ঢাকা ০১:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৫ কোটি টাকার প্রকল্প গেল শুধু আ. লীগ নেতাকর্মীর বাড়ি

শেখ ফজলে রাব্বি, জামালপুর
  • সময় ১২:১৫:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / 64

৫ কোটি টাকার প্রকল্প আ.লীগ নেতাকর্মীদের বাড়িতে

কথা ছিল দলমত নির্বিশেষে উপজেলার স্বর্বস্তরের জনগণের ঘরে ঘরে বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানি পৌঁছে দেওয়ার। কিন্তু, তা না করে মন্ত্রীকে খুশী রাখতে শুধু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে রাষ্ট্রের সে সুবিধা পৌঁছে দিয়েছেন, গত সরকারের পলাতক মন্ত্রী, ফরিদুল হক খান দুলালের তলপিবাহক, ইসলামপুর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের প্রকৌশলী মোহাম্মদ কামরুজ্জামান।

জানা যায়, ২০২২/২৩ অর্থবছরে “সমগ্রদেশ গ্রামীণ পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় সাবমার্সেবল পাম্প ওভারেহেড গভীর নলকূপ স্থাপন ” নামে একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নিয়েছিল বিগত সরকার। এ পাইলট প্রকল্পে দেশের যেকটি জেলা অন্তর্ভুক্ত ছিল জামালপুর তাদের অন্যতম।

এ প্রকল্পের আওতায় ইসলামপুর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ৪৭টি গভীর নলকূপ বরাদ্দ পায়। যার প্রতিটির বরাদ্দ ব্যয় ১০ লাখ টাকা। নিয়মানুযায়ী ১টি গভীর নলকূপ থেকে আশপাশের ১০টি বাড়িতে এর সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল ।

কিন্তু, উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের বেশিরভাগ ইউনিয়ন সরেজমিনে গিয়ে দেখা গিয়েছে ব্যতিক্রম চিত্র।

প্রকল্পটির গভীর নলকূপগুলো শুধু আওয়ামী লীগ ও তাদের নেতাকর্মীদের বাড়িতে স্থাপন করা হয়েছে। যাদের বাড়িতে আগে থেকেই সাবমার্সেবল পাম্পসহ সুপেয় পানির আধুনিক ব্যবস্থা রয়েছে। তাদের মধ্যে আছেন, ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক. এড. আব্দুস সালাম, সহ-সভাপতি জিয়াউল সরকার , আওয়ামী নেতা ও পাথর্শ্বী ইউপি চেয়ারম্যান, ইফতেখার হোসেন বাবুল, সাপধরী ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আলম, চরপুটিমারি ইউপি সামছুজ্জামান সুরুজ মাস্টার, গোয়ালের চর ইউপি চেয়ারম্যান রহিম বাদশা, কাঠমার আওয়ামী নেতা, কেরামত মাস্টার, ব্রহ্মোত্তরের আওয়ামী নেতা, দুদু মিয়া, নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের যুবলীগ নেতা সাইদুর রহমান, পশ্চিম বলিয়াদহের ফারুক মেম্বার, চরগোয়ালিনীর রাজ্জাক মেম্বার, আওয়ামী নেতা, জসিম উদ্দিন, পলাবান্ধার আওয়ামী নেতা শাহিনুর মাস্টার ও আক্রাম মাস্টার, চরপুটিমারিতে মন্ত্রীর মটর সাইকেল ড্রাইভার, নুরুল আমিন, গাইবান্ধার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, আনোয়ার হোসেন, গোয়ালেরচর ইউনিয়ন আওয়ামী নেতা তোফাজ্জল হোসেন, আনোয়ার হোসেনের নাম উল্লেখযোগ্য।

এইসব নেতাকর্মীদের বাড়িতে নলকূপ স্থাপন করে একদিকে যেমন অসম বন্টনের মাধ্যমে দলীয়করণ হয়েছে অপরদিকে সরকারি বিশাল অর্থের অপচয় হয়েছে। নেতারা ১০ বাড়ির সংযোগ একবাড়ির ১০ বাড়িতে না দিয়ে নিজেরা একাই ভোগ করছেন। সংযোগ দিয়েছেন ঘরের সামনে, পিছনে, ক্ষেতে, পালানে, এখানে সেখানে, প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে। পক্ষান্তরে চরাঞ্চলের যেসব মানুষ আর্থিক সামর্থ্যহীনতায় গভীর নলকূপ স্থাপন করতে না পারায় আযরন ও আর্সেনিকযুক্ত দূষিত পানি পান করছেন তাদেরকে রাষ্ট্রীয় এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

এছাড়া এ গভীর নলকূপ স্থাপন ও নির্মাণ কাজ অত্যান্ত অবহেলা ও দায়সারাভাবে করা হয়েছে। ৪ ফুট সাড়ে ৪ ফুটের প্লাটফর্ম কোথাও কোথাও করা হয়েছে ২ ফুট দেড় ফুট করে। বোরিং কাজে গাফিলতির কারণে এর থেকে উদগত পানি পান করা যায় না, গোসল করলে মাথার চুল নষ্ট হয়ে যায়, কাপড়চোপড় ধুইলে আরও ময়লা হয়ে যায়, পানিতে ময়লা ও দুর্গন্ধ বলে জানিয়েছেন, গোয়ালেরচরের পারভেজ, পলাবান্ধার শাহিনুর মাস্টার ও আক্রাম মাস্টার এবং সুন্দর আলী, গোয়ালেরচরের আনোয়ার হোসেন, ইসলামপুরের শাহ আলমসহ আরও অনেকের পরিবার ও তাদের প্রতিবেশীরা।

এ ব্যাপারে সাবেক মন্ত্রীর আত্মীয়, সিরাজাবাদের আমির হোসেন বলেন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে আমার বাড়িতে যে গভীর নলকূপ স্থাপন হয়েছে। সে নলকূপ থেকে ১০টি সংযোগ করে দেওয়া হয়েছে। যার ৪টি আমার ৪ ছেলে ব্যবহার করবে, ৪টি ছেলের বউরা ও ২টা আমরা বুড়া-বুড়ি ব্যবহার করব!

অপরদিকে বেনুয়ারচরের নুরুল আমিনের প্রতিবেশীরা বলেন, নুরুল আমিন আওয়ামী লীগ করে বলে তার বাড়িতে আগে থেকেই সাবমার্স পাম্প ও সুপেয় পানির আধুনিক ব্যবস্থা থাকা সত্বেও তার বাড়িতই ১০টি সংযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, আমরা চেয়েও দুই একটি সংযোগ পাইনি!

অভিযোগ আছে যে, গত আওয়ামী সরকারের ইসলামপুর আসনের এমপি পরবর্তীতে ধর্মমন্ত্রী, দুর্নীতির দায়ে পলাতক, ফরিদুল হক খান দুলাল ইসলামপুরের যেসকল দুর্নীতিবাজ অফিসারের সহায়তায় দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও দলীয়করণ করেছেন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের প্রকৌশলী কামরুজ্জামান তাদের একজন। তিনি একদিকে যেমন সরকারি অর্থায়ণে দলের নেতাকর্মীদের প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়তা করেছেন অপর মন্ত্রীর মদদে ও নাম ভাঙ্গিয়ে একই উপজেলায় দীর্ঘদিন চাকুরী করে দুর্নীতি অনিয়মের মাধ্যমে অস্বাভাবিক সম্পদের মালিক হয়েছেন।

তবে, ইসলামপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের উপজেলা প্রকৌশলী, মোহাম্মদ কামরুজ্জামান তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, গভীর নলকূপ বরাদ্দের তালিকা করেছেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আমার কিছু করার ছিল না।

উল্লেখ্য যে, উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, বিগত তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে ইসলামপুরে যোগদান করেন। আজবধি তিনি সেখানেই কর্মরত আছেন।

শেয়ার করুন

৫ কোটি টাকার প্রকল্প গেল শুধু আ. লীগ নেতাকর্মীর বাড়ি

সময় ১২:১৫:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

কথা ছিল দলমত নির্বিশেষে উপজেলার স্বর্বস্তরের জনগণের ঘরে ঘরে বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানি পৌঁছে দেওয়ার। কিন্তু, তা না করে মন্ত্রীকে খুশী রাখতে শুধু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে রাষ্ট্রের সে সুবিধা পৌঁছে দিয়েছেন, গত সরকারের পলাতক মন্ত্রী, ফরিদুল হক খান দুলালের তলপিবাহক, ইসলামপুর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের প্রকৌশলী মোহাম্মদ কামরুজ্জামান।

জানা যায়, ২০২২/২৩ অর্থবছরে “সমগ্রদেশ গ্রামীণ পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় সাবমার্সেবল পাম্প ওভারেহেড গভীর নলকূপ স্থাপন ” নামে একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নিয়েছিল বিগত সরকার। এ পাইলট প্রকল্পে দেশের যেকটি জেলা অন্তর্ভুক্ত ছিল জামালপুর তাদের অন্যতম।

এ প্রকল্পের আওতায় ইসলামপুর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ৪৭টি গভীর নলকূপ বরাদ্দ পায়। যার প্রতিটির বরাদ্দ ব্যয় ১০ লাখ টাকা। নিয়মানুযায়ী ১টি গভীর নলকূপ থেকে আশপাশের ১০টি বাড়িতে এর সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল ।

কিন্তু, উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের বেশিরভাগ ইউনিয়ন সরেজমিনে গিয়ে দেখা গিয়েছে ব্যতিক্রম চিত্র।

প্রকল্পটির গভীর নলকূপগুলো শুধু আওয়ামী লীগ ও তাদের নেতাকর্মীদের বাড়িতে স্থাপন করা হয়েছে। যাদের বাড়িতে আগে থেকেই সাবমার্সেবল পাম্পসহ সুপেয় পানির আধুনিক ব্যবস্থা রয়েছে। তাদের মধ্যে আছেন, ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক. এড. আব্দুস সালাম, সহ-সভাপতি জিয়াউল সরকার , আওয়ামী নেতা ও পাথর্শ্বী ইউপি চেয়ারম্যান, ইফতেখার হোসেন বাবুল, সাপধরী ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আলম, চরপুটিমারি ইউপি সামছুজ্জামান সুরুজ মাস্টার, গোয়ালের চর ইউপি চেয়ারম্যান রহিম বাদশা, কাঠমার আওয়ামী নেতা, কেরামত মাস্টার, ব্রহ্মোত্তরের আওয়ামী নেতা, দুদু মিয়া, নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের যুবলীগ নেতা সাইদুর রহমান, পশ্চিম বলিয়াদহের ফারুক মেম্বার, চরগোয়ালিনীর রাজ্জাক মেম্বার, আওয়ামী নেতা, জসিম উদ্দিন, পলাবান্ধার আওয়ামী নেতা শাহিনুর মাস্টার ও আক্রাম মাস্টার, চরপুটিমারিতে মন্ত্রীর মটর সাইকেল ড্রাইভার, নুরুল আমিন, গাইবান্ধার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, আনোয়ার হোসেন, গোয়ালেরচর ইউনিয়ন আওয়ামী নেতা তোফাজ্জল হোসেন, আনোয়ার হোসেনের নাম উল্লেখযোগ্য।

এইসব নেতাকর্মীদের বাড়িতে নলকূপ স্থাপন করে একদিকে যেমন অসম বন্টনের মাধ্যমে দলীয়করণ হয়েছে অপরদিকে সরকারি বিশাল অর্থের অপচয় হয়েছে। নেতারা ১০ বাড়ির সংযোগ একবাড়ির ১০ বাড়িতে না দিয়ে নিজেরা একাই ভোগ করছেন। সংযোগ দিয়েছেন ঘরের সামনে, পিছনে, ক্ষেতে, পালানে, এখানে সেখানে, প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে। পক্ষান্তরে চরাঞ্চলের যেসব মানুষ আর্থিক সামর্থ্যহীনতায় গভীর নলকূপ স্থাপন করতে না পারায় আযরন ও আর্সেনিকযুক্ত দূষিত পানি পান করছেন তাদেরকে রাষ্ট্রীয় এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

এছাড়া এ গভীর নলকূপ স্থাপন ও নির্মাণ কাজ অত্যান্ত অবহেলা ও দায়সারাভাবে করা হয়েছে। ৪ ফুট সাড়ে ৪ ফুটের প্লাটফর্ম কোথাও কোথাও করা হয়েছে ২ ফুট দেড় ফুট করে। বোরিং কাজে গাফিলতির কারণে এর থেকে উদগত পানি পান করা যায় না, গোসল করলে মাথার চুল নষ্ট হয়ে যায়, কাপড়চোপড় ধুইলে আরও ময়লা হয়ে যায়, পানিতে ময়লা ও দুর্গন্ধ বলে জানিয়েছেন, গোয়ালেরচরের পারভেজ, পলাবান্ধার শাহিনুর মাস্টার ও আক্রাম মাস্টার এবং সুন্দর আলী, গোয়ালেরচরের আনোয়ার হোসেন, ইসলামপুরের শাহ আলমসহ আরও অনেকের পরিবার ও তাদের প্রতিবেশীরা।

এ ব্যাপারে সাবেক মন্ত্রীর আত্মীয়, সিরাজাবাদের আমির হোসেন বলেন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে আমার বাড়িতে যে গভীর নলকূপ স্থাপন হয়েছে। সে নলকূপ থেকে ১০টি সংযোগ করে দেওয়া হয়েছে। যার ৪টি আমার ৪ ছেলে ব্যবহার করবে, ৪টি ছেলের বউরা ও ২টা আমরা বুড়া-বুড়ি ব্যবহার করব!

অপরদিকে বেনুয়ারচরের নুরুল আমিনের প্রতিবেশীরা বলেন, নুরুল আমিন আওয়ামী লীগ করে বলে তার বাড়িতে আগে থেকেই সাবমার্স পাম্প ও সুপেয় পানির আধুনিক ব্যবস্থা থাকা সত্বেও তার বাড়িতই ১০টি সংযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, আমরা চেয়েও দুই একটি সংযোগ পাইনি!

অভিযোগ আছে যে, গত আওয়ামী সরকারের ইসলামপুর আসনের এমপি পরবর্তীতে ধর্মমন্ত্রী, দুর্নীতির দায়ে পলাতক, ফরিদুল হক খান দুলাল ইসলামপুরের যেসকল দুর্নীতিবাজ অফিসারের সহায়তায় দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও দলীয়করণ করেছেন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের প্রকৌশলী কামরুজ্জামান তাদের একজন। তিনি একদিকে যেমন সরকারি অর্থায়ণে দলের নেতাকর্মীদের প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়তা করেছেন অপর মন্ত্রীর মদদে ও নাম ভাঙ্গিয়ে একই উপজেলায় দীর্ঘদিন চাকুরী করে দুর্নীতি অনিয়মের মাধ্যমে অস্বাভাবিক সম্পদের মালিক হয়েছেন।

তবে, ইসলামপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের উপজেলা প্রকৌশলী, মোহাম্মদ কামরুজ্জামান তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, গভীর নলকূপ বরাদ্দের তালিকা করেছেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আমার কিছু করার ছিল না।

উল্লেখ্য যে, উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, বিগত তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে ইসলামপুরে যোগদান করেন। আজবধি তিনি সেখানেই কর্মরত আছেন।