ঢাকা ১০:৫০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এশিয়ার অন্যতম দুর্বল মুদ্রা টাকা

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
  • সময় ১২:৩০:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / 15

টাকার অবমূল্যায়ন

এশিয়ার অন্যতম দুর্বল মুদ্রা টাকা। বিগত কয়েক বছর ধরে, ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশের মুদ্রা, টাকা, অবমূল্যায়নের এক অভূতপূর্ব ধাক্কা সামলাচ্ছে। ২০২৪ সালেও এই প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে।

চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত টাকার অবমূল্যায়ন ঘটেছে ৯ শতাংশেরও বেশি। তবে এটি কেবল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘোষিত বিনিময় হারের ওপর ভিত্তি করে। বাস্তবতা আরও ভিন্ন। ২০২২ সালের জানুয়ারির সঙ্গে তুলনা করলে গত তিন বছরে টাকার ৪৭ শতাংশ অবমূল্যায়ন হয়েছে।

কার্ব মার্কেট বা খোলা মুদ্রাবাজারের দিকে তাকালে চিত্রটা আরও ভয়াবহ। এখানে, চলতি বছরে টাকার বিপরীতে ডলারের বিনিময় হার বেড়েছে সাড়ে ১৪ শতাংশ। এই হিসাব এশিয়ার অন্যান্য মুদ্রার তুলনায় বাংলাদেশের টাকাকে সবচেয়ে দুর্বল অবস্থানে রেখেছে। তবে প্রশ্ন হলো, এই পরিস্থিতি কেন এবং এর প্রভাব কী?

বাংলাদেশের টাকার অবমূল্যায়নের পেছনে কয়েকটি বড় কারণ কাজ করছে। প্রথমত, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ধারাবাহিক হ্রাস। একসময় যেখানে রিজার্ভ ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলার, বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২১ বিলিয়ন ডলারে। আমদানি খরচ মেটাতে এই রিজার্ভের ওপর বাড়তি চাপ পড়ছে। দ্বিতীয়ত, রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয়ের তুলনায় আমদানি ব্যয় দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে জ্বালানি ও খাদ্য আমদানির খরচ বেড়ে যাওয়া এই সংকটকে আরও তীব্র করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক
বাংলাদেশ ব্যাংক

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘোষিত বিনিময় হারের পাশাপাশি, কার্ব মার্কেট বা খোলা বাজারের হারের বিশাল ফারাক তৈরি হয়েছে। ডলারের সংকটের কারণে অনেক ব্যবসায়ী এবং প্রবাসী বাংলাদেশিরা খোলা বাজারে বেশি দামে ডলার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই কার্ব মার্কেট কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকায়, এর প্রভাব টাকার অবমূল্যায়নকে আরও ত্বরান্বিত করছে। ২০২৪ সালে এশিয়ার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য মুদ্রার দিকে তাকালে দেখা যায়, বাংলাদেশের টাকা সবচেয়ে বেশি অবমূল্যায়িত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ভারতীয় রুপি বা ভিয়েতনামি ডং-এর অবমূল্যায়ন তুলনামূলকভাবে কম।

টাকার এই পতনের জন্য অভ্যন্তরীণ এবং বহির্বিশ্বের উভয় কারণকেই দায়ী করা যেতে পারে। টাকার এই অবমূল্যায়ন সরাসরি প্রভাব ফেলছে বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে। আমদানি পণ্যের দাম বাড়ার কারণে দেশে মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। খাদ্যদ্রব্য, জ্বালানি এবং অন্যান্য জরুরি পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।

অন্যদিকে, রপ্তানি খাতে একটি মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে, অবমূল্যায়িত মুদ্রা রপ্তানি আয় বাড়াতে সহায়ক হলেও, আমদানিকৃত কাঁচামালের উচ্চ খরচ সেই লাভকে কমিয়ে দিচ্ছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি, রপ্তানি খাতের বহুমুখীকরণ এবং প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং সরকারের মধ্যে সমন্বয় বাড়িয়ে কার্ব মার্কেট নিয়ন্ত্রণে আনা জরুরি। একইসঙ্গে, স্বচ্ছ মুদ্রানীতি প্রণয়নের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।

শেয়ার করুন

এশিয়ার অন্যতম দুর্বল মুদ্রা টাকা

সময় ১২:৩০:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

এশিয়ার অন্যতম দুর্বল মুদ্রা টাকা। বিগত কয়েক বছর ধরে, ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশের মুদ্রা, টাকা, অবমূল্যায়নের এক অভূতপূর্ব ধাক্কা সামলাচ্ছে। ২০২৪ সালেও এই প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে।

চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত টাকার অবমূল্যায়ন ঘটেছে ৯ শতাংশেরও বেশি। তবে এটি কেবল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘোষিত বিনিময় হারের ওপর ভিত্তি করে। বাস্তবতা আরও ভিন্ন। ২০২২ সালের জানুয়ারির সঙ্গে তুলনা করলে গত তিন বছরে টাকার ৪৭ শতাংশ অবমূল্যায়ন হয়েছে।

কার্ব মার্কেট বা খোলা মুদ্রাবাজারের দিকে তাকালে চিত্রটা আরও ভয়াবহ। এখানে, চলতি বছরে টাকার বিপরীতে ডলারের বিনিময় হার বেড়েছে সাড়ে ১৪ শতাংশ। এই হিসাব এশিয়ার অন্যান্য মুদ্রার তুলনায় বাংলাদেশের টাকাকে সবচেয়ে দুর্বল অবস্থানে রেখেছে। তবে প্রশ্ন হলো, এই পরিস্থিতি কেন এবং এর প্রভাব কী?

বাংলাদেশের টাকার অবমূল্যায়নের পেছনে কয়েকটি বড় কারণ কাজ করছে। প্রথমত, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ধারাবাহিক হ্রাস। একসময় যেখানে রিজার্ভ ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলার, বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২১ বিলিয়ন ডলারে। আমদানি খরচ মেটাতে এই রিজার্ভের ওপর বাড়তি চাপ পড়ছে। দ্বিতীয়ত, রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয়ের তুলনায় আমদানি ব্যয় দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে জ্বালানি ও খাদ্য আমদানির খরচ বেড়ে যাওয়া এই সংকটকে আরও তীব্র করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক
বাংলাদেশ ব্যাংক

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘোষিত বিনিময় হারের পাশাপাশি, কার্ব মার্কেট বা খোলা বাজারের হারের বিশাল ফারাক তৈরি হয়েছে। ডলারের সংকটের কারণে অনেক ব্যবসায়ী এবং প্রবাসী বাংলাদেশিরা খোলা বাজারে বেশি দামে ডলার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই কার্ব মার্কেট কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকায়, এর প্রভাব টাকার অবমূল্যায়নকে আরও ত্বরান্বিত করছে। ২০২৪ সালে এশিয়ার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য মুদ্রার দিকে তাকালে দেখা যায়, বাংলাদেশের টাকা সবচেয়ে বেশি অবমূল্যায়িত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ভারতীয় রুপি বা ভিয়েতনামি ডং-এর অবমূল্যায়ন তুলনামূলকভাবে কম।

টাকার এই পতনের জন্য অভ্যন্তরীণ এবং বহির্বিশ্বের উভয় কারণকেই দায়ী করা যেতে পারে। টাকার এই অবমূল্যায়ন সরাসরি প্রভাব ফেলছে বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে। আমদানি পণ্যের দাম বাড়ার কারণে দেশে মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। খাদ্যদ্রব্য, জ্বালানি এবং অন্যান্য জরুরি পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।

অন্যদিকে, রপ্তানি খাতে একটি মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে, অবমূল্যায়িত মুদ্রা রপ্তানি আয় বাড়াতে সহায়ক হলেও, আমদানিকৃত কাঁচামালের উচ্চ খরচ সেই লাভকে কমিয়ে দিচ্ছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি, রপ্তানি খাতের বহুমুখীকরণ এবং প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং সরকারের মধ্যে সমন্বয় বাড়িয়ে কার্ব মার্কেট নিয়ন্ত্রণে আনা জরুরি। একইসঙ্গে, স্বচ্ছ মুদ্রানীতি প্রণয়নের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।