ভারত কেন এতো ড্রোন কিনছে?
- সময় ১১:৩৬:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 17
বিশ্বে সামরিক প্রতিযোগিতা যখন প্রযুক্তির দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন ভারতও নিজেকে শক্তিশালী করার পথে নতুন এক মাইলফলক স্থাপন করেছে। ৫০ হাজার কোটি টাকার বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৩১টি অত্যাধুনিক সামরিক ড্রোন কিনছে।
MQ-9B ড্রোন, যা ‘SeaGuardian’ নামেও পরিচিত, বিশ্বের অন্যতম উন্নত ও কার্যকর ড্রোন। এটি ৫০ হাজার ফুট উচ্চতায় উড়ে একটানা ৩৬ ঘণ্টা পর্যন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করতে সক্ষম। এটি ঘণ্টায় প্রায় ৪০০ কিলোমিটার গতিতে চলতে সক্ষম। রয়েছে ১.৭শ’ কেজি পর্যন্ত অস্ত্র এবং সেন্সর বহন করতে পারে।
গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশন থেকে সরাসরি পাইলট এই ড্রোনটি পরিচালনা করে। এটি দূর থেকে ম্যানুয়ালি চালানো হয়। প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে এটি নির্ধারিত রুট বা মিশন সম্পন্ন করতে পারে। মিশনের সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে লক্ষ্য শনাক্ত ও পর্যবেক্ষণ করতে পারে। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়, ফলে এটি দূরবর্তী এলাকায়ও কার্যকর।
এই ড্রোন উন্নত ইলেকট্রো-অপটিক্যাল এবং ইনফ্রারেড সেন্সরের মাধ্যমে দিন ও রাতে সমান দক্ষতায় পর্যবেক্ষণ করতে পারে। রয়েছে সশস্ত্র ক্ষমতাও। হেলফায়ার মিসাইল এবং গাইডেড বোমা বহন করে নির্ভুল হামলা চালানোর ক্ষমতা রয়েছে এই ড্রোনের। শুধু তাই না; স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দূরবর্তী এলাকায় কার্যক্রম পরিচালনায়ও দক্ষ।
ভারতের MQ-9B ড্রোন কেনার মূল কারণগুলো হলো চীন ও পাকিস্তানের মতো প্রতিবেশীদের কৌশলগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা। বিশেষত ভারত-চীন সীমান্তের লাদাখ অঞ্চলে এবং পাকিস্তানের সঙ্গে কাশ্মীর সীমান্তে নজরদারির জন্য এটি অত্যন্ত কার্যকর।
এছাড়া বঙ্গোপসাগরে চীনের নৌবাহিনীর ক্রমবর্ধমান তৎপরতা নজরদারি এবং ভারত মহাসাগরে সামুদ্রিক রুট সুরক্ষিত রাখা। সন্ত্রাসীদের গোপন ঘাঁটি ধ্বংস এবং সীমান্তে অনুপ্রবেশ রোধেও এটি ব্যবহার করা হবে।
এর আগে ভারত মূলত ইসরায়েলের তৈরি Heron এবং Searcher ড্রোন ব্যবহার করত ভারত। তবে এগুলোর কার্যক্ষমতা ছিল সীমিত। MQ-9B ড্রোন সেই সীমাবদ্ধতাগুলো দূর করবে।
২০২০ সালে, লাদাখ সীমান্তে চীনের সঙ্গে উত্তেজনার সময় ভারত যুক্তরাষ্ট্র থেকে MQ- 9B ড্রোন লিজ নিয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই এবার পুরোপুরি মালিকানার অধীনে এই উন্নত ড্রোনগুলো কেনা হলো।
সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, MQ-9B ড্রোনের ব্যবহার অনেক বৈচিত্র্যময়। এটি সামরিক বাহিনীর প্রতিটি শাখার জন্য নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে।
শত্রুদের বাঙ্কার এবং সন্ত্রাসীদের ঘাঁটিতে নির্ভুল আক্রমণ। সীমান্তের প্রতিটি পদক্ষেপ নজরদারি। সামুদ্রিক জলদস্যুদের তৎপরতা বন্ধ এবং চীনের নৌবাহিনীর উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ। এমনকি বন্যা বা ভূমিকম্পের মতো পরিস্থিতিতে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনায় এটি কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
ভারত বা এশিয়ার আবহাওয়া অনুযায়ী ড্রোনগুলো তৈরি করা হচ্ছে। এটি পরিচালনার জন্য অপারেটরদের প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। চুক্তি অনুযায়ী, ড্রোনগুলোর প্রথম ব্যাচ ২০২৫ সালের মধ্যেই ভারতের হাতে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
এর মধ্যে ১৫টি ড্রোন ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য, ছয়টি বায়ুসেনা বা বিমানবাহিনীর জন্য এবং ১০টি স্থলবাহিনীর জন্য বরাদ্দ থাকবে।