই ময়লা-আবর্জনার পাশেই দোতলা, চারতলা ভবন, আবাসিক এলাকা, খাবার দোকানসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চলছে। উত্তর পাশে রয়েছে কচিকাঁচা বিদ্যানিকেতন, মিতালী সংঘ। নদীর তীরে আশপাশের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে ময়লা-আবর্জনা ফেলছে। বাসাবাড়ির ময়লা, ডাবের খোসা, পলিথিন, গরু, খাসি জবাই করার পর বর্জ্য, পচা-বাসি খাবারের উচ্ছিষ্ট সবই ফেলা হচ্ছে নদীর তীরে। মশা-মাছির জন্ম হচ্ছে। স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীকে প্রতিনিয়ত যাতায়াত করতে হয় ময়লা-আবর্জনার পাশ দিয়ে।

নদী তীর ছাড়িয়ে সড়কের ওপর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ছে ময়লা-আবর্জনা। দুর্গন্ধের হাত থেকে বাঁচার জন্য নাকেমুখে কাপড় চেপে চলাচল করতে হয়। এতে এলাকায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি হচ্ছে। দুর্গন্ধের পাশাপাশি এলাকায় নানারকম রোগজীবাণু ছড়াচ্ছে। দুর্গন্ধ থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য ময়লার স্তূপের পাশের বাসিন্দারা নিজেরা টিন দিয়ে বেড়া দিয়েছেন।

এ ছাড়া জেলা শহরের আরামবাগ এলাকায় পুরাতন জেলখানা, পুরাতন হাসপাতাল, সাতাপাই কালীবাড়ির সামনে থেকে নেত্রকোনা চক্ষু হাসপাতাল, নদীরপাড়, মালনী অগ্রণী ব্যাংকের সামনে মগড়ার তীরে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে।

জয়নগর কালীবাড়ি এলাকার তরিকুল ইসলাম বাংলা অ্যাফেয়ার্সকে বলেন, দুর্গন্ধ থেকে বাঁচার জন্য ময়লা-আবর্জনা আড়াল করার জন্য আমি ও আমার প্রতিবেশী টিন দিয়ে বেড়া দিয়েছিলাম। এরপরও মানুষ ময়লা ফেলছে। ওই ময়লার স্তূপ থেকে এলাকায় বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

জেলা শহরের ছোট বাজারের ব্যবসায়ী জয়ন্ত সাহা বলেন, নির্দিষ্ট পরিমাণ ডাস্টবিন না থাকায় মানুষ যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলছে। এতে করে এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে নানা জটিল রোগব্যাধির।

জয়নগর এলাকার বাসিন্দা জসিম উদ্দিন বলেন, নদীর পাড়ে ময়লা-আবর্জনার গন্ধে এ পথ দিয়ে চলাই দায় হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন আবর্জনার স্তূপ হয়ে পড়ে থাকায় মশা-মাছির জন্ম হচ্ছে। তাছাড়া এখান থেকে জন্ডিস, কলেরাসহ নানা জটিল রোগের জীবাণুর সৃষ্টি হচ্ছে এবং এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে।

বারসিকের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী অহিদুর রহমান বলেন, মানুষের সুস্থভাবে সুন্দর পরিবেশে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। নদীর তীরে ময়লা-আবর্জনা ফেলা বন্ধ করতে সবাই মিলে কাজ করতে হবে। তা না হলে প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাবে।

নেত্রকোনা পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ফারুক ওয়াহিদ বাংলা অ্যাফেয়ার্সকে বলেন, পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা শহরকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। এলাকাবাসীকে সচেতন হতে হবে। যত্রতত্র ময়লা না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে। সবাই সতর্ক হলে নদীর তীরবর্তী পরিবেশ দুষণমুক্ত হবে। সরকারিভাবে নদী খনন করা হলে পানি দুষণমুক্ত হবে বলেও মনে করেন তিনি।

শেয়ার করুন

নেত্রকোনায় খরস্রোতা মগড়া নদী এখন ময়লার ভাগাড়

সময় ০২:০৯:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

নেত্রকোনা পৌরশহরের চারদিক দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে মগড়া নদী। এক সময়ের খরস্রোতা মগড়া নদীর সাথে পৌরবাসীর নিত্যদিনের প্রাণের সম্পর্ক। কিন্তু শহরের অগণিত স্থানে নদীর পাড়ে প্রচুর ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে দিনেরাতে। ফলে ময়লার ভাগাড়ে  পরিণত হচ্ছে শহর সংলগ্ন মগড়া নদী। দূষিত হচ্ছে নদীর পানি, দূষিত হচ্ছে নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকা। দূষিত হচ্ছে শহরের পরিবেশ।তাই মগড়া দুষণমুক্তকরণ দীর্ঘদিনের দাবি পৌরবাসীর।

সরেজমিনে দেখা গেছে, জয়নগর কালীবাড়ি এলাকা, থানার মোড় ও মালনী এলাকায় মগড়া নদীর পাড়ে ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। এতে দুর্গন্ধে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে নদীর পানি। গোসলসহ গৃহস্থালি আসবাবপত্র ধোঁয়া মোছার কাজে দূষিত পানি ব্যবহারের ফলে অনেকেই আক্রান্ত হয় ডায়রিয়া, আমাশয় ও বিভিন্ন চর্মরোগে।

নেত্রকোনা জেলা শহর মগড়া নদী দ্বারা পরিবেষ্টিত। এক সময় এ নদী খুবই খড়স্রোতা ছিল। নদী দিয়ে চলত লঞ্চ, পালতোলা নৌকা। কিন্তু কালের আবর্তে ওই নদীর পুরোনো ঐতিহ্য এখন আর নেই। নদীর পাড় দখল হয়ে গেছে। গড়ে উঠেছে অট্টালিকা। নেই আর আগের সেই স্বচ্ছ জল। পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় বসবাসরত মানুষ নদীর তীরে ময়লা-আবর্জনা ফেলছে। মগড়া যেন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।

শহরের জয়নগর কালীবাড়ির পাশে মগড়া নদীর দক্ষিণ পাড়ে একাধিক স্থানে রয়েছে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। ওই ময়লা-আবর্জনার পাশেই দোতলা, চারতলা ভবন, আবাসিক এলাকা, খাবার দোকানসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চলছে। উত্তর পাশে রয়েছে কচিকাঁচা বিদ্যানিকেতন, মিতালী সংঘ। নদীর তীরে আশপাশের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে ময়লা-আবর্জনা ফেলছে। বাসাবাড়ির ময়লা, ডাবের খোসা, পলিথিন, গরু, খাসি জবাই করার পর বর্জ্য, পচা-বাসি খাবারের উচ্ছিষ্ট সবই ফেলা হচ্ছে নদীর তীরে। মশা-মাছির জন্ম হচ্ছে। স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীকে প্রতিনিয়ত যাতায়াত করতে হয় ময়লা-আবর্জনার পাশ দিয়ে।

নদী তীর ছাড়িয়ে সড়কের ওপর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ছে ময়লা-আবর্জনা। দুর্গন্ধের হাত থেকে বাঁচার জন্য নাকেমুখে কাপড় চেপে চলাচল করতে হয়। এতে এলাকায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি হচ্ছে। দুর্গন্ধের পাশাপাশি এলাকায় নানারকম রোগজীবাণু ছড়াচ্ছে। দুর্গন্ধ থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য ময়লার স্তূপের পাশের বাসিন্দারা নিজেরা টিন দিয়ে বেড়া দিয়েছেন।

এ ছাড়া জেলা শহরের আরামবাগ এলাকায় পুরাতন জেলখানা, পুরাতন হাসপাতাল, সাতাপাই কালীবাড়ির সামনে থেকে নেত্রকোনা চক্ষু হাসপাতাল, নদীরপাড়, মালনী অগ্রণী ব্যাংকের সামনে মগড়ার তীরে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে।

জয়নগর কালীবাড়ি এলাকার তরিকুল ইসলাম বাংলা অ্যাফেয়ার্সকে বলেন, দুর্গন্ধ থেকে বাঁচার জন্য ময়লা-আবর্জনা আড়াল করার জন্য আমি ও আমার প্রতিবেশী টিন দিয়ে বেড়া দিয়েছিলাম। এরপরও মানুষ ময়লা ফেলছে। ওই ময়লার স্তূপ থেকে এলাকায় বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

জেলা শহরের ছোট বাজারের ব্যবসায়ী জয়ন্ত সাহা বলেন, নির্দিষ্ট পরিমাণ ডাস্টবিন না থাকায় মানুষ যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলছে। এতে করে এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে নানা জটিল রোগব্যাধির।

জয়নগর এলাকার বাসিন্দা জসিম উদ্দিন বলেন, নদীর পাড়ে ময়লা-আবর্জনার গন্ধে এ পথ দিয়ে চলাই দায় হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন আবর্জনার স্তূপ হয়ে পড়ে থাকায় মশা-মাছির জন্ম হচ্ছে। তাছাড়া এখান থেকে জন্ডিস, কলেরাসহ নানা জটিল রোগের জীবাণুর সৃষ্টি হচ্ছে এবং এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে।

বারসিকের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী অহিদুর রহমান বলেন, মানুষের সুস্থভাবে সুন্দর পরিবেশে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। নদীর তীরে ময়লা-আবর্জনা ফেলা বন্ধ করতে সবাই মিলে কাজ করতে হবে। তা না হলে প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাবে।

নেত্রকোনা পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ফারুক ওয়াহিদ বাংলা অ্যাফেয়ার্সকে বলেন, পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা শহরকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। এলাকাবাসীকে সচেতন হতে হবে। যত্রতত্র ময়লা না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে। সবাই সতর্ক হলে নদীর তীরবর্তী পরিবেশ দুষণমুক্ত হবে। সরকারিভাবে নদী খনন করা হলে পানি দুষণমুক্ত হবে বলেও মনে করেন তিনি।