ঢাকা ০৪:০৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নাবিক সনদের নামে গিয়াসউদ্দীনের কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য

আব্দুস সালাম মিতুল
  • সময় ০১:৫০:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / 76

গোপালগঞ্জের গিয়াসউদ্দীন

সমুদ্রগামী আন্তর্জাতিক জাহাজ পরিচালনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ‘সিডিসি’ বা ‘নাবিক সনদ’ নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কয়েকটি ধাপে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও প্রশিক্ষণের পর এই সনদ দেয়ার কথা থাকলেও; তা মিলছে অর্থের বিনিময়ে। দুর্নীতির অভিযোগ দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা, নৌপরিবহন অধিদপ্তরের চীফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার (চলতি দায়িত্ব) ক্যাপ্টেন মো: গিয়াসউদ্দীন আহমেদের বিরুদ্ধে।

নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিডিসি প্রদানের জন্য একটি নীতিমালা রয়েছে। অনান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার মতোই রয়েছে এর নানা শর্ত। সেখানে স্পষ্ট করে বলা আছে কিভাবে এবং কারা কোন যোগ্যতায় এই সনদ পাবেন। কিন্তু সেই নীতিমালার ৪ ও ৮ নাম্বার অনুচ্ছেদ ভঙ্গ করে অনাবাসীক প্রি-সী স্পেশাল রেটিং কোর্স নামে একটি নতুন কোর্স চালু করে। যেটি নৌপরিবহন অধিদপ্তরের অনুমোদিত কোন কোর্স না।

বিশেষ এই কোর্স চালুর ক্ষেত্রে যৌক্তিকতা হিসেবে বলা হয়, এই ২০০ জন বিভিন্ন সময়ে দেশী ও বিদেশী বিভিন্ন জাহাজে কর্মরত ছিলেন। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে এই কোর্স চালু করা হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, আদতে কেউ কোন আবেদন করেননি। মূলত অর্থ উপার্জনের বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে ক্যাপ্টেন গিয়াসসহ কয়েকজন নিজেরাই এই ভূয়া আবেদন তৈরি করেছেন। যেখানে আবেদনের কোথাও ওই ব্যক্তির পিতা, মাতার পরিচয়, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর এবং মোবাইল নম্বরের কোন কিছুই উল্লেখ ছিলো না।

নাম পরিচয়বিহীন এই আবেদনটি ক্যাপ্টেন মো. গিয়াসউদ্দিন অবিশ্বাস্য দ্রুততায় অনুমোদন করিয়ে নেয় এবং অনুমোদনের কপি দেখিয়ে তার দালাল চক্রের মাধ্যমে জনপ্রতি ৭ লাখ টাকা রেট ধার্য করে লোকজন জোগাড় করে।

দালাল চক্র প্রথমে ৮৮ জন এবং পরবর্তীতে ১১২ জনকে জোগাড় করতে পারার সাথে সাথে দ্রুততার সাথে নৌপরিবহন অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন লাভ করে।

সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে এই ভুয়া দুইশত জনের আবেদন যাচাই বাছাই করার জন্য নৌপরিবহন অধিদপ্তর থেকে সি এন এস ক্যাপ্টেন গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, পরীক্ষক ইঞ্জিনিয়ার আবুল বাশার ও কোঅর্ডিনেটর মিথুন কুমার চাকিকে দিয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করলেও প্রক্রিয়াটি এতটাই ত্রুটিপূর্ণ থাকায় বাকি দু’জন রিপোর্টে স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানায়। পরবর্তীতে সিএনএস ক্যাপ্টেন গিয়াসউদ্দিন আহমেদ একাই রিপোর্ট প্রদান করেন, এই দুইশত জনের জন্য সুপারিশ প্রদান করে।

একই জাতীয় অপর একটি আবেদনকারীর নাম বিহীন অপর একটি আবেদনপত্রের সন্ধান পাওয়া গেছে যেখানে ২০৫ জনের পক্ষে সিডিসি প্রাপ্তির জন্য আবেদন করা হয়েছে। দ্বিতীয় স্পেশাল ব্যাচের আশ্বাস দিয়ে দালাল চক্র ইতোমধ্যে আনুমানিক ১০ কোটি টাকা পকেটে নিয়েছেন।

প্রথম কোর্সের মাধ্যমে যে ২০০ জন প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করা হয়; তাদের অধিকাংশের সিডিসি কোর্সে ভর্তি হওয়ার মতো শিক্ষাগত, বয়স কিংবা অনান্য যোগ্যতা ছিলো না।

অভিযোগ রয়েছে, প্রত্যক ব্যক্তির কাছ থেকে ৭ লাখ টাকা করে প্রায় ১৪ কোটি টাকা ঘুষ নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে দুদককে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি এম ডি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেন এর দ্বেত বেঞ্চ থেকে এই আদেশ দিয়েছেন।

নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর
নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর

সমুদ্রগামী জাহাজের নাবিক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের চীফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন মো. গিয়াসউদ্দিন, তার একান্ত সহযোগী চট্টগ্রাম সরকারি শিপিং অফিসের শিপিং মাষ্টার জাকির হোসেনর বিরুদ্ধে মামলা করেন। হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করে যার নম্বর ৪৭৭/২০২৪ ইং।

মামলায় ঘটনায় নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, নৌ সচিব, নৌ প্রতিমন্ত্রী ও দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানকে তদন্ত করে এর প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। কিন্ত কর্তৃপক্ষ তদন্তের উদ্যোগ না নিয়ে উল্টো মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম সিডিসিকে বাসায় লোক পাঠিয়ে নানাভাবে ভয় ভীতি প্রদর্শন করা হয়।

মন্ত্রণালয়ে পাঠানো রিটের কার্যপত্রে বলা হয়, সরকারি এবং সরকার অনুমোদিত বেসরকারী মেরিটাইম প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান থেকে রেটিং কোর্স উত্তীর্ণ কয়েক হাজার নাবিক চাকরি পাচ্ছে না। ক্যাপ্টেন মো. গিয়াসউদ্দিন নৌপরিবহন অধিদপ্তরে চীফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার পদে যোগদানের পর দুর্নীতিবাজ শিপিং মাস্টার জাকির হোসেনকে সাথে নিয়ে নীতিমালা পাশ কাটিয়ে জনপ্রতি ৮ লাখ টাকা নিয়ে ১২৭ জনকে অবৈধ পন্থায় আরামবাগ প্রেসে ছাপানো নকল পানামা সিডিসি’র অনুকুলে বাংলাদেশি সিডিসি প্রদান করে প্রায় ১০ কোটি টাকা দুর্নীতির আয় করে। এসব ভুয়া পানামা সিডিসি প্রাপ্তরা বিভিন্ন শিপিং এজেন্টকে টাকা দিয়ে জাহাজে উঠার পর ইউরোপ আমেরিকার বিভিন্ন বন্দরে পালিয়ে যায়।

গত ২১ ডিসেম্বর নৌ আদালত পালিয়ে যাওয়া এমন ১৯ জন বাংলাদেশী নাবিকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।

নাবিকরা পালিয়ে যাওয়ার কারণে জাহাজ মালিকদের কয়েক মিলিয়ন ডলার জরিমানা দিতে হয়েছে ও জাহাজ মালিকরা তাদের জাহাজে বাংলাদেশি নাবিক নেওয়া নিষিদ্ধ করে। কিছু নাবিক জাহাজে চাকুরি করলেও তাদের কাজের মান খারাপ হওয়ায় জাহাজ মালিকরা পরবর্তীতে বাংলাদেশি নাবিক নিষিদ্ধ করে।

এজন্য সরকারি ও অনুমোদনপ্রাপ্ত বেসরকারি মেরিটাইম প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান থেকে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সুযোগ পেয়ে ও প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করে সিডিসি প্রাপ্ত যোগ্যরা বিদেশি পতাকাবাহী জাহাজে চাকুরীর সুযোগ হারাচ্ছে ও প্রতিবছর প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক হারানোর সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

ক্যাপ্টেন গিয়াসউদ্দীন পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলামের বাল্যবন্ধু, গণভবনের পিয়ন জাহাঙ্গীর, তৎকালীন সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী কর্নেল ফারুক খানের আত্মীয়তায় দুহাতে গড়েছেন সম্পদ।

অভিযোগ রয়েছে, সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান ও মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শেখর, নৌ প্রতি মন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও সাবেক নৌ সচিব বহির্গমণের জন্য প্রদেয় সিডিসি স্পেশাল ব্যাচের প্রশিক্ষণার্থীদের থেকে অগ্রিম ৫ লাখ টাকা জনপ্রতি হিসেবে ১০০ কোটি টাকা লোপাট করেছিল এ চক্র।

এছাড়াও অভ্যন্তরীণ কোস্টাল, ফিশারিজ ও বিদেশগামী জাহাজের বিভিন্ন গ্রেডে চাকুরীরত মাস্টার, নাবিকদের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করে লাখ লাখ উপার্জনেরও অভিযোগ রয়েছে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের দপ্তরে এসব বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন জনৈক ইফতেখার আহমেদ নামে এক ভুক্তভোগী।

অভিযোগের বিষয়ে গিয়াসউদ্দীন আহমেদের সাথে কথা বলতে যোগাযোগ করলেও কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

শেয়ার করুন

নাবিক সনদের নামে গিয়াসউদ্দীনের কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য

সময় ০১:৫০:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

সমুদ্রগামী আন্তর্জাতিক জাহাজ পরিচালনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ‘সিডিসি’ বা ‘নাবিক সনদ’ নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কয়েকটি ধাপে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও প্রশিক্ষণের পর এই সনদ দেয়ার কথা থাকলেও; তা মিলছে অর্থের বিনিময়ে। দুর্নীতির অভিযোগ দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা, নৌপরিবহন অধিদপ্তরের চীফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার (চলতি দায়িত্ব) ক্যাপ্টেন মো: গিয়াসউদ্দীন আহমেদের বিরুদ্ধে।

নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিডিসি প্রদানের জন্য একটি নীতিমালা রয়েছে। অনান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার মতোই রয়েছে এর নানা শর্ত। সেখানে স্পষ্ট করে বলা আছে কিভাবে এবং কারা কোন যোগ্যতায় এই সনদ পাবেন। কিন্তু সেই নীতিমালার ৪ ও ৮ নাম্বার অনুচ্ছেদ ভঙ্গ করে অনাবাসীক প্রি-সী স্পেশাল রেটিং কোর্স নামে একটি নতুন কোর্স চালু করে। যেটি নৌপরিবহন অধিদপ্তরের অনুমোদিত কোন কোর্স না।

বিশেষ এই কোর্স চালুর ক্ষেত্রে যৌক্তিকতা হিসেবে বলা হয়, এই ২০০ জন বিভিন্ন সময়ে দেশী ও বিদেশী বিভিন্ন জাহাজে কর্মরত ছিলেন। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে এই কোর্স চালু করা হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, আদতে কেউ কোন আবেদন করেননি। মূলত অর্থ উপার্জনের বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে ক্যাপ্টেন গিয়াসসহ কয়েকজন নিজেরাই এই ভূয়া আবেদন তৈরি করেছেন। যেখানে আবেদনের কোথাও ওই ব্যক্তির পিতা, মাতার পরিচয়, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর এবং মোবাইল নম্বরের কোন কিছুই উল্লেখ ছিলো না।

নাম পরিচয়বিহীন এই আবেদনটি ক্যাপ্টেন মো. গিয়াসউদ্দিন অবিশ্বাস্য দ্রুততায় অনুমোদন করিয়ে নেয় এবং অনুমোদনের কপি দেখিয়ে তার দালাল চক্রের মাধ্যমে জনপ্রতি ৭ লাখ টাকা রেট ধার্য করে লোকজন জোগাড় করে।

দালাল চক্র প্রথমে ৮৮ জন এবং পরবর্তীতে ১১২ জনকে জোগাড় করতে পারার সাথে সাথে দ্রুততার সাথে নৌপরিবহন অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন লাভ করে।

সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে এই ভুয়া দুইশত জনের আবেদন যাচাই বাছাই করার জন্য নৌপরিবহন অধিদপ্তর থেকে সি এন এস ক্যাপ্টেন গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, পরীক্ষক ইঞ্জিনিয়ার আবুল বাশার ও কোঅর্ডিনেটর মিথুন কুমার চাকিকে দিয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করলেও প্রক্রিয়াটি এতটাই ত্রুটিপূর্ণ থাকায় বাকি দু’জন রিপোর্টে স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানায়। পরবর্তীতে সিএনএস ক্যাপ্টেন গিয়াসউদ্দিন আহমেদ একাই রিপোর্ট প্রদান করেন, এই দুইশত জনের জন্য সুপারিশ প্রদান করে।

একই জাতীয় অপর একটি আবেদনকারীর নাম বিহীন অপর একটি আবেদনপত্রের সন্ধান পাওয়া গেছে যেখানে ২০৫ জনের পক্ষে সিডিসি প্রাপ্তির জন্য আবেদন করা হয়েছে। দ্বিতীয় স্পেশাল ব্যাচের আশ্বাস দিয়ে দালাল চক্র ইতোমধ্যে আনুমানিক ১০ কোটি টাকা পকেটে নিয়েছেন।

প্রথম কোর্সের মাধ্যমে যে ২০০ জন প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করা হয়; তাদের অধিকাংশের সিডিসি কোর্সে ভর্তি হওয়ার মতো শিক্ষাগত, বয়স কিংবা অনান্য যোগ্যতা ছিলো না।

অভিযোগ রয়েছে, প্রত্যক ব্যক্তির কাছ থেকে ৭ লাখ টাকা করে প্রায় ১৪ কোটি টাকা ঘুষ নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে দুদককে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি এম ডি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেন এর দ্বেত বেঞ্চ থেকে এই আদেশ দিয়েছেন।

নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর
নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর

সমুদ্রগামী জাহাজের নাবিক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের চীফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন মো. গিয়াসউদ্দিন, তার একান্ত সহযোগী চট্টগ্রাম সরকারি শিপিং অফিসের শিপিং মাষ্টার জাকির হোসেনর বিরুদ্ধে মামলা করেন। হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করে যার নম্বর ৪৭৭/২০২৪ ইং।

মামলায় ঘটনায় নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, নৌ সচিব, নৌ প্রতিমন্ত্রী ও দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানকে তদন্ত করে এর প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। কিন্ত কর্তৃপক্ষ তদন্তের উদ্যোগ না নিয়ে উল্টো মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম সিডিসিকে বাসায় লোক পাঠিয়ে নানাভাবে ভয় ভীতি প্রদর্শন করা হয়।

মন্ত্রণালয়ে পাঠানো রিটের কার্যপত্রে বলা হয়, সরকারি এবং সরকার অনুমোদিত বেসরকারী মেরিটাইম প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান থেকে রেটিং কোর্স উত্তীর্ণ কয়েক হাজার নাবিক চাকরি পাচ্ছে না। ক্যাপ্টেন মো. গিয়াসউদ্দিন নৌপরিবহন অধিদপ্তরে চীফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার পদে যোগদানের পর দুর্নীতিবাজ শিপিং মাস্টার জাকির হোসেনকে সাথে নিয়ে নীতিমালা পাশ কাটিয়ে জনপ্রতি ৮ লাখ টাকা নিয়ে ১২৭ জনকে অবৈধ পন্থায় আরামবাগ প্রেসে ছাপানো নকল পানামা সিডিসি’র অনুকুলে বাংলাদেশি সিডিসি প্রদান করে প্রায় ১০ কোটি টাকা দুর্নীতির আয় করে। এসব ভুয়া পানামা সিডিসি প্রাপ্তরা বিভিন্ন শিপিং এজেন্টকে টাকা দিয়ে জাহাজে উঠার পর ইউরোপ আমেরিকার বিভিন্ন বন্দরে পালিয়ে যায়।

গত ২১ ডিসেম্বর নৌ আদালত পালিয়ে যাওয়া এমন ১৯ জন বাংলাদেশী নাবিকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।

নাবিকরা পালিয়ে যাওয়ার কারণে জাহাজ মালিকদের কয়েক মিলিয়ন ডলার জরিমানা দিতে হয়েছে ও জাহাজ মালিকরা তাদের জাহাজে বাংলাদেশি নাবিক নেওয়া নিষিদ্ধ করে। কিছু নাবিক জাহাজে চাকুরি করলেও তাদের কাজের মান খারাপ হওয়ায় জাহাজ মালিকরা পরবর্তীতে বাংলাদেশি নাবিক নিষিদ্ধ করে।

এজন্য সরকারি ও অনুমোদনপ্রাপ্ত বেসরকারি মেরিটাইম প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান থেকে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সুযোগ পেয়ে ও প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করে সিডিসি প্রাপ্ত যোগ্যরা বিদেশি পতাকাবাহী জাহাজে চাকুরীর সুযোগ হারাচ্ছে ও প্রতিবছর প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক হারানোর সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

ক্যাপ্টেন গিয়াসউদ্দীন পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলামের বাল্যবন্ধু, গণভবনের পিয়ন জাহাঙ্গীর, তৎকালীন সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী কর্নেল ফারুক খানের আত্মীয়তায় দুহাতে গড়েছেন সম্পদ।

অভিযোগ রয়েছে, সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান ও মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শেখর, নৌ প্রতি মন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও সাবেক নৌ সচিব বহির্গমণের জন্য প্রদেয় সিডিসি স্পেশাল ব্যাচের প্রশিক্ষণার্থীদের থেকে অগ্রিম ৫ লাখ টাকা জনপ্রতি হিসেবে ১০০ কোটি টাকা লোপাট করেছিল এ চক্র।

এছাড়াও অভ্যন্তরীণ কোস্টাল, ফিশারিজ ও বিদেশগামী জাহাজের বিভিন্ন গ্রেডে চাকুরীরত মাস্টার, নাবিকদের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করে লাখ লাখ উপার্জনেরও অভিযোগ রয়েছে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের দপ্তরে এসব বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন জনৈক ইফতেখার আহমেদ নামে এক ভুক্তভোগী।

অভিযোগের বিষয়ে গিয়াসউদ্দীন আহমেদের সাথে কথা বলতে যোগাযোগ করলেও কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।